পুরো বাড়ী আলোতে ঝলমল করছে। ঝাড়বাতির চিকমিক আলো যেন সেই সৌন্দর্য বহুগুণ বৃদ্ধি করেছে।
জোছনা রাতে চাদের আলোতে জোনাকি পোকা যেমন তার আলো দিয়ে জোছনা রাতের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে
ঠিক তেমন করেই ঝাড়বাতির চিকমিক আলো পুরা বাড়ীর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। আজ চৌধুরী পরিবারের একমাত্র
ছেলে মেহেদী চৌধুরীর বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়ের অনুষ্ঠান বললে ভুল হবে কারণ বিয়ের অনুষ্ঠান তো মেয়ের বাড়ীতে হয়।
যেহেতু অনুষ্ঠানটা ছেলের বাড়ীতে হচ্ছে তাই বৌ ভাতের অনুষ্ঠান বলাটাই শ্রেয় হবে। আবার বিয়ের অনুষ্ঠান বলাটাও
বেশী অপরাধ হয়ে যাবে না কারণ বিয়েটা কোনো প্রকারের আগাম প্রস্তুতি ছাড়াই হয়েছে। কোনো প্রকারের অনুষ্ঠান
ছাড়াই হঠাৎ করেই হাতে গনা কয়েকজন আত্নীয় স্বজনদের নিয়ে ঘরোয়া ভাবেই বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়।
.
নিজের বিয়েতে সবচেয়ে কাছের বন্ধু সজীবকে না পেলেও আজকের অনুষ্ঠানের সব দ্বায়িত্বই তার উপর ছিলো।
মেয়েদী এবং সজীব অনেক ভালো বন্ধু। আপন ভাইয়ের চেয়েও তাদের বন্ধুত্বের ভিত্তি অনেক মজবুত। মজবুত হবেই না
কেনো ভিত্তিটা স্থাপিত হয়েছিলো যে সেই ছোটবেলা থেকেই। তাইতো ছোটবেলা থেকেই কনক্রিটের মত মজবুত হয়ে আছে
তাদের বন্ধুত্ব। একই সাথে স্কুল লাইফ,কলেজ লাইফ এমনকি ভার্সিটি লাইফেও পড়াশুনা করেছে তারা। সজীব প্রায়ই বলতো
মেহেদী আমরা আর যাই করি না কেনো বিয়েটা কিন্তু একই দিনে একই সঙ্গে করবো। কারণ সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে ছাড়া
নতুন জীবন শুরু কখনোই আমার পক্ষে সম্ভব না। মেহেদী তখন বলতো তোর তো বিয়ের মানুষ ঠিক করাই আছে, আমার
তো নাই তাহলে কিভাবে হবে। ও হ্যাঁ,বলতেই ভুলে গেছি সজীব একজন অশরীরী নারীর প্রেমে পড়েছে। অশরীরী নারী বললাম
এই জন্যই যে সজীব আজ পর্যন্ত কন্ঠস্বর শোনা ব্যতীত তাকে কখনোই দেখেনি। আজও সে মানুষ নাকি অন্যকিছু তাও
সে সঠিকভাবে জানে না। মূলত একটা রং নাম্বারের মাধ্যমেই তাদের মনের পৃথিবীতে সূর্য উঠা শুরু হয়। মেয়েটির কন্ঠস্বর
সজীবকে এতোই মুগ্ধ করে যে সজীব তার প্রেমে পড়তে বাধ্য হয়ে যায়। কারো কন্ঠ যে এতো শ্রুতিমধুর হতে পারে তা সজীবের
আগে জানা ছিলো না। প্রতিদিন এই কন্ঠস্বর শোনার জন্য সজীব ব্যাকুল হয়ে উঠত। আর যখন শুনতে পেতো না তখন যেনো
সে ছটফট শুরু করে দিতো। জীবন্ত মাছকে পানির উপরে তুললে যেমন করে ছটফট করে ঠিক তেমন ভাবেই সজীবও ছটফট
করতে থাকে। ফোনের বিপরীত পাশ থেকে অশরীরী নারীর সেই কন্ঠস্বরই যেনো সজীবের বেঁচে থাকার অক্সিজেন হয়ে গেছে।
.
সজীবের বার বার প্রেমের প্রস্তাব দেয়া, কেয়ার এবং অদ্ভুত পাগলামির কারণে মেয়েটিও সজীবের প্রেমে পড়ে যায়। শুরু হয়ে
যায় তাদের নতুন প্রেমময় অধ্যায়। তারা আগের চেয়ে আরো বেশী দুজন দুজনার প্রতি যত্নশীল হয়ে যায়। তবে সবকিছুই ফোনের
মাধ্যমে হত। দীর্ঘ ১৮ মাসের রিলেশনে কেউ কাউকে কখনো দেখেনি এবং কেউ কারো সম্পর্কে কিছুই জানে না। সজীব দেখা
করার কথা বললেই মেয়েটি বলতো ভাগ্যে থাকলে এমনিই আমাদের দেখা হবে, তাছাড়া তুমি তো আমাকে ভালোবাসো আমার
শরীরকে না। এইভাবে চলতে চলতে হঠাৎ করেই সজীবের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে কারণ অশরীরী সেই মেয়েটির ফোন হঠাৎ
করেই বন্ধ হয়ে যায়। আজ প্রায় ১ সপ্তাহ হলো সজীব সেই মেয়েটার কন্ঠ শুনতে পায়না। এর মধ্যেই হঠাৎ করেই শুনতে পায়
তার প্রিয় বন্ধু মেহেদী বিয়ে করে ফেলেছে। অবশ্য এই বিয়ে সম্পর্কে মেহেদীও কিছু জানতো না। মেহেদীর বাবা অত্যন্ত জরুরি
ভিত্তিতে মেহেদীকে চিটাগাং ডাকে। মেহেদী তার সাথে যাওয়ার জন্য সজীবকে বললেও সজীবের মন মানষিকতা ভালো না থাকায়
সে মেহেদীর সাথে যেতে রাজী হয়না। চিটাগাং পোঁছানোর পর মেহেদী জানতে পারে তার বাবার বাল্যকালের বন্ধুর মেয়ের সাথে তার
বিয়ে অনেক আগে থেকেই ঠিক করা আছে। যেহেতু মেহেদীর কোনো পছন্দের মেয়ে নাই তাই এই মাসেই মেহেদীর সাথে তার বাবা তার
বিয়ে বিষয়ে কথা বলতো।কিন্তু তার বাল্যবন্ধু গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তৎক্ষণাৎ মেহেদীর বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। ততক্ষণে অনেক
দেরী হয়ে গেছে তাই বাধ্য হয়ে মেহেদীকে বিয়েটা করতেই হয়।
.
ঘড়িতে সময় প্রায় রাত ১২ টা । আজ মেহেদীর বাসর রাত। কর্মব্যস্ততার ভীড়ে সবাই সবার নিজ গন্তব্যে চলে গেছে। সেই সাথে যেন
বাড়ীর সব চঞ্চলতা,হৈ চৈ ও ব্যস্ততাও নিয়ে গেছে। রয়ে গেছে শুধু মাত্রই মেহেদীর কিছু আত্নীয় স্বজন এবং প্রাণের বন্ধু সজীব।
সজীবের মনের অবস্থা মেহেদী এখন ভালো করেই জানে। কি পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে সে যাচ্ছে। এরপরেও শুধুমাত্র মেহেদীর
জন্যই হাসিমুখে বিয়ের সব কাজ করেছে সে। কিন্তু দিন শেষে রাতে ঠিকই হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা সত্য বেড়িয়ে এসেছে।
মেহেদী স্পষ্ট সেটা দেখতে পাচ্ছে। সজীবের এমন অবস্থা যে সে কিছুতেই মেনে নিতে পাচ্ছে না। এই সাত দিন ধরে কত চেষ্টাই না
করলো তারা তবুও মেয়েটির কোনো খোঁজ বের করতে পারেনি।
.
রুমে যাওয়ার আগে মেহেদী সজীবকে বলতে লাগলো তুই সব সময় বলতি আমরা একই সঙ্গে একই দিনে বিয়ে করবো।
আর আমি তখন বলতাম তোর তো সঙ্গী ঠিক করাই আছে আমার তো নাই তাহলে কিভাবে হবে। কিন্তু আজ দেখ আমারই বিয়ে হয়ে
গেলো আর তুই তোর ভালোবাসার মানুষকে হারালি। ভাগ্য বড়ই নিষ্ঠুর। কখন কাকে কি দিবে কেউ বলতে পারে না। তবুও আমরা
দিন শেষে ভাগ্যকে আকড়ে ধরেই সামনের দিকে এগিয়ে চলি। মেহেদী সজীবকে অনুরোধ করে আমি রুমে যাওয়ার আগে
পর্যন্ত তোর মুখে সেই আগের সত্যিকারের আনন্দ অন্তত একবারের জন্য হলেও দেখতে চাই তাই আমি রুমে যাওয়ার আগে
তুই আর একবার মেয়েটিকে ফোন কর। সজীব ফোন বের করে নাম্বারটা ডায়াল করতেই স্কিনে লেখা উঠে অচেনা অপ্সরী।
অচেনা অপ্সরী নামেই সে তার ভালোবাসার মানুষকে ডাকত। ফোন দেয়ার সাথে সাথেই সজীব চিৎকার করে উঠে বলে দোস্ত
ফোন গেছে তার মানে ওই ফোন অন করেছে।ফোন দেয়ার স্থায়িত্ব কয়েক সেকেন্ড হতেই দুজন দুজনার দিকে অবাক
চোখে তাকায় কারণ ফোনের রিংটোনটা মেহেদীর বাসর ঘরে তার বউ তুলির কাছ থেকে আসছে।