অফিস থেকে ফিরতে অনেক রাত হয়ে গেল, বাসার কলিং বেলে চাপ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিছুক্ষণ পর পায়েল দরজা খুললো। আমি ও’কে দেখে স্তব্ধ হয়ে গেলাম, “ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক গায়ে লাল শাড়ি ওহে বঙ্গনারী তোমায় নিয়ে দিবো আমি ভিনদেশে পাড়ি!!” আচমকাই লাইনগুলো মুখ ফসকে বেরিয়ে গেল। পায়েল আমার তাকিয়ে বলল, কিছু বলছেন?
আমি একটু সময় নিয়ে নিজেকে সামলে নিলাম সাথে সাথে মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চলে আসলো কঠিন চোখ করে বললাম, বয়ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে যাচ্ছেন নাকি? এত রাতে সিনেমা হল গুলো বন্ধ হয়ে গেছে মনে হয়। সে রাগে খটমট করতে করতে রুমে চলে গেল। আমি হাসতে হাসতে রুমে ঢুকলাম। ফ্রেশ এসে দেখি পায়েল সুটকেস নিয়ে দাড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে বললো, আমি বাবার বাসায় চলে যাচ্ছি আপনি আরেকটা বিয়ে করে নিন। যে আপনার মনের মত হতে পারবে যার প্রতি কোনো সন্দেহ থাকবে না। কারণ এতটা সন্দেহ নিয়ে সারাজীবন চলা যায় না। আমি খুবই দুঃখিত যে, আমি আপনার মনের মত হতে পারলাম না। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বিয়ের দু’মাসের মাথায় বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছে!!
মামার পছন্দের মেয়ের সাথে বিয়ে হয়েছে আমার। মামা প্রথম মেয়ে দেখে এসে বলেছিলো, ভাগ্নে এটাই তোর জন্য পারফেক্ট। একই সাথে রূপবতী,গুণবতী ও বুদ্ধিমতী। আমি একটু অবাক হয়েই বলেছিলাম,তুমি দুই ঘন্টায় এতকিছু বুজলে কিভাবে? মামা বলেছিল, বিয়েটা হোক তারপর তুইও বুজবি। হুম মামা ঠিকই বলেছিলো মেয়েটা সত্যিই রূপবতী এবং গুণবতী বটে তবে বুদ্ধিমতী নয় ভীতুমতী আর বোকাবতী। পায়েল নামটা যেমন সুন্দর, ও’র কন্ঠ’ও অতি মধুর শুনলেই প্রাণ জুড়ায়। সে রবীন্দ্র সংগীত খুব সুন্দর গাইতে পারে। যখনই সুযোগ পায় অমনি হারমোনিয়াম নিয়ে রবীন্দ্র সংগীত শুরু করে দেয়। পায়েলের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে আমার। কোথায় যেন পড়েছিলাম বউকে যতই রাগাবেন ততই ভালবাসা বাড়বে। তাই আমার মাথায় বউকে রাগানোর চিন্তা ঘুরত সবসময়।
একদিন সন্ধ্যাবেলা পায়েল গান গাইছে আমি ড্রয়িং রুমে সাউন্ড অফ করে খেলা দেখছি কারণ ওর গানের গলা শুনতে বেশ লাগে আবার ওকে বুঝতে দেই না আমি যে ওর গান শুনছি। হঠাৎ ফাইজলামি মাথায় নাড়া দিলো। আমি পাশের ফ্লাটের রাতুলকে চেঁচিয়ে বলি আরে রাতুল তো’র আন্টিকে বল উনার কাকের স্বরের গানগুলো জোশ আরও জোরে জোরে গাইতে বল। পায়েল তখনই গান বন্ধ করে দেয় তারপর টুস করে নিজের ঘরের দরজাও লাগিয়ে দিল।
সেদিন পায়েল রান্না করলো আমার পছন্দের মাটন বিরিয়ানী।
অতিরিক্ত ক্ষুধা আর মিষ্টি ঘ্রাণে গপাগপ খেতে শুরু করলাম। খাওয়া প্রায় শেষ সে বললো, কেমন হয়েছে? আসলে এই রান্নার প্রশংসা অতুলনীয় তবুও ওর সামনে চোখেমুখে বিরক্তি আর রাগী ভাব এনে বললাম তুমি খেয়েছো আগে? ও না সূচক মাথা নাড়ালো,, বাহ বাহ বাজে খাবার গুলো আমাকেই আগে খেতে হয়। তুমি এগুলো এক ভিখারিখে খেতে দেও দেখবে সেও বলবে, “আফা এর থাইকা তো ভালো ছিলো আফনে যদি মাংসগুলা কাচাকাচা খাইতে দিতেন। ডাইল,চাউল,কাচা মাংস মুখে ঢুকাইয়া পানি দিয়া গিইল্লা ফেললেও অনেক শান্তি পাইতাম।”
পায়েল কান্নাভরা চোখে নিয়ে বললো,এতটা খারাপ হবে ভাবিনি আচ্ছা রেখে দিন আমি নতুন করে কিছু রান্না করছি। হইছে আর ঢং করতে হবে না, আপনার জন্য খুশির খবর হচ্ছে এখন তো সব হোটেল প্রায় বন্ধ, আর যেগুলো খোলা আছে তাতে নিশ্চয়ই ভালো কোনো খাবার পাবো বলে মনে হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে এই অখাদ্যই খেতে হবে আমাকে। তবুও যদি আগে কোনো ভাবে জানতে পারতাম আজকে আমাকে এগুলো খেতে হবে তাহলে আর কষ্ট করে বাসায় ঢুকতাম না। সে চুপ করে চলে যেত। আমি হাসতে হাসতে আরেক প্লেট খেয়ে ফেলি।
সুটকেসের আওয়াজে বাস্তবে ফিরলাম, পায়েল চলে যাচ্ছে। আমি হা করে রইলাম, আজব মেয়ে তো মজাও বুঝে না। মানসম্মান বাঁচাতে আমি দৌঁড়ে ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আরে বোকা মেয়ে আমি তো তোমার সাথে মজা করতাম এগুলো। সবসময় ভালোবাসি বলতে ভালো লাগে না,তাই তোমার সাথে ফাইজলামি করি।
পায়েল কঠিন কন্ঠে বললো আমাকে বোকা বলবেন না, আপনার ফাইজলামি গুলো আমার জন্য কতটা কষ্টদায়ক তা কি জানেন আপনি!!
আমি বললাম,”পৃথিবীতে বেশিরভাগ মানুষই অন্যকে কষ্ট দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পেতে পছন্দ করে।” পায়েল রেগে গিয়ে বললো, আপনি পিশাচ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমার ভালো স্বামী হয়েই ভালোবাসুন। “ভালোবাসাই দুজনকে সারাজীবন একই বন্ধনে টিকিয়ে রাখে, অবহেলা নয়।” যথাজ্ঞা মহারাণী, আমি ভালোবাসি বলে ওর কপালে চুমু এঁকে বুকের সাথে লেপ্টে নিলাম।
ভালোবাসা বেঁচে থাকুক জন্ম জন্মান্তর!!