কো-ইন্সিডেন্স

কো-ইন্সিডেন্স

সুবা পরিবারের একটা মাত্র মেয়ে এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। তাই সবার আদরেরও বটে । কিন্তু সবার আদরের হলেও মেয়েটা খুব শান্ত এবং ভদ্র সভাবের। দেখতে বেশি সুন্দর না হলেও তবে চেহারায় মায়া রয়েছে।

আজ কালকার আধুনিক ছেলে-মেয়েদের তুলনাই সে অনেক পিছিয়ে, আমরা যাকে বলি ব্যাকডেটেড ।। স্কুল তার বাসা থেকে দূরে ছিল না তাই হেটেই যেত। সোজা যেত সোজা আসত। বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যাও কম ছিল, ছেলে বন্ধুত ছিলই না। আচ্ছা যাক এখন সে কলেজে উঠেছে,একাদশ শ্রেণিতে। কলেজ বাসা থেকে দূরে তাই রিকশা করে যাই একা যেতে হয়। কিন্তু একি তার বয়সি মেয়ে গুলো ত অনেক স্মার্ট। কিন্তু এ নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই। সে তার নিজের মতোই থাকে। ক্লাসের আহানকে কে তার খুব ভালো লাগে।বিশেষ করে ছেলেটার হাসিটা। ছেলেটা একটু অস্থির সভাবের, তা-ই হয়ত শান্ত মেয়েটির ভালো-লাগার কারন।

যাই হক, ভালোলাগা টা দিন দিন বেড়েই চলছে।এই প্রথম হয়ত কাউকে এত ভালো লেগেছে তার,আর সেটা বয়সের দোষ হক আর যেটাই হক। সুবার আহানের সাথে কথা বলার জন্য খুব মন চাইছে। কিন্তু কিভাবে সে ত কোন দিন কোন ছেলের সাথে কথাই বলে নি। আর সে একটু একটু করে অনুভব করতে থাকে সে ত আনস্মার্ট, ব্যাকডেটেড। তাকে কি আহান পচ্ছন্দ করবে।আহান যেন তার কাছে আকাশের চাঁদের মতোই মনে হয়, দেখতে পারবে কিন্ত কখনো ছুঁতে পারবে না। এইদিকে আহান খুব অশান্ত এবং অগোছালো সভাবের।তার কাছে তার বন্ধুরাই সব।সারাদিন তাদের সাথে ঘুরাঘুরি,মজমাস্তি ছাড়া কোন চিন্তা নেই।

একদিন আহান কলেজ গেটের সামনে বন্ধুদের সাথে দাড়িয়ে ছিল। হঠাত সে লক্ষ করল রিক্সা থেকে একটি মেয়ে নামল এবং মেয়েটির কাছে একটা ছোট্ট বাচ্চা এসে হাত পাতল, মেয়েটি তার কলেজ ড্রেসের পকেট থেকে একটি দশ টাকার নোট বের করে দিল।কোন রকম বিরক্তি ছাড়া। এ আর এমনকি কিন্তু কেন জানি আহানের কাছে দৃশ্যটা খুব ভালো লেগেছে।মেয়েটাকে সে অনেকবার দেখেছে কিন্তু তেমন মনেযোগ দিয়ে দেখা হয় নি। ক্লাসে সেই মেয়েটিকে আহান আবার দেখল খুব শান্তভাবে চুপচাপ বেঞ্চের এক কোনে বসে আছে।আহানের কাছে মেয়েটিকে খুব ভালো লেগে যায়। হয়ত অশান্ত ছেলেটির শান্ত মেয়েটিকে খুব ভালো লেগেছিল।

মেয়েটিকে আহান প্রায় লক্ষ করত এবং তার দিকে তাকিয়ে থাকত ।আহান মেয়েটির নাম জানতে পারল। মেয়েটির নাম সুবা।আহানের সুবাকে খুব ভালো লাগত। কিন্তু কথা বলার সাহস পেত না। কি অদ্ভুত তাই না? দুজনেরই দুজনকে ভাল লাগত কিন্তু মনে মনে। এভাবে ভালো লাগা চলতে চলতে তাদের কলেজ জীবন শেষ হয়ে গেল। কিন্তু দূর থেকে দেখে যাওয়ার আকর্ষনটা কম-লই না। মজার ব্যাপার হল তারা দুজনেই আবার একই ইউনিভারসিটিতে ভর্তি হল।কিন্তু এখনো তারা কার সাথে কেউ কথা বলার সাহস পাই না।সেই দূর থেকেই দেখে যায়। কিন্তু দূর থেকে দেখে যাওয়ার আকর্ষনটা যে কমেই নাহ। এইদিকে আহানের বাবার মনে একটা ইচ্ছা জাগল তার অগোছালো ছেলেটাকে গোছালো করতে এইবার একটা বউ মা আন্তেই হবে।আহান তার মাকে হারিয়েছে আজ প্রায় ৯ বছর। বিয়ের সব কিছু ঠিক হয়ে গেল।

যদিও বা এই বিয়েতে আহানের ইচ্ছা নেই। তবও বাবার দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে গেল।পাত্রও পাত্রীককে দেখলনা, পাত্রীও তার পাত্রকে দেখল না।পরিবারের রাজি হওয়াতে তারাও রাজি।যদিও এখনকার সময়ে এমন টা হয়না।
বিয়ের দিন আসল।এই প্রথম তারা দুজনকে দুজন দেখবে।আহান তার হবু স্ত্রীর চেহেরা দেখা মাত্র, তার আজ একজনের কথা খুব মনে পরছে,খুব।যাকে সে যৌবনের প্রথম থেকে মনের ভিতর লালন করে আসছে,হ্যা আজ তার সুবার কথা খুব মনে পরছে। খুব সাধারন ভাবেই তাদের বিয়ে টা হইয়ে গেল। আহান তার রুমে প্রবেশ করে, কিন্তু কি দিয়ে কথা শুরু করবে সে ভেবে পাই না।

আহান:ধুম করেই, কেমন আছেন?

সুবা :ভালো। আপনি?

আহান:হুম। আমরা মনে হয় এক সাথেই পড়ালেখা করে ছি?

সুবা:হুম। আমাকে আগে কখনো দেখেছেন?

আহান:( মনে মনে দেখেছি মানে, দেখতে দেখতেই ত শেষ হয়ে গেলাম)। জী অনেকবার। আমাকে দেখেছিলান?

সুবা:(মনে মনে দেখেছি মানে দেখতে দেখতে আর কাও কেই ত দেখলাম না?। হ্যঁা দেখেছি।

আহান: বাইরে কি সুন্দর চাঁদের আলো তাই না?

সুবা : হু অনেক সুন্দর আজকের চাঁদটা এবং চাঁদের আলো।

আহান:সব ত আমি বল্লাম। এইবার আপনি কিছু বলেন।

সুবা:হুট করে আহান কে খুব জুরে জড়িয়ে ধরল এবং কান্না করতে লাগল। ( আহান ত কিছুই বোঝতে পারল না কি হচ্ছে)

আহান :এ কি আপনি কান্না করতেছেন কেন? কি হয়েছে আমাকে বলুন?

সুবা : কান্না থামিয়ে ভাংগা ভাংগা গলাই বলল–আমার আপনাকে কলেজের প্রথম থেকেই খুব ভালো লাগত।।

আহান:কিহহহহহ! আপনারও ভালো লাগত?

সুবা: আপনারও ভালো লাগত মানে?

আহান : ইয়ে মানে,আমারও আপনাকে খুব ভালো লাগত।কিন্তু বলার সাহস পাই নি কখনো।

এর পর, এরপরে আর কি? দুজনেই অট্ট-হাসিতে ফেটে পরল। আর দূর থেকে আকাশের চাঁদ তাদের দেখে হাসতে লাগল।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত