নামহীন শিরোনাম

নামহীন শিরোনাম

আজ BCS এর ভাইবা ছিল! কিন্তু আমি আজ পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি না! প্রস্তুতি যে খারাপ সেটা না,

আজ আমি যাচ্ছি নিজের জীবনের ভাইবা দিতে।
তিন বছর আগের কথা! নুসরাতের সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকের মাধ্যমে!প্রথম প্রথম আমি তাকে ম্যাসেজের উত্তর দিতাম না!

কারণ ছিল তার কথা বলার বাচন ভঙ্গি খুব অপমান জনক! যদিও সে খারাপ কিছু বলতো না,

প্রথমে প্রশ্ন করতো যে আমি নামায পড়েছি কি না? তার পর যদি বলতাম না পড়িনি তাহলে ওর শুরু হয়ে যেত, অথচ সে আমার বন্ধুও ছিল না।
।।
এভাবে আমি তাকে পাশ কাটিয়ে যেতাম! কয়েক দিন থেকে মেয়েটা এসএমএস করলেও আমি কোন উত্তর দিতাম না,

একবার ভাবলাম তাকে ব্লক দিয়ে দেয়! আবার ভাবলাম রাগ করে করা কাজ ঠিক হয় না, তাই তাকে ব্লক না দিয়ে সাধারণ ভাবে উত্তর দিলাম।
নুসরাত- আমার প্রতি খুব বিরক্ত হোন তাই না?
আমি- বিরক্তের কথা বললে যে কেউ বিরক্ত হবে।
নুসরাত- একটা কথা বলবো?
আমি- জি বলেন!
নুসরাত- ইসলামিক শরিয়াতে যদি ভালোবাসার অনুমতি থাকতো, তবে আমি আপনাকে ভালবাসতাম।
আমি- আমার মধ্যে আপনি কি এমন ভালো দেখলেন?
নুসরাত- কি জানি? আপনার একটা ছবি দেখতে পারি?
আমি- আচ্ছা দেখেন সমস্যা নাই, আর আমাকে যদি সত্যি আপনি ভালো বাসতে চান, তবে আল্লাহ্র কাছে দুয়া করেন,

যদি ভাগ্যে লিখা থাকে তবে আপনি আমাকেই পাবেন, আমিও কাউকে ভালোবাসি না, তবে আপনার মতো এভাবে কখনও ভাবি নি,
নুসরাত- মানে?
আমি- মানে পছন্দ হলে তাকে বলবো, যে ভালোবাসি।
নুসরাত-ওহ!
।।
সে দিন পর থেকে নুসরাতকে আমি সময় দিতাম, কেউ যে আমাকে এটাই প্রথম ভালোবাসি বলেছিল সেটা না,

আমি ফেসবুকে গল্প লিখার দরুন অনেক মেয়েই আমাকে প্রস্তাব দেয়, যেটা আমি অতান্ত ভদ্র ভাবে মানা করি।
তবে আমার ও যে নুসরাতই প্রথম ভালো লাগার মানুষ হতে পারে সেটাও না, ছোট বেলা থেকে কাউকে না কাউকে ভালো লেগেছিল,

কিন্তু লজ্জায় সেটা বলতে পারিনি।
যাক বর্তমানে আসি!
।।
নুসরাতের কাছে যা শুনলাম, সেটা যদি সত্যি হয়, তবে বাস্তবে তাকে পাওয়া কষ্টকর হবে, যদিও আমি তাকে এখন ও দেখিনি,

বাস্তবে তো দূরে থাক, একটা ছবিও পেলাম না। ওর বাবা নাকি সরকারী এক কর্মকর্তা। তার ওপর বাবা- মায়ের এক মেয়ে।
।।
যাক এভাবে দেখতে দেখতে ১ বছর পার হয়ে গেলো, তার পর এক দিন আমি তার সাথে দেখা করতে চাইলাম,

যদিও সে প্রথমে রাজী না কিন্তু পরে রাজী হলো, তবে কিছু শর্ত, সময় ১ ঘণ্টা! ও যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই, কোন ছবি তুলা যাবে না, হাত ও ধরা যাবে না।
।।
আমি রাজী আছি।
পরে দিন আমি বগুড়া গেলাম! আমার প্রথম বগুড়া ভ্রমন!
বাস থেকে নেমে আমি ফোন দিলাম, সে বলল রিক্সা নিতে, তারপর তার বলা একটা পার্কে গিয়ে দেখা করলাম।
।।
নুসরাত-আসসালামুআলাইকুম…। আমি নুসরাত, নিশ্চয় আসরের নামায পড়েন নি?
আমি- জানতাম এই প্রশ্ন করবা? তখন বাসে ছিলাম।
নুসরাত- সামনে মসজিদ আছে, আপনি নামায পড়ে নিন, আমি দাঁড়িয়ে আছি।
আমি- জি আচ্ছা।
।।
আমি নামায পড়ে বের হলাম, মেয়ে টা দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে সে একটা রেসট্রুরেন্টএ নিয়ে গেলো।

আমারা হালিম খাচ্ছি, দুজনে তেমন কোন কথা বলছি না! হালিম খাবার সুবাদে আমি এই প্রথম তার চেহারা দেখলাম!

সত্যি অনেক সুন্দর! কেমন জানি আলোকিত চেহারা আর মায়াবী।
।।
নুসরাত- আমার না খুব অস্বস্তি লাগছে এই প্রথম বাবাকে মিথ্যা বলে ঘর থেকে বের হয়েছি, আমার না কান্না পাচ্ছে।
আমি-কি? পাগল নাকি তুমি?
নুসরাত- বাবা-মাকে মিথ্যা বলা কতো পাপ জানেন?
।।
আমি জানি তাকে কথায় পারবো না, আর অযাথা ওকে এই পৃথিবীর সবার উদাহারণ দিয়ে লাভ নাই, সে মিথ্যা কিছু বলে নি,

সত্যি এটা পাপ!
আমি- ঠিক আছে চলো।
নুসরাত- রাগ করলেন?
আমি- না, সত্যি রাগ করিনি, তোমাকে একবার দেখার খুব ইচ্ছা ছিল, দেখা হয়ে গেছে, আর এই ২৬ মিনিটে আমি তোমাকে যা জানার জেনে নিয়েছি, চলো!
।।
এরপর আর দেখা করি নি, আমি চাকুরীর ব্যাবস্থা করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা দেওয়া শুরু করলাম,

কিন্তু কালকে তার এক বান্ধবী আমাকে ফেসবুকে জানালো যে তার নাকি আজকে বিয়ে ঠিক হয়ে যেতে পারে, ছেলে নাকি ডাক্তার।
।।
রাতে অনেক রাগ হলো নুসরাতের ওপর, কিন্তু ওর বান্ধবী বলল, সে নাকি অনেক কেঁদেছে ওর কথা সে আল্লাহকে ভরসা করে,

উনি নিশ্চয় একটা পথ বের করবে, আর আজ আমার পরীক্ষা তাই সে অপেক্ষা করছে।
।।
আজ আমি দ্বিতীয় বার বগুড়া আসলাম, প্রায় ২ বছর পর!
ঠিকানা দেখে আমি ওদের বাড়ী দিকে যাওয়া শুরু করলাম! জুম্মার নামায আজ! তাই আগে নামায পড়ে তারপর ওদের বাড়ী গেলাম!
আমি- আসসালামু আলাইকুম… জি সাদিকুল আঙ্কেলকে কি একটু ডাকা যাবে?
এক পিচ্চি- আপনি কে?
আমি- বলবেন যে খুব জরুরী, ওনার জামাই এর ব্যাপারে কিছু বলবে।
।।
২ মিনিট পর একজন আসলো, আমি দেখে বুঝলাম উনি নুসরাতের আব্বু।
নুসরাতের আব্বু- কে তুমি?
আমি- জি আমার নাম মোঃ ইমরান আহমেদ। বাসা কুষ্টিয়া।
নুসরাতের আব্বু- তো কি বলবা আমার জামাইয়ের ব্যাপারে।
।।
এরপর আমি সব খুলে বললাম, নুসরাতের সাথে আমার কীভাবে পরিচয়, কখন কি করেছি, সব কিছু।
আমি- স্যার! আজ আমার bcs এর ভাইবা ছিল, হয়তো ওটা পাশ করলে আমি একটা বড় অফিসার হয়ে যেতাম,

কিন্তু যে মেয়ে আমার জন্য দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে দুয়া করে, তাকে আমি কীভাবে ছেড়ে দেয় বলেন?

আমি কিন্তু আপনার মেয়ের বিয়ে ভাঙতে আসিনি, বা তাকে নিয়ে পালিয়ে নিয়ে যেতে আসিনি,

আমি জানি একটা মেয়ের সাথে তার বাবা-মার মান সম্মান কীভাবে জড়িয়ে আছে, আর তাছাড়া ইসলামিক

নিয়ম অনুযায়ী বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে পালিয়ে বিয়ে করা এটা হারাম, আর আমি জানি আপনার মেয়ে মরে যাবে তবুও এটা করবে না।
।।
নুসরাতের আব্বু- তো কি জন্য এসেছও?
আমি- আমার মনে হয়েছে যে মেয়ে এতো ভালো তাকে সারা জীবন কাঁদতে হবে সেটা মেনে নেওয়া যায় না,

আশা করবো আপনি আপনার মেয়ের আসল সুখটা কোথায় সেটা বুঝতে পারবেন। ঠিক আছে তাহলে এখন আসি?
।।
নুসরাতের আব্বু- এতো দূর থেকে এসেছও, আমার মেয়ের সাথে দেখা করবা না?
আমি- আজ যখন ছেলে পক্ষ দেখতে আসতো তার মানে সে সুস্থ আছে, যোগ্য হয়ে আসি, তখন দেখবো।

ভালো থাকবেন আর আমার জন্য দুয়া করবেন।।
।।
রাতে আমি বাড়ীতে বসে আছি। নুসরাত ফোন করলো।
নুসরাত- কেমন আছেন? আজ পরীক্ষার কি হলো?
আমি- ঐ পরীক্ষা দিতে যায় নি, অন্য পরীক্ষা দিতে গেছিলাম।
।।
নুসরাত- আচ্ছা শুনেন, জানেন, আজকে না আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যেত, আমি কয়েক দিন থেকে অনেক

কেঁদে কেঁদে আল্লাহ্‌র কাছে দুয়া করছিলাম যে ভাবেই হোক আমার বিয়ে যেন না হয়, আপনাকে জানায় নি

আপনি টেনশান করবেন তাই, আল্লাহ্‌র রহমতে, আব্বু আজ দুপুরে বলল, ছেলের নাকি চরিত্র ভালো না,

আব্বু খোঁজ নিয়েছে তাই ওখানে বিয়ে দিবে না। এখন আপনি তাড়াতাড়ি একটা চাকুরীর ব্যাবস্থা করেন তো।
আর শোনেন!
দুই রাকআত নফল নামায পড়বেন ফজরের সময়! আল্লাহ্‌ অনেক বড় বিপদ থেকে বাঁচিয়েছে।
।।
আমি- আচ্ছা ঠিক আছে, পড়ে নিবো।
নুসরাত- আচ্ছা অনেক রাত হয়েছে, আপনি শুয়ে যান।
আমি- আচ্ছা তুমিও শুয়ে যাও। কয়েক দিন মনে হয় তুমি শান্তি তে ঘুমাও নি।
নুসরাত- আপনাকে কে বলল?
আমি- না মানে তুমি বললা না অনেক চিন্তা করছিলা, অনেক কেঁদেছো তাই বললাম।
নুসরাত- আচ্ছা, খোদা হাফেজ!
……………………………….সমাপ্ত…………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত