রুদ্র অনেকদিন চেষ্টা করেও ভালো কোনো চাকরি যোগাড় করতে পারেনি। এইজন্য তার সাত বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে তার প্রেমিকার বিয়ে হয় বিসিএস ক্যাডার এক ছেলের সাথে। বিয়ের রাতে রুদ্র অনেক কষ্ট করে ওর প্রেমিকা আশার সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছিল। আশার সাথে ওর শেষ কথা ছিল, আমি রুদ্র একদিন তোমাকে দেখিয়ে দিবো বিসিএস ক্যাডাররাই শুধু মানুষ না আমিও মানুষ। তারপর থেকে রুদ্র আশার সাথে আর কোনো যোগাযোগ করেনি । ও এলাকা ছেড়ে এসে ঢাকা শহরে থাকতে শুরু করে। কিন্তু ঢাকা শহরের রুক্ষতা বুঝতে ওর বেশি সময় লাগেনি।
এখানে এসে যখন নিজের পেটের ভাত জোগানো কঠিন হয়ে যায় তখন সে আবার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে নিজের বাপের সামান্য জমিজমা বিক্রি করে চলে আসে। কিন্তু জমি বিক্রির সেই সামান্য টাকা দিয়ে কি ব্যবসা করবে বলে ভেবে পাচ্ছিলো না। ঠিক তখন মেসের এক বড় ভাই রুদ্রকে উপদেশ দিলো”দেখো রুদ্র ঢাকা শহরে আজকাল ব্যবসা করতে প্রচুর টাকা লাগে। তোমার এই সামান্য টাকা দিয়ে তুমি ভালো কিছু করতে পারবে না। তার চেয়ে তুমি বরং এলাকায় চলে গিয়ে ভালো একটা ব্যবসা শুরু করো”। রুদ্র বললো ” যে এলাকায় আমার আশা নেই। সেই এলাকায় আমি বড়লোক না হয়ে আর কখনো যাবো না। দরকার হলে ঢাকা শহরের অলিগলি বাদাম বিক্রি করবো তবুও আমি আর গ্রামে ফিরে যাবো না। রুদ্র ঢাকা শহরের অলিগলি কিছুদিন বাদাম বিক্রি করতে করতে হঠাৎ ওর এলাকার বন্ধু কাশেমের সাথে দেখা হয়। কাশেম কারওয়ান বাজারে মাছ বিক্রি করে। কাশেম কে সব খুলে বলার পর কাশেম বললো ” দেখ রুদ্র তুই আমার বন্ধু। তোকে লুকানোর কিছু নেই।
তুই বাড়ি থেকে যে টাকা এনে রেখে দিয়েছিস সেটা দিয়ে তেমন ভালো ব্যবসা হবে না। তবে তোকে আমি একটা সামান্য ব্যবসার কথা বলতে পারি। তুই পেঁয়াজের ব্যবসা কর। অন্যান্য জেলা থেকে পেঁয়াজ এনে তুই কারওয়ান বাজারে বিক্রি করবি। দেখবি আস্তে আস্তে তোর দিন ফিরবে”। রুদ্র বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পেঁয়াজ কিনে গোডাউনে রাখে এবং কারওয়ান বাজারে বিক্রি করে। যে লাভ হয় তা দিয়ে তার সংসার মোটামুটি ভালোই কেটে যায়। বাবা মাকে গ্রামে থেকে নিয়ে এসে সে শহরে রেখেছে। তাদের দেখাশুনা করার জন্য একজন কাজের মানুষ রেখেছে। এভাবেই রুদ্রের দিন ভালোই কেটে যাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে রুদ্রের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ দশা। গোডাউনের পেঁয়াজ বিক্রি করে আজ সে কোটিপতি। কিছুদিন পরের ঘটনা। অনেকদিন পর রুদ্রের নাম্বারে আশার ফোন।
আশাঃ কেমন আছো তুমি?
রুদ্রঃ পানি ছাড়া মাছ যেমন থাকে(কোন মুভি থেকে যেন রুদ্র শিখেছিলো, প্রেমিকা অনেকদিন পরে ফোন দিলে এভাবে বলতে হয়)
আশাঃ এভাবে বলছ কেন?
রুদ্রঃ হঠাৎ বিসিএস ক্যাডার স্বামী ছেড়ে, পেঁয়াজ বিক্রেতা রুদ্রের কাছে ফোন?
আশাঃ তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল।
রুদ্রঃ বলো না?
আশাঃ আসলে কিছুদিন আগে ঘুষ নেওয়ার অপরাধে আমার স্বামীর চাকরিটা চলে যায়। চাকরিটা যাওয়ার পরে ও আর কোনো চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেনি। আজ কিছুদিন হলো বাজার করার মতো পয়সা নেই। আমি তোমার কাছে ফিরে যেতে চাই রুদ্র। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে আগের মতই ভালবাসি। তোমার প্রতি আমার ভালবাসা একটুও কমেনি।
রুদ্রঃ আমার এই ভাঙ্গা হৃদয় কে তুমি আর বুলেট মেরে টুকরো টুকরো করে দিও না আশা। তুমি যা চাও তাই পাবে। কিন্তু আমাকে আর পাবে না।
আশাঃ তাইলে পেঁয়াজ দেও। বাসায় রান্না করার পেঁয়াজ নাই।
রুদ্রঃ মানে?
আশাঃ আসলে বাজার করলেও পেঁয়াজ কেনার মতো পয়সা নেই ওর কাছে। তাই কদিন পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না খাচ্ছি। তুমি যদি কিছু পেঁয়াজ দিতে।
রুদ্রঃ তোমার বাসায় ঠিকানা দেও, পাঠিয়ে দিচ্ছি।
আশাঃ ৪০১/এ উত্তর বাসাবো, ঢাকা।
রুদ্র ওর গোডাউন থেকে সেরা মানের দুই বস্তা পেঁয়াজ আশার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলো। মিথ্যে কথা বলে দুই বস্তা পেঁয়াজ পেয়ে আশা পেঁয়াজের উপর শুয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিয়ে লিখে দিলো ” এখন আমি দুই বস্তা পেঁয়াজের মালিক”। রাতারাতি আশার সেই ছবি ভাইরাল হয়ে গেলো।
রুদ্র ফেসবুক চালাতে গিয়ে হঠাৎ আশার সেই ভাইরাল হওয়ার ছবি দেখে নিজের দুই চোখের কান্না ধরে রাখতে পারলো না। সে মনে মনে ভাবলো ” পৃথিবীতে সত্যিকারের প্রেমিকরা সারাজীবন এভাবে ঠকে এসেছে “। হঠাৎ রুদ্রের ড্রাইভার বলে উঠলো ” স্যার কি কান্না করছেন” ? রুদ্র বলে উঠলো” নারে চোখে কি যেন পড়েছে। গাড়ির গ্লাস উপরে তুলে দে। এভাবেই তো রুদ্রের মতো প্রেমিকেরা সারাজীবন চোখের কান্না লুকায়।