“তোমার আজ আসতে এত দেরি হল কেনো” সন্ধ্যে হবে। মাগরিবের আযান দিতে এখনো ২০ মিনিট বাকি। আমি রিকশা থেকে নেমে “ইকো” পার্কের মধ্যে ঢুকলাম। দুর থেকেই দেখছি লাল রং এর রং করা একটি সিমেন্টের বেঞ্চে নাদিয়া বসে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। আসতে আসতে হেটে ওর সামনে যাওয়া মাত্রই কথাটি বললো। আমি শুকনো মুখে ওর দিকে তাকিয়ে একটা লাস্যময়ী হাসি দিলাম। জানিনা হাসির মাঝে কতটা ভালো লাগা ছিল। তবে নাদিয়া মুখ গম্ভীর করে আবারো বললো…
– এই তোমার কি হয়েছে? কথা বলছো না কেনো? আর দেরি হল কেনো বলো?
আমি ওর পাশে বসলাম। নাদিয়া আমার কাছে সরে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগল। আমি হাসি হাসি মুখে বললাম…
– আসরের নামাজ পড়েই একটু ঘুমিয়ে গেছিলাম। তাই উঠতে দেরি হয়ে গেছে। এখানে আসতে তার জন্যই দেরি হয়ে গেল। সরি।
– সরি বলতে হবে না পাগল।
নাদিয়া চুপ হয়ে গেল। পাশে পড়ে থাকা ও ওর সাথে আনা ব্যাগটি নাড়তে লাগল। আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে মনে অনেক খুশি আর ভালো লাগার এক শীতল পরশ বয়ে গেল, যখন নাদিয়া আদর করে আমাকে পাগল বলল। আসলে সব ছেলেরাই চাই তার কাছের মানুষটা তাকে আদর করে বলুক “আমার পাগলটা কেমন আছে” এমন কথা শুনে মনটা ভালো হয়ে যাবেই। একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে বলে উঠলাম…
– তুমি কখন এসেছো?
– এই তো আসরের নামাজ পড়েই চলে এসেছি। তোমাকে কয়েকবার রিং দিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি ধরোনি দেখে আর ডিস্ট্রাব করিনি। ভাছিলাম ঘুমাচ্ছো কিনা।
– এত তাড়াতাড়ি আসার কি দরকার ছিল তোমার? এমনিতেই রোজা থেকে তোমাকে দেখতে রোগা লাগছে। মুখ শুকিয়ে গেছে একদম। এই তুমি সেহরির সময় অল্প খেয়েছো তাই না? নাদিয়া একটু শব্দ করে হাসলো। আমি না হেসে ওর দিকে একটু গম্ভীর দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলাম। যাতে ও একটু বুঝুক আমি রাগ করেছি। আমার রাগ উড়িয়ে দিয়ে সে হেসে হেসে বললো…
– পাগল কোথাকার। সেহরির সময় অল্প কিংবা বেশি খাওনা কেনো? প্রথম রোজা তার উপর রোজা যদি শক্ত হয় তো একটু শুকনো শুকনো লাগবেই। আর তোমার কি শুনি? নিজের মাঝা তো একদম কুজো হয়ে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে পানি খেয়ে রোজা আছো। হিহিহি আমি চুপ করেই ওর দিকে তাকিয়ে আছি। ওর হাসিটা যেন রাগগুলো সব তাড়িয়ে দিল। নাদিয়া দেখতে সব মেয়েদেন মত সুন্দরী না। দেখতে শ্যামলা। তবে ওর ফরসা দাঁতের হাসি আর হরিন কালো চোখ কেমন যেন ভালোবাসা জাগায়।
– এই… এই কি ভাবছো? (নাদিয়া ঝাড়ি দিল)
– না না কিছু না।
– হুমম..আর মাত্র দশ মিনিট পর আযান দিবে ইফতার করবো একসাথে ঠিক আছে?
– ইফতার? কিন্তু কিছু তো কিনে আনেনি। দাঁড়াও কিছু আনি।
– উফ..ভূলে গেলে কালকের কথা? কাল যে বলেছিলাম আমি ইফতার বানিয়ে আনবো।
তখনি মনে পড়ল কালকের কথা। আসলে এখানে আসার পিছনে তাও আবার এই সময়ে একটা কারন আছে। কাল নাদিয়া বলেছিল “রোজা পড়বে কাল থেকে। তাই আমরা রোজা একসাথে বসে ইফতার করবো। ইফতারের সময় একসাথে হবো তারপর দুজনে বসে সবকটা রোজার ইফতার করবো” নাদিয়ার কথামত এখানে আসা। তখনি দেখলাম নাদিয়ে ওর ব্যাগ থেকে একটি মেলামাইনের বক্স বের করছে। আমি উৎসুক জনতার মত তাকিয়ে আছি।
– এই যে আজ আমরা ইফতার করবো এটা দিয়ে। (নাদিয়া)
– কি আছে এতে?
– তোমার প্রিয় খাবার।
– কি?
– ওহ গাধা..কাচ্চি বিরিয়ানি। দুজনে ইফতারি সেরে তুমি মসজিদে চলে যাবা। তারপর নামাজ পড়ে বাসায় যাবা সোজা। আর আমিও বাসায় যাবো ইফতারি শেষ করে। কেমন?
– ঠিক আছে যাবো। এখন বের করো তো দেখি টেষ্ট করে।
– চুপ বেয়াদপ। এখনো ৫ মিনিট আছে।
– আরে এমনি বললাম।
দুজনের মাঝখানে কাচ্চিবিরিয়ানি রাখা। আযান দিচ্ছে। তখনি নাদিয়া আমাকে “বিসমিল্লাহ” বলে খাইয়ে দিল ওর হাতের এক লুকমা। আর আমিও “বিসমিল্লাহ” বলে খাইয়ে দিলাম। দুজনেই একে অপরকে খাইয়ে দিচ্ছি।
– ওহ রান্নাটা যা টেষ্ট হয়েছে। মনে হচ্ছে বাটি টাই খেয়ে ফেলবো। এই বাটিটা খাইলে তো আবার পেট খারাপ করবে না তো?
– হিহিহি..চুপ ফাজিল। খাওয়ার সময় কথা বলতে নেই। তাড়াতাড়ি খাও। ব্যাগে পানি আছে খাওয়া শেষ করেই মসজিদে যাবা। ইফতার শেষ করলাম। দুজনেই চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি। নাদিয়া এখনি বাসায় যাবে। কারন ওর বাসা এই পার্ক থেকে ৫ মিনিটের পথ। আর পার্ক থেকে আমাদের বাসা ১৫ মিনিটের পথ। যেতে যেতে একটা মসজিদ পড়ে। মসজিদটি পার্কের কাছেই। দুজনেই পার্ক থেকে বের হলাম। ও যাবে উলটো পথে আর আমি যাবো ওর বিপরীত পথে।
– বাসায় পৌছে হালকা কিছু খেয়ে কল দিবা হুম? (নাদিয়া)
– আচ্ছা। দেখেশুনে যাবে। আল্লাহ হাফেজ।
আমি হাটা শুরু করলাম। একটু আসতেই পিছনে তাকালাম। মাথায় সাদা ওড়না পরে নাদিয়া তখনও দাঁড়িয়ে আছে। আমি হাতে ইশারা করে যেতে বললাম। ও পাল্টা ইশারা করে বুঝিয়ে দিল “মসজিদে আগে যাও তারপর। আমি দৌড়ে মসজিদে ঢুকলাম। খানিকপরে নামাজ শেষ করে বাইরে বের হলাম। পার্কের সামনে এসে দেখলাম একদম ফাঁকা সব। আমি পকেটে হাত গুজে বাড়ির দিকে হাটা ধরলাম। নাদিয়ার কথা খুব মনে পড়ছে। মেয়েটা খুব কেয়ারফুল আমার ব্যাপারে। আমাকে সে অনেক ভালোবাসে। আমিও তাকে বাসি। আমি না বলা অবদি সে খাবে না। যতক্ষণ তাকে বলবো না খেয়ে নিতে ততক্ষণ অবদি সে না খেয়েই থাকবে। মেয়েটা একদম পাগলি।
দেখতে সুন্দর না হলেও ওর মনটা অনেক পবিত্র। ওদের বাড়ি পেরিয়ে ভার্সিটিতে যেতে হয়। রোজ ক্লাসে যাওয়ার সময় দেখতাম মেয়েটা দুইতলা বাসার ব্যালকনিতে বসে বই পড়ত। মাথায় সবসময় কাপড় দেয়া থাকত। এভাবে রোজ দেখতে দেখতে কখন যে মেয়েটির প্রেমে পড়ে গেছিলাম থাক সেসব কথা। সেসব না হয় অন্যদিন বলবো। এখন বাসায় চলে এসেছি। যায় হালকা কিছু খেয়ে নাদিয়াকে কল দিতে হবে তো। তারপর তারাবীর নামাজ পড়ে রাতের খাবার খেয়ে, কল দিয়ে ওর মুখ থেকে ভালোবাসি শুনে লস্বা একটা ঘুম দিবো।
(সমাপ্ত)