ধোয়া

ধোয়া

আজ অফিসে এসে আপন মনে নিজের ডেক্সে যেতেই একটা শকড খেলাম।

কারন, আমার ডেক্সের উপর এক তোড়া ফুল দেখে শকড তো হবোই। এর আগে এমনটা তো কখনও হয়নি।

তাহলে আজ কে করেছে এই কাজ? নিজের কেবিনে যাওয়ার আগে পাশের কেবিনে সিফাত সাহেবকে যেয়ে বললাম..
– ভাই, আমার টেবিলে কেউ ফুলের তোড়া রেখেছে, আপনি কি দেখেছেন কে রেখেছে? বা আপনি জানেন??
– কই না তো আবির সাহেব,,কেনো কি হয়েছে?
– নাহ এমনি, আচ্ছা কাজ করেন।

নিজের টেবিলের সামনে এসে তোড়াটা হাতে নিতেই দেখি একটা কাগজ। ভাজখুলে দেখি সেখানে লেখা “কেমন আছেন মি.”?
আমি খুব অবাক হয়ে একবার তোড়াটার দিকে তাকচ্ছি, একবার লেখাটার দিকে। কে হতে পারে, এর আগে তো এমনটা হয়নি।

আশে পাশে তাকালাম। নাহ সে রকম সন্দেহজনক কাউকেই তো পেলাম না। ধপ করে চেয়ারটাতে বসে পড়লাম।

সামান্য জিনিস হোলেও তার উত্তর না জানা অবদি আমার কিছুই ভালো লাগে না। কিন্তু এটা কে করলো? যাই হোক কাজে মনোযোগ দিলাম।
কাজ করতে করতে কখন যে লাঞ্চ আওয়ার হয়ে গেছে বুঝিনি। তাই খাওয়ার জন্য অফিস ক্যান্টিনে আসছি।

খাওয়া শেষ করে যখন আবার টেবিলের সামনে আসছি। দেখি আরেকটি চিরকুট। সঙ্গে সঙ্গে হাতে নিয়ে দেখি ”

আমাকে খুজছেন তাইনা” ভাবছেন আমি কে? আচ্ছা একটা ক্লু দিচ্ছি। আমি আপনার খুব পরিচিত একজন। আমাকে দেখলেই চিনবেন”
আর কিছু না ভেবে, আবার কাজ মন দিলাম। কারন, সে হয়ত আমার পরিচিত। কিন্তু লুকোচুরি খেলছে।

(পরেরদিন)

নিজের টেবিলে বসে অফিসের কাজ করছি। তখনি সিফাত এসে বললো..
– ভাই জানেন নাকি?
– কি জানবো?
– আজ তো আমাদের নতুন ম্যানেজার আসছে। মানে ম্যানেজার পদে নতুন একজন আসছে।
– ওহ ভালো, তা কখন আসবেন?
– এই তো একটু পরেই, অভ্যর্থনা জানাতে হবে।
– হুমম

কিছু না বলে উনি চলেন গেলেন নিজের কাজে। আজ ক মাস ধরেই আমাদের অফিসের ম্যানেজার পদটি খালি।

কিন্তু আজ কেউ একজন জয়েন করবে। ভালোই হল..
(কিছুক্ষন পর)
– আবির ভাই, উনি আসছেন। (সিফাত)
– আসুক..
যখন আমাদের নতুন ম্যানেজার অফিসে ঢুকলো, তখন আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।

কারন, ইনি আর কেউ নন ইনি হলেন, আমার বিয়ে দেয়ার জন্য কদিন আগে দেখতে যাওয়া পাত্রী। তবে বিয়েটা না করে দিয়েছিলাম।

এসব ভাবছি, তখনি উনি আমার সামনে এসে দাড়ালো..
– আবির নাম না আপনার? (ইরি)
– জ্বি ম্যাম
– হুমম

উনি চলে গেলেন ওনার কেবিনে। আর আমি হাবার মত দাড়িয়ে ওনার চলে যাও দেখছি। উনি কেনো এই অফিসে জয়েন করলো?

তাও আবার আমাদের উপরের পদে। কোনো এক কারনে তাকে আমি না করে দিয়ে ছিলাম বিয়ে করবো না বলে। কিন্তু এখন কি যে হয়ে গেল বুঝলাম না।
– কি ভাবছেন.. (সিফাত)
– নাহ কিছু না, নতুন ম্যানেজার কেমন হবে সেটা ভাবছি আর কি।
– ওহ,, তবে মনে হয় খুব কড়া হতে পারে।
কড়া হবে কি না জানিনা, তবে মনে হয় আমার উপরের সব ঝড় বয়ে যাবে।

আর কোনো কথা বললাম না। নিজের কেবিনে এসে বসতেই মনে পড়লো গত দিনের সেই ঘটনাটি।

কে হতে পারে আমাকে চিরকুট আর ফুল দিয়েছিলো? আজ তো দেয়নি, তাহলে কে সে?
– স্যার, ইরি ম্যাম আপনাকে ডাকছে।
– আচ্ছা যাচ্ছি।
ইরি ম্যাম ডাকছে, তাই আর দেরি না করে সোজা চলে গেলাম ওনার কেবিনে।
– আসতে পারি?
– হুমম আসুন।
– আপনি ডেকেছেন?
– হুমম,

ওনার দিকে তাকালাম। মুখটা কেমন করে যেন আমার দিকে করে তাকিয়ে আছে।
– কিছু বলবেন ম্যাম..?
– হুমম,,অফিসের কাজগুলো একটু বুঝিয়ে দিবেন তো আমায়। এখন যান…
বের হয়ে আসলাম। তারমানে কোনো কারন ছাড়াই তিনি আমাকে ডাকলেন। কিন্তু কেনো ডাকলেন?

নিজের কেবিনে এসে বসে বসে ১০ দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা মনে করার চেষ্টা করছি।
..
আমি, বাবা, মা যখন ইরিদের বাড়িতে ইরি দেখার জন্য গেছি তখন ওর আব্বু বললো..
– বুঝলেন ভাই সাহেব, মেয়েটাকে বড়ই যত্নে বড় করেছি। তাই ভালো চাকরি ওয়ালা ছেলে দেখে বিয়ে দিচ্ছি। যাতে পরে কষ্ট না পাই।
– হুমম সেতো বটেই। সব বাবা মা তো সন্তানের সুখের জন্য সবই করে। (আব্বু)
– আচ্ছা তাহলে ইরিকে নিয়ে আসি।
– অবশ্যই (আম্মু)

একটু পরে ঘোমটা দিয়ে একটি মেয়ে আসলো। সোজা আমার সামনে এসে বসলো।

মেয়ে দেখার সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে যখন আমাকে জিঙ্গাসা করলো মেয়ে পছন্দ হয়েছে কিনা। তখনি আমি বললাম..
– মেয়ে পছন্দ না হওয়ার কি আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ, তাইলে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করি?
– নাহ, মেয়ে পছন্দ হলেও এ বিয়ে হবে না।
– মানে? (ইরির আব্বু)

আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। সবার দিকে একবার করে তাকিয়ে বললাম..
– হুমম বিয়ে করবো না আমি।
– কেনো? (আব্বু)
– আব্বু তুমি শোনিন, এনারা কি বলেছে, বলেছে চাকরি ওয়ালা ছেলে দেখে বিয়ে দিচ্ছি।
– তো??
– আচ্ছা আব্বু ছেলেরা কি চাকরি করে মেয়ে বিয়ে করার জন্য? যদি আমি খারাপ ছেলে হয়?

তা তাদের দেখা চাকরিজীবি ছেলে যদি মদ খেয়ে মাতাল হয়ে বাসায় এসে ওনার মেয়ের উপর নির্যাতন করে।

তখন কি সুখ থাকবে? আব্বু চাকরি করলেই যে কষ্ট হবে না তাদের মেয়ের এমন গ্যারান্টি কে দিবে?

মেয়ে বা তাদের পরিবার ছেলে কেমন সেটা জানে না, ছেলে ভালো চাকরি করে বলেই বিয়ে দিচ্ছে।

এখানে না হেসে পারা যায় না। আর ছেলেরা কেনো এমন মেয়েকে বিয়ে করবে যে মেয়ে চাকরি করে না?

আমি তাকেই বিয়ে করবো যে চাকরি করে। শুধু ছেলেদেরই বা কেনে চাকরি করা লাগবে? মেয়েদের কেনো করা লাগে না?
আমি যদি চাকরি না করতাম তাহলে কি এনারা বিয়ে দিবেন? তাই আমি এ বিয়ে করবো না, কারন এই মেয়ে চাকরি করে না।

কথাগুলো সবার সামনে একটু জোরেই বলে ফেলেছি। সবাই আমার দিকে অবাক হয়ে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।

আমি উঠে দাড়িয়ে বললাম..
– ভালো থাকবেন আপনারা, চাকরিওয়ালা ছেলে না খুজে নিজের মেয়েকে চাকরি করান,
কথাটি শেষ করে আর সেখানে দাড়ালাম না। সোজা বের হয়ে চলে আসলাম। তারপর কেটে যায় দশদিন।
কিন্তু এখন তো দেখছি ব্যাপারটা উলটো। ইরি চাকরি করছে, তাও আবার আমার উপরের পদে।

এখন যদি বিয়ের কথা বলি, তাহলে মার আর অপমান একটাও বাদ যাবে না।

(পরেরদিন)
.
নিজের কেবিন ঢুকতে যাবো তখনি দেখি আজো একটি ফুলের তোড়া। সঙ্গে সঙ্গে তোড়াটি হাত উঠালাম। আর সেই সাথে একটি চিরকুট।
“”আপনি কি সবসময় কম কথা বলেন””
লেখাটি পড়ে চারিদিক একবার তাকালাম। দেখি কেও ফলো করছে কিনা। কিন্তু সে রকম তো কাউকেই দেখছি না।

তখনি চোখ পড়লো ইরির কেবিনের দিকে। ও তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তাহলে কি সেই এসব করেছে? না না কিভাবে করবে?

এসব তো পাচ্ছি ওনার জয়েন এর আগে থেকেই। তাহলে কে হতে পারে?
চিরকুটে একটা ক্লু দেয়া ছিলো, আমি আপনার খুব পরিচিত একজন, দেখলেই আমাকে চিনবেন।

কিন্তু এটা দিয়ে সন্দেহের খাতিরে কাকে ধরবো?

আর কিছু না ভেবে, কাজে মন দিলাম। কাজ করতে করতে কখন যে সময় চলে গেলো বুঝিনি। অফিস টাইম শেষ করে বাইরে আসলাম।

রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছি। তখনি শুনলাম..
– চাকরি ওয়ালী পেয়েছেন?
ঘুরে তাকিয়ে দেখি ইরি দাড়িয়ে। সঙ্গে সঙ্গে চমকে উঠলাম। ওনার মুখের দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না।
– কি হল বলুন, কোন চাকরিজীবি বউ পেয়েছেন?
– নাহ..
– হুমম পাবেন না জানি, কারন এটা বাংলাদেশ। এখানে সব মেয়ে চাই তার হাজবেন্ড চাকরি করুক।
– হাহাহাহাহা (আমি)
– হাসছেন যে..?
– মেনে নিলাম আপনার কথা, তাহলে কেনো মেয়েরা এত নারী অধিকার নিয়ে মিছিলে বের হয়?

কেন এমন হয় না, মেয়েরা চাকরি করে ছেলেদের বিয়ে করে না? সব গার্লফ্রেন্ড চাই তার বয় ফ্রেন্ড চাকরি করুক তারপর বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে।

কিন্তু এমন হয় না কেনো যে মেয়েরা চাকরি করে ছেলেকে বিয়ে করবে?
– আমি কিন্তু করেছি।
– কি করেছেন?
– চাকরি,
– ভালো, তো এইবার যে কোনো একটি ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করে ফেলান।
– ভালো ছেলে তো পেয়েছি, কিন্তু সে তো বিয়ে করবে না মনে হয়।
– কেনো, আপনি তো চাকরি করেন।
– হুমম কিন্তু গাধাটা তো জানে না যে তার জন্যই চাকরিতে জয়েন করেছি।

কথাটি আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে বললো। মনে হচ্ছে আমাকেই বলেছে। তার মানে ইরি আমার জন্যই কি চাকরি করছে?

লজ্বার আগা মাথা খেয়ে বললাম.
– আমার জন্যই কি চাকরি করছেন?
– হুমম,
– কিহহহ,,কিন্তু কেনো? আমি তো না করে দিছি। আমাকে তো বিয়ে না করাই ভালো আপনার।
– হুমম তা ঠিক, তবে আপনার মত যদি কোনো ভালো ছেলে না পাই তাই। আর আপনি ঠিকই বলেছেন, ছেলেদেরই বা চাকরি করতে হবে কেনো?

মেয়েরাও তো পারে।
– সবাই তো আর আপনার মত না।
– হুমম, যাই হোক, সব ছেলেরাই তার কাছের মানুষকে পাওয়ার জন্য চাকরি করে আমিই না হয়

আমার কাছের মানুষটাকে পাওয়ার জন্য উলটো বড় পদের চাকরি করলাম,,তাতে ক্ষতি কি?

কোনো কথা বললাম না। চুপ করে ইরির চোখের দিকে তাকালাম।
– চলেন দুজনেই রিকশাতে যাই। (ইরি)
– হুমম
রিকশাতে করে যাচ্ছি। তখনি মনে পড়লো চিরকুটের কথাটা।
– আচ্ছা জানেন, আমাকে না কেউ একজন চিরকুট দেয় সাথে ফুল।
– ওহ ওটা,
– মানে?
– হাদারাম ঐটাতো আমিই দিয়েছি।
– আপনি জয়েন করার আগেও হয়েছে।
– সিফাতকে দিয়ে করিয়েছি। সিফাত আমার পাশের বাসায় থাকে।
– তাহলে সবই আপনার কাজ?
– হুমম..

কিছু আর বললাম না। মুচকি হেসে ইরির দিকে তাকালাম। সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

লজ্জিত হয়ে মুখ থেকে চোখটা সরিয়ে বাইরের দিকে তাকালাম। কখন যে ইরি তার নরম হাতটি আমার হাতের আঙ্গুল স্পর্শ করেছে বুঝিনি।

আমিও শক্ত করে ধরে নিলাম। তাকে বুঝিয়ে দিলাম, শত বাধা আসলেও এ হাত ছাড়বো না

…………………………………….(সমাপ্ত)………………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত