পার্কে বসে বসে বাদাম চিবুচ্ছি আর আশেপাশের কাপলদের দেখে ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলছি । কি দুঃখ !! আমিই সিংগেল । পাশের বেঞ্চের ছেলেটা খুব বেশি হলে ক্লাস ৯/১০ এ পড়ে অথচ গার্লফ্রেন্ড নিয়ে বসে বসে গল্প করছে । আর আমার পোড়া কপালে কিছুই নাই !!??? ছ্যাহহহহ !!!
আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে দুই সপ্তাহ ধরে ভাড়া এসেছেন শিমুল ভাইরা । ওরা বলতে শিমুল ভাই আর তিবা ভাবী । শিমুল ভাই একটা কোম্পানিতে সিনিয়র অফিসার পদে চাকরি করেন । তিনমাস হলো বিয়ে করেছেন তারা । কিন্তু তাদের মধ্যে জড়তা মোটেও নাই । তাদের অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ হয়েছে । অথচ তাদের দেখে, কথাবার্তার ধরণ শুনে মনে হয় তারা প্রেম করে বিয়ে করেছেন ।এসব বলতে পারছি কারণ প্রতিদিন রাতে আমি,শিমুল ভাই আর তিবা ভাবী আড্ডা দিই ।সেই সুবাদে অনেক কথাই জানা হয়ে গেছে আমার । প্রতিদিন শিমুল ভাই আর তিবা ভাবীর প্রেম-ভালোবাসাময় খুনসুটি দেখতে দেখতে আমার নিজের ও বিয়ে করার শখ জাগছে ।
প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা আমি যখন ছাদে গিয়ে মোবাইলে ফেসবুক গুতাই ঠিক তখনই ছাদের অন্য কিনারে শিমুল ভাই তিবা ভাবীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে গল্প করে । সেই দৃশ্য দেখে আমার একটা বড় দীর্ঘশ্বাস ফেলা ছাড়া কিছুই করার থাকে না । আমার এখনো লেখাপড়া শেষ হয়নি । B.Sc শেষ করতে আরো একবছর । তারপর আবার মাস্টার্স কমপ্লিট করতে হবে । তারপর সেটেল হওয়ার জন্য চাকরি করতে হবে দুই-তিন বছর । এতো দেরি সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না ।জলদি কোন না কোন ব্যবস্থা করতে হবে । নইলে হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে গলায় দড়ি দিতে হবে । আজকে যেভাবেই হোক বাবাকে বিয়ের কথা বলতেই হবে । এসব ভাবতে ভাবতে পার্ক থেকে বের হয়ে বাসার দিকে রওনা হলাম । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত ১০ টা ১২ বাজে । আমি তাড়াতাড়ি হাটা শুরু করলাম । যতোই বাসার কাছা কাছি যাচ্ছি হার্টবিট ততোই বেড়ে যাচ্ছে । টেনশন কমানোর জন্য বাসায় যেতে যেতেই দুইটা সিগারেট খেয়ে নিলাম ।
বাসায় গিয়ে দেখি বাবা ড্রয়িং রুমে বসে টিভিতে Argentina Vs Germany এর খেলার পুরনো ম্যাচের রিপিট দেখছে। আমি গিয়ে বাবার পাশে বসলাম । আমি সবসময় ই জার্মান সাপোর্টার ।ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা কোনটাই দেখতে পারি না । কিন্তু আমার বাবা আবার আর্জেন্টিনার খাস সাপোর্টার । বাবাকে খুশি করার জন্য বললাম, “আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় রা যা খেলে না !!!” এক কথায় অসাধারণ !! মেসির মতো খেলোয়াড় হয় নাকি ??
বাবা: এতো দিনে একটা কথার কথা বলেছিস । এই না হলে আমার ছেলে ।
আমি: হ্যা বাবা । এইবারের বিশ্বকাপ তো আর্জেন্টিনার হাতে ।
বাবা: তা তো বটেই । মন টা ভালো হয়ে গেলো রে । টাকা লাগবে তোর ? এই নে দুই হাজার ।
( বাহ বাহ !! প্রশংসা করতেই দুই হাজার !! এখন তো আফসোস হচ্ছে আগে কেন এই পদ্ধতি প্রয়োগ করলাম না ?? )
আমি বাবার আরেকটু কাছে ঘেষে বসলাম । বাবার পা দুটো কোলে নিয়ে টিপতে লাগলাম । বাবা মুচকি হেসে আয়েশ করে বসলো আর বলে দিতে লাগলো, “ওদিকটা টেপ ভালো করে ।” বিয়ের কথাটা বলবো বলবো করে বলতে পারছি না । গলা দিয়ে শব্দি বের হতে চাচ্ছে না । একটু একটু করে সাহস জমা করে বলেই ফেললাম, “বাবা !! মা’র তো অনেক বয়স হলো । এখন একটু বিশ্রাম দরকার না ??”
বাবা: কথাটা তুই মন্দ বলিসনি । কিন্তু আজকাল কাওকে দিয়ে বিশ্বাস নেই ।
আমি: আরে বাবা । সবাই কি খারাপ হয় নাকি ??
বাবা: তা হয়না । কিন্তু তোর মা সংসারের কাজ নিজ হাতেই করতে চায় ।
আমি: মা’র সংসার তো মায়ের ই থাকবে । আমি তো শুধু মায়ের বিশ্রামের জন্য ই তো বলছিলাম ।
বাবা: আচ্ছা ঠিক আছে । তোর মা তো এখন ঘুমিয়ে পড়েছে । সে ঘুম থেকে ওঠলে আমি আলাপ করবো ।
আমি: সত্যি বাবা ?
বাবা: হ্যা সত্যি । এখন রুমে যা । কালকে তোর ক্লাস আছে না ?
আমি: হ্যা বাবা । আচ্ছা আমি গেলাম ।
রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে ডিংকা চিকা ডান্স দিতে লাগলাম । আর বেশি দিন নাই । আমিও বউ পাবো । ছাদে গিয়ে গল্প করবো, ঘুরতে যাবো, রাতে ছাদে গিয়ে দুইজনে গান শুনবো । আহা !! ওইসব মুহূর্ত গুলো কল্পনা করেই আমি শিহরিত হচ্ছি । শিহরিত হতে হতে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম । সকালে ঘুম থেকে ওঠে দেখি বাবা অফিসের জন্য রেডি হয়ে সোফায় বসে পেপার পড়ছে । মা হয়তো রান্নাঘরে, বাবার জন্য নাস্তা রেডি করছে । বের হওয়ার আগে বাবাকে আরেকবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেলাম রাতের কথা । ভার্সিটিতে গিয়ে বন্ধুদেরকে বললাম, “চল আজকে আমি ট্রিট দিবো।”
আদনান: ওকে মামা । কিন্তু কাহিনী কি ?? আজ বড় খুশি খুশি লাগছে !!
আমি: কারণ টা এখন বলবো না । কিছুদিন পর এমনি জানতে পারবি ।
আদনান: আচ্ছা মামা আচ্ছা । আমাদের ট্রিট হলেই হলো ।
অতঃপর বন্ধুদের পিছনে একহাজার টাকা বিলিয়ে দিলাম । কারণ আজকে আমি যে বড় খুশি !! ক্লাস শেষ করে বাসায় চলে গেলাম । বাসায় ঢুকতেই দেখি এক মহিলা বেসিনে থালা বাসন ধুচ্ছে । আমি বললাম, আপনি কে ? এখানে কেন ?আমার আওয়াজ শুনে মা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো । আমি মা কে জিজ্ঞেস করলাম, এই মহিলা কে ? আমাদের বাসায় কেন ?
মা: আরে তুই কালকে রাতে তোর বাবাকে বললি না আমার একটু বিশ্রাম দরকার । তাই আজকে থেকে জরিনা আমাদের বাসায় কাজ করবে । তোর শিমুল ভাইয়ের ফ্ল্যাটেও কাজ করে ও । খুব ই বিশ্বস্ত । এই এলাকায়ই বাসা ।
দুঃখিত চোখে জরিনার দিকে তাকালাম । সেও আমার দিকে তাকিয়ে বত্রিশ দাত বের করে দানবীয় হাসি দিলো । হায়রে আমার জীবন !!! কি বুঝাইতে চাইলাম আর আমার বাপে কি বুঝলো ? চাইলাম একটা বউ আর আমার বাপে হাজির করলো কামের বেডি !!!