নাতাশা

নাতাশা

-ঐ মিঞা উপরে তাকাইয়া হাঁটেন নাকি?হুদাই ধাক্কা মারেন কেন?
-আরে আজব তো ! একই প্রশ্ন যদি আমি আপনাকে করি তবে?
-ব্যাটা ফাজিল। ইচ্ছা কইরা ধাক্কা মাইরা আবার পার্ট লয়! কানের নিচে দুইটা দিলে বুঝবি নাতাশা কি জিনিস!
-মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুয়েজ। মেয়ে মানুষ বলে ছেড়ে দিলাম।নতুবা দেখিয়ে দিতাম !
-ঠাস্ । (চড়ের শব্দ)
-এটা কি হলো ? তড়িঘড়ি করে এক লাপে ঘুম থেকে উঠে পড়লো নিলয়।

ওরে বাপরে কি মেয়েরে ! ভাগ্যিস পুরোটা স্বপ্ন ছিলো।উফ্ নতুবা মানসম্মান বলতে আর কিছু থাকতো না। (আপনাদের সংক্ষিপ্ত আকারে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি নিলয়ের সাথে।নিলয় হলো একজন চাকুরীজীবী ব্যক্তি।যার পুরো দিনটা ব্যস্ততায় কেটে যায়।কিন্তু ইদানিং সে উদ্ভট স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে লাপিয়ে উঠে।ব্যাচেলারদের জীবন এতটা দুর্বিষহ যে নিলয় তার খেসারত প্রতিটা সময় দেয়। কিন্তু তারপরেও সে বিয়ে নামক ঝামেলায় ঝড়াতে চায় না।)

রীতিমত রেডি হয়ে চলে গেলো অফিসের উদ্দেশ্যে।কিন্তু আজকের দিনটি তার ভিন্নভাবে কাটলো।কারণ অফিসে একটা নতুন মেয়ে জয়েন করেছে এই মাসে।অবশ্য মেয়েটাকে মেয়ে না বলে ছেলে বলাটাই শ্রেয় নিলয়ের ভাষায়। কারণ একটা মেয়ের পরিপাটি বা ড্রেসআপ যেমনটা থাকা দরকার তার লেশমাত্র মেয়েটার নেই।যাই হোক নিলয় বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামালো না।সে নিজের কাজে মন দিলো।সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় বাসার উদ্দেশ্যে রওন হলো।পথিমধ্যে যা ঘটলো,

-এই যে ভাইয়া আপনার বাসা এদিকে?
-ভাইয়া !! উফ্।জানেন তো ভাইয়া ডাক নিয়ে যুবসমাজ বড্ড বিব্রত। তারপরেও মেয়েগুলা কেন যে ভাইয়া ডাকে? ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে ধমকের স্বরে মেয়েটাকে বললাম,ঐ আমি কি আপনার মায়ের সন্তান?
-না তো।
-তাহলে কাকি, জেঠী, ফুফু,খালা,মামি উনাদের কারোর সন্তান?
-না তো।
-তাহলে হুদাই ভাইয়া ডাকলেন কেন?
-আরে আজব তো! তো আপনারে কি কইয়া ডাকুম?
-কেন ডাকবেন আমাকে?যত্তসব !
-আরে এমন ব্যবহার করছেন কেন?

আমি ভাবলাম আপনার বাসা হয়তো ধানমন্ডি।আমরা যেহেতু একই অফিসে জব করি সেক্ষেত্রে দুজনে একসাথে তো যেতেই পারি। তাইনা?বাট আপনি যে রকম আচরণ করছেন এখন তো মনে হচ্ছে একা যাওয়াটাই বেটার।

-তো যান।নিষেধ করছে কয়জনে?গায়ে পড়ার ভাব কত?
-কি বললেন?আমি আপনার গায়ে পড়ে ভাব দেখাচ্ছি?
-তা নয়তো কি?
-আমার আর কোনো কাজ নাইতো।এইসব অকর্মার গায়ে পড়ে ভাব দেখাতাম।আজাইরা।
-ঐ মাইয়া কে অকর্মা? মুখ সামলাই কথা বলেন।
-কিসের মুখ সামলামু।ভালো চাস তো আমার সামনে থেকে ভাগ।নতুবা তোর নাক ফাটাবো।
-আপনি লিমিট ক্রস করছেন বলে দিলাম।
-ঠাস্(থাপ্পড়ের আওয়াজ)
-এটা কি হলো।

আবারো তড়িঘড়ি করে গাড়ির সিট থেকে হেলান দেওয়া মাথাটা উঠিয়ে বুঝতে পারলাম আবারো স্বপ্ন দেখেছি।উফ্ বিখ্যাত কবিরা বলে গিয়েছিলেন স্বপ্ন বাঁচার জন্য প্রয়োজন।কিন্তু দেখা যাচ্ছে রীতিমত এই স্বপ্ন তো আমার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। বাসায় এসে ফ্রেস হয়ে খাবার শেষ করে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলাম।হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার।

-হ্যালো।কে বলছেন?
-আমি নাতাশা।
-(ওপাস থেকে রমণীর কন্ঠে এই ধরনের একটা কথা ভেসে এলো।কিন্তু আমি তো হতাশ।) নাতাশা?কোন নাতাশা আপনি?

-আরে চিনতে পারলেনা?
-(ওমা এই মেয়ে দেখছি তুমি বলতেছে।রহস্যটা কি?)ঐ কে আপনি? আর আপনি তো আমার পূর্বপরিচিত বলে আমার মনে হচ্ছে না।
-নিলয় আমি তোমার ওয়াইফ।
-ফা ফা ফাজলামি করেন?
-আমি কেন তোমার সাথে ফাজলামি করবো?সত্যি আমি তোমার ওয়াইফ।
-(আল্লাহ্ গো আমারে কোন চিপায় পালানোর চেষ্টা করছে এই মেয়েটা?)বোন। আপনি আমার মায়ের পেটের বোন।কেন আমার সাথে এমন করছেন বোন?

-একটা থাপ্পড় দিবো।বউরে কেউ বোন কয়?
-ঐ মেয়ে কিসের বউ?অনেকক্ষণ বুঝাইলাম কিন্তু কি সব উল্টাপাল্টা বকতেছেন ?
-মানে কি?তুমি আমাকে অস্বীকার করছো কেন?আমি কিন্তু এখন মায়ের কাছে গিয়ে উনাকে সব বলে দিবো।
-কি বলবেন মা কে?
-তুমি আমার বর সেটাই।
-আল্লাহ্ আমারে তুইল্লা নাও।এই দৃশ্য দেখার আগে আমার মরণ হোক খোদা।
-মরবা কেন? আমাকে বউ বলে স্বীকার করো।
-আর যদি না করি?
-তবে থাপ্পড় ফ্রি।
-আবারো লাপিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম।

ওহ্ গড এটাও স্বপ্ন ছিলো? বাঁচা গেলো। সন্ধ্যায় বাসা থেকে বেরিয়ে করিম চাচার দোকানে বসে চা খাচ্ছি।হঠাৎ নীল শাড়ি নীল চুড়ি পরা একটা নীল পরীকে দেখলাম।একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।যাকে বর্তমান যুগের পোলাপাইন ক্রাস বলে। আরে মেয়েটা এদিকে আসছে ! করিম চাচা আর মেয়েটার কথোপকথন :

-করিম চাচা পিনু আসলে ওকে এই টাকাগুলো দিয়া দিয়েন।
-ঠিক আছে নাতাশা। আমার মাথায় বজ্রপাত পড়লো।আবার নাতাশা ?

-চাচা মেয়েটা কে?
-ও নাতাশা।
-থাকে কোথায়?
-এইতো পাশের ঐ বাসায়।
-ও আচ্ছা।ফ্যামিলি সহকারে?
-না। ব্যাচেলর।
-এবার তাহলে বিয়ের কথা ভাবা যায়।মাকে বলতে হবে।কিন্তু চিন্তার বিষয় হলো, ‘নাতাশা’ নাম টা নিয়ে ! এই নামটার মেয়েগুলাই তে স্বপ্নে আইসা আমার ঘুমের বারোটা বাজায়। দোকান থেকে বেরিয়ে বাসায় গেলাম।

-নিলয় তুই এই কাজটা কেমনে করলি?আমাকে বা তোর বাবা কে একবার বললে কি আমরা মেনে নিতাম না?
-ও মা কি শুরু করলা?আমি আবার কি করলাম?
-ঐ শোন্ নাটক কমাই কর।প্রতিবেশীরা শুনলে কি ভাববে বলতো?
-আরে মা, কি করলাম সেটা তো বলবা?
-কি করিস নাই তুই?আর কি করার বাকি রাখলি?
-এবার আমার চিন্তা হচ্ছে মা।মনে হয় স্ট্রোক করমু।মাগো মরার আগে অন্তত বলো আমি কি করলাম?
-ঐ আবুইল্লার মতো বকোস কেন?
-মানে?
-মানে হলো তুই নাকি গতকাল থেকে এখন পর্যন্ত বারো বার নাতাশা বলে চিৎকার দিয়া ঘুম থেকে উঠিস?
-উফ্ মা !

তুমিনা ! সামান্য ব্যপারে কিভাবে টেনশান দেওয়া শুরু করেছিলা।আর তোমাকে এই মিথ্যা কথাটা কে বললো?নিশ্চয় নাবিল?(নাবিল আমার ছোট্টবেলার ফ্রেন্ড।যারে বলে বেষ্টু।কিন্তু ঐ শালার মতো একটা ফ্রেন্ড থাকলে জীবন কয়লা করতে অন্য কেউরে লাগেনা।শালা একটা টোটকা হারামী।তোরে কইছি বইলা তুই মায়েরে বলে দিবি?আর বলছোস যেহেতু পুরা ঘটনা না বইলা অর্ধেক কইয়া এইভাবে আমাকে জমের মুখে ঠেলে দেওয়ার কোনো মানে হয়?আমার জীবনটা তেজপাতা বানাইয়া ছাইড়া দিতাছে।)

-হু।নাবিল বলেছে।এবার বলতো বাবা মেয়েটা কে?
-তুমিতো জানোই নাতাশা(গম্ভীর ভাবে মাকে জবাব দিলাম।)
-থাকে কই আর কি করে?
-(চট্ করে মাথায় একটা আইডিয়ার ম্যাপ আঁকলাম।আর মনে মনে ভাবলাম নাহ্ নাবিলের মতো বেষ্টু প্রত্যেক ব্যক্তির থাকা দরকার) মা ও আমাদের পাশের বাসায় থাকে।নাম নাতাশা।আর বেশি কিছু জানিনা।

-আচ্ছা।এবার বল প্রস্তাব নিয়ে যাই আমি আর তোর বাবা?
-তোমরা যাবে?(ভীষণ আনন্দ চেপে ঠান্ডা মাথায় প্রশ্ন করলাম।কিন্তু ঐ মূহুর্তে আমার মন চাইছিল একটা লুঙ্গি ড্যান্স দেওয়ার জন্য)
-হু।যাবো।
-আচ্ছা। বাবা মা নাতাশার বাড়ি থেকে আসার পর,
-নিলয় কইরে তুই?
-(মা ডাকার সাথে সাথে আড়িপাতা বন্ধ করে উনার সামনে আসলাম।)বলো মা।
-তোর পছন্দ আছে বাবা।মেয়েটা অনেক সুন্দরী।তবে উনারা এখন বিয়ে দিবে না।মেয়ের অনার্স ফাইনালের পর বিয়ে দিবে।আরো ৬ মাস পর।

-ওকে মা।সমস্যা নাই।
-এই নেয়ে মেয়ের ফোন নাম্বার।আর তোর টাও আমরা উনাদের দিয়ে আসছি।
-(ইশ্ আমার মা টার কি বুদ্ধি ! ছেলের জন্য হবুবৌমার নাম্বার নিয়া আসছে।)ঠিক আছে মা। ভাবছি এই ছয়টা মাস নাতাশার সাথে প্রেমের জলে হাবুডুবু খামু।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত