সকালবেলা ঘুম থেকে জেগে দেখি বিছানায় বউ নেই।নতুন বউ এতো সকালে উঠে একাই বাইরে বের হবে ভাবিনি।দেখে তো লাজুক মনে হয়েছিল মেয়েটিকে।ভালোই হয়েছে,মা একজন চটপটে বউ চেয়েছিল পেয়ে গেছে।বিছানা থেকে উঠে পড়লাম।আলসেমির রেশ শরীর থেকে এখনো পুরোপুরি কেটে ওঠে নি।বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।
হঠাৎ ঘরের কোণে রাখা ছোট্ট টেবিলের দিকে চোখ পড়লো।একটি চিরকুট রাখা।হাতে নিলাম।ভাঁজ খুলে পড়তে শুরু করলাম। অহর্নিশ সাহেব, আপনি হয়তো কল্পনাও করেন নি আপনার আজকের সকালটা এতো বেশি খারাপ হবে।আমিও কল্পনা করিনি আমি কাউকে কষ্ট দেব।আমাকে ক্ষমা করবেন।আর আমার মনে হয় আপনার আম্মুর মতো শ্বাশুড়ি পাওয়ার ভাগ্য আমার হয়নি।তাকে আমার সালাম দিবেন।ভালো থাকবেন। তাসফিয়া জান্নাত চিরকুট পড়ার পর আমার কেমন প্রতিক্রিয়া করা উচিত বুঝতে পারলাম না।চিরকুটটি ভাঁজ করে পকেটে রেখে ওয়াশরুমের দিকে রওয়ানা হলাম।
“আমার বিয়ে হচ্ছে।মায়ের পছন্দের মেয়ে।খুব লক্ষী আর মিষ্টি মেয়ে।মায়ের পছন্দ তাই আমার অমত ছিল না।ঘরোয়া পরিবেশেই বিয়ে সম্পন্ন হল।বাসর রাতে রুমে ঢোকার পর প্রথম মেয়েটাকে দেখলাম।কয়েক মুহূর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম।অপলক তাকিয়ে রইলাম মেয়েটির দিকে।প্রথম দর্শনেই ভেসে যাচ্ছি অচেনা, অজানা কোনো মায়ায়।ভাবলাম এটাই বোধহয় প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ার সংজ্ঞা।মেয়েটি লজ্জায় কুঁচকে যাচ্ছে।কি মায়াবী তার চেহারা।পাতলা গড়নের ঠোঁট। হাত গুলো লম্বা আর সরু।আমি বরাবরই লাজুক ছেলে ছিলাম।তবে কোনো এক অজানা কারণে আমার সমস্ত লজ্জা সাহসে রুপান্তর হয়ে গেল।আমি মিষ্টি হেসে কথা বলতে শুরু করলাম।বললাম,’আমি অহর্নিশ।অহর্নিশ শেখ।’ কথা শেষ করে মেয়েটার উত্তরের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম।কিন্তু কোনো সাড়া পেলাম না। কথা বাড়ানোর জন্য বললাম,’আমি মাল্টিন্যাশনাল কথা শেষ করার আগেই মেয়েটি বললো,’আমি পানি খাবো।’
কথায় বাধা পেয়ে একটু দ্বিধান্বিত হলাম।নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে জগ থেকে পানি ঢেলে এগিয়ে দিলাম মেয়েটির দিকে।গ্লাস হাতে নিয়ে এক চুমুকেই সবটুকু পানি শেষ করে ফেললো।গ্লাস রেখে বুক ভরে লম্বা একটি দম নিলো।তারপর মাথা একটু নিচু করে মৃদু কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’আপনি আমায় বিয়ে করেছেন কেন?’ কেন বিয়ে করেছি এরকম প্রশ্ন করলে কেমন জবাব দেয়া উচিত চিন্তা করেও খুঁজে পেলাম না।তাই স্বাভাবিক স্বরেই বললাম,’আমার আম্মু আপনাকে পছন্দ করেছে তাই বিয়ে করেছি।’ মেয়েটি আমার কথা শুনে কি ভাবলো বুঝতে পারলাম না।কারণ ওর মুখ নিচের দিকে। মেয়েটি আবারো প্রশ্ন করলো,’তাহলে তো আপনার প্রেমিকা কে আপনি ধোঁকা দিয়েছেন আপনার মায়ের জন্য।আপনি তো ধোঁকাবাজ।’
আমি এবার হেসে ফেললাম।একটু আওয়াজ করেই।মেয়েটি বিস্মিত মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকালো।সাথে সাথে বুকের মধ্যে কেউ একজন হাতুড়ি দিয়ে সজোড়ে আঘাত করলো।দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার যোগাড়।নিজেকে সামলে নিতে বেশ বেগ পেতে হলো। মেয়েটি প্রশ্ন চোখে তাকিয়ে রইলো। আমি শান্ত হয়ে বললাম,’ধোঁকা দেওয়ার জন্য একজন প্রেমিকা তো প্রয়োজন।’ ‘তো আপনি কি প্রেমিকা ছাড়া প্রেম করেন নাকি?’,বিরক্ত হয়েই জিজ্ঞেস করলো। আমি হেসে হেসেই উত্তর দিলাম,’প্রেম করলে তো প্রেমিকা থাকবে।’ মেয়েটি মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,’অ,তাহলে ছেকা খেয়েছেন।তাইতো?’ ‘নাহ্।আমি কোনোদিন প্রেম ই করি নি।’,জবাব দিলাম।’তাই ছেকা খাওয়া বা ধোকা দেওয়ার প্রশ্ন ই আসে না।’
মেয়েটি একটু রেগে গিয়ে বললো,’আপনাদের মতো লোকদের জন্যই আমাদের যত সমস্যা। নিজে তো প্রেম করেন ই না।আবার অন্যের প্রেমিকা কে বিয়ে করে নিয়ে আসেন।এজন্য মেয়েদের নাম হয় ধোঁকাবাজ।যত্তসব ফালতু লোক কোথাকার।’ মেয়েটির কথা শুনে জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়লাম আমি। কি বলবো খুঁজে না পেয়ে চুপচাপ বসে রইলাম।বেশ কিছুক্ষণ সময় নিস্তব্ধতায় কেটে গেল।তারপর হঠাৎ মেয়েটি মুখ খুললো।বললো,’আমি একটি ছেলেকে ভালোবাসি।দুই বছর হয়েছে আমাদের সম্পর্কের।বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও মুখ ফুটে বাবা কে বলতে পারি নি।তার মধ্যেই হঠাৎ আমার মা আর আপনার মা মিলে আমাদের বিয়ে ঠিক করে ফেলে।
আর বাবা মাকে খুব ভালোবাসে তাই তার মতের বিরোধিতা কখনোই করে না।আর হঠাৎ করে আপনার সাথে বিয়ে হয়ে গেল।আমার প্রেমিক আমাকে ধোঁকাবাজ ভেবে বকাবকি করছে।অনেক কান্নাকাটি করলাম।ও বললো পালিয়ে যেতে কিন্তু বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে পালাতে পারি নি।’ ‘তো বিয়ের আগে আপনার মা কে বললেই পারতেন হয়তো তিনি আপনার কথা শুনতেন আর আপনার বাবার সাথে কথা বলতেন।’,আমি বললাম। ‘অনেক চেষ্টা করেছিলাম।কিন্তু ভয়ে বলতে পারি নি। আর যেদিন বলার সিদ্ধান্ত নেই সেইদিন ই মা আপনার সাথে বিয়ের কথা বলে।মায়ের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারি নি।মা কষ্ট পাবে ভেবে।’,দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে জবাব দিলো মেয়েটি।
আবারো কি বলবো ভেবে না পেয়ে চুপ করে বসে রইলাম।আবারো বেশ কিছুক্ষণ নিরবতায় ছেয়ে গেল ঘর।দুইজন মানুষ যার যার নিজের চিন্তায় বিভোর। হঠাৎ মেয়েটি লজ্জা মাখা কন্ঠে বললো,’আমার খুব খিদে পেয়েছে।সকাল থেকে রাগ করে কিছু খাওয়া হয়নি।আর ব্যস্ততার মাঝে কেউ জিজ্ঞেস করতেও ভুলে গিয়েছিল।’ নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হলো।আমি ভেবেছিলাম রুমে ঢুকেই জিজ্ঞেস করবো। কিন্তু হঠাৎ প্রেমে পড়ায় ভুলেই গিয়েছিলাম।আমি ক্ষমার সুরে বললাম,’আমি দুঃখিত।আমার উচিত ছিল জিজ্ঞেস করা।ভুলে গিয়েছিলাম।কিছু একটা নিয়ে আসছি।’
রুম থেকে বের হলাম।রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম কিছুই নেই।মা কে ডাকতে গেলাম শুয়ে পড়েছে।রাত প্রায় ১২ টা বাজে।ডাকতে গিয়ে লজ্জাও লাগলো যে নতুন বউয়ের খিদে পেয়েছে বলে আমি মা কে ঘুম থেকে ডাকছি।সেজন্য আর ডাকলাম না।নিজেই কিছু বানানোর জন্য এগিয়ে গেলাম।ফ্রিজ থেকে দুইটা ডিম বের করলাম।এক বোতল কোক বের করলাম।ডিম দুইটা ভেজে নিলাম।তারপর সেগুলো নিয়ে রুমে চলে গেলাম।মেয়েটি বিছানায় ই বসে ছিল।আমাকে দেখে উঠে দাড়ালো।আমি ডিম আর কোক এগিয়ে দিয়ে বললাম,’রান্না ঘরে কিছু নেই।আর এতো রাতে খাবার জন্য আমি কাউকে কখনো ডাকিনি।সেজন্য দুইটা ডিম ভেজে নিয়ে আসছি।জানি এতে হয়তো আপনার কিছু হবে না।তবুও খেয়ে নিন কিছুটা ভালো লাগবে।’ মেয়েটি ডিম খেতে খেতে বললো,’আপনিই ভেজেছেন!একদম খারাপ না।যথেষ্ট ভালো।ধন্যবাদ।’
আমি হাসলাম।কোকের বোতল এগিয়ে দিলাম।মেয়েটি কোক নিতে নিতে বললো,’আমার নাম তাসফিয়া জান্নাত।’
‘সুন্দর নাম।মায়ের মুখে শুনেছিলাম।’,আমি বললাম। জান্নাত আমার দিকে তাকালো তারপর কোকের বোতলে চুমুক দিলো।বোতল রেখে বললো,’আমাকে কখনো আপনি দেখেন ই নি। তবুও আপনার মায়ের কথায় আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলেন!কেন?’ ‘আমার মা সবসময় ই একজন মেয়ে খুজতো, ছেলের বউ না।তাই যাকে তার কাছে নিজের মেয়ের মতো মনে হয়েছে তাকেই এনেছে।এখানে দ্বিমত পোষণ করার কোনো কারণ নেই।’,জবাব দিলাম। জান্নাত কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো।তারপর বললো,’আপনি কখনো প্রেম করেন নি কেন?’
আমি হাসলাম।বললাম,’ছোটবেলায় ভাবতাম বড় হলে প্রেম করবো আর বড় হয়ে ভাবতাম বিয়ের পর করবো।এজন্য কখনো কোনো মেয়ের আশেপাশে যেতাম না।আমার কোনো বান্ধবীও ছিল না।আর আমি এখন পর্যন্তও কোনো মেয়েকে স্পর্শও করিনি। কারণ আমার ইচ্ছা ছিল আমার স্ত্রীই হবে আমার জীবনের প্রথম নারী।আর এজন্যই আমি ধৈর্য সহকারে নিজেকে সংযত রেখেছি যাতে আমার স্ত্রীর প্রথম পুরুষ আমি হতে পারি।’ জান্নাত আমার দিকে যে দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সে দৃষ্টির বর্ণণা দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই।তবে সেখানে মায়া ছিল অসীম আকারে যা কোনো দিন ভুলবো না।আমি বেশিক্ষণ ওর মায়ায় ভরা চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারলাম না।বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম।”
ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজের মুখ দেখছিলাম আর গতরাতে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মনে করছিলাম।মুখে পানির ঝাপটা মারলাম।আয়নায় আবার তাকালাম।মৃদু হাসি মুখে রেখে বললাম,’কোনো ব্যাপার না।ভালো কিছু ঘটতে যাচ্ছে তোমার সাথে।অপেক্ষা করো।ধৈর্য ধরো।’ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে রুমে ঢুকলাম।পেছনদিকের বারান্দায় পাতা বেতের চেয়ারে হেলান দিয়ে আরাম করে বসলাম।দড়জায় কেউ একজন নক করছে। তার জবাব না দিয়ে সামনের দিকে তাকালাম।প্রথম প্রেমের ইতি এতো দ্রুত ঘটবে অকল্পনীয় ছিল ব্যাপারটা।
কালো রংয়ের বোরকা পড়া মেয়েটি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে।খুব দ্রুত নড়ছে চোখের মনি।কোনো একজন কে খুজে বেড়াচ্ছে।হঠাৎ এক জায়গায় স্থির হলো। পেয়ে গেছে সন্ধানকারী লোকটাকে।লোকটি এগিয়ে আসছে বোরকা পড়া মেয়েটির দিকে।হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরার জন্য অগ্রসর হলো কিন্তু মেয়েটি সরে গেল।বললো,’এসব আমার পছন্দ না।’ ছেলেটি কিছু না বলে হাসি মুখে বললো,’ঠিক আছে জান্নাত।কেউ কিছু বোঝে নি তো?’ জান্নাত মাথা নেড়ে উত্তর দিলো।কেউ কিছু বোঝে নি। দুইজন দ্রুত স্টেশনে পৌছে গেল।ট্রেনের আসতে কিছুটা দেরি হবে।লোকটি ফার্স্ট ক্লাসের দুইটা টিকেট কেটেছে।একটা চেয়ারে জান্নাত আর লোকটি বসলো।মাঝখানে বেশ কিছুটা জায়গা ফাঁকা ।লোকটি বললো,’জান্নাত কিছু খাবে।’
জান্নাত বললো,’নাহহ।’ দুইজন চুপ করে রইলো।কেউ কোনো কথা বলছে না। বেশ কিছুক্ষণ পর লোকটি বললো,’তোমার কিছু হয়েছে জান্নাত?এমন মন মরা হয়ে বসে আছো কেন?’ জান্নাত কোনো জবাব দিলো। শুধু ছেলেটির চোখের দিকে একবার তাকালো। দুপুর হয়ে গেছে। ট্রেন আসার নাম নেই।লোকটি স্টেশন মাস্টার কাছ থেকে খবর নিয়ে জানলো ট্রেনের ইঞ্জিনে সমস্যা হয়েছে।আসতে আরো দুই ঘন্টা দেরি হবে। জান্নাত বেশ অবাক হচ্ছে যে এখনো কেউ ওকে নিতে আসছে না কেন?অহর্নিশ কি কাউকে জানায় নি তার পালিয়ে যাওয়ার কথা?ও নিজেও তো আসছে না তার খোঁজে।
লোকটি জান্নাতের পাশে এসে জায়গা রেখে বসলো।জান্নাত ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,’দুর্জয়,কখনো কি তোমার এমন মনে হয়েছে যে তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে নিজের অস্তিত্ব ভুলে গেছ। আমার অর্ধেক মনে করে নিজেকে আবিষ্কার করেছো কখনো?কখনো আমার চোখে তোমার জন্য মায়ার ঝলকানি দেখেছো?কখনো এমন হয়েছে যে তোমার অনুভুতি গুলো আমি ছাড়া শুন্য?’ দুর্জয় হকচকিয়ে গেল জান্নাতের কথা শুনে।এমন কিছু ওর সাথে কোনো দিনই হয়নি।মিথ্যা বলতেও জানে না দুর্জয়।জান্নাত কে রোজ দেখতো।ওর পিছু নিতো ভালো লাগতো ব্যাস এটুকুই।এই জন্য রোজ প্রপোজ করতো।একদিন ইমপ্রেস আর কিছুটা কিউরিসিটির জন্যই রাজি হয়ে যায় জান্নাত।এতোটা গভীর অনুভুতি কখনো কল্পনাও করে নি দুর্জয়।
জান্নাত বললো,’আমার হয়ছে।ওর চোখের তারায় হারিয়ে গেছি।আমি খুজে পাচ্ছি না নিজেকে।আমরা পালিয়ে যাচ্ছি আমার খুশি হওয়া উচিত কিন্তু মনে হচ্ছে কেউ একজন আমাকে ধরে নিয়ে যাক ওর কাছে।প্রকৃতিও চাচ্ছে না আমরা পালিয়ে যাই।ট্রেনের ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে গেল।আমার যেতে হবে দুর্জয়।ফিরে যেতে হবে।ও বসে আছে আমার অপেক্ষায়। ফিরে যেতে হবে আমাকে।’ ‘কি বলছো এসব?এমন কিছুই না।আমি তোমাকে ভালোবাসি তুমিও আমাকে ভালোবাসো।আর কি লাগবে?’,দুর্জয় বললো। ‘নাহ্।আমি তোমাকে ভালোবাসি না।ওটা ছিল সহানুভুতি।আর তুমিও আমাকে ভালোবাসো না।তুমি বিভ্রান্ত।ওটা তোমার কল্পনা।তুমি ফিরে যাও দুর্জয়।খুঁজে নাও যাকে তুমি ভালোবাস।খুঁজে নাও যার চোখের মায়ায় নিজেকে হারিয়ে ফেল।যাও।’,বলেই অহর্নিশের বাড়ির দিকে হাটা দিল জান্নাত।
দুর্জয় বসে রইলো।পকেট থেকে টিকেট বের করলো।হেসে ফেললো।টিকেট ছিড়ে হাসতে হাসতে চলে যেতে লাগলো।সত্যি ভালোবাসার খোঁজে।যার চোখের মায়ায় হারিয়ে যাবে তার খোঁজে। বাড়ির পেছন দিকের দড়জা খুলে গেল।তাকিয়ে দেখলাম বোরকা পড়া একজন মেয়ে এগিয়ে আসছে।বুকের ভিতর ধ্বক করে উঠলো। জান্নাত নয়তো ও? রুম থেকে তাড়াহুড়া করে বেরিয়ে পড়লাম।আমাকে দেখে মা বললো,’এতোক্ষণ দড়জা খুলছিলি না কেন?কখন থেকে ডাকছি।’
আমি কিছু না বলে দৌড় দিলাম।মা খুব ভালো করে বোঝে আমাকে।এজন্য দড়জা না খোলাতেও চিন্তিত হয়ে পড়েনি।আমি বাড়ির পেছন দিকে যেতেই মেয়েটি দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়লো বুকে।শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।বললো,’আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমি তোমাকে হারাতে চাই না।ভালোবাসি তোমাকে খুব বেশি।প্রথমবার তোমার চোখের দিকে তাকিয়েই প্রেমে পড়ে গেছি।’
আমিও বললাম,’আমিও ভালোবাসি আমার বউকে।আমিও প্রথম দেখায় প্রেমে পড়ে গেছি তার।’ বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো জান্নাত।তারপর বললো,’আমার জীবনের প্রথম পুরুষ কিন্তু আমার স্বামীই।যদিও আমি প্রেমে পড়েছিলাম আসলে ওটা প্রেম নয় বিভ্রান্ত ছিলাম। তবে কখনো কেউ স্পর্শ করে নি আমাকে।আমাকে প্রথম স্পর্শ আমার স্বামীই করলো।’ আমি হেসে ফেললাম।বাড়ির দিকে গেলাম।পেয়েছি আমার প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা, প্রথম স্পর্শ,প্রথম অনুভুতি।