-“এই পাচঁটি গোলাপ কত করে রে?”
-“পঞ্চাশ টাকা চাচা।”
-“কম হবেনারে?”
-“না চাচা।”
-“ওহ্।আচ্ছা ঠিক আছে দিচ্ছি। আলতাফ সাহেব তার পাঞ্জাবির পকেটে অনেক খুঁজে চল্লিশ টাকা পেয়ে হতাশ হয়ে গেলেন।
-“(মুখ গোমড়া করে) বাবা,অনেক খুঁজে চল্লিশ টাকা পেলাম।থাক,চারটি গোলাপ দাও।”
-“(ছেলেটি আলতাফ সাহেবের মুখের দিকে তাকিয়ে) আপনে ফুলগুলা কারে দিবেন চাচা?”
-“(ছোট্ট একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে) তোমার চাচি রে বাবা।”
-“তাইলে পাঁচটাই নিয়া যান চাচা।চল্লিশ টাকাই দেন।”
এই কথা শুনে খুশিতে কেঁদে ফেললেন আলতাফ সাহেব।অনেক দোয়া করলেন ছেলেটির জন্য। আলতাফ সাহেব একজন সরকারি চাকুরিজীবি ছিলেন।এখন তিনি অবসরে আছেন।স্ত্রী আর এক ছেলেকে নিয়ে খুব সুখের সংসার ছিল তার।কিন্তু আজ থেকে প্রায় পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রী ব্লাড ক্যানসারে মারা যায়।
আজ তাদের ৩৮তম বিবাহ বার্ষিকী।তার স্ত্রী বেঁচে থাকা অবস্থায় আলতাফ সাহেব কখনও তাদের বিবাহ বার্ষিকীতে একটি ফুল উপহার দেয়নি তার স্ত্রীকে।এ নিয়ে তার স্ত্রীর মনে অনেক কষ্ট ছিল।তার স্ত্রীর প্রিয় ফুল ছিল গোলাপ।
আর তাই তার স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে প্রতি বিবাহ বার্ষিকীতে তার স্ত্রীর প্রিয় ফুল গোলাপ কিনে নিয়ে যায়।স্ত্রী মারা যাওয়ার পর প্রথম বিবাহ বার্ষিকীতে একটি,তার পরের বছর বিবাহ বার্ষিকীতে দুটি এভাবে আজ পঞ্চম বিবাহ বার্ষিকীতে পাঁচটি গোলাপফুল কিনে নিয়ে যায়।এভাবে প্রতি বছর গোলাপের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আলতাফ সাহেব বাসার কলিংবেল বাজাচ্ছে।তার ছেলের বউ এসে দরজা খুলে দিল।আলতাফ সাহেব প্রতিদিন ভোরে পার্কে হাটঁতে যায়।আজও হাটঁতে গিয়ে ফুল কেনার জন্য অপেক্ষা করতে গিয়ে বাসায় ফিরতে দেরি হয়ে যায়।
-“বাবা এত দেরি করলেন যে?মোবাইলটাও বাসায় রেখে গেছেন।আমি আর আপনার ছেলে কত চিন্তায় ছিলাম।”
-“ভুল হয়ে গেছে মা।আর এমন হবেনা।বয়স হয়েছে তো।রিজওয়ান কোথায়?”
-“আপনার নাতি এখনো ঘুমোচ্ছে বাবা।”
-“ও আচ্ছা ঠিক আছে।”
-“বাবা।”
-“বল মা।”
-“Happy Anniversary Day.”
এই কথা শুনে আলতাফ সাহেব মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে।
-“আপনি কাঁদছেন বাবা?কাঁদবেন না প্লিজ।আমি জানি আপনি মাকে কতটা ভালবাসেন।আমার দুর্ভাগ্য যে মাকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার।মা মারা যাওয়ার পর এই বাড়িতে বউ হয়ে আসি।কিন্তু গত দুবছর ধরে মায়ের প্রতি আপনার এই ভালবাসা দেখে সত্যিই আমি অবাক হয়ে যাই।” আলতাফ সাহেব চোখেরজল মুছতে মুছতে,
-“কিন্তু সে বেঁচে থাকা অবস্থায় তো তার ভালবাসার মূল্য দিতে পারিনি আমি।তার ছোট ছোট ইচ্ছেগুলোকে অবহেলা করেছি।”
-“এসব ভেবে মনে আর কষ্ট নিবেন না বাবা।আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন।আমি নাশতা তৈরি করছি।”
-“আচ্ছা ঠিক আছে মা।রিজভী কি অফিসে চলে গেছে?”
-“আপনার ছেলে এইদিনে কি অফিসে যায় বলুন।”
-“ও হ্যাঁ তাইতো।দেখ সব ভুলে যাই।কিছু মনে করনা মা।তোমরা তাহলে নাশতা করে নাও।আমি একটু পরে করি কেমন।”
-“(মিষ্টি হাসি দিয়ে) আপনি মায়ের সাথে কথা বলে আসুন।ফুলগুলো দিয়ে wish করে আসুন।আমি আর আপনার ছেলে আপনার জন্য খাবার টেবিলে অপেক্ষা করব।” এই কথা শুনে আলতাফ সাহেব লজ্জায় মাথা নিচু করে তার ঘরে গেল। রিজভী বাজার করতে গিয়েছিল।বাজার থেকে এসে দেখে তার স্ত্রী রূপমা টেবিলে নাশতা রেডি করছে।
-“বাবা বাসায় আসছে?”
-“হুম।”
-“যাক চিন্তামুক্ত হলাম।আচ্ছা শোনো,নাশতা করে রেডি হয়ে নিও।সবাই গ্রামে যাব।মায়ের কবর যিয়ারত করতে।”
-“হুম আচ্ছা।” রূপমা ছোট ছোট উত্তর দিচ্ছে দেখে রিজভী কিছুটা অবাক হল।
-“এই,তোমার কি হয়েছে বলতো?এভাবে উত্তর দিচ্ছ যে?মন খারাপ?” রূপমা কোনো উত্তর দিলনা। রিজভী রূপমার কোনো উত্তর না পেয়ে রূপমাকে তার দিকে ঘোরাল।ঘুরিয়ে দেখে রূপমা কাঁদছে।
-“(অবাক হয়ে) এই তুমি কাঁদছ???!!!!!! কি হয়েছে সত্যি করে বলতো প্লিজ।”
-“(রিজভীর মুখের দিকে তাকিয়ে) মা মারা যাওয়ার পর বাবা মাকে যেভাবে মনে রাখছে ভালবাসছে,তুমি আমাকে সেভাবে মনে রাখবে তো?ভালবাসবে তো?” রূপমার এরকম প্রশ্ন শুনে রিজভীর চোখে পানি জমে গেল।আর তখনি রূপমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
-“তোমাকে এর চেয়েও বেশি ভালবাসব পাগলি।” যুগ যুগ ধরে বেঁচে থাকুক এমন পবিত্র ভালবাসা।