“মেয়েটা তো কালো। তুই কত সুন্দর একটা ছেলে। এই মেয়ে কেম্নে পছন্দ করলি?”
ছবি দেখতে দেখতে হাসিব রামিম কে বলে।
“কালো হইছে তো কি হইছে কালো মেয়ের কি মন নাই নাকি? ভালোবাসা ত দুটি মনের হয় সেখানে কালো না ফর্সা তা দিয়ে তো কোনো কাজ নেই। আর আমার পছন্দের মানুষ কে ইনসাল্ট করে কিছু বলার রাইট ও তোর নেই।”
চুপ হয়ে যায় হাসিব।
এই মেয়ে বোধ হয় রামিম কে জাদু করেছে মনে মনে বলে হাসিব।
তা না হলো কত সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে লাইনে ছিলো তাদের রেখে এই মিলি কে পছন্দ করলো সে? ছেলেটার মাথা মনে হয় পুরো গেছে।
পার্কে বসে আছে মিলি আর রামিম।
মিলির হাত রামিম এর মুঠোর ভেতর।
দুজনি চুপ।
“তুমি যে কেনো সব সময় আমার হাত টা ধরে চুপ করে বসে থাকো বুঝি না। মনে হয় মুনী ঋৃষীর মত ধ্যান করছো।”
মিলি বলে।
“তোমাকে ছুঁয়ে বসে থাকলে আমার মনে হয় আমি ই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ। বুক টা এক অদ্ভুত প্রশান্তি তে ভরে যায়। ওসব তুমি বুঝবে না।”
রামিম বলে উঠে।
“আমি অত শত বুঝি না। আমি শুধু বুঝি তোমার মত কেউ আমাকে ভালোবাসতে পারবে না। এত সুখ আমি জীবনে আর কখনো পাই নি। তুমি ই আমাকে বুঝিয়েছো আমি কালো এটাই আমার সৌন্দর্য। ছোট বেলা থেকে গায়ের রঙ এর কারনে যে অপমান সয়েছি। সেই ক্ষতে যে তুমি ভালোবাসার প্রলেপ মাখিয়ে দিয়েছো। সারা জীবন এমনি থেকো তুমি।”
রামিম মিলির হাত টা আরো শক্ত করে ধরে রাখে মিলিকে সে কখনো হারাতে দিবে না।
মিলি বাসায় জানিয়েছে। তার পরিবার রামিম কে সাদরে মেনে নিয়েছে।
কিন্তু সমস্যা রামিমের বাসায়। কিছুতেই তারা তাদের একমাত্র ছেলেকে এমন কালো মেয়ের সাথে বিয়ে দিবে না।
রামিম তার সর্বোচ্চ টা দিয়ে সবাইকে বুঝানোর চেষ্টা করছে । কিন্তু কোনো কাজ ই হচ্ছে না।
কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে।
“হাসিব কি করা যায় বলতো? আমার মাথায় আর কিছু ঢুকছে না।”
“দেখি কি করা যায় তোর জন্য।”
হাসিব বললো।
রামিমের এক্সিডেন্ট হয়েছে। রামিম কে হাসিব হাসপাতালে নিয়ে এসে তাড়াতাড়ি ওর পরিবারের সবাই কে খবর দিলো।
রামিমের বাবা মা ছোট বোন সবাই কাঁদছে।
রামিমের মাথায় ও চোখে আঘাত লেগেছে।
“আংকেল ডাক্তার বলেছে রামিম বাম চোখে আর দেখতে পাবে না। খুব বেশি আঘাত পেয়েছে।”
হাসিবের কথা শুনে চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন রামিমের মা।
মিলি খবর শুনে ছুটে আসলো। মেয়েটার দুচোখ দিয়ে অনর্গল পানি পড়ছে।
মিলি কিছু না ভেবে ই রামিমের মাকে জড়িয়ে ধরলো । রামিমের মাও জড়িয়ে ধরলেন মিলিকে। দুজনের কান্নার পরিমাণ আরো বেড়ে গেলো।
রামিম এর রুমে কাউকে ই ঢুকতে দেয়া হয় না। মাঝে মাঝে আধ ঘন্টার জন্য বাবা মা ঢুকতে পারে। তখন তারা মিনিট পনেরো থেকে বাকি সময় মিলি কে যেতে বলে।
এভাবে সাত দিন কেটে গেলো। মিলির সাথে রামিমের মা বাবার খুব ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।
“দেখেছো মেয়েটা কত ভালো। মেয়েটার মন টা কাদা মাটির মতন নরম। কত ভালোবাসে আমাদের রামিম কে। রামিম এর এ অবস্থা দেখে ও মেয়ে টা রামিম কে ছেড়ে যায় নি। বরং সেই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই রুমের বাহিরে ই বসে থাকে মেয়েটা।”
রামিমের মা বলে।
“ঠিক ই বলেছো রামিমের জন্য ই এই মেয়ের জন্ম। আমরা আর ওদের মাঝে বাধা হয়ে থাকবো না।”
রামিমের বাবার কথায় সায় দিলো মা।
“ঠিক বলেছো। আমার কালো বউকে ই আমি মাথায় করে রাখবো।”
রামিম বাসায় ফিরেছে। তার চোখে কালো গ্লাস।
সবাই তার খুব খেয়াল রাখছে।
এরই মধ্যে রামিম বললো। সে মিলিকে কিছুদিনের মধ্যে ই বিয়ে করতে চায়।
মা বললো,
“আগে একটি সুস্থ হয়ে নে বাবা।তারপর না হয় বিয়ের কথা হবে।”
রামিম বললো,
“মা, মিলি এখন আমার পাশে পাশে থাকলে আমার আরো ভালো লাগবে। ”
মা চিন্তা করে দেখলেন ব্যাপার টা খারাপ হয় না।
দিন দশেক এর মধ্যে ই বিয়ে হয়ে গেলো রামিম আর মিলির।
বাসর রাতে দুজন বসে আছে। মিলি কাঁদছে।
“আরে বোকা মেয়ে কাঁদছো কেনো?”
“তোমার এ কষ্ট আমার আর সহ্য হচ্ছে না। উপর ওয়ালা কেনো আমার চোখ নিলেন না।”
রামিম আস্তে আস্তে চোখ থেকে কালো গ্লাসটা খুললো।
আতকে উঠলো মিলি । তার চোখ একদম স্বাভাবিক। এক্সিডেন্ট এর কোনো চিহ্ন ই নেই।
“এসবের মানে কি রামিম??”
“আমার কিচ্ছু হয় নি পাগলী। সবই তোমাকে পাওয়ার জন্য করেছি আমি।”
“কি বলছো তুমি?”
“হুম ঠিক ই বলছি যখন দেখলাম বাবা মা কে কিছুতেই রাজি করাতে পারছি না। শুধু কালো বলে তোমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি না। তখন আমার মনে হলো বাবা মা কে তোমার ভালো সহজ সুন্দর মনটা যদি দেখাতে পারতাম তাহলে হয়ত তারা তাদের ভুল বুঝতে পারতেন। তখনি হাসিব আমাকে বুদ্ধি টা দেয়।
আমার এক্সিডেন্ট হয় নি। সব ই ছিলো বানানো। হাসিবের এক ডাক্তার বন্ধু ছিলো সেই তার বসার রুমে একটা বেড এর ব্যবস্থা করে হাসপাতালের সবার সাথে কথা বলে আমাকে সেখানে রাখার ব্যবস্থা করেছে। শুধু যখন তোমরা আমাকে দেখতে আসতে তার আগে ডাক্তার বন্ধুটি এসে আমার চোখে আর মাথায় ব্যান্ডেজ পরিয়ে দিতো।
তোমরা ও ডাক্তার বন্ধুটি এসে আমার চোখে আর মাথায় ব্যান্ডেজ পরিয়ে দিতো।
তোমরা ও কেও ধরতে পারো নি। বাহিরের সব খবরাখবর হাসিব আমাকে দিত। ”
“তাই বলে তুমি আমাকে ও বলো নি?”
“আরে বোকা! তোমাকে বললে তো তুমি এত বাস্তব অভিনয় করতে পারতে না।
আর এ ফাঁকে কতখানি ভালোবাসো তা ও দেখে নিলাম।”
“তবে রে! আমার পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে।
তাহলে আজ তোমাকে ও পরীক্ষা দিতে হবে। যাও বাহিরে যাও।।বাসর রাতে তোমাকে বউ ছাড়া বাহিরে ই একা একা কাটাতে হবে।”
রামিম বেচারা বাহিরে বসে বসে মশার কামড় খাচ্ছে আর ভাবছে,
“শালা কেনো যে আজ ই সব বলতে গেলাম। মধুর রাত মাটি হয়ে গেলো। কি আর করা প্রিয়তমা তোমাকে যখন সারা জীবনের জন্য পেয়েছি তখন একটি রাত না হয় বিসর্জন ই দিলাম। বাকি লক্ষ কোটি দিবস রজনী তে তুমি শুধু ই আমার।”