এক টুকরো ভালোবাসা

এক টুকরো ভালোবাসা

অফিসে বসে আছি। কিছুতেই কাজে মন বসছে না। বারবার হৃদিতার বিষণ্ণ মুখটার কথা মনে পরছে।আসলে দোষটা আমারই।মেয়েটা বলতে গেলে কিছুই চায় না আমার কাছে। শুধু চায় একটুখানি সময় ; আর এটাই আমি ওকে দেই না।

ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম আমরা। বিয়ের পর ছোট্ট একটা সংসার বাধলাম দুজন মিলে। কিছুদিন পরই আমার মনে কেন জানি অর্থ উপার্জনের ভুত চেপে বসলো। সারাদিন অফিস নিয়ে ব্যস্ত থাকি, রাতেও বেশিরভাগ সময় ল্যাপ্টপে অফিসের কাজ করি। এ জন্যই হৃদিতার এত অভিমান। যদিও আমি এসব কিছু ওর এবং আমাদের অনাগত সন্তান সন্ততির সুখের জন্যই করি কিন্তু একবারও ভেবে দেখিনি ও কিসে সুখি হবে। ও তো গাড়ি বাড়ি, টাকাপয়সা এসব কিছুই চায় না,, শুধু চায় আমার একটুখানি সময় আর ভালোবাসা। আজ বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ওর চেহারাটা একটু বেশিই মলিন মনে হলো। তাই অফিসে আসার পর থেকেই সেই মলিন মুখটা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে বারবার।

সাথে সাথেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, এখন থেকে আর অর্থের পেছনে ছুটবোনা। স্বাচ্ছন্দ্যে বেচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু উপার্জন করবো আর আমার পাখিটাকে অনেক সময় দিবো আর ওকে অনেক অনেক অনেক ভালোবাসবো।

-হ্যালো (হৃদিতা)
-কি করছো? (আমি)
-কিছু না। বারান্দায় বসে আছি। তুমি এই সময় ফোন দিলে যে !!! কিছু হয়েছে??
-না, এমনি ফোন দিলাম।
-ও, কখনো তো দাও না তাই জিজ্ঞেস করলাম।
-আজকে বিকালে আমার সাথে ঘুরতে যাবে?
– কি!!! সত্যি!!!!!! ( প্রবল বিষ্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করলো)
-হুম সত্যি।যাবে??
-হু…উ..উ..উ..ম। (মনে হলো অনেক খুশি হয়েছে।
-তাহলে তুমি রেডি হয়ে থেকো।
-আ..আ..চ্ছা !!!!!
-রাখি।

বলেই রেখে দিলাম ফোনটা। হৃদিতার চেহারাটা এই মুহুর্তে খুব দেখতে ইচ্ছা করছে। দুপুর আড়াইটায় অফিস থেকে বের হয়ে গেলাম। বাসায় যাওয়ার পথে ফুলের দোকান থেকে ওর জন্য একটা বেলি ফুলের মালা আর একটা টকটকে লাল রঙের গোলাপ নিয়ে নিলাম। যাওয়ার পথে ওকে দেওয়ার জন্য আরেকটা বিশেষ জিনিস কিনে শার্টের পকেটে রেখে দিলাম।

কলিং বেলে চাপ দেওয়ার প্রায় সাথে সাথেই দরজা খুলে গেল। ভেতরে তাকাতেই আমার চোখ ধাঁদিয়ে গেল। মুখটা আপনা আপনি খুলে হা হয়ে গেল। এখন আমি যাকে দেখছি তাকে সুন্দর বললে ভুল হবে। সে সুন্দরের থেকেও বেশি কিছু। তাকে বিশেষায়িত করার মতো কোনো বিশেষণ এই মুহুর্তে আমি খুঁজে পাচ্ছি না। মনে হচ্ছে স্বর্গ থেকে কোনো অপ্সরী এসে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদিতা এমনিতেই অনেক সুন্দরী, চকলেট কালারের সাড়িতে ওকে আরও বেশি সুন্দরী লাগছে। ওর ঘন কালো চুলগুলো বেধে বড় একটা খোপা করেছে,, সাথে হালকা মেকাপ।
আমাকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর ফর্সা গাল দুটো লাল বর্ণ ধারণ করেছে । লজ্জায় চিবুকটা নিচে নেমে গেছে। আমি ওকে আমার কাছে টেনে এনে ওর কপালে একটা চুমু দিলাম।পকেট থেকে বেলি ফুলের মালা টা বের করে ওর খোপায় পড়িয়ে দিলাম।

সারা বিকেল ওর সাথে রিক্সায় ঘুরলাম, চটপটি খেলাম। যেমনটা বিয়ের আগে করতাম। সাড়ে পাঁচটার দিকে ওকে নিয়ে একটা পার্কে আসলাম। বিয়ের আগে প্রতিদিন ও আর আমি এখানে দেখা করতাম। একটা বেঞ্চে আমি আর হৃদিতা পাশাপাশি বসে আছি। হৃদিতা আমার ডান হাতটা খুব শক্ত করে ধরে আমার কাঁধে ওর মাথা দিয়ে বসে আছে। সন্ধ্যা বেলা। দিনের আলো নিভে এসেছে। দুজনেই চুপচাপ বসে আছি। হঠাত আমি ওর হাতটা আমার হাত থেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম। ও বেশ অবাক হয়ে মাথা সোজা করে আমার দিকে চাইলো। আমি ওর সামনে গিয়ে হাঁটু গেড়ে ওর সামনে বসে গোলাপ ফুলটা ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে ওকে বললাম – “আমি নতুন করে তোমার প্রেমে পড়েছি । তাই নতুন করে তোমাকে তোমার মতো করে ভালবাসতে চাই। নিজেকে তোমার মনের মতো করে গড়তে চাই। আর এভাবেই সারাজীবন তোমার সাথে থাকতে চাই। তুমি কি দেবে আমায় সে সুযোগ? ”

হৃদিতার দিকে তাকিয়ে দেখি ও চোখ বড় বড় করে হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে মুখে প্রগাঢ় বিস্ময়। আমি আবার বললাম – ” কি, দেবে আমায় সে সুযোগ? ” ও ওর চেহারাটা ওভাবে করেই মাথাটা আস্তে আস্তে উপর নিচ করে বোঝালো, দিবে। তারপর আমি ওর ডান পা টা তুলে এনে আমার পায়ের উপরে রাখলাম। শার্টের পকেট থেকে পায়েলটা বের করে ওর পায়ে পড়িয়ে দিলাম।

তারপর উঠে ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখ দিয়ে অঝর ধারায় পানি পরছে। আমি দুই হাত দিয়ে ওর চোখের পানি মুছে দিলাম। ও উঠে এসে আমার বুকের উপর ঝাপিয়ে পরলো। আমাকে শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আমিও শক্ত করে ওকে জড়িয়ে ধরলাম। অনেকক্ষণ এভাবে থাকার পর ওকে বললাম, ” অনেক রাত হয়েছে। চলো বাসায় যাই। ”

ও আস্তে করে শুধু বললো ” হুম ” বলে আমাকে আরো জোরে জড়িয়ে ধরলো। আমি আর ও ঢাকার ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাত ধরে হাটছি। সোডিয়াম আলোতে ওর দিকে তাকালাম। দেখলাম পূর্ণ তৃপ্ততার ছায়া ওর চোখে মুখে খেলা করছে। মনে মনে বললাম, ” এইতো আমি পেয়েছি, সত্যিকারের সুখ ” বলে ওর হাতটা আরো শক্ত করে ধরলাম।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত