আদর্শ স্ত্রী

আদর্শ স্ত্রী

দোকানে টাঙানো নীল রংয়ের শাড়ীটা আমার পছন্দ হয়েছে বেশ। বন্ধু জামিলের বোনের জন্য কেনাকাটা করতে ওদের সাথে এসে শাড়ীটি পছন্দ হয় আমার। দোকানীকে একপাশে নিয়ে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম,

-ভাই, ঐযে উপরের সারিতে রাখা ডান পাশের প্রথম নীল রংয়ের শাড়ীটার দাম কত? দোকানী বললো,

-চার হাজার টাকা। প্যাকেট করে দিব? আমি বললাম,
-আজ না ভাই, আরেকদিন এসে নিয়ে যাব। আমার কথা শুনে দোকানি বললো,

-কি যে বলেন ভাই, আরেকদিন কেন, আজ সন্ধার পরে এসেও এটা পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। ছয় পিস এনেছিলাম, চারটি অলরেডি সেল হয়ে গেছে। যদি নেন তাহলে প্যাকেট করে দিই। দিব কি? আমি এবার আমতা আমতা করে বললাম,

-আচ্ছা ভাই, আমি আপনার সাথে পাঁচ মিনিট পরে কথা বলছি। একটু সময় দিন! দোকানি বললো,
-আচ্ছা ঠিক আছে, যান। এবার আমি জামিলকে বললাম,
-দোস্ত, তোর ফোনটা একটু দে তো বাসায় কল দিব।

ও দিলো ফোনটা। লাস্ট কবে ফোনে রিচার্জ করেছিলাম আমার মনে নেই। বাইরে গেলাম আমি। তানহাকে কল দিলাম। রিসিভ করলো ও। ওপাশ থেকে,

-আসসালামুআলাইকুম। আমি বললাম,

-ওয়ালাইকুমুসসালাম। আমি ও এতক্ষণে বুঝতে পেরে গেছে আমি যে জামিলের ফোন থেকে কল দিয়েছি। এবার ও বললো,

-কি ব্যাপার, কোথায় আছো এখনো বাসায় আসছোনা যে! আমি বললাম,

-জামিলের সাথে আছি। ওর বোনের জন্য শপিং করতে এসেছে তো তাই। একটা জরুরী দরকারে কল দিয়েছিলাম। তানহা,

-হ্যা বলো!

-একটা নীল রংয়ের শাড়ী বেশ পছন্দ হয়েছে আমার। মা’কে কতদিন ধরে কোন কাপড় কিনে দেয়া হয়না। কি করব এখন? তানহা,

-তুমি তো দেখছি বড় অদ্ভুত মানুষ! মায়ের জন্য শাড়ী কিনবা সেটা আবার আমাকে জিজ্ঞেস করে কিনতে হবে নাকি? আমি,

-আসলে, শাড়ীটার দাম একটু বেশি। চার হাজার টাকা। কিন্তু আমার কাছে আছে এখন পনেরো শো টাকার মতো। কি করব বলো তো! তানহা, একটু অপেক্ষা করো। আমি তোমাকে দু’মিনিট পর কল দিচ্ছি। এই বলে ও ফোনটা কেটে দিলো। দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি আমি। একটা মেসেজ আসলো। বিকাশে টাকা এসেছে। তিন হাজার টাকা। তানহার নম্বর থেকে। তখনি আবার ও কল দিলো আমায়। রিসিভ করলাম, তানহা,

-টাকা পেয়েছ? আমি,
-হ্যাঁ, পেয়েছি। কিন্ত এত টাকা কোত্থেকে? তানহা,

-সেটা না হয় রাতেই তোমাকে বলব। এখন যাও, ক্যাশ আউট করে শাড়ীটা কিনে নিয়ে এসো। আর শোন, তাড়াতাড়ি এসো কিন্তু, আজ তোমার জন্য স্পেশাল রান্না করেছি। আমি,
-আচ্ছা, তাড়াতাড়িই আসবো। রাখছি তাহলে। তানহা,
-আচ্ছা।

ক্যাশ আউট করে শাড়ীটা কিনে নিলাম মায়ের জন্য। সাড়ে তিন হাজার টাকা রেখেছে। একদিকে যেমন মনের ভেঁতরে অনেক আনন্দ লাগছে মায়ের জন্য পছন্দ হওয়া শাড়ীটি কিনতে পারায় আবার অন্যদিকে আমি ভাবতে লাগলাম, ‘তানহা এত টাকা পেলো কোথায়?’ অফিস থেকে বাসায় ফিরলে প্রথমেই ও আমাকে সাদা পানি আর শরবত দেয়। আজো এর ব্যতিক্রম হলোনা। মা আমার অসুস্থ। বয়স বেড়ে যাওয়াতে অল্প অসুখেই বিছানায় পড়ে যান। তানহার হাতে শাড়ীটি বের করে দিয়ে বললাম,

-তুমি যাও, মায়ের হাতে শাড়ীটি গিয়ে তুমি তুলে দাও! ও বললো,
-একা যাবনা। চলো দুজনেই যাই। আমি,
-হুম চলো!

মাকে শাড়ীটি দিলাম। মা আমার নীল রং খুব পছন্দ করেন। আমি দেখেছি, বাবার সাথে মায়ের একটি ছবি ছিল যেখানে তিনি নীল রংয়ের শাড়ী পড়েছিলেন। শাড়ীটি হাতে নিয়ে ছোট বাচ্চাদের মতো মা নেড়েচেড়ে দেখতে লাগলেন। আনন্দে তাঁর চোঁখদুটো টলমল হয়ে গেল। বয়স বাড়লে মানুষ ছোট বাচ্চাদের মতোই আচরণ করতে শুরু করে। তানহাকে বুকে টেনে নিলেন মা। আদর করে ওর কপালে চুমু দিয়ে দিলেন। ও বিছানা প্রস্তুত করছে। আমি সোফায় বসে টিভিতে নিউজ দেখছি। এমন সময় ওকে জিজ্ঞেস করলাম,

-তুমি তো বলোনি তোমার কাছে এত টাকা কোত্থেকে এলো! আমার প্রশ্ন শুনে ও আমার পাশে এসে বসলো। আমাকে জিজ্ঞেস করলো,

-মনে আছে তোমার, বাসর রাতে যে আমার হাতে তুমি দেনমোহরের পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলে। আমি বললাম,
-হুম, তবে সেটা তো প্রায় চার বছর আগে। তানহা,
-আর বলেছিলে যে, আমার বাবা-মাকে তুমি ঠিক সেভাবেই দেখবে যেভাবে আমার কোন ভাই থাকলে তাঁদেরকে দেখতো এবং এটাও বলেছিলে যে, আমিও যেন তোমার বাবা-মাকে আমার নিজের বাবা-মায়ের মতো করে দেখি। আমি,

-হুম, বলেছিলাম। তানহা,
-আমি সেই টাকাগুলো ব্যাংকে রেখে দিয়েছিলাম।

যদিও সেগুলো কিভাবে খরচ করি বা না করি সেটাতে তোমার কোন হক নেই। তবে আমি তেমন মেয়ে নই। আমার স্বামীর দুর্দিনে আমি সেই টাকা দিয়ে সহযোগিতা করবো সেটাই ছিল আমার লক্ষ্য। এছাড়াও আমি দরকারি কিছু কাজে কিছু টাকা খরচ করেছি। তবে, আজ তোমাকে এই টাকাগুলো দিতে পেরে আমার যে কি আনন্দ লাগছে সেটা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবোনা। আমি এবার ওর মাথাটি আমার বুকের উপর এনে রাখলাম। আমাকে এমন করতে দেখে ও বললো,

-কি করছো এটা? আমি বললাম,
-যেভাবে যেখানে রাখতে চাইছি চুপচাপ সেখানেই থাকো, নড়ো না!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত