আমার স্বামী আমার সংসার

আমার স্বামী আমার সংসার

-ওগো শুনছো কোথায় তুমি??

-এইযে আমি।তোমার যন্ত্রণায় আর পারিনা। (শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে)

– কোথায় ছিলেগো??

– কোথায় আবার থাকবো? ছিলামতো রান্নাঘরে। তা সেখানেও তোমার জন্য থাকার জো আছে??

-হু—উ—ম।

– অত বড় হুম দেয়ার কি আছে?? আর ওভাবে তাকাচ্ছ কেন শুনি?

– বলছিকি আজ আর রান্নার দরকার নেই।এসো গল্প করি।

-ধ্যাত কি বলো এসব।কি খাবে তবে শুনি??

– কিছুই খাবোনা।শুধুই তোমার চোখে চোখ রেখে পৃথিবীটা দেখব। অবলোকন করব তোমার সকল ভালবাসার জগত।অবগাহন করব তোমার প্রেম নদীতে।

– আহারে আদিখ্যেতারে! বাড়ির সবাই কি আঙুল চুষবে /?? তারা কি খাবে শুনি??

– তুমি বসোনা আমার পাশে! বাকিটা মা সামলে নেবে।

– না মশাই।ভর দুপুরবেলা মাথার ভূত নামাও।এখন যাই।

– ভূত নামাবো বলেইতো গল্প করতে চাইছি।বসোনা একটু হাতে হাত রেখে! তোমার হাতে হাত রেখে চেষ্টা করব জগতের সকল বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যাবার।তুমি আমার সহধর্মিণী শুধু নও অর্ধাঙ্গিনীও বটে।
তোমার সাথে মিলে গড়ে তুলব স্বর্গের ইমারত এই মৃ্ত্তিকাভূমিতে।

– হে কবি ছাড়োনা আমায়।কি মনে করবে সবাই বলতো!

-কিছুই মনে করবেনাগো টুনির মা।

বলেই আমার স্বামী হাতখানি ধরে তার পাশে বসিয়ে দিলেন। দৌড়ে পালাতে চাইলাম ওমনি হাতখানি ধরে বসলেন। বজ্জাত একখান স্বামী আমার।খালি মাথায় দুষ্টমি ঘোরে। ওর বেশী কিছুই চাইনা।প্রথম প্রেমের মত হাতে হাত রেখে চোখে চোখ রেখে বসে থাকলেই সেই মহাখুশি।কিন্তু এভাবে একজন মানুষের চোখে চোখ রেখে কিভাবে বসে থাকা যায়? মানছি লোকটা আমার স্বামী।তবু আমার বুঝি লজ্জা করেনা! ওর চোখের দৃষ্টিটা অনেক প্রগাঢ়। বেশীক্ষণ তাকিয়েই থাকা যায়না।খুব লজ্জা লাগে।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকেই আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি। না ঠিক বন্ধ করে ফেলি বল্লেই ভুল হবে।অটোমেটিকলি বন্ধ হয়ে যায়।এটাতেই ওর যত মজা।খুব এনজয় করে ও এটা।আমার বন্ধ চোখেও আমি অনুধাবন করতে পারিযে ওর হাসি হাসি দুষ্টমি ভরা চোখ দুটো আমার মুখের উপর নিবদ্ধ হয়ে আছে।দুষ্টু একটা।

এই হচ্ছে আমার স্বামী পার্থ দেব। আমি ঠিক বুঝে পাইনা ও বাইরে কাজে থাকার পরও এই দুষ্টমির ছক কখন আঁকে?? প্রচন্ড ব্যস্ত থাকার পরও কেমন করে মানুষ এতটা রোমান্টিক হয়।খুব ভালো বাঁশরী বাজায় আমার স্বামী।যখন বাঁশিটা আড় করে ধরে তখন আমার কৃষ্ণ ঠাকুরের কথা মনে পড়ে। ইদানিং দেখছি খুব ভালো গানও গায়। খুব অল্পতে তুষ্ট পার্থ।যখন অফিস যায় আমার কপালে প্রেম রেখা এঁকে দিয়ে যায়।

– শুভকামনা টুনির মা।ভাল থেক সারাদিন। আমিও তাঁর চোখে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দেই।

– দুই চোখে দিলাম প্রেমের বেড়িবাঁধ। যাতে অন্যকোন মেয়ের প্রেমের জোয়ারের জল আমার স্বামীর চোখে না পড়ে।

এই হলো পার্থ আর আমার সংসার। খুব সুখের সংসার আমাদের।একটা স্বামী তার স্ত্রীকে কতটা ভালবাসে পার্থ তার জ্বলন্ত উদাহরণ।সবথেকে অবাক হই যখন দেখি আমার শাশুড়ি মা আমাদের ভালবাসাগুলো খুবই সমর্থন করেন ।যতক্ষণ তার ছেলে বাড়িতে থাকে।ততক্ষণ তিনি আমায় পারতপক্ষে কোন কাজই করতে দিতে চাননা।তবে হ্যাঁ পার্থর পছন্দের খাবারগুলো আমাকে দিয়েই রান্না করান আমাদের মা।মা আমাকে শিখিয়ে দেন কিভাবে স্বামীকে আঁচলে বেঁধে রাখতে হয়।

-শোনো মা (বউমা) স্বামী বাড়ি এলে গামছাখানা এগিয়ে দেবে।জামা জুতা খুলে দিলে নিজের হাতে রেখে দেবে।আর একটু সাজগোছ করে থাকবে।তোমারতো দেখি সাজার কোন ইচ্ছাই কাজ করেনা।আর শোনো মা।ভাল ভাল রান্না করে বরকে খাওয়াবে।বউ ভালো রান্না জানলে বর বাইরে খাবার সাহস করেনা।রান্না দিয়েও বরকে বেঁধে রাখা যায়।
আর মাঝে মাঝে বিনা কারনেও বরকে ঝাড়ি দেবে।তবেই হাতের মুঠোয় থাকবে। যা যা বল্লাম মনে থাকবে?? আমার শশুর খবরের কাগজ খানা একপাশে রেখে দিয়ে চশমাখানি খুলে বলেন,

– তা আর মনে থাকবেনা গিন্নি। তুমি যেভাবে আমায় বশ করেছ আমাদের মাকেও তাই শিখাচ্ছ।বলি আমার জীবনটাতো কয়লা করেছ এখন ছেলের বউকেও কয়লা করার পথ দেখাচ্ছ??

– কি বল্লে পার্থর বাবা আমি তোমার জীবন কয়লা করেছি?/ ছেলের বউয়ের সামনে এটা বলতে পারলে?? ব্যস শুরু হয়ে গেল আমার বুড়ো ছেলে আর মেয়ের মধ্যে কুরুক্ষেত্র।এখন আমাকেই থামাতে হবে।কি আর করা।

-এইযে খোকা খুকু একদম চুপ।কোন ঝগড়া নয়।আমি চাউল ভাজি করেছি।খাবে এসো বাচ্চারা।

এভাবেই চলছে আমাদের সংসার।আমি ভেবেও পাইনা আমার থেকে সুখি কে আর এই দুনিয়ায় আছে।আমার স্বামী রোজ আমার জন্য একটা ফুল নিয়ে আসে।না সবদিন কিনে আনতে পারেনা সে সামর্থ্য তার নেই।তবু রাস্তার পাশে যে ফুল পায় তাই ছিঁড়ে নিয়ে আসে।একদিনতো গেওয়া ফুল ছিঁড়ে নিয়ে এসেছিলো।হা হা হা। লোকটা পারেও বটে।তবে হ্যাঁ ঐ গেওয়া ফুলটাই আমার কাছে বিশ্বের তাবৎ গোলাপের সমান সুভাষ ছড়াচ্ছিল। ওর যদি অনেক টাকা থাকতো তবে আমায় একটা বিশাল সামরাজ্য কিনে দিতো।কি হবে সামরাজ্য দিয়ে যেখানে প্রেম নেই,মমতা নেই।
অনেক টাকাপয়সা জীবনের সুখ বয়ে আনেনা।সুখের জন্য মন থাকাটাই জরুরী। যত কমে তুষ্ট হবেন ততই সুখি হবেন।

আমার স্বামী বাড়ির বেলী বা রঙ্গন অথবা মালতী তুলে যখন আমার চুলে গুজে দেয় তখন কি আর কোন গয়নার দরকার পড়ে?? আমি লোভী নই।হতেও চাইনা। তবে খুব স্বার্থপর। কারন আমি আমার সংসার ও স্বামীর ভাগ কারো দেবনা।এ সংসার আমার সংসার।আমার শাশুড়িমা আর শশুরবাবা তারাও আমার বাবা মা। আমার স্বামী যখন বাড়ি ফেরে তখন আমি হালকা সাজুগুজু করে চুলগুলো পিঠের উপর ছড়িয়ে দিয়ে ওর সামনে যাই। ও খুব খুশি হয়।কখনও কখনও ওর পছন্দের খোপাও করি।

আমার নিত্যদিনকার এই ভালোবাসামাখা সংসার যেন হাসিখুশিতে ভরে থাকে।বিধাতার কাছে আর কি চাওয়ার আছে?? আজ ও অফিস থেকে আসার সময় একশো গ্রাম বাদাম নিয়ে এসেছে।তাই মহানন্দে খেয়েছি আমরা সবাই।এই বাদামের প্রতিদানায় যে ভালোবাসার ছোঁয়া আছে তাকি ব্রিয়ানীর চেয়ে দামী নয়?? আজ রাতে শোয়ার আগে ও আমায় একটি মালা গিফ্ট করেছে সেটার দাম মাত্র দশটাকা।পথের পাশ থেকে কিনেছে। এটার আর্থিক মূল্য হয়ত দশটাকা কিন্তু এখানে যে হৃদয়ের বাঁধন আছে তার মূল্যায়ণ করব কি দিয়ে?? একজনমে কি আর ভালোবাসার প্রতিদান দেয়া সম্ভব??

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত