অফিস থেকে ফিরে কেবল মাত্র রুমে ঢুকেছি । তোয়ালেটা হাতে নিয়েছি ফ্রেস হবো বলে। অমনি ফোনটা বেজে উঠলো। আহহারে বলে, ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে হুমকি।
– এই আপনি রবি সিম ইউজ করেন কেনো? এখন থেকে জিপি ইউজ করবেন। ঠিক আছে?
– ইয়ে মানে কারণ টা জানতে পারি?
– কারণ আমার জিপি সিম। বলেই ঠাস করে মুখের উপর ফোনটা রেখে দেয়।
– যাহ বাবা, কি হুমকি।
এরপরে দুদিন কেটে যায়। না কোনো ফোন না কোনো মেসেজ। তৃতীয় দিন বহু আগে মানিব্যাগের কোনায় ফেলে রাখা। সিমটা মোবাইলে আবার ভরে নেই। তারপর অপেক্ষা করি। ইশশ সেতো আর আমার জিপি সিমের নাম্বার জানেনা। তাই ভয়ে ভয়ে রবি থেকে আমার নাম্বারটা শুধু মেসেজ করে দেই। তারপর মেঘ না চাইতেই জলের মতো। বলা চলে বন্যার জলের মতো ওর ফোন আসে। আর কি হুমকি ধামকি। এই এটা করলেন না কেনো ওইটা করেন কেনো? আমি শুধু বলি – কে আপনি। একটু বলবেন প্লিজ
– এতো শুনে কাজ নেই। ঘুমান এখন।
চাইলেই কি আর ঘুম আসে। আমার মনটা তখন ” পেখম তুইলা নাচেরে অবস্থা। “পরদিন আমিই ফোন দেই। আহা কি মধুর কণ্ঠ। আমি শুধু হ্যালো বলার সময় পেলাম। তারপর শুরু হলো আমার দোষ ধরা। সুমুধুর কন্ঠে যদি কেউ দোষ ধরে। তাহলে ” বেদনা মধুর হয়ে যায়, তুমি যদি দাও ” এই অবস্থা হয়। পরদিনই আর দেরি না করে নির্মলেন্দুর কবিতার মতো। স্ট্রেটকাট বলে দেই ” ভালবাসি “। ও স্রেফ কেঁদে ফেলে। অনেকক্ষণ পরে ঢোক গিলে বলি।
– আমি কি ভুল কিছু বললাম?
– না।
– তাহলে কাঁদছো কেনো?
– সে নাকের জল মোবাইলে মুছতে মুছতে বলে।
– বলতে এতো দেরি করছো ক্যান ! – লও ঠ্যালা।
আমি এমনিতেই সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকি। কি বা বলি আর কি বা সে ভেবে বসে, কান্নাকাটি জুড়ে দেয়। গোপনে তার একটা নাম রাখি। ” কান্নাকাটি বাতাসি “। বাতাসিকে একদিন ভয়ে ভয়ে বলি। একটা ছবি দিবা। আবার কান্নাকাটি আবার বকাঝকা। কি জ্বালাতেই পড়লাম রে বাবা। আল্লাহ রক্ষা করো। সেদিনই আমার ফেসবুক পাসোয়ার্ড সে নিয়ে নেয়। আর আমার আইডিতেই আমায় ছবি পাঠায়। ছবিটা কেন জানি চেনা চেনা লাগে তারপরেও কিছু বলিনা। ও রাতে বলে – দেখছো?
– হুম।
– ক্রাশ খাইছো?
– তুমি বেশ সুন্দর।
– আরে ওইটা আমি না।
– তুমি না, তাইলে কে…!!
– ওইটা নীলাঞ্জনা নীলা। গহীন বালুচরের নায়িকা।
– কি জ্বালা, তোমার ছবি দাও।
– দেবো এতো তাড়া কেনো?
কিন্তু তার আগে বলো। কি আছে এই মেয়ের মধ্যে। যে ওকে দেখে ক্রাশ খাইলা!
সেদিন আমার কপালে যা জুটেছিলো। তা আর নাইবা বললাম। ওর চে শেফুদার কয়টা বেতের বাড়ি খাওয়া বহুত আরামের ছিলো। এরপরে একদিন খুব ভয়ে ভয়ে বলি। ” চলো আমরা দেখা করি। ” বলেই ভয়ে ফোনটা রেখে দেই। আল্লায় জানে আজ কপালে কি আছে? সারাদিন ভয়ে ভয়ে ফোনের দিকে বিশবার তাকাই। একুশ সংখ্যাটা এত্তো ভালো আগে জানা ছিলোনা। ফোন বেজে ওঠে। আসো এখুনি দেখা করবো । আমি পরি কি মরি করে দৌড় লাগাই। শার্ট না পাঞ্জাবী পড়েছি খেয়াল থাকেনা। কিন্তু দেখা যে করবো, ও কোথায় আসবে কখন আসবে কিছুই তো বলে নাই। আবার ফোন দেই। – কই তুমি?
– এইতো আমি ল্যাব এইডের সামনে।
– আরে হাসপাতালের সামনে কারো দেখা করার জায়গা?
– চুপচাপ আসো।
কি আর করা বিশ টাকার ভাড়া পঞ্চাশ টাকা কবুল করে। যখন পৌছালাম। দেখি ফর্সা এক জিন্স পড়া মেয়ে। আমি দৌড়ে গিয়ে বলি।
– এই যে আমি, চিনছো তো আমারে?
মেয়ে চমকে বলে – কি সব বলেন? আপনি কে? আমার স্বামীর পাইলস অপারেশন। আমি আসছি তাকে ভিজিট করতে। আর আপনি আমার সাথে ফ্লাটিং করেন। আপনে তো তামিল ভাইদের চেয়েও খারাপ। আমি ঝেঁড়ে দৌড় দেয়ার আগেই আর একটা মেয়ে রিক্সা থেকে নামে। লম্বা চুলের শ্যামলা একটা মেয়ে। – আহা এমন একটা মেয়েকে যদি “ভালবাসি ” বলতে পারতাম। তাইলে আমি অনন্ত জলিলের মতো অসম্ভব কে সম্ভব করতে পারতাম। একটা দুষ্টু বাতাস তখন জানি কোত্থেকে উড়ে আসে। আর মেয়েটির মেঘ কালো চুল গুলো বাতাসে উড়িয়ে দেয়। পরীর পাখার মতো উড়তে থাকে ওড়নার আঁচল। মেয়েটি যেনো হাওয়ায় ভেসে ভেসে আমার কাছে হেঁটে আসে। সিংহল সমুদ্র পেড়িয়ে। পাখির বাসার মতো দুটি চোখ তুলে বলে।
– ” এতোক্ষণ কই ছিলেএএন…!! আমি উলটে রাস্তায় পড়ে যাবার আগেই সে আমার হাত ধরে ফেলে।
– – ” ওই প্যান্ট শার্ট এর সাথে কি…!!”
— না না আমার প্যান্টশার্ট এর সাথে তো কিছু লেগে নাই, একদম ধোয়া। বিশ্বাস করো। কালই লন্ড্রি থেকে এনে আজ পড়েছি।
– আরে তোমার প্যান্টশার্ট না ওই মেয়ে, ওইযে যার সাথে এতোক্ষণ বকবক করছিলে। সে কে?
– ওতো ওর স্বামীর ইয়ে মানে। ইয়ে অপারেশন করাতে এসেছে।
– ইয়ে মানে কিয়ে।
– ওইযে ইয়ে আর কি। বলে আমি নিজেই লজ্জায় শিক্ষামন্ত্রীর মতো হয়ে যাই।
– সে সাথে সাথে বলে। আমারে বল্টু বুঝ বুঝাও হ্যা?
বুইড়া মহিলার বুইড়া জামাইয়ের এখন অনুষ্ঠানের অপারেশন। হায় হায় কি কপাল নিয়ে দুনিয়াতে আসলাম। বলে সে মাঝরাস্তাতেই কান্দাকাটি শুরু করে। আমি কোনোমতে তাকে সামলিয়ে একটা রিক্সা ডাকি। আইসক্রিম এর দোকান থেকে সান্তনা স্বরুপ দুটো চকোবার কিনে দেই। সে জামার কোনা দিয়ে নাক মুছতে মুছতে একটা আইসক্রিম আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়। আমি হালকা একটা কামড় দেই। তারপর সে আমার এঁটো আইসক্রিম টা খেতে খেতে আর আমার চৌদ্দগুষ্টিতে যতো প্রেমিক আছে, তাদের কে অভিশাপ দিতে দিতে আমার সাথে রিক্সায় ঘোরে। গুজবে নাকি কান দিতে নেই। তাই এসবে কান না দিয়ে আমি মনে মনে গাই।
– এই পথ যদি না শেষ হয়। তবে কেমন হোতা…
সন্ধ্যার একটু আগেই ওকে বাসায় নামিয়ে দেই। রাতেই ওকে কল দেই। – বাবুই আমি তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো। তুমি যদি রাজী থাকো। সে কাঁদতে কাঁদতে কি কি যেনো বলে। আমি ফোন কানে রেখেই ঘুমিয়ে পড়ি। বাতাসির কান্নার গান শুনলে আজকাল আমার ভাল ঘুম হয়। আজ আমাদের বিয়ে হয়েছে। সব অনুষ্ঠান শেষ। ফুলের বিছানায় নীল শাড়ি পড়ে একটি মেয়ে বসে আছে। আমি অনেকক্ষণ ওকে দূর থেকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি। মেয়েটি কাঁদছে আর আমার মোবাইল টিপছে। মাঝেমাঝে টিস্যু দিয়ে নাক মুছছে। ওর নাকটা লাল হয়ে আছে। কি যে মায়া লাগে আমার। আমি আস্তে ওর পাশে বসি। ” কি হয়েছে বাবুই। আজকের দিনেও কান্না কেনো? ” আমায় দেখে ওর কান্নার বেগ যেনো আরো তিনগুণ বেড়ে যায়।
– এই কান্নাকাটি বাতাসি টা কে? যার সাথে এত্তো ফোনালাপ।
– ও এই কথা। আচ্ছা এখুনি আবার কান্নাকাটি বাতাসিকে ফোন দিচ্ছি।
বলে আমি ওর মোবাইল থেকেই আমার নাম্বারে কল দেই। আর ওমনি ভেসে ওঠে ‘কান্নাকাটি বাতাসি’ ইজ কলিং। এইবার ও সত্যিই হেসে ফেলে। আমি ওকে আলতো করে জড়িয়ে ধরি। আচ্ছা চোখে জল নিয়ে মিষ্টি করে হাসলে এতো মায়া লাগে কেন? আল্লাহ ভাল জানে…!! আমি শুধুই জানি। ভালবাসায় বুক ভাসাইয়া কি যতনে আমায় লইলা আমারো মনো পাখিরে ছোট্ট একটা পিঞ্জরে ও সখীরে তোমার মনের খাঁচায় তুমি রেখো আমায় যতনে।