খুনসুটি

খুনসুটি

ভাইয়া রে তোর ফোন টা না আমার হাত থেকে পড়ে গিয়ে গ্লাস প্রোটেকটর টা ভেঙে গেছে।

_দেখি এদিকে নিয়ে আয়।

ফোন টা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে ভাইয়ার সামনে দাঁড়াতেই গালে ঠাস করে এক চড় মেরে বললো আয়ছে ফোন ভেঙে আবার সাহস করে বলতে, এমন সাহস নিয়ে ঘুমাস ক্যাম্নে রে ছেমড়ি? আমি গালে হাত দিয়ে ধরে মুখটা বাংলার পাঁচের মত বানিয়ে চুপচাপ সরে আসলাম।ওর সামনে দাঁড়িয়ে ঢং করে কান্না করতে গেলে আরো চড় খেতাম এই ভেবেই তাড়াতাড়ি রুম থেকে চলে এসে মায়ের কাছে নালিশ করলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ে কুরআন তেলাওয়াত করিনি বলে মা আমার কথায় পাত্তা দিলো না। আমি গালে হাত ঘষতে ঘষতে, জোরে জোরে বলতে লাগলাম কুত্তা তোর ফোন চোরে নিবো, চার্জার ইন্দুরে খাইবো, তোর বউয়ের প্রতি মাসে হালি হালি মাইয়া হইবো এক নাগাড়ে বলে রাগ মিটালাম।ভাইয়া ওপাশ থেকে একবার খালি বললো আমি আবার আসবো নাকি?

এপাশে এবার আমি চুপ, কারন ওর সাথে মারামারি করে আমি কোন দিন জিততে পারিনি। দোষ ও করবে তার জন্য আমি ওকে মারলেও মায়ের কাছে আমার দোষ ধরিয়ে দিয়ে নালিশ করলে মা এসে কুত্তা পিডানি আমাকেই দেয়। কিন্তু আমি দোষ না করেও মাইর খেয়ে মায়ের কাছে নালিশ করে কোনদিন মায়ের সাপোর্ট পাইনি। সেই জন্য চেপে থাকলাম। কষ্ট লাগে,খুব কষ্ট, কষ্টে বুকডা ফাইডা যায়। মাঝে মাঝে তো কষ্টের চোটে মমতাজের ফাইট্টা যায় বুকটা ফাইট্টা যায় গান টা ছেড়ে শুনি, শান্তি লাগে শুনলে । একা একা বিড়বিড় করে ভাইয়াকে গালি দিচ্ছিলাম, কোন খেয়াল নাই চারিপাশের এর মাঝে মাথায় হঠাৎ কে যেন টুকা দিলো এমন অনুভব করে পিছনে ঘুরে দেখি ভাইয়া। আমি মুখ ভেংচি দিয়েই ঘাড় ঘুরালাম।

ভাইয়া আমাকে বল্লা বল্লা বলে ক্ষেপায়, এবার ও তাই বলে ক্ষেপাতে শুরু করল আমি পাত্তা দিলাম না। ওর কোন মতলব থাকলেই আমার সাথে গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসে। ওই বল্লা, দেখি আমার বোন টার গাল লাল হয়ছে কিনা লাল বল্লার মতন, ভাইয়া কথা টা বলেই খিকখিক করে হেসে দিলো। আমি এবারো মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম আমি তোর কোন কাজ করতে পারব না যা এখন। ভাইয়া আমার চুল টেনে ধরে বললো তুই করবি আর তার সাথে তোর জামাইও কইরবো। আমি ওর হাতে চিমটি কেটে বললাম যা ভাগ একটু আগে মারলি ভুলে গেছিস? আমি ভুলি নাই প্রতিশোধ নেব প্রতিশোধ। ও বাবা তাই নাকি যেই না দেড় ফুট মাইয়া সেই আবার প্রতিশোধ নেয়া শিখছে।

আমি আবার মুখ ভেংচি দিয়ে বললাম ছোটা ভিম বাড়া হো গায়া (ছোট ভিম বড় হয়ে গেছে) ওহ রিয়েলি বলেই ভাইয়া দাঁত ভ্যাটাকাতে শুরু করে দিলো। আমি রাগে ফুসতে ফুসতে বললাম তুই যা তো এখান থেকে আমার এখন তোর এই হা হা মার্কা মুখ দেখে রাগ চাঁপচেছে। আমাকে আর রাগালো না ভাইয়া কারন এখন সে আমাকে দিয়ে কাজ করাবে, সেটা খুব ভালভাবেই বুঝতে পেরে আমি অনেক রেগেছি এমন ভাব নিলাম যাতে কাজ করার বিনিময়ে ঘুষ হিসেবে কিছু আদায় করতে পারি। ভাইয়া আমার মুখে অবস্থা দেখে শান্ত গলায় বললো বোন শোন, আমার কান খোলাই আছে কি বলবি বল বলেই মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম।

তোকে না ছোট্ট বেলায় সারাদিন আমিই কোলে করে রাখতাম জানিস, মা তো তোকে কই থেকে জানি খুটে নিয়ে এসেছিলো বলে বেশি আদর টাদর করতো না এখনো করে না তুই তো বুঝিসই সেটা আমি আর না বলি, তোর জন্য আমি কত কি না করছি জানিস না। আমি ছাড়া তোর কেই বা আছে বল। এক টা কাজ করে দে না বুনু। ভাই কে সম্মান দিতে হয় তা না হলে বিয়ে হয় না বলেই ভাইয়া আবালদের মত মুখ বানিয়ে রাখলো যেন আমি ওর পাম কিছুই বুঝতেছিনা। এত ডায়লগ না দিয়ে সোজাসাপ্টা বল কি করতে হবে?ভাইয়া কয়েক টা ময়লা শার্ট ধরিয়ে দিয়ে বললো কাজ বুঝেছিস?

আমার চোখের দিকে তাকিয়ে, ভাইয়া আর বেশি কিছু না বলেই পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলেই আমি ওর হাত ধরে টান মেরে বললাম আমাকে কি তোর কামলা বলে মনে হয় আর যদি সেটা মনে হয় ও তার জন্য তো কিছু বকশিস দেয়া লাগে একদমে কথাগুলা বলার পর, দম নিলাম। ভাইয়া বললো এক গ্লাস ঠান্ডা পানি চলবে? আমি রেগে তাকাতেই, আচ্ছা আচ্ছা বল কি লাগবে বলেই ভাইয়া আমার দিকে চোখ ছোট্ট করে তাকালো বেশি কিছু চাইবো এমন ভয়ের সে চাহনি। এক প্যাকেট পটেটো, একটা আইস্ক্রিম বক্স,এক প্লেট ফুসকা আর ঝালমুড়ি হাতের কড় গুনে গুনে বলে থামার পর বিকেলে এনে দিলে তারপর শার্ট পাবি এমন রুলস দিয়ে দাঁত বের করে একটা হাসি দিলাম ।

ভাইয়া আমার দিকে খানিকক্ষন হা করে তাকিয়ে থেকে তারপর বললো একটা চার আনা দামের লজেন্স চলবে?
আমি ভাইয়ার হাতে শার্ট ধরিয়ে দিয়ে বললাম চললাম আমি নিজের কাজ নিজে করা শিখুন বলেই হন হন করে অন্যদিকে রওয়ানা দিতেই,ভাইয়া আমার চুলের মুঠি ধরে বললো এই মুটকি ভদ্র লোকের মত কাজ শেষ কর না হলে মোটা জামাই এনে দিমু কিন্তু।আমার শর্তে রাজি থাকলে কাজ করাম নইলে ফোট এখান থেকে বলেই ওর হাত থেকে চুল ছাড়াতে মা মা বলে চেঁচাতে থাকলাম। উপায় না পেয়ে ভাইয়া আমার শর্তে রাজি হয়ে ফকিন্নি বলে চলে যায়। আমি খালি ওকে মুখ ভেংগিয়ে দাঁত কেলিয়ে একটু হাসি ফেরত দিলাম।

কিছুদিন পর ছেলেপক্ষ আমাকে দেখতে আসে,আমাকে দেখে সবার পছন্দ হয় বিধায় বিয়ে মিটে যায়। সামনে সপ্তাহে আমার বিয়ে, ভাইয়া আজ কাল আমার বেশ যত্ন নিচ্ছে মন টা ওর বেশ খারাপ থাকছে আমার বিয়ে মিটার পর থেকেই। বিকেল বেলায় ওকে মন খারাপ করে ছাঁদে যেতে দেখতেই ওর পিছু পিছু ছাঁদে গিয়ে দেখি ও আকাশের দিকে তাঁকিয়ে কান্না করছে,ওর চোখের পানি দেখে আমার সারা শরীল কেপে উঠলো এক মুহুর্তে আমার চোখ টাও টলমলে হয়ে আসলো।

আমি পিছন থেকে ভাইয়ার কাধে হাত রেখে বললাম ভাই? আমাকে দেখে চোখের পানি আড়াল করার বৃথা চেষ্টা করতেই আমি বললাম থাক আর ঢং করতে হবে না কি হয়ছে তোর সেটা বল?
ও কিছু না বলেই আমাকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিল। আমি ওকে শান্ত করার জন্য পিঠে হাত বুলিয়ে বললাম কি হয়ছে ভাইয়া বল আমাকে প্লিজ আমিও কিন্তু কান্না করে দেব এখন,তুই কি তাই চাচ্ছিস? ভাইয়া আমাকে থামিয়ে কপালে চুমা দিয়ে বললো তুই চলে যাচ্ছিস আমি মেনে নিতে পারছি না কোন ভাবে, তুই ছাড়া আমি কাকে নিয়ে থাকব, কাকে জ্বালাব বলতো আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না রে বোন।

ওর কথা শুনে আমি চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না ওকে বললাম এমন পাগলামি করলে হবে বল আমাদের জীবন টাই এমন নিজের বাড়িতে আমাদের আশ্র‍য় হয় না, অন্যের বাড়িটায় কপাল করে সুখের হলে সুখী হই আর না হলে আজন্মে কষ্টের জীবন নারীদের পোহাতে হয় রে ভাই। তারপর ওকে হাসাতে বললাম আমি থাকলে তোর নাকি বাসাটাই ভারী ভারী লাগে যাচ্ছি তো থাকিস একা একা, আমি আর ফোন ভাঙব না কোন দিন তোর টাকা নষ্ট করবো না তোর তো লাভ দেখি বোকার মত কাঁদিস কেনো বলেই একটু হাসলাম ভাইয়াকে হাসানোর জন্য।
ভাইয়া আমাকে কিছু না বলে আমাকে বুকের সাথে আরো শক্ত করে ধরে নিয়ে আমার মাথায় হাত বুলাতে থাকল। আমিও ওকে ছাড়লাম না।

আমার বিয়ের দিনে সারাদিন ভাইয়া আমার পাশে বসে থাকল, এক মুহুর্তের জন্যও ভাইয়া আমার হাত ছাড়েনি। বিদায় বেলায় আমার হাঁত ছাড়ার সময় ভাইয়া বাচ্চা ছেলের মত আমাকে আবারো বুকে টেনে নিয়ে চোখে জমানো জল আর বুকের হা হা কার টা দমানোর চেষ্টা করলো। ভাইয়া কাঁদছে, সাথে আমিও আমার বরের হাতে হাত ধরিয়ে দিয়ে ভাইয়া দ্রুত এখান থেকে ছাঁদের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিল। আমি চেয়ে থেকে দেখছি ভাইয়ার চলে যাওয়াটা, বিয়ের গাড়িতে উঠে একবার বাসার ছাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখি ভাইয়া অসহায়ের মত চেয়ে আছে। গাড়ির ভেতর বসে আমি চোখ বন্ধ করে দেখলাম অন্ধকারে ভাইয়ার চোখ থেকে অশ্রুগুলো গাল গড়িয়ে পড়ছে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত