ফিরে পাওয়া

ফিরে পাওয়া

“শুভ,আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধরবে প্লিজ” কিছুটা অন্যমনস্ক ভাবেই সামনের দিকে তাকিয়ে শুভকে কথাটা বলল অদ্রি। অদ্রির মুখে এমন একটা কথা শুনে শুভ কিছুটা অবাক দৃষ্টিতে অদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে।এই মুহূর্তে অদ্রি আর শুভ একটা পার্কের বেঞ্চির উপরে বসে আছে।দু’জন পাশাপাশি কিছুটা দূরত্বে বসেছে।আজকে ওদের ব্রেকাপের দিন।কিছু সময় পর অদ্রি বলল,

–শুভ,
–হুম…
–তুমি কি কিছুই করতে পারবে না?
–না অদ্রি।আমার আরো দুইটা বছর অন্তত সময় লাগবে।
–তোমার এই দুইটা বছর তো গত এক বছর ধরেই শুনে আসছি।একটু সময়ও বুঝি ফুরায় নি?
–অদ্রি প্লিজ। তুমি ভালো করেই জানো আমি কি পরিস্থিতিতে আছি।
–হ্যাঁ শুভ।জানি বলেই চুপ করে আছি।আর আজ তোমাকে হারাতে বসেছি।
–আমি তো চেষ্টা করেছি তোমার ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করতে।আমার একটা জব যোগাড় করতে।কিন্তু কোনোটাই হলোনা।তোমার ফ্যামিলি অপেক্ষা করতে রাজি না।এতে আমি আর কি করবো বলো?
–হ্যাঁ তুমি আর কি করবে!!
–দেখো অদ্রি,তুমি তো বুড়ি হয়ে যাচ্ছোনা।তোমার ফ্যামিলি এত অস্থির কেনো হয়ে পড়েছে তোমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য?

–শুভ বাবার পরিস্থিতি তুমি জানো।কিভাবে বলতে পারো এভাবে?বাবার কিছু হয়ে গেলে আমাদের কে দেখবে?
–একটা কথা বলবো?
–হুম বলো…
–আজকে তোমাকে একটু বেশি-ই সুন্দর লাগছে।
–হ্যাঁ তা লাগা টা স্বাভাবিক।শুনেছ

ি ব্রেকাপের দিন নাকি প্রেমিকাকে একটু বেশিই সুন্দর লাগে। শুভ কথাটা ঘুরানোর জন্যই বলেছে।যদিও আজকে অদ্রিকে সত্যি খুব সুন্দর লাগছিলো।একটা হালকা বেগুনী রঙের শাড়ি পরেছে।কালো ব্লাউজ,সাথে খোলা চুল,কানে ঝুমকো দুল,হাতে কয়েকটা নীল রঙের কাচের চুড়ি।আর কপালে একটা ছোট্ট কালো টিপ। অদ্রির পাতলা ঠোটজোড়া এমনিতেই গোলাপের মতো গোলাপি। লিপস্টিক না দিলেও অপূর্ব মায়াবী লাগে মেয়েটাকে। অদ্রি চুলগুলো মুড়িয়ে খোঁপা বেধে নিলো।শুভ বাধা দিয়ে বলল,

–থাকুক না।তোমায় খোলা চুলেই ভালো লাগে।
–গরম লাগছে শুভ।এই গ্রীষ্মের ভরদুপুরে খোলা চুলে আরো থাকলে আমি দম আটকে মরে যাবো।
–বাতাস বইছে তো অদ্রি।
–না না।বড়দের মুখে শুনেছি দুপুরে চুল খোলা রাখলে নাকি ভূতে ধরে।
–ভুল বলেছো।ওটা হবে সন্ধ্যায়।মাগরীবের সময় চুল খুলে রাখলে ভূত,পেত্নী এসে ভর করে।
–উঁহু দুপুরেও।আবার সন্ধ্যায়ও।
–আমার জন্য নাহয় খুলে রাখো।

আমি ভূত,পেত্নী সব তাড়িয়ে দিবো।প্লিজ অদ্রি।আজকের পর তো আর কখনো দেখবো না তোমাকে এভাবে। শুভর আকুতিভরা কথা অদ্রি ফেলতে পারলো না।তাই চুলগুলো খুলে পিঠ পর্যন্ত নামিয়ে নিলো।ঘন,কালো,রেশমী চুল অদ্রির। শুভ মুগ্ধ দৃষ্টিতে অদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে।অদ্রি ঘোর ভাঙিয়ে বলল

–এমনভাবে দেখো না শুভ।
–কেনো?
–আমি মরে যাবো।পারবো না থাকতে।
–আমার যে বুকটা ফেটে যাচ্ছে অদ্রি।আমাদের পাঁচটা বছরের ভালোবাসা এভানে নিমিষেই শেষ হয়ে যাবে?
–নিয়তি আমাদের এখানে নিয়ে এসেছে শুভ।কিছু করার নেই।
–সবই আমার দোষ।আমি ব্যর্থ।একটা চাকরী যোগাড় করতে পারলাম না।

দু’জনের চুপ করে বসে আছে।পরিবেশটা বেশ থমথমে।সামনে একটা ছোট পুকুর।গ্রীষ্মের উষ্ণ বাতাস বইছে খানিক বাদে বাদে।নীরবতা ভেঙলো অদ্রির ফোন কল এ।বাসা থেকে ওর ছোট বোন তিথি বারবার কল দিচ্ছে।অদ্রি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে তিথি বলল

–বু তুই কই?বিকেল হয়ে গেছে।এখনো তোর পাত্তা নেই।মা বকাবকি করছে।একটু পরেই ছেলেপক্ষ তোকে দেখতে আসবে আর তুই এখনো বাসায় ফিরিস নি।
–আমি একটু পরে আসবো তিথি।ফোন রাখ।
–এখনো শুভ ভাইয়ার সাথে আছিস?
–হুম..

ওপাশ থেকে তিথির একটা দীর্ঘশ্বাস ভেসে আসলো।তিথি আর অদ্রি পিঠাপিঠি দুই বোন।অদ্রি ফোন টা কেটে দিয়ে শুভর দিকে তাকিয়ে আছে। “শুভ,আমার হাতটা একটু শক্ত করে ধরবে প্লিজ?” অদ্রির কথাটা শুনে শুভ ওর দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।অদ্রি আবার বলল

–শুভ,প্লিজ।একটু পরেই চলে যাবো।সারাজীবনের জন্য দূর হয়ে যাবো।দু’টো মিনিট আমার হাতটা ধরো প্লিজ?শেষবারের মতো? শুভ আর সাতপাঁচ না ভেবে বেঞ্চির উপরে রাখা অদ্রির হাতটা শক্ত করে ধরলো।একটা উষ্ণ আবেশে অদ্রি তার চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।তারপর বলল

–শুভ…
–হুম তোমার মনে আছে যেদিন তুমি প্রথম আমার হাত স্পর্শ করেছিলে?
–হুম মনে আছে।
–আমি সেদিনটা কখনোই ভুলতে পারবোনা।
–হুম।আমিও কখনো ভুলবো না তোমার সেই লজ্জামাখা লাল হয়ে যাওয়া মুখটি।
–আমরা তো এভাবে শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত থাকার প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলাম তাইনা শুভ?? শুভ অদ্রির হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলে
–ওসব এখন শুধুই অতীত অদ্রী।

হঠাৎ করেই শুভর এমন আচরণ অদ্রী মেনে নিতে পারলোনা।ওর চোখে জল এসে পড়েছে।একটু হলেই চোখের কাজল ভেদ করে টুপ করে গড়িয়ে পড়বে।অদ্রি পাশ ফিরে চোখের জল মুছে নিলো।

–সন্ধ্যা হয়ে এসেছে অদ্রী।চলো তোমাকে পৌঁছে দেই।
–না।আমি একাই যেতে পারবো।আজ আর তোমাকে যেতে হবেনা।
–কিন্তু…
–না শুভ।ভালো থেকো।আল্লাহ্ হাফেজ।

অদ্রির পাগুলো যেনো ভারী হয়ে আসছে।চলতে চাইছে না।অনেক কষ্টে ও প্রতিটা পদক্ষেপ ফেলছে।একটা পিছুটান ওকে বারবার টানছে।ও জানে ও যদি পিছু ফিরে তাকায় তাহলে শুভ নিজেকে সামলে রাখতে পারবেনা।শুভ ভাবলেশহীন ভাবে অদ্রির যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো।খুব ইচ্ছে করছে ওকে আটকে নেয়।খুব করে চাচ্ছে অদ্রিকে সবসময়ের জন্য নিজের করে নেয়।কিন্তু সে নিয়তির বেড়াজালে বন্দী।

শুভ এমন অদ্ভুত আচরণ করেছে শুধুমাত্র অদ্রি যেনো ভালোভাবে চলে যায় তার জন্য।শুভ কখনোই অদ্রিকে কষ্ট দিতে চায়না।নিয়তি ওদের ভাগ্যে কষ্ট লিখে রেখেছে।শুভ অনেক চেষ্টা করেছে একটা চাকরী যোগাড় করার।কিন্তু কোনোভাবেই হচ্ছেনা।প্রাইভেট কোনো কোম্পানিতে চাকরী হলেও মোটা অঙ্কের ঘুষ চাচ্ছে।যা ওদের মতো মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব।শুভ কয়েকবার ভেবেছেও অদ্রিকে বলবে পালিয়ে যেতে।কিন্তু নিজের কাধে থাকা দায়িত্বগুলোকে ও কোনোভাবে অস্বীকার করতে পারবেনা। শুভর বাবার প্যারাইসিস হওয়ার পর থেকে পরিবারের হাল ধরতে হয়েছে শুভকে।কোনোরম টিউশনি,বাবার পেনশন দিয়ে ওদের দুই ভাইবোনের পড়াশুনো আর বাসার খরচাপাতি চলে যায়। এর মধ্যে অদ্রিকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়া ওর পক্ষে সম্ভব নয়।দায়িত্ব আর নিয়তির কাছে শুভ আটকে গেছে।নিজের ভালোবাসাকে ত্যাগ করেছে।

–কিরে বু এখনো রেডি হসনি কেনো?কখন থেকেই ছেলেরা বসে আছে।তুই কি চাস বু ক্লিয়ার করে বল তো?
–আমি কি চাই সেটা সবাই জানে তিথি!!
–কিন্তু বু তুই এমন পাগলামো করে কিছু হবেনা রে।শুভ ভাইয়ার পরিস্থিতিটা বুঝতে হবে।বাবার অবস্থাটাও বুঝতে হবে।আয় আমি তোকে সাজিয়ে দিচ্ছি।

তিথি অদ্রি কে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পরিয়ে চুলে খোঁপা করে দিলো।একটু হালকা সাজগোজ করিয়ে দিলো।মাথায় ঘোমটা টানিয়ে হাতে নাস্তার ট্রে নিয়ে অদ্রি সবার সামনে এলো।অদ্রির চোখজোড়া ফুলে আছে।এক পলক দেখেই যে কেউ বলে দিতে পারবে মেয়েটা ভীষণ কান্না করেছে।অদ্রিকে যারা দেখতে এসেছে তাদের মধ্যে ছেলে,ছেলের বোন আর বাবা মা এসেছে।ছেলেটার নাম শিহাব। অদ্রি উপস্থিত সবাইকে সালাম দিয়ে সোফায় বসলো এক পাশে।দেখতে আসা ভদ্র মহিলা অদ্রিকে বেশ কিছু প্রশ্ন করেছে।তারপর অদ্রির বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল

–ওদের যদি একটু আলাদা কথা বলতে দেওয়া হয় তাহলে মনে হয় ভালো হয়। ওরা নিজেদের মধ্যে একটু কথা বলে নিতো।

অদ্রীর বাবা কোনো আপত্তি করলেন না।অদ্রি আর শিহাব দু’জনে অদ্রির রুমের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। অদ্রি বারান্দায় ঝুলানো দোলনা দেখিয়ে শিহাবকে বসতে বলল।শিহাব বসলো না।অদ্রি বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়েছে। দুজনেই পিন পতন নীরবতা পালন করছে।নীরবতা ভেঙে শিহাব বলল

–ছেলেটা খুব ভালোবাসেন বুঝি?

শিহাবের কথা শুনে অদ্রি থতমত খেয়ে গেলো।হাতের মুঠোয় ধরে রাখা গ্রিলটা আরো শক্ত করে ধরলো।চোখমুখ শক্ত করে বলল

–আপনি কিভাবে জানেন? শিহাব একটু মুচকী হেসে বলল
–মানুষের সাইকোলজি নিয়ে আমার মোটামুটি অভিজ্ঞতা আছে।

আপনার চোখেমুখে কাউকে হারানোর কষ্টটা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।আপনার চোখ দুটো দেখেছেন আয়নায়? কথাটা বলে শিহাব পাশের টেবিলে রাখা ছোট একটা আয়না অদ্রির মুখের সামনে ধরলো।আদ্রি এর আগে খেয়ালই করেনি যে ওর চোখ এতটা ফুলে আছে। শিহাব বলল

–ভালোবাসার মানুষ হারানোর যন্ত্রণায় আপনি একা ভুগছেন না।এই যন্ত্রণায় আমিও ভূগেছি।

অদ্রি গ্রিল থেকে হাত নামিয়ে শিহাবের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। “নীলা ছিলো মেয়েটার নাম।আমাদের সম্পর্কটা ছোট্ট বেলার খুনসুটি থেকেই শুরু।বলতে পারেন আমরা ন্যাংটা কালের প্রেমিক-প্রেমিকা” এইটুকু বলেই শিহাব ফিক করে হেসে দিলো।তারপর আবাত বলা শুরু করলো “আমাদের সম্পর্কটা খুবই গভীর ছিলো।গভীর বলতে দুইজন দুইজনকে পাগলের মতো ভালোবাসতাম।দুই পরিবারও জানতো আমাদের রিলেশনের কথা।আমাদের পাশের ফ্ল্যাটেই ছিলো ওরা।অবসরের সারাটা দিন দুইজন নানান খুনসুটিতে মেতে থাকতাম।পারিবারিকভাবেই সব ঠিকঠাক ছিলো বলে কখনো কোনো বাধা আসেনি।কিন্তু হঠাৎ করেই এক দমকা হাওয়া আমার নীলাকে আমার থেকে কেড়ে নেয়।

ও একটু চাপা স্বভাবের মেয়ে ছিল।সহজে কারো কাছে কিছু প্রকাশ করতো না।অসুখ হলে গুটিসুটি মেরে থাকতো।কারো কাছে বলতো না।ক্যান্সারের লাস্ট স্টেজে ছিলো আমার নীলা।ওকে বাঁচিয়ে রাখার কোনো ত্রুটি রাখিনি।অনেক চেষ্টা করেছি অনেক।কিন্তু পারিনি ওকে বাঁচাতে। নিজ হাতে আমি আমার ভালোবাসাকে দাফন দিয়ে এসেছিলাম।বুঝতে পারেন কতটা কষ্ট হয়? আমার নীলা আইসিইউ তে আমার হাত ধরে শেষ বারের মতো বলেছিলো “শিহাব,তোর সাথে আর আমার সংসার পাতা হলোনা।আমাদের ছোট্ট বেলার খেলা গুলো খেলাই থেকে গেলো।ভালো থাকিস তুই”।

অদ্রি লক্ষ্য করলো শিহাবের চোখ থেকে টুপটাপ করে কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়েছে।শিহাবের ঘটনাটা শোনার পর অদ্রি নির্বাক।শিহাবকে কিছু বলার মতো ভাষা ওর জানা নেই।সান্ত্বনা ও কখনোই কাউকে দেয়না।শুধু একটু নিরবতার পর বলল “বাইরে সবাই অপেক্ষা করছে।অনেক সময় হয়েছে আমরা এখানে এসেছি।চলুন বাইরে যাই।”
রাত ১১ টা বাজে।শুভ হাতে জ্বলন্ত একটা সিগারেট নিয়ে শহরের ল্যাম্পপোস্ট এর নিচ দিয়ে যাচ্ছে।সারা শহর ঘুমিয়ে পড়েছে।চারদিক নিরব,নিস্তব্ধ।কোথাও কেউ নেই।মাঝে মাঝে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ভেসে আসছে।কিন্তু শুভর ভেতরটা আগুনের মতো জ্বলছে। যেমন করে তার হাতের সিগারেটটা জ্বলছে ঠিক তেমনি করে। হঠাৎ করেই শুভ একটা কাঁপন অনুভূত করলো। পকেট থেকে ফোন টা বের করে দেখে অদ্রির নামটা ফোনের স্ক্রীনে ভেসে উঠছে।বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর শুভ কল টা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসলো

–একবার বাসার নিচে আসবে প্লিজ?
–কেনো?
–আসো না।আসলেই বুঝতে পারবে।আমি জানি তুমি আশেপাশেই আছো।এখনো বাসায় যাওনি।
–ভালো লাগছে না অদ্রি।বাসায় যাবো।
–একবার আসো প্লিজ শুভ।খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে।
–আচ্ছা আসছি।
–শুনো…
–হুম…
–চুইংগাম চিবোতে চিবোতে আসতে হবেনা।এমনি এসে পড়ো।
–তুমি কিভাবে…
–পাঁচটা বছর অনেক সময় শুভ।তোমাকে আমি বুঝি।

শুভর বুকটা কেঁপে উঠলো।এক অদ্ভুত মায়ায় আবার জড়িয়ে যাচ্ছে যেনো। অদ্রিদের বাসার নিচে ল্যাম্পোস্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ।কিছুক্ষন পরেই পেছন থেকে আচমকা কারো জড়িয়ে ধরার অনুভূতি পেলো।শুভ বুঝতে পারলো অদ্রি তাকে জড়িয়ে ধরেছে।শুভর হাতের নিচ থেকে অদ্রির দুইটা হাত কাদ পর্যন্ত শক্ত করে শুভর পিঠে মাথা ঠেকিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে অদ্রি।কিছু সময়ের জন্য শুভও এক অজানা অনুভূতিতে হারিয়ে গেছে।ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসতেই শুভ অদ্রির হাত দু’টো ওর হাত দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো।কিন্তু অদ্রি যেনো ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে।

–অদ্রি…
–হুম…
–এবার তো ছাড়ো।তুমি অন্যের বউ হবা কয়দিন পর।

এভাবে কেউ দেখে ফেললে তোমার ভবিষ্যত সংসারে সমস্যা হবে। অদ্রি তার হাত দু’টো বের করে ঠাস ঠাস করে কয়েকটা কিল বসিয়ে দিলো শুভর পিঠে।তারপর ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল

–খুব শখ না,অন্যের বউ হতে দেখতে?এই ছিলো তোর ভালোবাসা??তিন বছরের বন্ধুত্ব,পাঁচ বছরের ভালোবাসাগুলোর কথা কি একটুও মনে নেই।তোর স্মৃতিতে কি সেগুলো একটুও কড়া নাড়ে না?
–নাড়লেও কিছু করার নেই অদ্রি।আমি…
–চুপ।একদম চুপ।একটাও কথা বলবিনা।আমি বলবো তুই শুনবি।

শুভ ভাবলেশহীন ভাবে অদ্রির দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না। দু’জনেই পিন পতন নীরবতা পালন করছে।আশেপাশের পরিবেশটাও বেশ নিস্তব্ধ।চারপাশে বিদঘুটে অন্ধকার।শুধুমাত্র একটা থেকে অন্যটা সদূরে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টের নিচে আলো দেখা যাচ্ছে।মাঝে মাঝে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ভেসে আসছে।এই নীরব স্তব্ধ জায়গাটাতে অদ্রির ফুঁপিয়ে কাঁদার শব্দটাও স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

–এই কবে বিয়ে করবি আমাকে হু?
–মানে?
–আমি বাংলা ভাষাতেই বলছি। বাংলাও কি বুঝিস না?? আমাকে বিয়ে করবি কবে?
–অদ্রি কি সব বলছো তুমি?
–আমার বিয়ে তোর সাথেই হবে।আর কারো সাথে না।আমি হলে তোরই হবো।আর কারো না।কবে করবি বিয়ে?
–অদ্রি এমন পাগলামো করো না।যাও বাসায় যাও। এত রাতে বাইরে থাকা ঠিক হবেনা।
–শুভ!!!আমার কথা কি কানে যায়না? কথাটা বলেই অদ্রি শুভর কলার চেপে ধরলো।আবার বলল,
–বলেছি না আমার বিয়ে তোর সাথেই হবে।আর কারো সাথে না।চাকরী টা জলদি খুঁজে নে।আমি পারবোনা তোকে ছাড়া থাকতে শুভ!! কথাটা বলেই অদ্রি শুভর বুকে মাথা ঠেকিয়ে, ওর বুকে নাক ঘষা দিয়ে কান্না করতে লাগলো।

–আমার অন্য কোথাও বিয়ে হবেনা শুভ।বিয়ে আমাকে তুমিই করবে।আজকে যারা দেখতে এসেছিলো ছেলেটা খুবই ভালো।আমি মেয়ে হয়ে বাবাকে এত সুন্দর করে বুঝাতে পারিনি যেটা শিহাব বাবাকে খুবই নিখুঁত ভাবে বুঝিয়েছে।বাবা আমাদের বিয়ের জন্য রাজি হয়ে গেছে শুভ।অপেক্ষা শুধু তোমার ভালো একটা চাকরীর।জানো শুভ, শিহাব বাবাকে একটা কথা বলেছে শেষ ” প্রতিটা মানুষ তার ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেতো তাহলে পৃথিবীটা আরো বেশি সুন্দর হতো”।

–ওরে আল্লাহ্ এই সোজা কথাটা শুরুতে বললেই তো হতো।এত প্যাঁচানোর কি ছিল??
–প্যাঁচাই নি আমি।তুমি মাথামোটা তাই বুঝো না কিছুই।তোমার সাথে যে কিভাবে সংসার পাতবো খোদা জানে।
–হু…তবে ওই শিহাবের সাথে সংসার পাতো। অদ্রি শুভর হাতে একটা ঘুষি দিয়ে বলল
–খুব বেশি শখ না,অন্যের বউ হতে দেখার?আচ্ছা ঠিক আছে।ওই শিহাবের সাথেই বিয়ের পিড়িতে বসবো।
কথাটা বলে অদ্রি বাসার দিকে পথ ধরলো।ওমনি শুভ অদ্রির হাত চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে এনে বলল

–তুমি শুধুই আমার।সুযোগ যখন পেয়েছি হাতছাড়া করা যাবেনা।আমি খুব চেষ্টা করছি একটা ভালো জব করে তোমাকে সারাজীবনের জন্য নিজের করার।
–ভালোবাসি।
–ভালোবাসি।

একটা নীরব, নিস্তব্ধ, অন্ধকার,কোলাহলহীন রাত।ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে একটা মিষ্টি খুনসুটি পূর্ণ ভালোবাসা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত