She is unromantic

She is unromantic

রাত ঠিক ক’টা বেজেছে আমার আনরোমান্টিক বৌয়ের সে খেয়াল নেই। ও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বোনের সাথে ফোনে কথা বলছে। যতটা না কথা বলছে, তারচেয়ে বেশি হাসছে।

এতরাতে বাইরে থেকে অন্য কারো বউয়ের হাসির শব্দ এলে আমি হয়তো অতিপ্রাকৃত কিছু ভেবে ভয় পেতাম। কিন্তু আসল পুরুষদের নিজের বউকে ভয় পেতে নেই। ইনফ্যাক্ট লুকিয়ে ভয় পেতে হয়, আর প্রকাশ্যে তা লুকিয়ে চলতে হয়। রাতে খাবার পরে সাধারণত হাজবেন্ড-ওয়াইফ একটু রোমান্টিক আলোচনা করলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে, আলাদা করে ডায়েট করতে হয় না, জিমে যেতে হয় না। আমিও তাই অপেক্ষা করছিলাম বৌয়ের জন্য।

তবে ও এখনও শাড়ির কালার সিলেক্ট করতে পারে নি। একটু আগে মেজেন্টা কালার সিলেক্ট করেছিলো। সাথে গহনা, জুতো, লিপস্টিক সব কিছু ম্যাচিং করে সিলেক্ট করে ফেলেছিলো। সব বোনরা একই রঙা সেজে দূঃসম্পর্কের মামাতো ভাইয়ের বিয়েতে যাবে। সমস্যা হয়ে গেলো মেজো বোনের নাকি মেজেন্টা কালারের সাথে ম্যাচ করে নেবার মতন ভ্যানিটি ব্যাগ নেই! তাই আবার শুরু থেকে প্ল্যানিং শুরু হলো!

আমার আর বসে থাকতে ভালো লাগছে না। আমি মশারী করে শুয়ে পড়লাম। মশারীর ভেতরে আমি একা নই। একটা মশা আমার কানের আশেপাশে উড়ছে। মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালিয়ে বালিশের উপর রেখে উবু হয়ে বসে অপেক্ষা করছি। মশাটা এদিকে এলেই ঠাশ করে মেরে দেবো। প্ল্যান কাজও করছে। মশাটা বারবার উড়ে আসছে। আমি দু’হাতে চপাট দিচ্ছি। কিন্তু মরছে না। আমি চশমাটা টেবিলে রেখে শুয়েছি। ওটা থাকলে এত সময় লাগতো না। তবুও আমি হাল ছাড়ার পাত্র না। এটা মারবোই!

বৌ বাইরে থেকে তেড়েফুঁড়ে ভেতরে এলো। “কি সমস্যা তোমার? মশারীর ভেতরে বসে বসে তালি বাজাচ্ছো কি জন্যে? হরিনাম করতে হলে ঠাকুরঘরে গিয়ে বাজাও। এখানে ইম্পর্টেন্ট কথা হচ্ছে। আমি একটা শব্দও চাই না।” ধুপ করে দরজা টেনে দিয়ে বাইরে গিয়ে আবার হাসতে শুরু করে দিলো। অদ্ভুতভাবে ডাইনির মতন করে হাসছে। তবে ছেলেরা কপট হয়। মেয়েরা যত-ই বাজে হাসুক, ছেলেরা ভেবে নেয় ‘এ হাসির চেয়ে সুন্দর কিছু আর হয় না!’ আচ্ছা, মেয়েটাকে মশা কামড়াচ্ছে না? নাকি মশাও শুধু নিরীহদেরকে কামড়ায়?

প্রায় আধ ঘন্টা পর বৌ রুমে ঢুকলো। মশাটা আমার নাকের আশেপাশে অনেকক্ষণ ধরে ঘুরছে। ইচ্ছে করছে ঠাশ করে নিঃশব্দে চ্যাপ্টা করে দিই। কিন্তু নিঃশব্দে এ কাজ করতে পারবো না। বিষয়টা হয়তো মশাটা বুঝতে পেরেছে। তাই হয়তো ও আরও বেশি মজা নিচ্ছে। আমার সব সময়-ই মনে হয়, মশারা মানুষের কথা বুঝতে পারে। রুমে ঢুকে চুপচাপ বসে আছে বৌ। আমি ওকে মৃদ্যু স্বরে বললাম, “তুমি ঘুমাবে না?” ও কিছু বললো না। চুপচাপ বসে রইলো।

বৌদের মন খারাপ হলে হাজবেন্ডরা কখনও সুখে থাকতে পারে না। সুখে ঘুমাতে পারে না। আমি উঠে গিয়ে ওর কাঁধে হাত রেখে জিজ্ঞেস করলাম, “মন খারাপ তোমার?” আমাকে একদম অবাক করে দিয়ে আমার আনরোমান্টিক বউ চট্ করে আমায় জড়িয়ে ধরে আমার পেটে মুখ গুঁজে কাঁদতে শুরু করে দিলো। এভাবে আমার বুকে একটা মোচড় দেবে, তা আমি ভাবতেই পারি নি। ওকে একটু শান্ত করার চেষ্টা করলাম। বললাম, “কি হয়েছে?” ও আমার পেটের মধ্যে মুখ গুঁজে রেখে-ই ফিশফিশ করে বললো, “আমার মোবাইলটা ব্যালকনি থেকে নিচে পড়ে গেছে।” আমার বুকে আবার মোচড় দিলো!

আমি একমুহূর্ত ওর দিকে তাকিয়ে ঐ অবস্থাতে-ই এক দৌঁড়ে নিচে চলে এলাম। ৮ তলা থেকে পড়ে মোবাইলটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে আছে! আমি কাছে যেতে-ই হঠাৎ যেন বলে উঠলো, “আমি মরে গিয়ে বেঁচে গেলাম স্যার। আপনিও মরে গিয়ে বেঁচে যান। আপনার বউ বউ নয়। সে অত্যাচারে অতিষ্ঠ করে ফেলা কোন ডিকটেটর! আমি মোবাইলের লাশটা হাতে নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম। এর মধ্যেই বৌয়ের মন ভালো হয়ে গিয়েছে। ও বসে বসে পুরানো অ্যালবাম দেখছে। আমি শোকেজে মোবাইলটা রেখে ওর পাশে বসে বসে ছবি দেখতে শুরু করলাম। “এই ছবিটা দেখো, তোমায় কত সুন্দর লাগছে?”

বউ হাসতে হাসতে মাথা নেড়ে বললো, “আমায় তো প্রতিটা ছবিতেই তোমার সুন্দর লাগা উচিত। এখন থেকো সব ছবিতে সুন্দর লাগতে হবে। কেমন?” আমি নিথর পাথরের মতন ওর পাশে বসে ছবি দেখতে থাকলাম। হঠাৎ একটা কথা মনে এসে কি করে যেন মুখেও চলে এলো। “একটা বিষয় খেয়াল করেছো? তুমি যত আগের ছবিতে যাচ্ছো, তত স্লিম হচ্ছো।” কথাটা বলেই আমি মুখ চেপে ধরলাম। এ আমি কি বলে ফেললাম! এখন কি আমায়ও ব্যালকনি দিয়ে ফেলে দেবে! কি জানি! দিতেও পারে!

বৌ কিছুই বললো না। ও শুয়ে পড়লো। আমিও শুয়ে পড়লাম বিছানার যে পাশে আমি শুই সে পাশে। হঠাৎ ও আমার কানের পাশে এসে ফিশফিশ করে বললো, “তুমি কি এখন ঘুমিয়ে যাবে?” পূর্বাভিজ্ঞতা মতে, এসব আমার ভবিষ্যত খরচের আলামত। আমি মন প্রাণে বিশ্বাস করি আমার বউ চাইলেও রোমান্টিক হতে পারে না। সে চায়ও না!

ও আমার বুকের উপর মাথা রেখে খোলা চুলগুলো আমার মুখের উপর আসতে দিয়ে শুয়ে বললো, “চলো না কালকে একটা মোবাইল কিনি? এবারে অনেক দামী দেখে কিনবো কেমন? সামনে রিপু দাদার বিয়ে তো! কিনে দেবে?” আমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হবার ভান করে মরার মতন শুয়ে রইলাম। আপাতত শোকেজ থেকে মৃত মোবাইলটার কন্ঠ শুনতে পাচ্ছি। ও গান করছে। ও গাইছে, “এই ঘুম যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো, তুমি বলো তো?”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত