” আবির তোমার শার্ট টা কই ‘ পাশের বাড়ির ভাবির কাছে ‘ পাশের রুম থেকে পল্লবী রাগান্বিত হয়ে বললো, ” তোমার শার্ট তার কাছে কিভাবে গেল? উনার সাথে কি সম্পর্ক? ” আমিও ওর চেয়ে দ্বিগুণ রাগান্বিত হয়ে বললাম, ‘ মনে নেই, রাতে শার্ট ছিড়ে ফেলছো। জীবনে তো শার্ট চোখে দেখো নাই ‘ কথাটা বলেই আমি জিহ্বাই কামড় দিলাম। মনে মনে ভাবছি, আজ আমার খবর আছে।
নিশ্চিত বাড়ি থেকে বের করে ছাড়বে। গম্ভীর ভাবে বললাম,’ আচ্ছা আমি গিয়ে নিয়ে আসছি ‘ পল্লবী চেঁচিয়ে বলে, ” দাঁড়াও, কোথাও যাবে না। আজ তোমার খবর আছে” মেয়েটা যে রাগী, আমি শিউর কাল রাতের মত মারবে নয়তো আমাকেই বাড়িতে থেকে তাড়িয়ে দিবে। রুমে mএসেই আমার গেঞ্জির কলার ধরলো। হাত ছুঁটানোর চেষ্টা করছি কিছুতেই পারছি না। ও বললো, ” তোমার শার্ট উনার কাছে কিভাবে গেলো? ” আমি থতবত লাগিয়ে বললাম,’ ভাবির কাছে শেলাই করতে দিয়েছি ‘ লক্ষ্য করলাম পল্লবীর চোখ আগুন হয়ে আসছে। ” আমার শেলাই ভালো লাগে না, পাশের বাড়ির অন্যের বউয়ের শেলাই ঠিকই ভালো লাগে তাইনা? তুমি তো শেলাই করলে সুই সুতা দিয়ে করবে। হাতের শেলাই দিয়ে কী শার্ট পড়া যায়! সেদিন হাতের শেলাই করা শার্ট পড়ে বাইরে বের হয়েছিলাম লোকে হাসাহাসি করলো।
” পড়া যায় কি-না জানি না, তবে তোমার পড়তে হবে ” আমি উঠে চলে যাচ্ছি যাচ্ছি আর পল্লবী পিছন থেকে টেনে ধরে বলছে,
” কই যাও ”
‘ ভাবির থেকে শার্ট নিয়ে আসি ‘
” ঐ শার্ট তুমি পড়তে পারবে না ”
‘ কেনো পারবো না? ‘
” যে শার্টে অন্য মেয়ে স্পর্শ লাগছে সেই শার্ট এ বাড়িতে আমি রাখতেই দিবো না।
ওর চেঁচামেচি শোনে আর বাড়িতে থাকতে পারলাম না। বাজারের উদ্দেশ্যে বের হলাম। প্রচন্ড মাথা ব্যথা হচ্ছে। কিছুদূর যাবার পর রাস্তার মোড়ে চায়ের দোকানে বসলাম। বসার সঙ্গে সঙ্গে এক কাপ চা ধরিয়ে দিল হাতে। যদিও আমি নিয়মিত চা খাইনা। কাপে ঠোঁট লাগিয়ে চুমুক দিবো এমন সময় হঠাৎ এক অচেনা লোকের হাতের কুনই লেগে জিহ্বার উপর আচমকা চা পড়ে গেল। দোকানদার লোকটাকে ইচ্ছেমত ঝারি দিতে লাগলো। আপনি চোখে দেখেন না, চোখ কি পকেটে রেখে চলাফেরা করেন ইত্যাদি। আমি মনে মনে ভাবছি, নিশ্চিত পল্লবী গালি দিচ্ছে আমায়। তাই এরকম হয়েছে। অচেনা লোকটি বললো,
— ভাই, জিহ্বাটা বেশি পুড়ছে? চলেন ডাক্তারের দোকানে গিয়ে মলম লাগিয়ে দেই! আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম লোকটির দিকে। দোকানদার বললো,
– ঐ মিয়া, জিহ্বাই মলম লাগাবেন মানে কি? আপনি মলম পার্টির লোক নাকি? দেখেও তো সেটাই মনে হচ্ছে। লোকটি কিছু না বলেই মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেলেন। বুঝলাম না লোকটি হাসলো কেনো? যাহোক, দোকানদারকে বললাম,
— ভাই, লোকটি মলম পার্টির কি-না জানি না, তবে আমার বউটা মনে হয় মলম পার্টির মেয়ে।
– কি বলেন ভাই! আপনার তাহলে চাঁন কপাল।
— হ্যাঁ, কেমন চাঁন কপাল সেটা আমিই ভালো জানি।
জিহ্বাটা পুড়ে খারাপ হয়নি মনে হয়, ভালোই হয়ছে। বাড়িতে গেলে পল্লবীর থেকে বেশি ভালোবাসা পাবো আর শার্টের কথা ভুলে যাবে হয়তো। অবশেষে বাড়িতে আসলাম। রাত তখন আটটা প্রায়-ই। পল্লবী আমার জন্য টেবিলের উপর খাবার রেখে বসে আছে। যতই বকা-ঝকা করুক তবুও তো আমার জন্য ও খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে! আমি ফ্রেশ হয়ে খাবার বসলাম। প্রথমবার ভাত মুখে দেয়াতেই প্রচুর ঝাল লাগলো।
আমি বললাম, ‘ আজ এতো ঝাল দিয়েছো কেনো? ” আজ ঝাল দিয়েছি মানে! আমি রান্না করতে জানি না? আমার চেয়ে পাশের বাড়ির ভাবি ভালো করে রান্না করে তার কাছে গিয়ে খেয়ে আসো যাও। ‘ আরে রাগাচ্ছো কেনো? এমনি মজা করে বললাম।’ ভাত যত মুখে দিচ্ছি ঝালে ততো অস্থির লাগছে। এক সময় ঝালের তাণ্ডবে চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। পল্লবী বলে, ” কী, ভাবির কথা মনে হয়ে চোখ দিয়ে পানি পড়ছে? ‘ না, চা খেতে গিয়ে মুখ পুড়ছে তাই ‘ ” তুমি ভাবির কাছে গিয়ে চা খেয়ে মুখ পুড়ে আসছো আর বলছো তরকারিতে আমি ঝাল দিছি? সবশেষে চোখের পানি মুছে ভাত খাইলাম। ও এমনি, কারো সাথে কথা বলতে দিবে না। কারো সাথে একটু কথা বললেই ওর হিংসে হয়। স্বামী কারো সাথে কথা বলুক এটা কোনো স্ত্রীই চাই না। অযথা স্বামীদের উপর সন্দেহ করে।
খাওয়া শেষ করে খাটের উপর বসলাম। পল্লবী আলমারি থেকে সেই শার্টটা বের করলো। আমি অবাক হলাম, ও এই শার্ট কই পাইলো? শার্ট বের।পল্লবী হাসি দিয়ে বললো, ‘ দেখো ভাবি তোমার জন্য শার্টটা কত সুন্দর করে শেলাই দিয়েছে! তোমার পছন্দ হয়নি? ” হয়েছে খুব। ভাবির হাতে জাদু আছে ” ও প্রচণ্ড রাগ নিয়ে বললো, ‘ ভাবির হাতে জাদু, মুখে জাদু তাহলে আমার হাতে ও মুখে কি বিষ? ‘ আমি শোনা মাত্রই দাঁতের সাথে দাঁত লাগালাম। দেখি শার্টটা ও আবার ছিড়তেছে। মানা করিনি। হয়তো খুব রাগ উঠছে। ড্রয়ার থেকে সুই সুতা বের করলো। আমি শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে ওর কাণ্ড দেখছি। ছেড়া অংশটা আবার নতুন করে সুই সুতা দিয়ে শেলাই করতেছে। আমি পুরাই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবি, এমন মেয়ে পৃথিবীতে আছে তাহলে!
প্রায় মিনিট দশেক পর শেলাই শেষে শার্টটা আমার হাতে দিয়ে রাগ চোখে বললো, ‘ এখন দেখো কার শেলাই বেশি ভালো হয়েছে। যদি খারাপ কিছু বলো তাহলে তোমার খবর আছে ‘ ভয়ে আর সত্যটা বলতে পারিনি। কোথায় হাতের শেলাই আর কোথায় মেশিনের শেলাই! বললাম,” না, খুবিই ভালো হয়েছে। প্রতিটা শার্ট এভাবে ছিড়ে তুমি নিজ হাতে শেলাই করে দিবে। কী দিবে না? “হাসি মাখা মুখ করে বলছে, এবার শার্টটা পড়ো। এটা পড়েই রাতে ঘুমাবে। শার্টটা ভাবির থেকে এনে ভালো করে পরিষ্কার করে পার্ফিউম লাগাইছি। যাতে তার হাতের স্পর্শের গন্ধ না আসে। বুঝতে পারলাম, পল্লবী আমার সাথে যতই রাগারাগি চিল্লাচিল্লি করে না কেনো! কিন্তু খুব ভালোবাসে আমায়। আমি অন্য মেয়ের সাথে কথা বলি এটা ও কখনো চাইবে না। শুধু পল্লবী না, এটা হয়তো বাঙালী কোনো মেয়েই চাইবে না।
(সমাপ্ত)