“আজ থেকে আমাদের এখানেই ব্রেকআপ।” কথাটা বলেই আমি প্রিয়াশার দিকেতাকালাম। ও আমার দিকে নরম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল কিছুক্ষন। আমি ওর দিকে শান্ত চোখে চেয়ে থেকে রিএ্যাকশন টা দেখারজন্য প্রস্তুত হলাম। কিন্তু ও মাথাটা নিচু করে বেশ খানিক্ষন চুপ করে রইল। আমি আবার যখন বললাম “আজকের পর থেকে আমাকে কল দিবা না।” প্রিয়াশা আমার দিকে তাকিয়ে বলল “ব্রেকআপ কেনো করছো? আমি কি করলাম?” আমি কিছুই বললাম না। বিকেলের নরম রোদ যখন আমার মুখে এসে পড়ল আমি সেদিকে তাকালাম। সূর্যটা তার ঘরে ফেরার দিকে অতিবাহিত হচ্ছে। কয়েক যুগল কাপল আমাদের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। একজোড়া কাপলের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ছেলেটা মেয়েটির হাত ধরে হাটছে পাশের রাস্তায়। মেয়েটা পরম শান্তিতে ছেলেটির কাধে মাথা রেখে হাতটা জড়িয়ে হাসি হাসি মুখে চলে গেল। “আমরাও কিন্তু ওভাবে হাঁটতে পারি। চলো হাটি।
প্রিয়াশার দিকে তাকালাম। ও আমার দিকে একটু সরে এসে বসল। কিন্তু আমিও উলটো দিকে সরে আসলাম। প্রিয়াশা এবার বেশ গম্ভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। “কি সমস্যা কি তোমার? এমন কেনো করছো? দেখো আবির, ফাইজলামির একটা গতিবিধি আছে। সবসময় এমন ভালো লাগে না।” আমি প্রিয়াশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম। চুইংগাম চিবাতে চিবাতে বললাম “আমি কখন ফাইজলামো করছি? যা বলেছি সেটাই সত্য। ব্রেকআপ মানে ব্রেকআপ। কখনো কল দিবানা বুঝেছো?” প্রিয়াশার চোখ মুখ কেমন যেন লালচে বর্ণ ধারন করা শুরু করে দিয়েছে। ওর মেকাপহীন নাকের ডকাতে ঘাম জমতে শুরু করেছে। আমি কয়েকহাত দুরে বসে একটি কাপলদের দিকে তাকালাম।
ছেলেটা মেয়েটিকে ডান হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বসে আছে। আর মেয়েটি ছেলেটির সাথে বসে খুনসুটি করতে ব্যস্ত। ছেলেটি বলে “তোমাকে সারা জীবন এভাবে পাশে রেখে মনের সব জমা কথাগুলো বলতে চাই। তোমাকে দেখতে চাই। তোমার চোখের দিকে তাকালে আমি সবটা দেখতে পাই।” কথাটি শুনে আমার মনে হল এবার মনে হয় কেউ এসে বলবে “ভাই আমার গরুটা হারিয়ে গেছে দয়া করে ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে একটু খুজে দিন না গরুটা কোথায়?” কিন্তু না এমন হল না। তাই ভাবলাম আমিই যেয়ে এমন করি। কিন্তু তখনি প্রিয়াশা বলল “আবির কি হয়েছে তোমার? হঠাৎ এসব কথা কেনো বলছো?” আমি প্রিয়াশার দিকে তাকিয়ে বললাম “কিছুই হয়নি। আসলে আজকাল কেমন যেন লাগছে। সম্পর্কটা একঘেয়েমি হয়ে গেছে। একটু পরিবর্তন আনা দরকার। যদিও এই পরিবর্তন কয়েকদিন থাকতে পারে বা আবার কয়েক বছরও। তাই ব্রেকআপ করে রাখছি।”
প্রিয়াশা এবার কেঁদেই ফেললো। তবে আমাকে সে বুঝতে দেয়নি। ওর নাকের ডগা বেশ লাল হয়ে গেছে। আচ্ছা কাঁদলে কি মেয়েদের নাকও কোনোদিন লাল হয়? কিন্তু এই মেয়েটার নাক লাল হয় মন খারাপ কিংবা কান্নার সময়। কতবার যে ওর মন খারাপ করিয়ে নাক লাল করে টেনে দিয়েছি। ভাগ্যিস যেদিন যেদিন নাক টেনে দিতাম সেদিন ওর কোনো নাকে সর্দি থাকতো না। যদি নাকে সর্দি থাকতো তাহলে কেমনডা যে হইত। ইয়াক। “আবির, আমি চলে গেলে তুমি খুশি হবে?” আমি ঝটপট বলে দিই “খুশি হবো কি না জানিনা..তবে মনে হয় অনেকদিন বেশ আরামে কাটবে। তোমার কথা ভাবতে হবে না। একটু নতুনত্ব পাবো। বেশ মজার হবে।” প্রিয়াশা এবার চোখের পানি মুছলো না। শব্দহীন কান্না প্রতিশ্রবন কেউ না শুনলেও আমি শুনেছি। প্রিয়াশা ওঠে দাঁড়িয়ে কপট অভিমানে বলল “বেশ, তুমি যখন আমাকে চাও না তখন আর তোমার কাছে থেকে কি করবো? পরিবর্তন আর নতুনত্ব নিয়েই তুমি থাকো।”
আমি বললাম “হুমমম থাকতে তো হবেই। বিখ্যাত বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছে “মানুষের মন ও মস্তিষ্ক এই দুটি জিনিসের মধ্যে আংশিক মিল থাকলেও অনেকটা অমিল আছে। কারন মস্তিষ্ক কাছের মানুষকে নিয়ে ভাবতে চাই না, কিন্তু এই মন সবসময় ভাবায়। তবে আমার ক্ষেত্রে তার উলটো হয়েছে। তোমাকে নিয়ে আজকাল ভাবতে আমার একদমই ভালো লাগে না।” প্রিয়াশা আর কিছুই বললো না। সে খানিকটা সময় অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে চলে গেল। আমি সেখানেই বসে রইলাম। টি.এস.সির প্রাঙ্গনে নেমে আসছে সন্ধ্যার কালো রং। সূর্যটা তখনো বেশ লাল হয়ে লালচে আলো ছড়াতে ব্যস্ত। কি বিশাল তাপদাহ সূর্য এখন কেমন যেন মিষ্টি লাল রং হয়ে আছে।
আচ্ছা সূর্য কি কখনও মিষ্টি হয়? কারো কাছে জানতে হবে একদিন। জানিনা আজকাল কি হয়েছে আমার। কেমন যেন সবকিছুই প্রতি আগ্রহীন হয়ে যাচ্ছি। কেউ যদি এসে বলে “আবির তোর বাড়ির সামনে এলিয়েন এসেছে দেখবি চল।” আমি তখনি বলে দিবো “এলিয়েন এসেছে তো কি হয়েছে? ওদের এত দেখার কি আছে? যত্তসব”। লাল সূর্যটা তলিয়ে গেল সাদা নীল আকাশের গহ্বরে। কাপলগুলো তাদের প্রেয়শিনীকে নিয়ে বাড়ির পথে হাটা ধরেছে। আমি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখছি শুধু। কোনো কোনো কাপল এক রং এর জামা পরে এসেছে। আবার কেউ পরেনি বলে রাগ দেখাচ্ছে আর বাকিজন তাদের রাগ ভাঙাতে ব্যস্ত হয়ে নানা রকম কথা বলছে। আমি কেবল হাসি হাসি মুখে দেখতে থাকি। চারিদিকে সন্ধ্যা পড়ে গেছে।
যাই এবার বাড়ির দিকে। বেশ অনেকদিন যাবত শান্তিতে ঘুমায়নি। প্রিয়াশার টেনশন, কখন কি করছি না করছি সবকিছুই জমাখরচ কেমন যেন হয়ে গেছে। আহা আমারো ব্রেকআপ হয়েছে। ভাবতেই বিষয়টা অনেক মজার লাগছে। ল্যামপোষ্টের আলোতে পকেটে হাত গুজে হাটতে থাকি। বেশ কিছু সময় হাটার পর বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে আজ কেউ নেই। মা,বাবা,বোন গিয়েছে নানুর বাড়িতে। বাড়িটা আজ একদমই ফাঁকা। সোজা রুমে চলে আসলাম। ফোনটাকে সাইলেন্ট মুডে রেখে মিউজিক বক্সে জাসটিন বেইবারের ইংলিশ গান চালিয়ে শুয়ে পড়লাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম বুঝতেই পারলাম না। যখন ঘুম ভাংলো তখন দেখি রাত ১২ টা অভার হয়ে গেছে। ফোনটা হাতে নিলাম। ৬১ টা মিসড কল আর ১৭টা মেসেজ উঠে আছে।
৭ টা আম্মুর কল, ২ টা বাংলালিংক কোম্পানি থেকে আসা কল। আর বাকি ৫২ টা কল প্রিয়াশার এবং সবকয়টা মেসেজ ওর। প্রথমেই আম্মুকে কল দিলাম “কি রে বান্দর ছেলে,কখন থেকে কল দিচ্ছি রিসিভ করিস না কেন? তোর জন্য দেখ ফ্রিজে খাবার রেখে এসেছি খেয়ে নিস।” কল কেটে দিলাম। সিগারেট জ্বালাতেই মনে হল প্রিয়াশা যেন বলছে এরপর থেকে যদি সিগারেট খাও তো তোমার সাথে বসে আমিও খাবো। সিগারেট ফেলে দিলাম। মেসেজগুলো চেক করলাম। সেখানে লেখা “নিজের খেয়াল নিও, রাত জেগে ভিডিও গেম খেলবা না, রাত জাগলে তোমার মুখের ব্রর্ণ গুলো বড় বড় হবে, বেশি ফাজলামো করবে না। আর আমার কথা একদমই ভাববে না। তোমাকে আর কখনই কল দিবো না প্রমিস, মেসেজও দেবো না। ভালো থেকো। তোমার প্রহর চেয়ে বিকেলের নরম রোদ হয়ে বসে আলো ছড়াবো না আমি আর।
মেসেজগুলো পড়ে হঠাৎ মনটা কেমন যেন করে উঠল। প্রিয়াশার লালচে নাকের আভাটা আমার চোখে বারবার ভাসতে লাগল। যখন আমি ওকে রাগিয়ে দিতাম তখন ও আমার চোখে ওর চিকন আংগুল ঢুকিয়ে নাড়িয়ে দিত। সবকিছুই চোখের সামনে কেমন যেন ভাসতে থাকে। তবে কি আমি প্রিয়াশাকে সত্যিই হারাতে দিতে চাই না? ধুরর আজই তো ব্রেকআপ করলাম।
কয়েকদিন শান্তিতে থাকবো বলে। আচ্ছা সে কেনো মেনে নিল আমি ব্রেকআপ বলেছি বলে? সে কেনো জড়িয়ে ধরে বলেনি “আবির তুমি আমার, তোমাকে ছেড়ে কখনই যাবো না।” ধুরর ও বলেনি তাহলে আমারই তো অনেক ভালো। বেশ খানিক্ষন গম্ভীর হয়ে প্রিয়াশার কথা না ভাবতে চাইলেও অজান্তেই ভাবনাতে চলে আসছে। এবার মস্তিষ্ক প্রিয়াশাকে নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে না কিন্তু মন নামক ছন্নছাড়া বস্তুটি ঠিকই প্রিয়াশার জন্য কেমন করছে। নিখুচি করে ব্রেকআপের। প্রিয়াশাকে আমার চাই চাই। ও মেয়েটা ছাড়া আমার একদমই চলবে না। কল দিলাম প্রিয়াশাকে। কিন্তু রিসিভ হল না। বারবার দিতে থাকি কিন্তু ওপাশ থেকে কোনো সাড়া নেই। মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল। বারবার মনে হতে লাগল আমি কি তবে প্রিয়াশাকে হারিয়ে ফেললাম? নাহ আর ভাবতে পারছি না। এখনি ওর সাথে আমার দেখা করা দরকার।
রাত ১ টা বাজে। বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রিয়াশার বাড়ির দিকে হাটা শুরু করেছি। ফ্রিজে থাকা ছোটো বোনের জন্য আনা কোণ আইস্ক্রিম নিলাম প্রিয়াশার জন্য। যদিও এটা যেতে যেতে গলে যাবে। আর বোনের ঘরে থাকা বোতলের পানিতে টাটকা রজনীগন্ধা ফুল নিলাম। প্রিয়াশার কথা বেশ মনে পড়ছে। বাড়ি থেকে যেতে ওদের বাড়ি অবদি ২০ মিনিট লাগবে। মেয়েটাকে আমি বড্ড ভালোবাসি। প্রিয়াশারা যখন আমাদের কলনোতি চলে আসে তখন থেকেই ওর সাথে লাইন মারার চেষ্টা করেছি আমি। ওকে রোজ দেখতাম আমি কলেজে যেত। আমি সাইকেল চালিয়ে ওর পিছু নিতাম। বাড়ির সামনে প্রতিদিন কম করে হলেও ১৫-১৬ বার সাইকেল চালিয়ে ঘুরেছি। কিন্তু কোনোদিন ভয়ে বলতে পারিনি ভালোবাসি।
একদিন সাইকেল চালিয়ে ওর পিছনে যাচ্ছি তখনি ও আমাকে ডাক দেয় “এই যে শুনুন,প্রতিদিন আমাকে ফলো করেন কেনো? আমি কিন্তু বুঝি যে কেনো ফলো করেন? শোনেন, যা ভাবছেন তা কিন্তু কোনোদিনও হবে না। এমন কত ছেলেই দেখেছি যে ঘুরঘুর করতে।” কি বলবো ঠিক মাথায় আসছে না। জানিনা কি মনে হল সাইকেল থেকে নেমে বেশ সাহসের একটি কাজ করে বসি। সোজা যেয়ে ওর হাত ধরে গড়গড় করে বলে দিলাম “দেখো মেয়ে, তোমার অস্তিত্বে আমার মিশে যেতে বারবার ইচ্ছে করে। মিশে যেতে ইচ্ছে করে তোমার পদ্মলতা ঐ হাসির গভীরে। তোমাকে একদিন চার রাস্তার মোড়ে দাঁড় করিয়ে সবার সামনে হাটু মুড়ে বসে কাঠগোলাপ ফুল দিয়ে বলবো ভালোবাসি। তোমার আছে অতল গভীর সব হারানোর সর্বনাশী কাজল চোখ আছে। আমি চাই ঐ দু চোখে নিঁখোজ হবার সংবাদটি সত্যি হোক !” কথাগুলো বলে আমি আর দাঁড়ায়নি সেখানে। ভেবেছিলাম মেয়েটি আমাকে ডাক দিয়ে বলবে এই ছেলে, আমিও তোমাকে ভালোবাসি।” কিন্তু কিছুই হয়নি।
আমি ভয়ে জোরে সাইকেল চালিয়ে বেশ খানিকটা দুরে এসে দেখি মেয়েটা আমার চলে আসার দিকেই তাকিয়ে আছে। তারপর আমি বেশ কয়েকদিন প্রিয়াশার সামনে আর যায়নি। একদিন ক্রিকেট খেলে বাড়িতে আসছি। দেখি প্রিয়াশা আমার ছোট বোনের সাথে বাড়ির সামনে বসে গল্প করছে। আমি ভয় পেলাম। বাড়িতে বলে দিলো নাকি সব? কিন্তু নাহ, যখন কাছে আসলাম তখন আমার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে চলে গেল। সেখানে লেখা ছিল ওর ফোন নাম্বার। তারপর থেকে আস্তে আস্তে শুরু হয় আমাদের ভালোবাসার পথচলা। পরে অবশ্য শুনেছিলাম কয়েকদিন আমি সামনে না যাওয়াতে বালিকার নরম মনটা আমার টানে শক্ত হয়ে ভেঙে যেতে বসেছিল বলে চলে এসেছিল বাড়িতে।
হাঁটতে হাঁটতে কখন যে প্রিয়াশার বাড়ির সামনে চলে এসেছি দেখতেই পারিনি। হাতে থাকা আইস্ক্রিমটা কখন যে গলে পানি হতে শুরু করে দিয়েছে খেয়াল করিনি। ফোনটা বের করে প্রিয়াশাকে মেসেজ দিলাম। আমি জানি প্রিয়াশা এখনো ঘুমায়নি। আমার কল না রিসিভ করলেও ঠিকিই সে স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে যেন আমি আরো আরো কল দিই। মেসেজে লিখে দিলাম “তোমার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি। একবার আসবে প্লিজ? মেসেজ টা সেন্ড হওয়ার সাথে সাথেই দেখি দুইতলার বাড়ির উত্তর পাশের ঘরের আলো জ্বলে উঠল। রাস্তার পাশ থেকে ওর ঘরটা দেখা যায়। একটি ছায়া মূর্তি সাথে সাথেই নেমে আসার চিত্র দেখতে পারছি। বাড়ির দারোয়ান আজ গেটে নেই দেখে বেশ অবাক হলাম। প্রিয়াশা আমাকে দেখে শান্ত চোখেই চেয়ে রইল। অভিমানি কন্ঠে বলল
– এখানে কেনো আসছো?
– তোমাকে দেখতে। (আমি)
– কেনো আসছো? বিকেলেই তো ব্রেকআপ করেছো?
– হুমম তা করেছি। আচ্ছা আগে ধরো এই নাও ফুল, আর পানি আইস্ক্রিম।
– নেবো না।
– আরে নাও তো। তারপর বলো দারোয়ান বেটা কই গেছে?
– ওকে বলেছি ঘুমাতে। কারন আমি জানি তুমি আসবে।
আমি বেশ অবাক হলাম। আমি তো একবারো বলিনি আমি আসছি? তবে সে কি করে জানলো? এটাই কি তবে ভালোবাসা? প্রিয়াশা আমার হাত থেকে এগুলো নিয়ে নিল। আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। চোখের কার্ণিশে তখনো চোখের জল ছলছলিয়ে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু ওর মুখে একটি প্রশান্তের হাসি। আমি কতক্ষন ওর হালকা কান্না আর হাসি মিশ্রিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।
– আমাকে কেনো দেখতে এসেছো?
– জানিনা.. কোনো কোনো প্রশ্নের উত্তর সহজ হলেও দিতে কঠিন হয়ে যায় বা ইচ্ছে করে না। তবে এটা জানি যে তোমাকে এখন না দেখলে যেন মনের বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল।
– কেনো তোমার আইনস্টাইন কি বলেছে, ভুলে গিয়েছো?
– আরে পাগলি উনি এমন কিছুই বলেনি। ওনার থিওরি টা আমি নিজেই বানিয়ে বলেছিলাম। দুজনেই চুপ হয়ে গেলাম। ল্যামপোষ্টের আলোতে প্রিয়াশাকে আরো ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। ওর নাকটা তখনো লাল হয়ে আছে। ইচ্ছে করছে এখনি টেনে দিই। কিন্তু ভয় হচ্ছে। আমি প্রিয়াশার দিকে একটু সরে গেলাম। কিন্তু ও এবার উলটো পিছিয়ে গেল। ওর মুখে এবার দুষ্টামির হাসি।
– তুমি অনেক শয়তান। খালি কষ্ট দাও আমাকে।
– কাছের মানুষগুলো না এমনি হয়। কষ্ট দেয়ার পরই দেখো আবার উলটো কষ্ট পাই তারা।
– হুমম
আমি প্রিয়াশার হাত ধরলাম। সে একটু কেঁপে উঠল। আমার দিকে সে অপলক তাকিয়ে রইল। মনের মধ্যে বহমান অনাক্রান্ত ঝড়ের আভাস যেন থমকে গেছে। কি সাংঘাতিক ব্যাপার এইটা। কাছের মানুষটাকে হারানোর ভয়ে মনের প্রকৃতিতে ঝড়ের আভাস তৈরী হয় আবার সেই প্রকৃতিতে ঝড়টা তখনি থেমে যায় যখন মানুষটাকে খুব করে কাছে পেলে। কারন হলো আপনার মনের শহর জুড়ে ঐ মানুষটাই তো আপনার প্রকৃতি। প্রিয়াশা আমাকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল “বড্ড ভালোবাসি তোমাকে। তোমার অস্তিত্বে আমি মিশে যেতে চাই রোজ সকালে, রোজ বিকালে, রোজ জ্যোৎন্নামৃদ রাতে।” আমিও প্রিয়শাকে জড়িয়ে ধরলাম। একটু পর ছেড়ে দিয়ে ওর দিকে তাকালাম। ওর নাকটা তখনো লাল হয়ে আছে। এবার আর দেরি করলাম না। সাথে সাথেই নাক টেনে দিলাম। আর যা হলো তা দেখার জন্য রাসেল ভাই আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। ধুরর ভূত এফএম এর রাসেল ভাই আবার কেনো আসলো।
সে যাই হোক, এইবার সত্যিই প্রিয়াশার নাকের সর্দি আমার হাতে লেগে গেল। আমি ইয়াক বলে ছোট্ট চিৎকার দিলাম। প্রিয়াশা কিন্তু জোরেই হেসে দিল। আমি ওর দিকে সর্দি লাগা হাত নিয়ে তাকিয়ে রইলাম রাগি দৃষ্টিতে। প্রিয়াশা হাসতে হাসতেই বলল “কি করবো বলো, তোমার জন্য কাঁদতে কাঁদতে সর্দি লেগে গেছে। ঠিক হয়েছে আমাকে কাঁদানোর শাস্তি।” কিছুই বললাম না আমি। ওর দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বললাম “যাও ব্রেকআপ। আজ থেকে আর কল দিবা না।” প্রিয়াশা হাসলো। তারপর ওর ওড়না দিয়ে আমার হাত মুছে দিয়ে বলল “বাসায় যাও অনেক রাত হয়েছে। বাসায় যেয়ে খেয়ে কল দিবা। সারারাত কথা বলবো।”
প্রিয়াশার থেকে চলে আসলাম অনেকটা দুর। পিছনে তাকিয়ে দেখি ও গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। আমি হাসলাম। দুর থেকেই ওর চেহারাটার প্রতিচ্ছবি আংশিক দেখা যাচ্ছে। দুই পকেটে হাত গুজে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। যাই বাড়িতে যেয়ে শুয়ে শুয়ে নিজের টাকা পুড়িয়ে কল দিতে হবে তো তাকে। সিম কোম্পানি গুলো নির্দয় খুব। রাতে কথা বললেও টাকা এত পরিমানে কাটে। কিন্তু কি আর করার,অবশেষে দুজনে মনের সংবিধানে ভালোবাসার শপথ পড়েছি।
(সমাপ্ত)