একেই ভালোবাসা বলে

একেই ভালোবাসা বলে

অন্যের বিয়ের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে নিজের বিয়ের কথা ভেবে দীর্ঘক্ষণ যাবৎ দীর্ঘশ্বাস ছাড়তে দেখেছি রুবেলকে। ওর করুন চাহনি আমাকে কিছু বলতো, আমিও ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতাম, ‘ ধৈর্য ধারণ কর, তোর ঘন্টা’ও হঠাৎ করে কোনো একদিন বেজে উঠবে। ও আমার মনের কথা বুঝে নিত।

সেদিন একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে ভিডিও ধারণের সময় হঠাৎ সেই ঘন্টা বেজে উঠলো। অবশ্য ঘন্টা নয়, স্লিপার স্লিপ কেটে একটি মেয়ে কতগুলো ড্রামের উপর পড়ার কারনেই ওরকম ঝনঝন, ঢনঢন শব্দের উৎপত্তি। রুবেল এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো, মেয়েটি হাত বাড়িয়ে রুবেলের হাতটা ধরতেই, রুবেলের মনের মনিটরে “ তুঝে দেখা তো এ জানা সানাম, পেয়ার হোতাহে দিওয়ানা সানাম ” গানটা অটোমেটিক চালু হলে গেল। সে এক মারাত্মক রোমান্টিক সিন, ভাবলেই ভালোবাসার ইচ্ছা প্রসারিত হয়ে হৃদপিণ্ড ফেটে বেরিয়ে যাবার অবস্থা। যাক এই মূহুর্তে এতটা রিস্ক নেওয়া ঠিক হবেনা। অন্যের রোমান্টিক সিনে নিজের হৃদপিণ্ড ফাটানো মনে হয় বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

তারপর দুজনের চোখে চোখ, হাতে হাত, ফিলিংসের চাপে দুজনেই ফ্রিজ, আমি হিটার হয়ে বললাম, ‘ আরে বিয়ে বাড়িতে এত লোকজন, এভাবে হাত ধরাধরি করে জমে থাকলে লোকে কি বলবে।’ ব্যাস, হাত ছেড়ে রুবেল আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো, যেন আমিও সেই বিরক্তিকর হাড্ডিখানা, যেটা লোকে বলে “ কাবাব মে হাড্ডি।” তারপর মেয়েটি রুবেলের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল, ‘ সিমা।’

রুবেল অপ্রস্তুত হয়ে বলল, ‘ না না, কাউকে হেল্প করতে গিয়ে এটুকু সীমা পার করা দোষের কিছু নয়, আপনার হাত ধরেছি আপনার উপকার করতে। ’ মেয়েটি মুচকি হেসে বলল, ‘ আরে না, আমি বলতে চেয়েছি আমার নাম সিমা।’ এতক্ষণে রুবেল বুঝতে পারলো অতি উত্তেজায় কীসব ভুলভাল বকছে। মেয়েটি চলে গেল। রুবেল আমাকে বলল, ‘ আজ বুঝতে পারলাম।’

: ‘ কী, হাইহিল পরা মেয়েদের জন্য কতটা রিস্ক তাই?’

: ‘ আরে ধুর! হিল নিয়ে যাক চিলে।

এটা বুঝতে পারলাম যে– জীবনে প্রেমের আবির্ভাব বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতই একটা ব্যাপার। একেবারে – আমি তো প্রেমে পড়িনি, প্রেম আমার পিঠের উপরে তালের মতো ধুম করে পড়েছে। কি একটা আশ্চর্যজনক ব্যাপার। যা-ই হোক, অবশেষে প্রেম যেমন সবারই জীবনে আসে, আমারও জীবনে প্রেম এসেছে, বুঝি কেউ আমাকে ভালোবেসেছে।’ বন্ধুর অনুভূতির মাত্রা দেখে খুশিতে চোখে জল টলমল করে উঠল আমার। হাতের কাছে টিস্যু থাকলে নির্ঘাত কেঁদে ফেলে বন্ধুকে বুঝাতাম তার প্রাপ্তিতে আমি কতটা আনন্দিত।

তারপর তাদের প্রেম জমে ওঠে। বন্ধুর ভালোবাসার গভীরতা বাড়ে, কিন্তু বন্ধুর প্রেমিকার বাড়ে না। দু’বছর পরে হঠাৎ মেয়েটি সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। আর কোনো খোঁজ নেই তার। আজ পাঁচ বছর হয়ে গেল, বন্ধু এখনো তার অপেক্ষায়। মাঝে মধ্যে বলি ভুলে যা ওসব। বন্ধু মনমরা হয়ে বলে, ‘ হাজার জনের ভিড়ে মন একজনের প্রতি’ই দূর্বল হয়, তাকে কী কখনও ভোলা যায়!’

বন্ধুর ফোন কখনও বন্ধ পাইনি, কারনটা জানি, সিমা হঠাৎ করে যদি কখনও কল দেয়, তখন যদি মোবাইল বন্ধ থাকে তাহলে তো মিস হয়ে যাবে। এক মূহুর্তের জন্যও বন্ধু ভুলতে পারেনা সিমাকে। কখনও দেখি দুচোখ ভাসায় জলে, মনে মনে ভাবি– একেই ভালোবাসা বলে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত