গার্লফ্রেন্ডের বাবার সামনে বসে আছি আধাঘণ্টা বেশি হইলো আর তিনি মোবাইলে মুখ গুজে বসে আছে। বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে আমিও মোবাইল বের করে একটু ফেসবুকে ঢুকলাম। আর তখনই তিনি বলে উঠলো–
–> এই তোমাদের জেনারেশনের একটাই সমস্যা,,,, একটু বসে থাকলেই মোবাইল বের করে গুঁতাগুঁতি শুরু করে দাও।
–> ইয়ে মানে,,,,,দুঃখিত। (মাথা নিচু করে বসে রইলাম)
–> তা পড়ালেখা কতোদুর করছো???
–> প্রথমে ১০ বছর বাড়ি থেকে ২ কি.মি. দুরে আর পরে ৪ বছর বাড়ি থেকে ২৯ কি.মি. দুরে।
–> তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে??? আমি বুঝিয়েছি কি পাশ করেছো?
–> হাই স্কুলের ফাইনাল ইয়ার পাশ করেছি।
–> ফাযলামির একটা সীমা আছে। তোমার এডুকেশন কোয়ালিফিকেশন কি??
–> জেনেও বার বার জিজ্ঞেস করতেছেন। ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করেছি।
–> শাম্মী বলেছিলো তবুও জিজ্ঞেস করলাম আর কি। তবে এটা বলেনি যে তুমি পাগল টাইপের।
–> কাপড় আমার ঠিক আছে এবং আমার সামনে আপনিও ঠিকঠাক বসে আছেন,,,,,,আমি পাগল হলে কিছুই ঠিক থাকতো না।
–> মুখের উপরে কথা বলা তোমার অভ্যাস। আচ্ছা বাদ দাও এসব,,,,,,,তা চাকরি করো কোথায়??
–> আমি চাকরি করি না। আসলে এখনও চাকরির জন্য চেষ্টাই করিনি।
–> চাকরি করো না সেইটা আবার গর্বের সাথে বলতেছো,,,,,,,,আমার মেয়েকি এতোই সস্তা যে বেকার ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবো আমি।
–> রিলেশনেত শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ১২১৮ দিনে আপনার মেয়ের পিছনে আমি ৭০৩২০ টাকা খরচ করেছি,,,,,এর থেকে বুঝা যায় আপনার মেয়ে সস্তা নয় বেশ ব্যয়বহুল।
–> গার্লফ্রেন্ডের পিছনে খরচ করেছো সেইটাও কড়ায়গণ্ডায় হিসাব করে রেখেছো। শুধু তুমিই খরচ করছো আমার মেয়ে খরচ করে নাই বুঝি???
-> করেছে তো,,,,,,৩২৭৯২ টাকা আর আজকের আসার গাড়ীভাড়াটাও দিয়েছে সে।
–> এখন বুঝলাম আমার মেয়ের চাকরির বেতনের হিসাব অর্ধেক কোথায় যায়। যাই হোক তোমার গার্লফ্রেন্ড চাকরি করে আর তুমি তার টাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছো লজ্জা করে না তোমার???
–> কেনো করবে লজ্জা???? আপনার মেয়ে চাকরি পেয়েছে ছয়মাস হলো আর আমাদের রিলেশন ৩ বছরের উপরে। এখন আপনিই বলেন কে বেশি ঘুরিয়েছে আর কে বেশি ঘুরেছে।
–> আচ্ছা মানলাম তুমিই বেশি খরচ করেছো,,,,,কিন্তু এতো টাকা পেলে কোথায় তুমি???? তোমার বাবা কি করে?
–> যা বাবার তা বাবার,,,,আমার যা সেটা নিয়েই আপনার মেয়েকে চাইতে এসেছি। আর হ্যা নিজে বাবার টাকায় চললেও আপনার মেয়ে আমার ভালোবাসা তাই নিজের টাকাই খরচ করি ওর পিছনে বাবার টাকা নয়।
–> বুঝেছি,,,,,,বাবা ছেলের মাঝে বেশ দ্বন্দ। তা নিজে না হয় বাবার টাকায় চলো কিন্তু শাম্মীর জন্য খরচ করা টাকা পাও কোথায়??? বেআইনি কাজে লিপ্ত আছো বুঝি।
–> টিউশন করাই,,,,,,আর টিউশনের সম্পূর্ণ টাকায় শাম্মীর অধিকার।
–> টিউশন করিয়ে এতো টাকা????
–> জানি বিশ্বাস হবে না তবে এইটাই সত্যিই। আর আজকাল শিক্ষাটা ব্যবসায় পরিণত আর সেই ব্যবসায়ে আমি একজন সাধারণ খুচরা বিক্রেতা। বাকিটা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন।
–> হুম,,,,,বেশ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা বলো দেখতেছি।
–> জিলাপি আমার প্রিয় তাই হয়তো এমন,,,,,প্রত্যেক শুক্রবারে জুম্মার নামাযের পর জিলাপি না নিয়ে মসজিদ থেকে বের হইনা আর “জিলাপি গ্রহন সমিতি” এর সভাপতি আমি।
–> আচ্ছা তুমি কি পাগলাগারদ থেকে পালিয়ে এসেছো নাকি ফিরিয়ে দিয়েছে তোমাকে পাগলাগারদ থেকে??
–> সবাই আমরা পাগল তবে আলাদা ধরনের। আমি জিলাপির আপনি টাকার আর আপনার মেয়ে আমার জন্য।
–> সত্যিই তুমি পাগল,,,,বদ্ধ উন্মাদ। ধরো তোমার সাথে শাম্মীর বিয়ে দেওয়ার জন্য রাজী হলাম না অন্য কোথাও শাম্মীর বিয়ে দিলাম আমি তখন কি করবা??
–> তাহলে আপনিও ধরে নেন আপনাকে প্রথমে খুন করবো এরপরে আপনার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাবো।
–> আমি ধরো বলেছিলাম বলে আমাকেও ধরেন বলে উত্তর দিলা।
–> হুম,,,,,কারন যে যেমন আমি তার জন্য তেমন। আমি পরিস্থিতি বুঝে রিয়েকশন দেই না রিয়েকশন দিয়ে পরিস্থিতি বুঝি।
–> সাউথ ইন্ডিয়ান মুভি বেশি দেখো তাই তো,,,,,,,মুভি আর রিয়েল লাইফ এক নয়।
–> হুম,,,,,আর সেই জন্যই তো আপনি মুভির ভিলেন নায়িকার বাবার মতো হবেন না কারন মুভি আর রিয়েল লাইফ এক নয়।
–> তোমার সাথে কথা বলা আর নিজের পায়ে কুড়াল মারা সমান,,,,,,নিজের বিয়ের কথা নিজে বলতে এসেছো বাসায় আর কেউ নেই বুঝি??
–> নাহ কেউ নেই তাই তো নিজেই চলে এসেছি।
–> ওহ সরি,,,,ভুলে গেছিলাম শাম্মী বলেছিলো তোমার পরিবারের কথা। তবে আত্মীয়ের কাউকে সাথে নিয়ে আসতা।
–> যারা দুঃখের সময় সাথে চলেনা তাদের সুখের সময় না ডাকাই ভালো।
–> আচ্ছা তুমি যে আমার সাথে এভাবে কথা বলতেছো এতে তোমার ভয় হচ্ছেনা এই ভেবে যে আমি শাম্মীর সাথে তোমার বিয়ের জন্য রাজী নাও হতে পারি।
–> না তো,,,,,আমার তো এমনটা একবারো মনে হয়নি আপনার সাথে কথা বলে। সত্যি কথা বলতে আমি এইটা ভেবেই আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি যে “আপনি কখনই রাজী হবেন না আমার সাথে শাম্মীর বিয়ে দেওয়ার জন্য।”
–> খুব একটা ভুল ভাবোনি কারন তোমার সাথে কথা বললে যে কোনো মেয়ের বাবাই কিছু না ভেবেই না বলে দিবে। তবে তোমার এরকমটা ভাবার কারন কি???
–> আমি সবকিছুর নেগেটিভ দিক আগে ভাবি,,, think positive be positive এরকম টাইপের আমি নই।
–> ওহ আচ্ছা,,,,,,শাম্মী আমার একমাত্র মেয়ে আর ওর চাওয়া কখনও আমি অপূর্ণ রাখিনা এবার হয়তো এই ব্যাপারে আমাকে ভাবতে হবে এই চাওয়াটা পূর্ণতা না হওয়ার ব্যাপারে।
–> আসলে আপনি চাচ্ছেন না যে আমার আর শাম্মীর বিয়েটা হোক।
–> এমনটা নয় আবার এমনটাই বলা চলে।
–> আমিও চাইনা আমার মতো একটা ছেলেকে শাম্মী বিয়ে করে নিজের জীবনে একটা বিশাল ভুল করুক।
–> না চাইলে এসেছো কেনো আমার সাথে কথা বলতে।
–> শাম্মী চেয়েছিলো আমি যেনো আপনার সাথে কথা বলি আমাদের বিয়ের ব্যাপারে,,,,,,আসলে শাম্মীকে অনেক ভালোবাসি তাই ওর ইচ্ছেগুলো কখনওই ফিরিয়ে দিতে পারি না।
–> ভালোবাসো কিন্তু বিয়ে করতে চাও না,,,,,এ কেমন ভালোবাসা??? আমার মেয়ের জিবন নিয়ে খেলা করতেছো তুমি।
–> আরেহ রেগে যাচ্ছেন কেনো??? আমি তো বলিনি যে আমি শাম্মীকে বিয়ে করবো না আমি এইটা বলেছি যে আমি চাইনা শাম্মী আমাকে বিয়ে করুক।
–> তুমি ভালো করেই জানো শাম্মী কখনওই চাইবেনা তোমাকে ছাড়া অন্যকাউকে বিয়ে করতে আর এইটারই সুযোগ নিচ্ছো তুমি।
–> হাসালেন আঙ্কেল,,,,,এতোদিনের সম্পর্কে একটাবারও সুযোগ নেই নি শাম্মীর ভালোবাসার আর এখন আপনি বিয়ের ব্যাপারে সুযোগ নেওয়ার কথা বলতেছেন।
–> বিয়ের পরেও কি তুমি এরকম বেকার হয়ে থাকবে??? শাম্মী চাকরি করবে আর তুমি বসে বসে খাবে নাকি।
–> আঙ্কেল শাম্মী চাকরি করে ঠিক আছে,,,,,কিন্তু আমি একবার যদি বলি শাম্মী চাকরিটা ছেড়ে দাও তাহলে শাম্মী কোনো প্রশ্ন না করেই রিজাইন লেটার দিয়ে চলে আসবে এমনকি আপনার কথাও সে শুনবে না।
–> এতোটা কনফিডেন্স???
–> নাহ,,,,,,এটা কনফিডেন্স না এটা হচ্ছে আমার ভালোবাসা বিশ্বাস।
–> এটাকে বিশ্বাস বলে না,,,,আমার মেয়েকে বিয়ে করার জন্য তোমার থেকে শতগুণ বেশি যোগ্যতা সম্পূর্ণ ছেলেদের কাছ থেকে প্রস্তাব আসতেছে আর তুমি আমাকে এসে বলতেছো ভালোবাসার বিশ্বাসের কথা। অভাব যখন সংসারে আসে ভালোবাসা তখন জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।
–> আমাকে নিয়ে আপনার সমস্যা না,,,, সমস্যা হচ্ছে আমার বেকার থাকাটাই তাইতো???
–> সব বাবাই চাইবে তার মেয়ে স্বামীর ঘরে গিয়ে যেনো রাজরানী না হতে পারলেও যেনো চাকরানি না হয়।
–> শাম্মীকে চাকরানী বানানোর ইচ্ছা নেই আমার আবার রাজরানী বানানোরও ইচ্ছা নেই আমার। আমি শুধু এইটা জানি যে শাম্মী আমার সবটুকু জূড়ে আছে আর থাকবে।
–> তোমার তো পরিবার থেকেও নেই আর যে ছেলে তার পরিবারকে ভালোবাসতে পারেনা সেই ছেলে আমার মেয়েকে ভালোবেসে কতোটা সুখে রাখবে তা আমার জানা হয়ে গেছে।
–> আচ্ছা আঙ্কেল আজ তাহলে আমি উঠি,,,,,আর হ্যা দরজার ওপাশে দাড়িয়ে আছে শাম্মী ওকে বলে দিয়েন আমি চাকরিতে কাল থেকে জয়েন করতেছি। আর রইলো পরিবারের কথা,,,,,,শাম্মীকে আমি ভালোবেসেছি আমার পরিবার নয়। আমার কথা শুনে শাম্মী দরজা ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। শাম্মীর বাবা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো
–> দরজা তো তোমার পিছন দিকে বেশ খানিকটা দূরে,,,,,,,তুমি কি করে বুঝলে শাম্মী দাড়িয়ে আছে দরজার ওপাশে????
–> আপনি শাম্মীকে গত ২৩ বছর যাবৎ ভালোবাসেন এটা জেনেও যে একদিন সে অন্যের ঘরে চলে যাবে আর আমি শাম্মীকে ভালোবাসি এটা ভেবে যে জানিনা কতো বছর বাঁচবো তবে যতোদিন বাঁচবো শুধু শাম্মীর হয়েই বাঁঁচবো। বাকিটা শাম্মীর থেকেই জেনে নিয়েন। এই বলে চলে আসবো আর ঠিক তখনই শাম্মী বললো
–> এভাবে চলে না গেলে হয়না???
–> এখানে থাকলে তোমার বাবাকে এখন অপমান করা হবে আর আমার সে অধিকার নেই।
–> আমার বাবা ভুল তো কিছু বলেনি তোমাকে।
–> মা-বাবা কখনওই ভুল কিছু বলেনা বা করে না সন্তানের মঙ্গলের জন্য,,,,,আমি জানি তোমার বাবাও চাইবেনা কখনও তোমার অমঙ্গলের জন্য।
–> যা তোমরা দুজন ভালো বুঝো।
–> আঙ্কেল একজন মেয়ের বাবা হিসেবে আপনি যা বলেছেন তা আমি আপনার জায়গায় থাকলেও বলতাম।
আমি তো আরও বেশি বলতাম আপনি ভালো মানুষ তাই আমাকে এতোটা সময় সহ্য করলেন। আপনি যদি রাজী নাও হন এতেও আমার কোনো আপত্তি নেই। এই বলে চলে এলাম শাম্মীদের বাসা থেকে,,,,,আসার সময় দেখলাম শাম্মীর চোখে হাজারও প্রশ্ন কেনো এমনটা বললাম আমি আর শাম্মীর বাবার চোখে দেখলাম মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে হাজারও ভাবনা। আমিও ভালোবাসি শাম্মীকে কিন্তু তার পরিবারের কাছে তা গচ্ছিত রেখে আসলাম।
হ্যাঁ পরিবার আমারও ছিলো,,,,এখনও আছে তবে বদলে গেছে অনেক কিছু। পরিবার বুঝে উঠার আগেই হারালাম আমাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসার মানুষটাকে। সে হারানোর পরেই সব বদলে গেলো ধীরে ধীরে। আর আমিও হারিয়ে গেলাম পরিবার নামক শব্দটা থেকে। জানি শাম্মীর বাবা তার মেয়ের খুশির জন্য রাজি হয়ে যাবে আমাদের বিয়ের জন্য কিন্তু তার করা একটা প্রশ্ন নিজের মাঝেই থাকবে “যেই ছেলে তার পরিবারকে ভালোবাসে না সে ছেলে আমার মেয়েকে ভালোবাসতে তো??” কারন পরিবার এমনই হয় হয়তো। কিছু গল্পের সমাপ্তি ঘটে না