প্রেমটা হঠাৎ করেই হয়ে গেলো। হওয়ার কোন কথা ছিল না। কি করে হলো তাও জানি না। কলেজে সারাদিন লাটিমের মত ঘুরে বহু কষ্টে অজানা কোন এক কারনে প্রেমটা হয়েছে বলে আমার মনে হয়। এক কথায় বহু সাধনার প্রেম। তারপরও এই প্রেমে হাজারটা চিন্তা। আসলে সুন্দরী মেয়েদের সাথে প্রেম করলে যা হয়। সারাখন মাথায় চিন্তা থেকে যায় কে কখন কোন সময় আমার সাধনার প্রেমিকা ভাগিয়ে না নিয়ে গেল। প্রেম করা তো নয় এ যেন হৃদরোগে আক্রান্ত হবার ওষুধ কেনা। তার উপর আরও ঝামেলা তো আছেই। মেয়ে যা বলবে তাই শুনতে হবে। উনিশ থেকে বিশ হলে সম্পর্ক ওখানেই শেষ। মোট কথা বিয়ের আগে ঘর জামাই হওয়ার প্রস্তুতি আর কি।
কথা হয় ঘড়ির সময় মেপে। যদি কখনও বলি ও জান, আরেকটু সময় কথা বলি! ও পাশ থেকে গড়গড় করে বলে উঠে, মানা করছি না আজ আর না। এর মানে হচ্ছে একবার যেটা না হবে সেটা আর হ্যা হবে না। নিজেকে মাঝে মাঝে আলিফ লায়লার মালিকা হামিরার তাবাক জীনের মত মনে হয়। যার কাজ হবে মালিকা হামিরা যা বলবে তা এক বাক্যে মেনে নেয়া। তারপরও শান্তি কলেজের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটাই আমার প্রেমিকা। এমন কপালই বা কয়’জনের হয়! কিন্তু আমি যে অভাগা এই কথাটা আমি মাঝে মাঝেই ভুলে যাই।
তাই কপাল ঘষতে ঘষতে হঠাৎই একদিন নিজ হাতে নিজের কাপাল পুঁড়িয়ে দিলাম। আচ্ছা তুমি আমাকে কতটুকু ভালবাসও ? অনেক ভালবাসি। অনেক ভালবাসো তা তো জানি। কতটা ভালবাসও ? ভালবাসা কি আর পরিমাপ করা যায় বলো! তবে সত্যেই তোমাকে অনেক ভালবাসি। গাধা কোথাকার! উপমা দিয়েও কি বলা যায় না কতটা ভালবাসো ? কোন দুঃখে যে এই রাম ছাগলের সাথে প্রেম করতে গেলাম আল্লাহই জানে! আমি তোমাকে টয়লেট এর মত ভালবাসি। কি বললা তুমি! কিসের মত ভালবাসও ? টয়লেট এর মত ভালবাসি। অসভ্য, ইতর একটা!
এ কথা বলেই ওপাশ থেকে ঠাস করে ফোনের লাইনটা কেটে দিল। আর এরই সাথে আমার প্রেমের ইতিহাস রচনা হওয়া শুরু হয়ে গেলো। ভুল বলেছি, হাতে ধরি, পায়ে পরি, হাজার অনুনয় বিনয় করেও তাকে আর ফেরাতে পারলাম না। কবি বলে ছিলেন কেউ যদি চলে যেতে চায় তবে তাকে যেতে দাও। সে যদি ফিরে আসে তবে সে তোমারই ছিল আর ফিরে না এলে বুঝতে হবে সে কোন দিনও তোমার ছিলো না। গুরু গো! এ যুগে কেউ গেলে আর ফিরে আসে না। কারন এ যুগে ফুলের চেয়ে ভ্রমড়ার সংখ্যাও নেহাত কম নয়।
কি দরকার ছিল আমার মত এমন একজন লোকের মান সম্মান নিয়ে ছিনিমিনি খেলার! ইতি মধ্যে সারা কলেজে ছড়িয়ে গেছে এই প্রথম কেউ তার প্রেমিকা’কে বলেছে টয়লেট এর মত ভালবাসি। যেখানে রোজ মানুষ বলে বেড়ায় আমি তোমাকে পাহাড়, পর্বত, সাগর, নদী, আকাশ, বাতাসের মত ভালবাসি সেখানে কেউ একজন বলেছে সে না নাকি তার প্রেমিকা’কে টয়লেট এর মত ভালবাসে। নিশ্চয়ই এটা আলোচনার বিষয়। আর তাই কলেজ জুরে চলছে ভালবাসা আর টয়লেট নিয়ে বেপক গবেষণা। যে যার মত দাঁত কেলিয়ে হাসছে। কেউ রঙ্গ করছে। কেউ বা একজন আর একজন কে বলছে আমি তোমাকে টয়লেট এর মত ভালবাসি। আর এরই সাথে শিয়ালের মত খেক খেক করে চারপাশে হাসির রোর ফেলছে। মোট কথা আমার সেই মহান বাণী কলেজের সবার জন্য এখন বিনোদনের সর্ব উত্তম ঠিকানা।
গত এক সপ্তাহ ধরে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। কলেজে গেলে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে হাসে যেন মনে হয় আমি সার্কাসের বড় মাপের কোন একজন জোকার। অথচ কাউকে হাসানোর মত সামান্য যোগ্যতাটুকু আমার নেই। বহু বার গল্প বলে বন্ধ বান্ধবদের হাসানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু দেখা গেছে গল্প শেষে আমি হাসতে হাসতে শেষ অথচ ওরা আমার মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো। যার মানে হলো তোমার গল্পটা মোটেও হাসির ছিল না। আর এই দুঃখে এক সময় গল্প বলাও ছেড়ে দিয়ে ছিলাম।
বন্ধু বান্ধবদের অত্যাচারে আমি পুরোই কোণঠাসা। কলেজে যাওয়া বন্ধ করেও শান্তি পাইনি। দিনের মধ্যে পাঁচ ছয় বার কল করে জানতে চায়, দোস্ত কোন টয়লেট এর মত ভালবাসছিলি রে! ঘরের টয়লেট না কি পাবলিক টয়লেট ? আর এর পরেই ওদের বিশ্রী রকমের হাসির শব্দ গুলা বাধ্য করলো আমাকে মোবাইল ফোনটাও বন্ধ করে দিতে। এদিকে আজকাল পরিচিতদের ভয়ে ঘরের বাহিরেও তেমন একটা যাওয়াও হয় না। খুব একটা প্রয়োজন না হলে বাহিরে যাইনা বললেই চলে। হাস্যকর সে সব প্রশ্নের উত্তর দিতে আমার মোটেও ভাললাগে না। মাঝে মাঝে চিন্তা করি কোন দুঃখে যে ওই কথাটা বলতে গিয়ে ছিলাম তারই কোন মানে খুঁজে পাই না। তাও এমন একটা কথা বলেছি শেষ পর্যন্ত হয়তো এই এলাকাই ছেড়ে চলে যেতে হবে।
দিন বারতেই আমার উপর অত্যাচার বারতে শুরু করলো। শয়তান নামের কিছু বন্ধ বান্ধব কম বেশি সবারই থাকে। আমারও আছে। আর এদের কাজই হচ্ছে আমার জীবন তেজপাতা বানানো। আমাকে বাহিরে না পেয়ে সোজা বাড়িতে চলে এসে বত্রিশটা দাঁত বের করে হাসি দিয়ে বুঝিয়ে দেয় ওরাও আমাকে টয়লেট এর মত ভালবাসে। কিন্তু সত্যিই কি আমি ভুল কিছু বলেছি! যার কারনে আজ আমি সবার কাছে হাসির পাত্র হয়ে গেলাম। নাহ! আমার এই মহান বাণী কিছুতেই মিথ্যে হতে পারে না। আর আমাকেই তা প্রমাণ করে দেখাতেই হবে। আমি জানি আজ সবাই প্রাণ খুলে হাসছে আর আমি এ ও জানি একদিন সবাই আমার মত বুক ফুলিয়ে বলবে আমি তোমাকে টয়লেট এর মত ভালবাসি। তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
আমি তোমাকে বার বার নিষেধ করেছি আমার ফোনে যেনও তোমার কোন কল না আসে। আর একটা বার যদি কল আসে সোজা তোমার বাসায় গিয়ে তোমাকে থাপ্পরাবো। প্লিজ, একটা বার আমার কথাটা শোনও! না, কোন কথা নয়। তুমি ফোন রাখও। প্লিজ, শুধু একটা বার! শুধু একটা বার শোনও। এরপর তোমাকে আর কোন দিন কল করবো না। আচ্ছা বলো, তবে যা বলবা তারাতারি। আমার সময় নাই। আমি তোমার সাথে একটা বার দেখা করতে চাই। শেষ বারের জন্য। কেনও! ওই দিন তো বলেছো টয়লেট এর মত ভালবাসো আমাকে। দেখা করে কি করবা! আমার জন্য টয়লেট থেকে গু নিয়ে আসবা ? প্লিজ এভাবে বলো না। শুধু একটা বার দেখা করো। সরি, সম্ভব না। আমি রাখছি, আর কল দিবা না।
একবার বলায় রাজি হবে এমনটা আশা করা ভুল। তার উপর আমাদের এখন আর কোন সম্পর্ক নেই। শুনেছি আমার সাথে সম্পর্ক শেষ হতে না হতেই কলেজের সৌভাগ্যবান দুইজন সিনিয়র বড় ভাইয়ের সাথে না কি তার খুব ভাব হয়েছে। হতেই পারে। এমন সুন্দরী মেয়ে আর তার সাথে ছেলেরা থাকবে না এমনটা হওয়া পৃথিবীর জন্য বেশ লজ্জাজনক। মাঝে মাঝে ওর বাবা মা’র কথা চিন্তা করলে গর্বে বুক ভরে যায়। জন্ম দিয়েছে, তাও এমন একটা মেয়ে জন্ম দিয়েছে যার জন্য সারা কলেজের ছেলেরা পাগল। যৌতুক তো দূরে কথা, উল্টো মেয়ের বাবা’কে ছেলে পক্ষের লোক এসে বলবে আপনার মেয়ে’র জন্য কত টাকা দিতে হবে! চেক নিবেন না কি ক্যাশ ?
লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আজ কলেজে যাচ্ছি। যে দিকে চোখ যাচ্ছে সে দিকেই দেখতে পাচ্ছি প্রায় সব ছেলে মেয়ে গুলাই আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিটিয়ে হাসছে। কপালে যে উপাধি জুটেছে তাতে এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। বরং না হওয়াটাই অস্বাভাবিক। কলেজে আসতাম না। কিন্তু না এসে কোন উপায় ছিল না। যে করেই হোক ওকে শেষ একটা বারের মত দেখা করার জন্য রাজি করাতে হবে। আমার জানা মতে ওর বেশি কিছু কাছের বান্ধবী আছে। দেখি ওদের বলে কয়ে কোন মতে রাজি করানো যায় কি না।
তোমার সমস্যা কি বলো তো! কোন সমস্যা না। শুধুমাত্র একটা বার দেখা করতে চাই। দেখা তো হলোই! তোমার সখ মিটেছে ? না, এখানে না। বাহিরে কোথাও, নিরিবিলিতে। আমার পক্ষে সম্ভব না। এই শোন, ও যখন এতো করে বলছে যা না! একটা বারি তো। যা বাহিরে যেয়ে একটা বার দেখা কর। আরে ভাইয়া’রা জানতে পারলে রাগ করবে। আমার জানা মতে তো তোমার কোন ভাই নেই। এই বয়সেও কি তোমার বাবা মা ভাঙ্গা রাস্তায় পিছলা খেয়েছে! না কি ছোট বেলায় মেলায় হারিয়ে যাওয়া তোমার সেই ভাই’কে খুঁজে পেয়েছো ? দেখছি! দেখছিস! ও কি রকম অসভ্য। আর তোরা ওর জন্য সুপারিশ করছিস ? সরি, ভুল হয়ে গেছে আর হবে না। আর কোন দিন হবে না।
শোনও, তুমি যেই কথা বলছো না এরপর আর কোন কথাই থাকে না। যাও যাবার ইচ্ছে ছিলো সেটাও শেষ হয়ে গেছে। এখন চোখের সামনে থেকে দূর হও। দেখও, তুমি যদি রাজি না হও তবে কিন্তু কলেজে সবার সামনে আমি তোমার পা জরিয়ে ধরে রাজি করাবো। খবরদার! এমনিতেই কলেজে তোমার সুনামের অভাব নাই। ছোট থেকে বড় সব গুলা তোমাকে এক নামে চেনে। দয়া করে আর নাম কামাতে হবে না তোমার। প্লিজ, একটা বার রাজি হও! প্লিজ, আর কোন দিন দেখা করতে চাইবো না। প্লিজ! এই তুমি আমার পা ছাড়! ছাড়ও পা, পা ছাড় বলছি। না, আগে তুমি বলো তুমি দেখা করবে। তারপর ছাড়বো। উফ! কলেজের সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। পা ছাড়ও তুমি! তাহলে বলও তুমি রাজি ? না বলা পর্যন্ত পা ছাড়বো না। উফ রে আল্লাহ! এ কোন পাগলের পাল্লায় পরলাম আমি। আচ্ছা ঠিক আছে দেখা করবো। এবার তো পা ছাড়ও!
যাক সুন্দরী কথা দিয়েছে দেখা করবে। তার মানে দেখা হচ্ছে। এবার আমাকে বাকি কাজ গুলা গুচ্ছাতে হবে। চট জলদি বাড়িতে এসে খাতা কলম নিয়ে বসে পরলাম। ওর পছন্দের যত খাবার আছে সব গুলা খাবারের একটা লিস্ট করে ফেলেছি। মিষ্টি, টক, ঝাল, সব রকমের খাবারের নাম আছে এই লিস্টে। মোটকথা কোন একটা খাবার যেন বাদ না যায়। বাজারে গিয়ে কম করে হলেও চল্লিশ পদের খাবার কিনলাম। খাবারের পেকেট দিয়ে বাজার করার সবচেয়ে বড় ব্যাগটা ভরে গেছে। ভাগ্য ভাল রিক্সা পেয়েছি। আর তা না হলে এই খাবার ভর্তি ব্যাগ মাথায় নিয়ে হাঁটতে হতো। আসার সময় ছোট ভাইটার কাছ থেকে দুই ঘন্টার জন্য ওর খেলনা পিস্তলটা ভাড়া নিয়েছি। ঘন্টায় দশ টাকা ভাড়া। ছোট থেকেই বদ হয়েছে। ভাই এর উপকারে সামান্য খেলনা পিস্তলটা পর্যন্ত ফ্রি দিল না। পিস্তলটা দেখতে অবশ্য খারাপ না। একেবারে সত্যি কারের পিস্তলের মত। ঝামেলা শুধু একটাই। চাপ দিলে পিচকারির মত পানি বের হয়।
তুমি আসায় আমি অনেক খুশি হয়েছি। ঢং এর কথা বাদ দিয়ে কি জন্য আসতে বলেছো তাই বলো। হুম বলবো। তার আগে বলো, তোমার হাতে বাজারের ব্যাগ কেনও ? ওর ভিতরে কি! এর ভেতরে! এর ভেতরে আছে তোমার পছন্দের সব খাবার। দেখেছো চারপাশটা ? কত সুন্দর! চারদিকে কাশবন, মাঝখানে খোলা মাঠ। শুধু তুমি আর আমি! হইছে তোমার আর কবি হতে হবে না। খাওয়াতে চাইছো তা রেস্তোরাঁয় নিয়ে গেলেই তো হতো! আরে ওখানে তো সব সময়ই খাও। আজ না হয় এই প্রকৃতির মাঝেই ভাল মন্দ খেলে। নাও বসো, খাওয়া শুরু করো। তুমি আসলেই একটা পাগল! এই এতো খাবার আমি একা খেতে পারবো ? তারাহুড়ার তো কিছু নেই। আসতে আসতে খাবে সমস্যা কি!
মেয়েদের খাওয়ার মাঝেও এক ধরনের শৈল্পিক বেপার আছে। ওরা খাবারটা খুব সুন্দর করে গুছিয়ে খায়। যা আমরা ছেলেরা মোটেও পারিনা। আমাদের কাছে খাবার মানেই হলো, খাবারের মাঝে হাত ডুবিয়ে মুখ ভর্তি করে খাবার দিয়ে যত দূর্ত সম্ভব খাবার শেষ করা। অথচ মেয়েরা অল্প অল্প খাবার মুখে তুলে কি চমৎকার করে খায়। সৃষ্টির এই অপরুপ রুপের যেনও কোন তুলনা হয় না। যত দেখি ততই অবাক হয়ে যাই।
আর খাবো না। পেট ভরে গেছে। তুমি তো কিছুই খেলে না। সাত আট পদের খাবার খেয়েছি। আর কত! নাও আরেকটু খাও। বাড়িতে কি না কি খাও, আজ যখন তোমাকে পেয়েছি মনের মত করে খাওয়াই। উহু, আর খেতে পারবো না। পেট ফেটে যাচ্ছে। আরে না, কিছু হবে না। খেতে তো তোমাকে হবেই। জোর করো না তো। আর খেতে পারবো না। জোর করছি না। এটা কি দেখেছো ? খেতে বলছি খাও। মানে কি! তোমার কাছে পিস্তল কেনও ? কথা কম, খাওয়া শুরু করো। প্লিজ, আমি আর পারবো না। তুমি খাবে, না কি তোমার কপাল বরাবর গুলি করে দেব ? দেখও, এসব কিন্তু মোটেও ঠিক হচ্ছে না। আমি তোমাকে বিশ্বাস করেই এখানে এসে ছিলাম। আমিও তোমাকে বিশ্বাস করেই এখানে এনেছি। নাও খাও। সব গুলো খাবার শেষ করবে।
মাথার সামনে পিস্তল ঠেকিয়ে এভাবে আজ পর্যন্ত কেউ কেউকে খাওয়ার জন্য ভয় দেখিয়েছে কি না আমার জানা না। সুন্দরী একটা মেয়ে এক হাত দিয়ে চোখের পানি মুছতেছে আর এক হাত দিয়ে মুখে খাবার তুলে দিয়ে চাবিয়ে চাবিয়ে খাচ্ছে। মনে হচ্ছে মুখের ভিতর খাবার গুলা ভর্তা বানাচ্ছে। আসল কথা হলো পেট ভরা থাকলে যা হয়। টক,মিস্টি, ঝাল, সব এবার এক সাথে মিশিয়ে খাওয়ানও হচ্ছে। প্রাণ হারানোর ভয়ে মানুষ হয়তো সবই করতে পারে। আমি ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি। নিজেকে কেমন জানি বাংলা সিনেমার ভিলেনের মত লাগছে। তা না হয় হোক, যে উদ্দেশ্যে এতো কিছু তা শেষ পর্যন্ত করতে পারলেই হয়। আমাকে তুমি মেরে ফেল। আমি আর খেতে পারবো না। আহা! এভাবে কাঁদছো কেনও ? আচ্ছা আর খেতে হবে না। তাও কেঁদো না। চোখের পানি দিয়ে মেকাপ তো সব ধুয়ে ফেলেছো। আমি বাসায় যাব। হুম যাবে। তবে এখন না, পরে। পরে মানে! আমি কখন যাব ? আমি যখন চাইবো ঠিক তখন।
তুমি আমার সাথে আজ যা করছো। আমি জীবনে কোন দিন ভাবি নাই তুমি এমন কিছু করতে পারো। আমি তোমাকে বিশ্বাস কর ছিলাম। আমি অবিশ্বাসের কি করলাম! শুধু জোর করে খাওয়াইছি। এতে বিশ্বাস ভাঙ্গার কি হলো ? আমি উঠবো এখন। আর এক মুহূর্ত আমি এখানে থাকবো না। না তুমি যাবে না। প্লিজ অনেক হইছে। আমাকে এবার যেতে দাও। বললাম তো এখন না। দেখও, আমার টয়লেটে যেতে হবে। পেটে প্রচন্ড চাপ দিচ্ছে। অযথা ফাজলামো করো না। বললাম তো না।
এখন কিন্তু বারাবারি হচ্ছে! আমার সত্যিই টয়লেটে যেতে হবে। প্লিজ সরো সামনের থেকে। উহু, তোমাকে সব জায়গায় যেতে দিব। কিন্তু টয়লেটে যেতে দেব না। প্লিজ, বোঝার চেষ্টা করো। তুমি সামনের থেকে সরো। উফ! প্লিজ। যতই বলো কাজ হবে না। আমার ঠিক পিছনেই টয়লেট কিন্তু তোমাকে যেতে দিব না। ফাজলামোর একটা সীমা আছে। তুমি সরো। আমার অবস্থা কিন্তু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। প্লিজ আমাকে যেতে দাও। হোক খারাপ, দেখি কতটা খারাপ হয়। প্লিজ আমি আর পারতেছি না। আমাকে টয়লেটে যেতেই হবে। প্লিজ সরো তুমি!
কেনও! টয়লেট তো ভাল না, খারাপ। ওখানে কেনও যাবে। তোমাকে সে দিন টয়লেট এর মত ভালবাসি বলে ছিলাম বলে সম্পর্কটাই শেষ করে দিলে। আর আজ নিজেই টয়লেটে যেতে চাইছো ? তুমি কি বুঝতে পারছো টয়লেট এর কোন বিকল্প নেই! আমি তোমাকে এমন একটা জিনিসের মত ভালবাসি বলে ছিলাম যার অভাব তুমি অন্য কোন কিছু দিয়ে কখনই পূরণ করতে পারবে না। তোমাকে এখানে আনা আর এতো কিছু করার মূল উদ্দেশ্যই ছিল এতোটুকুই আমি সত্যিই তোমাকে টয়লেট এর মত ভালবাসি এবং আমার জীবনে তোমার কোন বিকল্প নেই।
প্রায় অনেক সময় ধরে আমি বাহিরে একা একা বসে আছি। জানি না এতো সময় ধরে টয়লেটে বসে বসে ও কি করছে। মাথার ভিতর একগাদা চিন্তা। কাল হয় তো কলেজের প্রিন্সিপালের কাছে বিচার যাবে। ওর বাব মা’ও হয় তো আসবে। স্যার এর কাছে চমৎকার করে বর্ণনা করবে কিভাবে তার মেয়ের উপর একটা খেলনা পিস্তলধারী ভিলেন জোর করে টয়লেট এর মত ভালবাসি এই মহান বাণীর গবেষণা করেছে। আর সব কিছু শোনার পর স্যার আমার দিকে চশমার ফাঁক দিয়ে চোখে পাকিয়ে বলবে টয়লেট প্রেমিক তাই না! নে তোরে কলেজ থেকে বের করে দিলাম। পড়াশোনা বাদ দিয়ে এখন পাবলিক টয়লেট এর চাকুরী কর। শেষ, সব শেষ। বাকিটা জীবন হয়তো সত্যিই পাবলিক টয়লেট এর চাকুরী করতে হবে।
আজ চোদ্দই ফেব্রুয়ারী, মানে বিশ্ব ভালবাসা দিবস। কলেজে ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান আছে। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষ এ বেপারে কিছুই জানে না। আমাকে আজ সেখানে বক্তৃতা দিতে হবে। বক্তৃতার বিষয় বস্তু টয়লেট এর মত ভালবাসি। মাইক্রফোন হাতে নিয়ে সবার সামনে দাঁড়িয়ে পরলাম। নিজেকে বেশ চিন্তিত লাগছে। না জানি কি বলতে কি বলে ফেলি। একে একে ব্যাখ্যা করতে শুরু করলাম কেনও আমি এতো কিছু রেখে আমার প্রেমিকা’কে টয়লেট এর মত ভালবাসি। উদাহরণ টানতেই মনে পরে গেলো এক রাজার মেয়ে বলে ছিলো সে তার বাবা’কে লবনের মত ভালবাসে। এ কথা শুনে রাজা মশাই তার মেয়ে’কে বনবাসে পাঠিয়ে দেয়। পরর্বতীতে রাজা মশাইয়ের ভুল ভাঙ্গে। রাজা মশাই বুঝতে পারেন লবন ছাড়া খাবারের কোন সাধ নেই। আর তাই আবার তার মেয়েকে রাজ প্রাসাদে ফিরিয়ে নেন।
কিন্তু আমার কথা হলো খাবারে লবন ছাড়া খাবার সাধহীন হলেও খাবার খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু টয়লেট এর কি কোন বিকল্প আছে ? আপনি কি করলেন আর কি করলেন না তা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, টয়লেট এর বিকল্প কি কোন রাস্তা আছে ? বনে যান আর জঙ্গলেই যান, যেখানেই যান। প্রাকৃতিক ডাকে আপনি যেখানেই সাড়া দিতে যাবেন সেটাই আপনার জন্য একটা টয়লেট। ভালবাসাটাও ঠিক এমনই হতে হয়। যার কোন বিকল্প নেই। আপনার টয়লেটে না গেলে যেমন চলবে না তেমনই ভাল না বাসলেও জীবন চলবে না। টয়লেট সত্য! ওখানে আপনাকে রোজই যেতে হবে। এ বেপারে কোন ছলচাতুরি চলবে না। ঠিক তেমনই ভালবাসও হতে হবে ছলচাতুরি মুক্ত, নির্ভেজাল।
আমাকে আর বেশি কথা বলতে হয়নি। এতোটুকু বলার পরই চারপাশটা জোড়ালো করতালিতে মুখরিত হয়ে গেলো। সবার মুখে বাহবা আর তৃপ্তির মিষ্টি হাসি। এই হাসিতে আজ কেন বিদ্রূপ অথবা উপহাস নেই। বুঝতে পারলাম আমার যুক্তি সবার বেশ পছন্দ হয়েছে। বিশেষ করে আমার পুরোন প্রেমিকার। তার মুখটা বেশ আহ্লাদী দেখাচ্ছে। মাথা নিচু করে মিটমিট করে হাসছে।
আমার বক্তৃতা শেষে নাচগান শুরু হয়ে গেলো। তবে আমি আর সেখানে থাকিনি, সোজা বাসায় চলে আসলাম। সব কিছুর পর আজ অনেক শান্তি বোধ করছি। আজ এতোটা দিন পর আমি প্রমাণ করে দিয়েছি আমার সেই মহান বাণী হাস্যকর নয়। সবারই টয়লেট এর মত করে ভালবাসা উচিত। আর তাই আমার বক্তৃতার পরপরই সবাই একে অপরকে বলতে শুরু করলো আমি তোমাকে টয়লেট এর মত ভালবাসি। প্রিয় বন্ধ থেকে শুরু করে ভালবাসার প্রতিটি মানুষের মুখে মুখে এখন একটাই কথা, ভালবাসি! টয়লেট এর মত ভালবাসি।
কেউ কারও মন জয় করতে নিরদিধায় বলে দিছে আমি তোমাকে টয়লেট এর মত ভালবাসি। আমাকে তুমি কতটা ভলবাসও এমন প্রশ্নের উত্তরও এখন একটাই, আমি তোমাকে টয়লেটের মত ভালবাসি। যাই হোক, হাত মুখ ধুয়ে বিছানায় শুয়ে পিঠ লাগাতেই হঠাৎ করে মোবাইল ফোনটা বেজে উঠলো। তবে অপরিচিত কোন নাম্বার থেকে কল আসেনি। কলটা করেছে আমার পুরোন প্রেমিকা। হ্যালো! কোথায় তুমি ? বাসায়। তোমাকে একটা কথা বলতে চেয়ে ছিলাম। হুম বলো। আমি তোমাকে ভালবাসি। টয়লেট এর মত ভালবাসি।