পুতুল কন্যা

পুতুল কন্যা

অহনাকে নিয়ে আগারগাও যাচ্ছি, কিন্তু এই জ্যাম! আধা ঘণ্টার রাস্তা আজ যেন শেষ হচ্ছে না!
অহনা আমার বিবাহিত বউ। ৩ মাস হয়েছে আমাদের বিয়ে হয়েছে। আজ অহনা কে নিয়ে যাচ্ছি ওর বয় ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করাতে,

কি অদ্ভুত তাই না?
।।
কেউ কোন কথা বলছি না, মেয়েটাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে।
ঠিক প্রথম দেখার মতো একটা পুতুল, যাকে টোকা দিলেই ভেঙ্গে যাবে। আমি ড্রাইভ করছি, অহনা পাশে বসে আছে,

হটাৎ পরসি আর জুয়েলের একটা গান বাজলো,
“কেন এতো হারাবার ভয়, কেন মনে সংশয়…
ভালোবেসে তোকে দূরে হারাবো, সে তো হবার নয় ”
অহনা গানটা বন্ধ করে দিলো।
আমার কিছু বলার ছিল না।।
।।
প্রায় ২ বছর আগে আমি ঢাকায় আসি, এরপর একটা কোম্পানিতে জয়েন্ট করি, প্রথমে শুধু কম্পিউটারের জন্য আমাকে নিয়োগ করা হলেও,
মাঝে মাঝে আমি স্যারের সাথে মিটিং এ যেতাম, এরপর থেকে স্যারের সাথেই থাকতাম। বছর খানিক আগে আমি প্রথম অহনাকে দেখি!
একদিন অফিসের একটা পার্টি হচ্ছিলো, যেখানে আমাদের অফিসের কর্মচারীদের পরিবার ও মালিকের পরিবারের দাওয়াত!
আমাদের অফিসের মালিক ৭ জন ছিল, অহনার বাবা ওনাদের মধ্যে একজন।
।।
আমি ওনাকে আগেও দেখেছি, কিন্তু ওনার পরিবারকে চিনতাম না। প্রথম যে দিন আমি অহনাকে দেখি আমি তার প্রেমে পড়ে যায়।
আমি কেন যে দেখবেই সে প্রেমে পড়ে যাবে। ঠিক যেন একটা পুতুল! ওর সামনে সব যেন তুচ্ছ।
।।
পার্টি টা আমার দাইত্তে ছিল তাই আমাকে সব দিক সামলাতে হচ্ছিলো।
সে দিন আমাদের প্রায় ৫ জনকে প্রমোশন দেওয়া হলো। তার মধ্যে আমি ছিলাম সব থেকে বড় প্রমোশন, সাথে নতুন কিছু দায়িত্ব।
আমার এক বস বলল, সিমেল! Let’s injoy!
আরেকজন বলল, স্যার ও ড্রিংক তো অনেক দূরের কথা সিগারেট ও খায় না।
স্যার- not bad! Simel…
।।
আমি সব জায়গা ঘুরে সবার খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম! অহনাকে দেখলাম মন খারাপ করে আছে…
আমি- আসসালামু…
অহনা- অলাইকুমআসসালাম…
আমি- মন খারাপ?
অহনা- আপনি তো দেখছি ভালোই মন পড়তে পারেন। আপনাকে শুভেচ্ছা, প্রমোশনের জন্য। তা সবাই ইনজয় করছে আপনি এখানে কেন?
আমি- আপনাকে দেখতে এলাম। আপনি মন খারাপ করে আছেন তো তাই।
অহনা- একটু প্রফেশনাল থেকে পার্সোনাল হয়ে যাচ্ছে না?
আমি- আপনি কি বিরক্ত হচ্ছেন?
অহনা- আমি অপরিচিত মানুষের সাথে কথা বলা পছন্দ করি না।
আমি- আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। তবে খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আসি নি।
অহনা- আমি আপনার মতো মন পড়তে পারি না। আমাকে একা থাকতে দিলে খুশী হবো।
।।
আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম, হাজার হলেও উনি আমার মালিকের মেয়ে।
প্রমোশন হবার পর আমার সাথে প্রায় অহনার বাবার সাথে দেখা হতো, উনি অনেক ভালো মানুষ।
একদিন দুপুরে ওনার সাথে লাঞ্চ করছি।
অহনার বাবা- তোমার আজকের প্রেজেন্টেশন তা অনেক সুন্দর হয়েছে, আমার ভাবতে অবাক লাগে তুমি এই সাবজেক্ট নিয়ে না

পড়েও অনেক ভালো পারো।
আমি- স্যার! আপনাকে অনেক ধন্যবাদ যে আপনি সে সুযোগ দিয়েছেন।
অহনার বাবা- আরে তোমার অনেক সুনাম সোহেল ভাই করতো, তাই আমিও তোমাকে সুযোগ দিলাম, আসলেই তুমি যোগ্য। তা বিয়ে-শাদি করেছো?
আমি- জি না স্যার!
অহনার বাবা- গার্ল-ফ্রেন্ড নিশ্চয় আছে?
আমি- জি না স্যার!
অহনার বাবা- আরে লজ্জা পাচ্ছো কেন? কাউকে পছন্দ করো?
আমি- তেমন ভাবে না,
অহনার বাবা- তার মানে কাউকে পছন্দ করো? নাম কি সেই ভাগ্যবান মেয়ের?
আমি- বাদ দেন না স্যার!
অহনার বাবা- আরে বলো না, যদি আমি তোমার কোন সাহায্য করতে পারি, এমন একটা সোনার টুকরা ছেলের জন্য যদি

একটু কষ্ট করতেই হয় তবে কেন করবো না? আমার তো কোন ছেলে নাই।
আমি- না থাক স্যার!
অহনার বাবা- আমি এবার কিন্তু রাগ করবো।
আমি- স্যার আপনি সুনলেও রাগ করবেন।
অহনার বাবা- তাও তুমি বলো
আমি- আপনার মেয়ে অহনা!
অহনার বাবা- কি?
আমি- সরি, স্যার!
অহনার বাবা- সরি কি জন্য!
আমি- আপনি যদি রাগ করেন।
অহনার বাবা- আমি আমার মেয়ের সাথে কথা বলবো, তোমার মতো ভদ্র আর ভালো ছেলেকে আমার জামাই বানাতে কোন দ্বিধা নাই।
।।
১ সপ্তাহ পর আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
কিন্তু বাসর রাতেই অহনা আমাকে যা বলল, আমার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গেলো। আমি শুধু তাকে বললাম,
আমি- আপনি চাইলে এই কথাটা বিয়ের আগেও বলতে পারতেন,
অহনা- আমি চেয়েছিলাম, কিন্তু বাবা আমাকে কসম করিয়েছিল।
আমি- এখন আপনি কি চান?
অহনা- ৪ মাস পর আমার বয়-ফ্রেন্ড এর পড়া শেষ হবে ওর চাকুরী হয়ে গেলে, আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন।
আমি- আর আমি সবাইকে কি বলবো?
অহনা- আপনি যথেষ্ট বুদ্ধিমান! সবাইকে ঠিক ম্যানেজ করে নিবেন।
।।
কিছুদিন পর অহনার আব্বু আমাকে বলল, বাবা মন খারাপ করো না, আমি জানি তুমি আমার মেয়েকে ঠিক মানিয়ে নিতে পারবা।
আমি-আপনার মেয়ে আগেই সিরধান্ত নিয়ে নিয়েছে।
অহনার বাবা- আমি তোমার ওপর ভরসা করি। আমি তোমার জন্য ফ্লাট আর গাড়ী কিনেছি।
আমি- বাবা! আমি আপনাকে অপমান করতে চাই না, কিন্তু এই সময় এটা নেওয়া সম্ভব না।
অহনার বাবা- আসলে আমার মেয়ের বাসে চড়ার অভ্যাস নাই।
আমি- অহনা বিয়ের আগে যে গাড়ী ব্যাবহার করতো, আপনি সেটাই দিন, তাহলেই হবে, যদি আপনার যোগ্য জামাই হতে পারি, তবে সব নিবো।
।।
হটাৎ অহনার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসলাম!
অহনা- আপনি এখনে থামেন!
আমি- আমি কি চলে যাবো?
অহনা- আমি একা কি বাসে যাবো নাকি?
আমি- না গাড়ী রেখে যাচ্ছি।
অহনা- ডাইভার নাই, আর এখন ড্রাইভ করার মন নাই।
আমি- ও আচ্ছা।
।।
মনে মনে ভাবলাম, অহনার কাছে এই আমার যোগ্যতা! ডাইভার!
অহনা চোখে সান-গ্লাস টা দিয়ে বের হয়ে চলে গেলো।
আর আমি অসহায় ভাবে তার দিকে শুধু চেয়ে থাকালাম

অহনাকে নামানোর পর আমিও নীচে নামলাম, এক দোকানে গেলাম, ভাই, একটা ব্যানসন দেন।
আগে খেতাম না! বিয়ের পর থেকে সিগারেট খায়!
বিয়ে জিনিসটা অদ্ভুত খারাপ মানুষকে ভালো করে আর ভালো মানুষকেও খারাপ করে দেয়।
প্রায় আধা ঘণ্টা পর অহনা নীচে আসলো, আজ আমি ছেলেটাকেও দেখলাম, ছেলেটাও অনেক সুন্দর, তার ওপর অহনা বলেছিল সে নাকি বুয়েটে পড়ে।
।।
অহনাকে নিয়ে আমি বাড়ী ফিরে আসছি!
সে দিন রাতে আমি বারান্দায় বসে বসে ভাবছি, আমি আমার বউকে অন্য ছেলের হাতে তুলে দিচ্ছি, এটা কি ঠিক করছি? আবার ভাবালাম,

অহনাকে সে তো ভালোবাসে, কিন্তু আমিও তো অহনাকে ভালোবাসি, আর অহনা আমার বউ সে ক্ষেত্রে অহনার ওপর আমার অধিকার আছে।
।।
আমি ঘরে গেলাম, অহনা একটু ভয় পেলো, হয়তো আমি জোর করে কিছু করবো, একবার ইচ্ছা করলো ওর সব অহংকার আজ রাতে শেষ করে দেয়,
আবার পাগলিটার ম্যায়া ভরা চেহারা দেখে আমার সব রাগ শেষ, সৃষ্টিকর্তা কিছু কিছু মানুষকে যে কেন এতো রুপ দিয়ে জন্ম দেয় যে সে সেই রুপ দিয়েই হয়তো সামনের মানুষকে মেরে ফেলবে।
।।
আমি-আচ্ছা তুমি তো আর ৩ মাস পর আমার সাথে থাকার পর চলে যাবা, তাই না? আচ্ছা বলো তো এই ৩ মাস

এ আমি কি তোমার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছি? বা তোমার কি মনে হয়েছে যে আমি খারাপ ছেলে?
অহনা- এসব বলছেন কেন? এসব বলে লাভ নাই, আমি সাব্বির কে ভালোবাসি, তার সাথেই সংসার করবো।
আমি- হ্যাঁ! করো। আমি তো মানা করছি না, আচ্ছা স্বামী না হতে পারলাম, আমি কি তোমার একজন বন্ধু হতে পারি না?
অহনা- ঠিক আছে, কিন্তু আমি যখন চাইবো, তখন সাব্বিরের সাথে দেখা করার অনুমতি দিতে হবে।
আমি- ঠিক আছে।
।।
সেই রাতে আমি অহনার সাথে কথার ফাকে সাব্বিরের ব্যাপারে সব জেনে নিলাম।
ভাবলাম, অহনা যদি আমার না হয়ে অন্য কারো হয়, হোক! কিন্তু সেই ছেলেকে আমার থেকেও বেশি ভালো হতে হবে।
পরের দিন অফিসে গিয়ে আমি আমার একটা পরিচিত পুলিশ কে ফোন করলাম, আর সাব্বিরের ব্যাপারে সব খোঁজ নেবার জন্য অনুরোধ করলাম,

প্রথমে না বললে পরে সত্যি কথা শুনে সে বলল, সে করবে! পরে সে একটা টিম কাজে লাগিয়ে দিলো।
।।
আমার ধারণা ছিল, যে ছেলে এতো সুন্দর, তার নিশ্চয় একটা অতীত থাকতে হবে। আর যদি তার অতীত না থাকে, তবে সে অহনার যোগ্য।

আর প্রয়োজন হলে আমি অহনার বাবার সাথে কথা বলবো।
।।
কিন্তু আমার ধারণা যেটা করলাম ওটাই সত্যি, এর আগেও সে অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক করেছে, এমন কি এক মেয়ের পেটে বাচ্চাও চলে আসে।
এসব শুনার পর আবেগে আমি একটা ভুল করে ফেলি, আর সে ভুল হলো, আমি অহনাকে সব কথা বলে ফেলি,

আর অহনা আমাকে ভুল বুঝে বাবার বাড়ী চলে গেলো।
আমার আর কিছু করার নাই, মিথ্যা অভিনয়ের কাছে সত্যি ভালোবাসা টা আজ হেরে গেলো।
।।
অফিস থেকে আজ সন্ধ্যায় বাড়ী ফিরলাম, আজ কেমন জানি বাড়ী টা ফাকা ফাকা লাগছে, বাড়ীতে শুধু আমি আর একটা জ্বলন্ত ধোঁয়া।

পরের দিন আমি অফিস গেলাম না। আমাকে বিকেলে অফিস থেকে বস মানে আমার শ্বশুর ফোন করলো।

শ্বশুর- অফিস আসো নি কেন?
আমি- আপনি তো সবই জানেন?
শ্বশুর- এই পৃথিবীর তুমি প্রথম পুরুষ না যে তোমার বউ তোমার ওপর রাগ করে বাবার বাড়ী গেছে, রাগ করে গেছে, কিছু দিন থাক, রাগ কমলে ফিরে যাবে।
আমি- সে আর ফিরে আসবে না।
শ্বশুর- এতো সহজে হার মানার ছেলে তো তুমি না, এক কাজ করো, সামনে সপ্তাহে আমাদের চট্টগ্রামে যে মিটিং আছে সেটার দায়িত্ব শুধু তোমার ওপর।
আমি- কিন্তু এই অবস্থায়?
শ্বশুর- এজন্য তো তোমাকে দিচ্ছি, কাল অফিসে এসে সব কাজ বুঝে নাও।
আমি-কিন্তু?
শ্বশুর- That’s my ordar!
আমি- জি আচ্ছা!
।।
পরের দিন থেকে আমার ওপর এতো কাজের চাপ পড়ে গেলো যে কি বলবো, অফিস থেকে বাসায় এসেও রাত ২-৩ টা পর্যন্ত কাজ করতাম,

সারা বাড়ী শুধু ব্যানসনের প্যাকেট আর চুট্টহি, এই ৭ দিনে মনে হয় ৫০০ সিগারেট খেয়েছি, কেমন জানি নেশায় পড়ে গেছি।
।।
যায় হোক, বাড়ী ওভাবেই ফেলে রেখে আমি অফিস গেলাম, ওখান থেকে অফিসের গাড়ীতে সোজা চট্টগ্রাম।
এক সপ্তাহ অনেক কাজ করার পর আমাদের কাজ শেষ হলো। আমি ঢাকা যাবার উদ্দেশ্যে ব্যাগ গোছাতে শুরু করলাম,

আমার অফিসে একজন এসে বলল,
কর্মচারী- স্যার! একটা অনুরধ ছিল।
আমি- জি বলেন।
কর্মচারী- এখানে অনেক বড় মেলা বসেছে, স্যার আমারা আজ না গিয়ে কালকে যায় স্যার?
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে, যান!
কর্মচারী- আপনিও চলেন স্যার! আমাদের অনেক ভালো লাগবে।
আমি- না, আপনারা যান, আমার কাজ আছে।
কর্মচারী- চলেন না স্যার! প্লিজ।
আমি- ঠিক আছে চলেন।
।।
মেলা টা অনেক সুন্দর লাগলো, সবাই সব কিছু কিনলো, বউ-বাচ্চার জন্য! কিন্তু আমার তো কেউ নাই, তখন ই একজন বলল,
কর্মচারী- স্যার! এই ড্রেস টা কিনেন। ম্যাডামের এই ড্রেস অনেক পছন্দের, আমি জানি স্যার!
আমি- ঠিক আছে কিনে নেন।
।।
পরের দিন আমরা ঢাকা পোঁছে গেলাম। সবাই খুশী, শুধু আমি ছাড়া!
আমি বাড়ী গিয়ে তালা খুলে, সোজা নিজের ঘরে গেলাম, লাইট জালিয়ে দেখলাম ঘরটা গোছানো,

ভাবলাম হয়তো কাজের মেয়ে এসে গুছিয়েছে, যখন অহনা ছিল,
কাজের মেয়ের বেড রুমে এসে ঘর গোছানো নিষিদ্ধ ছিল, কেন জানিনা, হয়তো আমার আর অহনার সম্পর্কের কথা জেনে যাবে এজন্য!
কিন্তু এখন তো অহনা নাই তাই আর জানার কিছু বাকী নাই, আমি ক্লান্ত ছিলাম, ওভাবেই ঘুমিয়ে গেলাম।
।।
ঘুমের মধ্যে মনে হলো, কেউ আমার ওপর কাঁথা দিচ্ছে, আমি খপ করে হাত টা ধরে ফেলাম, চোখ খুলে দেখি অহনা!

আমি অহনা কে দেখে শক খেলাম!
আর সেও ভয় খেলো, কারণ অন্ধকার রাতে এভাবে তার হাত ধরে নিয়েছি!
আমি লাইট জালিয়ে হাত ছেড়ে দিলাম!
আমি- তুমি এখানে? কখন আসলা? ফোন তো করো নি।
অহনা- কাল এসেছি, আপনার তো কালকে আসার কথা ছিল।
আমি- হ্যাঁ! সবাই ঘুরতে চাইলো তাই আজকে আসলাম, কিন্তু তুমি?
অহনা- কেন আমাকে দেখে আপনি খুশী হন নি নাকি? নাকি এই কয়েক দিনেই ২য় বউয়ের ব্যাবস্থা হয়ে গেছে, বলা যায় না,

এতো বড় চাকুরী করেন, কতো মেয়ে আছে…
।।
আমি- যা বাবা! তোমাকে কি তোমার বাবা জোর করে আমার কাছে পাঠিয়েছে? ভয় নাই সাব্বিরের কাছে যেহেতু তুমি যেতে চাও

সে ব্যাবস্থা আমি করে দিবো।
অহনা- ঐ কুত্তার বাচ্চার কথা আপনি আর মুখে নিবেন না,
(এই বলে অহনা আমাকে জড়িয়ে কাঁদতে শুরু করলো)
আমি- কি হয়েছে বলবা তো, কাঁদছো কেন?
অহনা- আপনার থেকে যাবার পর আমি অনেক কাঁদি কেন কাঁদি জানি না, কয়েক দিন আমি কারো সাথেই কথা বলি নি, এক দিব বাবা আমাকে বলল,

সাব্বির যদি ঠিক ছেলে হয়, মানে আপনি যা বলেছেন ওগুলো যদি মিথ্যা হয়, তাহলে বাবা,

আপনার কাছ থেকে তালাক নিয়ে সাব্বির কে জামায় মেনে নিবে, কিন্তু সাব্বিরকে একটা পরীক্ষা দিতে হবে।
।।
পরীক্ষাটা এই রকম!
পরীক্ষা অনুযায়ী অহনা মিথ্যা করে শুধু একটা ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে যায়! তারপর সাব্বিরকে বলে সে বাড়ী থেকে পালিয়ে এসেছে,

তার বাবা তাকে মেনে নিবে না, তাই সাব্বিরের কাছে চলে এসেছে,
জবাবে সাব্বির বলে, অহনা ঠিক আছে কিন্তু তুমি কি কথা মতো ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে এসেছও?
অহনা- না আমি নিয়ে আসি নি।
সাব্বির- আর তোমার ব্যাংকে যে ২ কোটি টাকা ছিল, ওগুলো?
অহনা- বাবা ঐ টাকাও ব্যাংকে ফোন করে বন্ধ করে দিয়েছে, এখন আমি ঐ টাকা তুলতে পারবো না।
সাব্বির- তার মানে তুমি খালি হাতে এসেছও?
অহনা- তুমি কি আমাকে ভালোবাসো না?
সাব্বির- ভালোবাসায় পেট ভরে না।
অহনা- আমি চাকুরী করবো, আর তুমি তো একজন ইঞ্জিনিয়ার।
সাব্বির- হ্যাঁ আমি একজন বুয়েটের ইঞ্জিনিয়ার, আমার দাম অনেক, অনেক কোটি পতির মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে,

তাহলে তোমার মতো এক বোঝা কে কেন বিয়ে করতে যাবো? যার শুধু শরীর পাবো, টাকা পাবো না?
।।
অহনা- কি বলো এসব? তুমি কি শুধু আমার টাকাতে ভালোবাসো?
সাব্বির- তো তোমার কি মনে হয়? তোমার থেকে আগে আমি যাকে প্রেম করতাম, সে কি কম সুন্দরী? তুমি তো আমাকে ছুঁতে দাও না

সে তো আমাকে বিছানায় পর্যন্ত নিয়ে গেছে, কিন্তু যখন জানলাম তোমার বাবার অনেক টাকা তার ওপর তুমি একটায় মেয়ে,

তখন বলো কীভাবে এই সুযোগ ছাড়ি।
অহনা- কি?
এরপর অহনা একটা চড় মারে সাব্বিরকে,
সাব্বির অহনার হাত ধরতেই, পিছন থেকে পুলিশ এসে সাব্বিরকে ধরে নিয়ে যায়।
।।
অহনার বাবা- এবার বল, আমার চয়েস ভালো আমার নাকি তোর?
অহনা- আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে বাবা! কিন্তু শান্ত কি আমাকে এখন মেনে নিবে।
অহনার বাবা- তুই বাড়ী চলে যা, বাকিটা আমি দেখে নিবো।
।।
কথা গুলো বলতে বলতে অহনা আমার বুকে কাঁদতে শুরু করলো।
আমি- কাঁদছো কেন পাগলী।
অহনা- আমাকে মাফ করে দেন, আমি আপনাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আর জীবনেও আপনাকে কষ্ট দিবো না।
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে। এবার অনেক রাত হয়েছে, ঘুমাতে যাও।
অহনা- কেন? আপনার বউকে বুঝি খুব বোরিং লাগে?
আমি- এতো একটা সুন্দর বউ, বোরিং লাগবে কেন?
অহনা- তাহলে এতো দূরে রাখছেন কেন?
আমি- না ভাবছি, আমার পুতুল বউটা যদি ভেঙ্গে যায়।
।।
অহনা আর কিছু বলল না, লাইট টা অফ করে দিলো।
কিছুক্ষণ পর আমার কানে বলল, বাইরে এতো রোমান্টিক আবহাওয়া, আর আমার ভাগ্যে যে এতো আন-রোমান্টিক স্বামী জুটবে এটা ভাবি নি।
।।
আমি-এতো জ্বালাচ্ছো, আমি শুরু করলে সহ্য করতে পারবা তো?
অহনা- আমি তো চাচ্ছি যে কেউ আমাকে অনেক জ্বালাক।
আমি- ভেবে বলছো তো, পরে যদি কিছু হয়ে যায়।
অহনা- হলে হবে, দূরের কেউ তো করছে না! আমার স্বামী করছে,
এই বলে অহনা আমার হাত টা ধরে ওর শরীরের ওপর রাখলো,
অহনা- আজ থেকে আমি তোমার, শুধুই তোমার।
..
ঘুম থেকে উঠে দেখি, বেলা ১২ টা! আমি লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলাম।
অহনা- ঘুম ভাংল সাহেবের? অবশ্য ভাংবে কীভাবে? রাতে কি একটুও ঘুমাতে দিয়েছে?
আমি- অফিস?
অহনা- আমি বাবাকে ফোন করে বলছি, আপনার জামায় আর আমি হানিমুনে যাবো, তাই সে অফিসে যাবে না।
আমি- আরে আমার মিটিং আছে।
অহনা- রাখো তোমার মিটিং, এতো দিন যা খুশী করেছো কিছু বলিনি, এখন থেকে বউকে সময় না দিলে খবর আছে।
আমি- রাগ করে বাবার বাড়ী যাবা?
অহনা- মাথা খারাপ? আমি কি অবলা নারী নাকি?
আমি- তো কি করবা?
অহনা- কলার ধরে সব আদায় করবো।
আমি- তাই নাকি?
।।
অহনা- আর এই ড্রেসে আমাকে কেমন লাগছে বললা না তো?
আমি- তাই তো খেয়াল করি নি, অনেক সুন্দর, তুমি খুঁজে পেলা কীভাবে?
অহনা- ব্যাগ গোছাছিলাম তখন, তোমার চয়েস আছে বলতে হবে।
আমি- চয়েস না থাকলে কি এই রকম একটা পুতুল বউ পায়।
।।
অহনা- এখন রেডি হয়ে যাও!
আমি- কোথায়?
অহনা- হানিমুনে যাবো?
আমি- এতো তাড়াতাড়ি? অফিস থেকে ছুটি নিবো না?
অহনা- আমি বাবাকে বলেছি,
।।
কিছুক্ষণ পর কলিং বেল বাজলো।
আমি দরজা খুলে দেখলাম, আমার অফিসের একটু জুনিয়ার স্টাফ!
আমি- কি ব্যাপার আপনি এখানে?
স্টাফ- স্যার, বড় স্যার আপনার জন্য ছুটির অনুমতি দিয়ে পাঠিয়েছে, আর অফিসের কিছু ফাইল নাকি আছে সেটা আমাকে নিতে বলেছে।
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি ভিতরে বসেন, আমি সব নিয়ে আসছি।
।।
দুপুরে আমারা রেডি হয়ে বের হলাম, ভাবলাম সে হয়তো কক্সবাজার বা সিলেট যাবে?
আমি- কোথায় যাচ্ছি আমারা?
অহনা- কুষ্টিয়া।
আমি- ওটা তো আমাদের বাড়ী।
অহনা- শ্বশুর বাড়ী থেকে ভালো বেড়ানোর আর আর যায়গা আছে?
আমি- কিন্তু সে তো অনেক দূর, এতো দূর ড্রাইভার ছাড়া যাবা?
অহনা- কেন আমি আছি, তুমি আছো, আর ড্রাইভার নিলে আমাদের রোমান্স নষ্ট হয়ে যাবে।
আমি- কাল থেকে দেখছি, খুব রোমান্টিক ভাবে ঘুরছো।
অহনা- এতো দিন আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, তুমি মুখ বন্ধ করে সহ্য করেছো, এখন থেকে আমার ভালোবাসা দেখবা।
।।
বাড়ী যেতে যেতে আমাদের প্রায় রাত হয়ে গেলো।
অহনা- আম্মু আমাকে মাফ করবেন, আপনার ছেলেই আমাকে গ্রামে নিয়ে আসে না, ওর নাকি কাজ শেষ হয় না,

তাই কাল রাতে অনেক ঝগড়া করে তবে সে রাজী হয়েছে।
।।
আমি আর কিছু বললাম না, রাতে খেয়ে ঘরে গেলাম।
আমি- এই রকম করলা কেন?
অহনা- দেখো, তোমার আব্বু আম্মু যদি আমাদের ব্যাপারে সব সত্যি জানতে পারে তবে ওনারা কখনো আমাকে মন থেকে মেনে নিবে না।

হয়তো মুখে না বললে ও আমাকে খারাপ ভাব্বে, তুমি তো সব জানো, আমি দোষ করেছি এটা সত্যি,

তবে আমি ওয়াদা করছি তোমাদের বাড়ীর যোগ্য বউ হয়ে দেখাবো।
।।
আমি- ঠিক আছে।
পরের দিন বিকেলে আমি অহনাকে নিয়ে ঘুরছি,
পিছন থেকে একজন ডাক দিলো, মেয়েটির নাম সিমা, আমার বন্ধু। সে আমাকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
সিমা- অনেক কষ্ট দিলি, এভাবে বিয়ে করে নিলি?
আমি- আমাকে মাফ করে দিস।
সিমা- না মাফ হবে না, এটা তোর বউ? আমার থেকে খুব একটা বেশি সুন্দর না। আমি হচ্ছি ন্যাচারাল, আর তোর বউ বিউটি পাল্লারে গিয়ে সুন্দর হয়েছে।
।।
আমি- আমি অহনার দিকে তাকালাম, সে রাগে ফুলছে।
সে আমার দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।
।।
সিমা- কিরে তোর বউ তো রাগ করে চলে গেলো।
আমি- যেটা বললি, সে সহ্য করবে? তোর বিয়ের কি খবর?
সিমা- তুই তো করলি না, এখন তো অন্য কাউকে করতে হবে, বাবা-মা দেখছে, আমার বিয়েতে আসিস।
আমি- আচ্ছা আসবো।
সিমা- এখন যা, তোর বউ কে সামলা, যা বলেছি আর রাতে বুঝবি।
আমি- মেয়ে মানুষ আসলেই খারাপ!
সিমা- বিয়ে যেমন করলি না তেমন বুঝ।
।।
রাতে আমি বাড়ী গেলাম, খেতে বসলাম, দেখলাম অহনা সবার সাথে কথা বলছে শুধু আমার সাথে বাদ।
রাতে আমি ঘুমাতে গেলাম, দেখলাম অহনা ওপাশ হয়ে শুয়ে আছে।
আমি তার ওপর হাত দিলাম।
অহনা- ঐ তোমার সমস্যা কি?
আমি- আমার বউ দূরে আছে ওটায় সমস্যা।
অহনা- কেন সিমা রাতে ঘরে যায়গা দিলো না।
আমি- আজব সে কি বউ নাকি?
অহনা- তুমি এতো চরিত্র হীন আগে জানতাম না।
।।
এরপর আমি ওর মুখে হাত দিলাম,
আমি- আগে আমার কথা শুনো, সিমা সব দুষ্টুমি করছিলো, সে আমাকে পছন্দ করতো আমি জানতাম,

কিন্তু সে আগেও ২ টা ছেলের সাথে সম্পর্ক করে এমন কি শুনেছি একজনের সাথে শারীরিক সম্পর্ক ও সে করেছিলো,

তাই আমি তার থেকে দূরে থাকতাম। সত্যি বলছি, না হলে আম্মু কে জিজ্ঞেস করো।
অহনা- তো ও যখন বলল, যে আমি নাকি ওর চাইতে কম সুন্দরী তখন তুমি কিছু বললা না কেন?
।।
আমি- এটা কিন্তু সিমা মিথ্যা বলে নি, মেয়েটা সত্যি অনেক সুন্দর।
অহনা-কি? তো যাও না ওর কাছে যাও। খাট থেকে এখুনি নামো।
আমি- আরে পুরো কথা তো শুনো, সে বেশি সুন্দর হোক, তাতে কি? তুমি হচ্ছো ওর চাইতেও অনেক দামী। তুমি একজন চরিত্র বান মেয়ে।

আর একজন স্বামীর কাছে এটায় বড় পুরষ্কার।
অহনা- আমি চরিত্র বান মেয়ে তুমি জানলা কীভাবে?
আমি- কাল রাতেই সব বুঝেছি, তোমার আনাড়ি ব্যাবহার দেখে, এখন ওর কথা বাদ দাও, একটা কথা বলবো।
অহনা- কি?
।।
আমি- আমি না তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আর আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া আদায় করি যে তোমার মতো এতো ভালো

মেয়ে আমাকে বউ হিসাবে দিয়েছে।
অহনা- তাই? আগে কখনো বলো নি তো…
আমি- এখন বললাম তো, কোথায় স্বামীকে নিয়ে একটু আদর করবা, না তো একের পর এক প্রশ্ন করছো।
অহনা- আচ্ছা সরি! আমি লাইট অফ করে আসছি।
।।
…………………………………………….সমাপ্ত…………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত