মিষ্টি ভালোবাসার মায়া

মিষ্টি ভালোবাসার মায়া

মায়া নামের মেয়েটি আজ আমার বউ! প্রেম করে বিয়ে হয়নি আমাদের। তবে দুই যুগ সিঙ্গেল থাকার কারণে আমাদের মাঝে খুব তাড়াতাড়ি সম্পর্ক রূপ নেয়। প্রথম ক’দিন লজ্জাতে লাল টকটকে হয়ে থাকলেও এরপরে একদিন দেখি কারণ ছাড়াই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছে “শোনো তোমাকে আমি অনেক ভালোবেসে ফেলেছি” আমি মুচকি হেসে দিয়ে পাগলি কে আরও শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে নিলাম। আমাদের ভালোবাসা সেদিন থেকেই শুরু! আজ সকালে মেয়েটা আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে! একবার তাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেও যখন বৃথা হলাম। তখন বুঝেই নিলাম আজকে কপাল খারাপ! মায়া কে একবার বললাম

আমি- এই মায়া উঠতে হবে যে! ঘুমঘুম কণ্ঠ নিয়ে আমার পাগলী আমাকে আরও শক্ত করে চেপে ধরে বলল,
মায়া- উহু বাবা আরেকটু ঘুমাতে দাও না!

– আহা এতো দেড়ি করে উঠলে বাবা মা কী ভাববে!
– জানিনা তোমার বুকে ঘুমাতে ভালো লাগে! চুপচাপ শুয়ে থাকো!

মেয়েটা আমার বুকের মাঝে লুটিয়ে পড়েছে! আমার বুকে তার গরম নিশ্বাস পড়ছে। এবার আমার কাঁধে অন্য একটা হাত টা দিয়ে চেপে ধরলো আমার ঘাড়ে মায়া নাক দিয়ে ডলছে! আর মৃদু করে চুমু দিচ্ছে! এক পরম শান্তির দেশে আমি চলছি! প্রচণ্ড সুখে অভিভূত হয়ে আমি চোখ বুজে আছি! মায়া এবার বলল,

মায়া- আচ্ছা আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে রাখবে তো সারাজীবন??
আমি- এই যে তোমার কপালে একটা চুমু দিয়ে তোমার হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে বলছি, কক্ষনো ছাড়বোনা!

দুনিয়ার সব ছেলেই খারাপ হলে ভালো কারা শুনি!  এবার মায়া এইকথা শুনে আমার সিন্সেটিভ স্থানে একটু ছুঁয়ে দিয়ে বললো “এই জন্যই তো তোমাকে আমি এতো ভালোবাসি”

আমি- সে নাহয় বুঝলাম কিন্তু উঠতে হবে তো! অনেক বেলা হয়ে গেলো না বাবু আরেকটু আদর করে দিচ্ছি তোমাকে! তুমি তো সবসময় বাইরে থাকো! আরেকটু থাকোনা! তোমার বুকে শুধু আমিই ঘুমাব! ওই বুকটা আমার। তোমার বুকে ঘুমাতে বড্ড বেশি ভালো লাগে যে! এবার মায়া তার চুলগুলো আমার নাকের সামনে এনে দিলো। মেয়েটার চুলে এক অদ্ভুত ঘ্রাণ আছে। ভেজা হোক আর শুকনো প্রচণ্ড গভীর কোন ঘ্রাণ। একবার শুঁকে নিলে কেমন যেন পাগল পাগল অনুভূতি হয়। মায়ার চুলে নাক ডুবিয়ে মিষ্টি সেই ঘ্রাণ টা নিচ্ছি! পাগলী মেয়েটা এবার মিষ্টি করে হাসছে! কারণ ছাড়াই তার গালে একটু ঠোঁটজোড়া ছুঁয়ে গেলো। পৃথিবীর শেরা সুখ যেন আমি অনুভব করছিলাম যখন আমার মায়া আমার কাছে থাকে।

মায়া আজকাল শাড়ি পরে ঘুমাতে পছন্দ করে! যদিও শাড়ি পরে ঘুমালে আর লুঙ্গি পরে ঘুমালে সকালে তার অস্তিত্ব মেলে খাটের নীচে তবুও পরে। রাতে শরিরে এক মুগ্ধকরা পারফিউমও নেয়। আর চুলে শ্যাম্পুও করে। মায়া জানে আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। মায়ার মেহেদী রাঙানো হাত টা ধরেই আমার রাতের প্রথম প্রহর শুরু হয়। আবার সেই হাত টা যখন মাথায় আলতো করে বুলাতে থাকে তখন মধ্যরাত। এরপরে সকালে তার নরম হাতের ছোঁয়া পেয়েই আমার ভালোবাসার সকালে সূর্য ওঠে।

আজ শুক্রবার এজন্য মেয়েটা একটু বেশি আলসেমি করছে। সপ্তাহের এই একটা মাত্র দিন সে আমার কাছে ভালোবাসা চায়। আমিও এতটুকু কার্পণ্য না করে পুরোটা তাকে উজার করে দেয়। ও ছাড়া আমার আর কে আছে যাকে দেবো! মায়া চায় আমি তাকে প্রতিটা দিন এইভাবে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দেয়। আমার জন্য সকাল বেলা উঠে কতকিছু রান্না করে তারপর আমাকে খাওয়াই। যদিও আমি তাকে গালে তুলে খাইয়ে দেই। মায়া তখন একটু অশ্রুবর্ষণ করে। আর বলে আমাকে এতো ভালোবাস কেন! আমি মাঝেমাঝে তাকে জড়িয়ে ধরে বলি, “আমার চব্বিশ বছর বয়সে তুমিই প্রথম নারী যার হাত টা নির্ভয়ে নির্ভর করতে পারি তাকে কী কম ভালোবাসা যায় বলো??” মেয়েটার চোখ খুশিতে চকচক করে ওঠে!

আজকাল বাইরে থাকতে একদম ইচ্ছা করেনা। সবসময় মায়ার কাছাকাছি থাকতে ইচ্ছা করে। মায়া যখন রান্না করে লুকিয়ে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতেও ভালো লাগে। সে চুপচাপ রান্না করে। তার গালে একটু চুমু দিলে সে বলে “ইশ রান্নাতে লবণ বেশি হবে কিন্তু যাও দুষ্টুমি করো না” আমি সেসব কথা শুনিনা তাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলি, “আজ একটু লবণ বেশি হোকনা তবুও ভালোবাসি” মেয়েটা চুপ থাকে। সে জানে কতটা বেশি ভালোবাসি তাকে।

মেয়েটা মাঝেমাঝে আমার শার্টের কলার চেয়ে ধরে বলে, “আমি আমার ভালোবাসা কে আমার বুকের মাঝে চাই সবসময়। আজ অফিসে না গেলে হয়না??” তখন আর কিহ পাগলীর কপালে ছোট্ট একটা চুমু দিয়ে বলে বসি “এই তো আমার লক্ষি বউ আজকে তাড়াতাড়ি ফিরবো! আর অফিসে না গেলে আমরা খাবো কি শুনি” মেয়েটা অভিমানের সুরে বলে “কেন ভালোবাসা খাবো আমরা! তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার ভালো লাগেনা! ইচ্ছা করে সবসময় তোমার বুকে লুকিয়ে থাকি” পাগলীকে ছোট্ট করে বুকে নিয়ে হাসিমুখ নিয়ে বিদায় নেবার সময় বেশ খারাপ লাগে। আবার যখন সন্ধাতে বাসায় ফিরি তার খুশিতে ভরে ওঠা চোখজোড়া দেখে নিজের সব ক্লান্তি ভুলে যায়। মেয়েটা দৌড়ে এসে আমার বুকে জড়ো হয়। সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে ফেলে “ভালোবাসি, তুমি জানো সারাদিন তোমাকে ছাড়া আমার কতটা খারাপ যায় দিন”

পাগলী মেয়েটা বাবা মা কে অনেক ভালো রাখতে পারে। মায়ের আঁচলের তলাতে চুপচাপ শুয়ে থাকে। বা বাবার কাধে তার স্থান হয়। কখনো ভাবীর কোলে সে শুয়ে থাকে। এই বাড়ি যেন ভালোবাসার এক সাগর। আর সেই সাগরের জল এতো বেশি যে ভালোবাসা কখনো ফুরাই না। ভাবী জানে আমি মায়াকে কত ভালোবাসি। সে নিজেও আমাকে খুঁচা দেয়। আমিও দেয়। কখনো ভাবীর দুই কাঁধে দুজন মাথা রেখে রাজ্যের গল্প শুনি!

কতটা বেশি ভালোবাসা আমার আর মায়ার মাঝে। এই ভালোবাসা কখনো শেষ হবেনা! ফুরাবেনা! কখনো শেষ হবার নয়। লেখকের ভালোবাসা কখনো হারাই না। এজন্য শেষ বয়সেও তারা রোমান্টিক গল্প লেখে। আমার মায়া যখন রেগে যায়। ওর নির্লুপ্ত চোখজোড়া বারুদের মতো টগবগিয়ে ওঠে। যেন ফিনকি দিয়ে রাগ মাটিতে ঝড়ছে। আমি তাকে একটু জড়িয়ে ধরতেই সব রাগ মাটি! আমার সামনে কেউ বেশিক্ষণ রাগ নিয়ে থাকতে পারেনা। আর আমার মায়া তো একদম পারেনা। সে রাগ খুব কম করে। অভিমান বেশি করে। আর আমি জানি তাকে জড়িয়ে ধরলে তার সব অভিমান পানি হয়ে যায়।

এবার মায়াকে বললাম, “বাইরে তাকিয়ে দেখো কী সুন্দর মিষ্টি নরম রোদ উঠেছে চলো বাইরে যায়” মায়া বলল “না আমরা আরও ঘুমোবো তুমি আমাকে আরও ভালোবাসা দেবে” এই বলে সে আমার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো! তারপর বুঝে গেলাম আমার পরীর আগমনী বার্তা…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত