সবার মানুষেরই জীবন এক না,,,
 কেউ তার মনের কথা গুলো বলার জন্য বিশ্বস্ত কাউকে পায়।
 আবার কেউ কেউ মনের কথা বলতে গিয়েও বারবার ফিরে আসে,,,তেমনি আজকে
 আমার খুব পরিচিত একটা ছেলের জীবন নিয়ে গল্প লিখবো।
 .
 আগেই তাহলে পরিচয় টা দিয়ে নেই,,,
 ছেলেটির নাম হলো আকাশ। মধ্যবিত্ত পরিবারের মা বাবার আদরের ছোট সন্তান।
মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক দিয়ে এবার একটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।
 বড় ভাই সেও একই কলেজে পড়ালেখা করে আর পাশাপাশি চাকরির জন্য চেষ্টা করছে।
 .
 আকাশ ছেলেটা ছোট থেকেই খুব শান্ত আর ভদ্র ছিলো। ছোটবেলা থেকেই ও অনেক
 দুষ্টামি করতো। যতই বড় হচ্ছিলো ততই ওর দুষ্টুমির মাত্রা বেড়েই চলছিলো।
 খেলাধুলা করার মাঝে হুট করে এসে মায়ের কোলে উঠার জন্য বায়না করতো। মাও তার হাতের কাজ রেখে দিয়ে বায়না পূরন করতো।
 এটা এক প্রকার নিত্যকার রুটিন আর রোজকার ঘটনা ছিলো আকাশের।
 .
 আকাশের দুষ্টুমির জন্য তার মা তাকে ৫ বছরের সময় নার্সারিতে ভর্তি করে দেয়।
 কারন তখন হাতেখড়ি বা প্লেলে এর ব্যবস্থা ছিল না। যাই হোক আকাশও খুশিতে খুশিতে নার্সারিতে ভর্তি হল। সে ভাবতে লাগলো
 এবার নতুন বন্ধুদের সাথে সে খেলাধুলো আর দুষ্টুমি করতে পারবে।
 .
 কিন্তু তার ভাবনা আর বাস্তবে রূপান্তর হলো না। সে তার মার সাথে ক্লাসে যেত
 আর বাবা নিয়ে আসতো। যেটুকু কথা হতো ওই ক্লাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। এভাবেই
 চলতে থাকে তার জীবন চাকা।
 ছোটবেলা থেকেই তার অনেক স্বপ্ন ছিলো অনেক না হলেও অল্প কিছু বন্ধু থাকবে তার।
 যাদের সাথে সে তার দিনগুলো হাসিখুশিতে কাটাবে।
 .
 কিছু ভাবনা আর স্বপ্ন সত্যি হয়না কখনো। আকাশের বেলায়ও তার ব্যতিক্রম হয় নি।
 এক বছর পরে একটা নামকরা স্কুলে ক্লাস ওয়ানে ভর্তির জন্য ভর্তি পরিক্ষা
 দেয় আকাশ। আল্লাহর রহমতে সে চান্স ও পেয়ে যায়। মা বাবা ভাই সহ সবাই যত
 খুশি হয়েছিলো তার থেকে আকাশ বেশি খুশি হয়েছিলো। কারন এবার সে তার দেখা পুরনো স্বপ্ন পুরন করতে পারবে এই ভেবে।
 .
 এরপর একের পর এক চলতে থাকে তার স্কুল, কলেজের জীবন।
 প্রতিদিনই সে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে থাকত।
 এই পুরোটা সময় যত বেস্ট বন্ধু বানিয়েছিল সবাই আকাশকে ছেড়ে অন্যকোথাও চলে গেছে,
 কেউ আবার অন্য কোথাও ভর্তি হয়ে নতুন বন্ধু বানিয়েছে। তখন এইজন্য ওর অনেক কষ্ট হতো। কিন্তু কেউ বুজতে পারতো না।
 .
 যখন থেকে আকাশ ভালো মন্দ বিচার করা বুজতে শিখে তখন থেকেই একটা কথা প্রতিনিয়ত ভাবতে থাকতো।
 সে ভাবতে থাকে -“কেউ চিরকাল এক রকম থাকে না, পরিবেশ আর পরিস্থিতির সাথে সাথে বিভিন্ন রং ধারন করে বদলে যায়।”
 একটা সময় পরে এসে আকাশ বুজতে
 পারে তাকে সবাই নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়েছে।
 .
 স্বার্থ আর প্রয়োজন ছাড়া আকাশকে কেউ চিনোতো না। প্রতিদিন রাতের
 অন্ধকারে আকাশ কাউকে না দেখি কান্না করতো। সে তার মনের ভিতরে জমে থাকা দুঃখ-কষ্ট কারো সাথে শেয়ার করার সুযোগ পেতো না।
 তার বাবা মা ও মাঝে মাঝে সামান্য বিষয় বা কারন নিয়ে ভুল বুজে অনেক বকা আর মারধর করতো।
 .
 একটা সময় এসে আকাশ তার সব ইচ্ছে গুলোকে মাটি চাপা দিয়ে একা আর অন্ধকারে থাকার চিন্তাভাবনা শুধু করে।
 কারন এতে কিছু কিছুটা হলেও তার শান্তি তো হবে। যতই দিন যাচ্ছে তার বুকের ভিতর জমে থাকা কষ্ট গুলো মাটি চাপা দিচ্ছে।
 সে একপ্রকার আশাই ছেড়ে দিয়েছিল যে তার দেখা স্বপ্ন গুলো কখনো বাস্তব হবে না।
 .
 পরিবারের সবার কাছ থেকে যেটুকু ভালোবাসা পেত তাতে তার মনে সাহস সঞ্চয় করতে পারতো না। আকাশ নিজেকে একটা ব্যর্থ
 ছেলে ভাবতে শুরু করে। সে ভাবে তার জন্মটাই ছিলো পাপ। কারন যে তার সঙ্গ দেয় সে
 বেশি দিন তার সাথে থাকে না।
 .
 যতবারই বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে সে তার মরে যাওয়া স্বপ্ন গুলোকে বাচিয়ে
 তুলতে চেয়েছে ততবার সে পরাজিত হয়েছে। প্রতিবার পরাজয়ের ফলে তার সেই স্বপ্ন গুলো আবারও মাটি চাপা
 পরে যেত মনের ভিতরে। তবুও সে
 থেমে থাকে নি। কারন সে জানতো যতই পরাজয় হোক না কেনো পরে
 জয় একদিন ঠিকই আসবে।
 .
 বাসা দিয়ে খুব পরিমানে বের হতো
 আকাশ। এতোটাই কম যে দিনের বেশি সময়ই বাসার চারদেয়ালের ভিতরে
 ছিল তার জীবন। বাহিরে ছিল তার একজীবন ভেতরে ছিল আরেক। বন্ধুদের সাথে
 ঘুরতেও যেত না কোথাও। এজন্য অনেকে তাকে নিয়ে উপহাস আর ঠাট্টাতামাসাও করতো।
 .
 কিন্তু আকাশ একটা দিক দিয়ে কিছুটা হলেও সফল হয়েছে। স্কুল,কলেজ জীবনে
 সে কয়েকটা ভালো বন্ধুর দেখা পেয়েছে। যার জন্য আজ আকাশ নিজেকে
 সময়ের সাথে সাথে মানিয়ে নিতে পারছে।
 তা না হলে অনেক আগেই দূর আকাশের তারা হয়ে যেতে হতো আকাশকে।
 .
 আকাশদের বাসা দিয়ে মিনিট দশেক দূরে একটা নদী আছে। সময় পেলে সে তার
 বন্ধুর সাথে ঘুরতে যেতো সেখানে। এখন আকাশের অনেক বন্ধু আছে তার মধ্যে বেস্ট আছে কয়েকটা।
 এদের নিয়েই এখন আকাশ চলে। সে ভাবে আগের বন্ধুরা যদি আজ থাকতো তাহলে হয়তো তার কোনো ধরনের দুঃখ থাকতো না।
 .
 আকাশ ছেলেটা ইদানীং আগের থেকে কিছুটা হলেও বদলে গেছে।
 সে এখন আবার একা থাকতে চায়। যদি সময়ক্ষেত্রে বন্ধুরা জোর করে কোথাও না নিয়ে যায়। তার জীবনটা যেই ঠিক
 ঠাক হয়ে এসেছিল। তার অজানা কথা গুলো বন্ধুদের সাথে শেয়ার করা শুরু করছিলো।
 ঠিক তখনই একটা ঝড় এসে সবকিছু এলোমেলো করে দেয়।
 .
 যখন সে তার বন্ধুদের সাথে মজা করে জীবন কাটাতে শুরু করলো।
 তখনই তামান্না নামে একটা মেয়ে হুট করে এসে পড়ে আকাশের জীবনে। মেয়েটা অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিল আকাশের প্রতি।
 মেয়েটার মায়ার জালে আকাশ নিজের অজান্তেই জড়িয়ে পড়ে।
 .
 এরপর থেকে প্রতিদিনই তাদের মাঝে কথা হত। মাস দুই পড়ে আকাশ
 তামান্নার মাঝে কিছু উদ্ভট আচারণ দেখতে পায়। ঠিক মত কথা না বলা, এড়িয়ে চলা, ব্যস্ততা দেখানো ইত্যাদি। এর কিছুদিন
 পরেই তামান্না আকাশের সাথে রিলেশন ব্রেকআপ করে অন্য একটা ছেলের সাথে চলে যায়।
 .
 তার সাজানো গুছানো জীবনটা এভাবেই এলোমেলো হয়ে যায় আবার। আসলে হঠাৎ করে আসা ভালোবাসা গুলো এমনটাই হয়।
 হুট করে আসে আবার সবকিছু অগোছালো করে দিয়ে চলে যায়।
 এরপরে আকাশ নিজেকে পুরোটাই পাল্টে নেয়। কারন বিশ্বাস এমন একটা জিনিস
 যা একবার ভেঙে গেলে জোড়া লাগানো খুব কঠিন।
 .
 এরপর থেকেই আকাশ আর কাউকে বিশ্বাস করে কোনো মনের কথা বলে না।
 সে যার সাথেই তার মনের কথা শেয়ার করেছিল সেই তাকে দূরে ঠেলে দিয়ে চলে গেছে।
 যে ছেলেটা একাকিত্বকে কাটিয়ে একটা সময় খুব স্বাভাবিক হয়ে সবার সাথে চলাফেরা
 করতো। সে এখন আবার নিজেকে একা ভেবে অন্ধকারে থাকে।
 .
 আসলে একটা মানুষকে ভালো করতে যেমন পরিবার, বন্ধু ও ভালোবাসার
 মানুষের সাহায্য দরকার। ঠিক তেমনি একটা মানুষকে খারাপ হতে বা মৃত্যুর দিকে
 ঠেলে দিতে এদের একটু অবহেলা আর কষ্টই যথেষ্ট।
 .
 আকাশের মত এমন আরো অনেক ছেলে অথবা মেয়ে আছে। যারা নিজেকে
 সব সময় একা ভাবে এবং আলোকে দূরে ঠেলে দিয়ে অন্ধকার কে নিজেদের আপন
 করে নেয়। এদেরকে একটু
 সময় দিয়ে বা ভালোবাসা দিয়ে এদের মনের অবস্থা বোজা দরকার।
 .
 তারা কি চায়, তাদের কি সমস্যা এগুলো যদি জানা যায় তাহলে হয়তো
 এরা আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে। এজন্য দরকার একটু সৎ সঙ্গ,
 বাবা-মা অথবা প্রিয় মানুষটার একটু যত্ন আর ভালোবাসা। তাহলে হয়তো আকাশের মত হাজারো ছেলেমেয়ের না
 বলা অজানা কথা, তাদের আশা আকাঙ্ক্ষা, ভালোমন্দ সম্পর্কে জানা যাবে।
 .
 তা না হলে হয়তো তারা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে। যার ফলে আত্মহত্যার
 পরিমান বেরে যাবে। তাই যতটুকু সম্ভব এদের মনের ভিতর জমে থাকা কষ্ট গুলো
 জানা যাতে করে তারা নিজেকে হালকা মনে করতে পারে। এর মাধ্যমে
 আমরাও জানতে পারবো তাদের মনের কথা, তাদের দেখা রঙিন স্বপ্ন গুলোর কথা সহ লুকিয়ে থাকা শত অজানা কথা।
 .
 
  
 Loading...
Loading...













