খুব ভালোবাসি তোমায়

খুব ভালোবাসি তোমায়

সকাল বেলা ফোনের শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল এতো সকালে কে আবার ফোন দেয়
ফোন হাতে নিয়েই কেটে দিলাম কাটার পরপরই আবার বাজতে শুরু করছে
না এই ফোনের জন্য আর ঘুম হবে না অতপর ফোন হাতে নিয়ে রিসিভ করলাম
,
,
-হ্যালো কে?
-চিনতে পারনি?
-ওহ তুমি।
-হুম।
-এই কন্ঠটার সাথে যে আমার অনেক দিনের পরিচয়। কিভাবে ভুলি বলতো?
-শুনে খুব খুশি হলাম যে আমার মতো কাউকে মনে রাখছো।
-তোমার মতো মানে?
-তোমাকে এতো কষ্ট দেয়ার পরও মনে রেখেছ তাই বললাম।
-আমি তো তোমাকে কখনোই বলি নি তুমি আমাকে কষ্ট দিছ তাহলে একথা বলছ কেন?
-বাদ দেও সেসব কথা, দেখা করতে পারবে আজ?
-কোথায়?
-আজ বিকালে। আর সেই পার্কের বটগাছের নিচে।
-ঠিক আছে।
-ওকে বাই।
-বাই।
,
,
আসুন পরিচয়টা একটু দেই,
আমি নিলয়, পড়ালেখা শেষ করে বর্তমানে একটা কোম্পানির চাকরি করি,
আর যারসাথে কথা বলছিলাম সে হল স্নিগ্ধা, আমার একসময়ের গফ ছিল।
কিন্তু এখন সে অন্য কারো।
ঘুম থেকে ওঠে ফ্রেস হলাম।সকালের নাস্তা করে, অফিসের বসকে ফোন দিয়ে অনেক কষ্টে আজকের জন্য ছুটি নিলাম,
,
,
আমাদের যখন পরিচয় হয়
তখন আমি অনার্স ২য় বর্ষে পড়ি আর ও ১ম, প্রতিদিন কলেজে যাওয়া আসাতে ওকে দেখে আমার ভালো লাগে,
কথা বলার চেষ্টা করতাম,তবে কেন যান কোন কিছুতে বাধা দিত,,আস্তে আস্তে নিয়মিত দেখায়,টুকটাক কথা হত, কথা বলতে বলতে বন্ধুত্ব হলাম
কথা বলে দুজনের ভালো লাগা না লাগার কথাগুলো একে অপরকে শেয়ার করলাম,
ধিরে ধিরে নাম্বার আদান প্রদান তার পর থেকেই ফোনে কথা হত বেশি,
চলতে থাকল বন্ধুত্ব, একসাথে ঘোরাঘুরি করা, ফুসকা খাওয়া,,,,, ভালোই চলতে লাগল কিন্তু কয়েক মাস যাবার

পরই বুঝতে পারলাম আমি স্নিগ্ধাকে ভালোবেসে ফেলেছি,
,
,
মাঝে মাঝে বলার চেষ্টা করতাম কিন্তু ভয় হত যদি আমাকে না বলে দেয় এবং বন্ধুত্ব নষ্ট করে,
শত চেষ্টা বৃথা যাবার পরই একদিন মনের কথাগুলো বলেই দিলাম,
আর ও আমাকে অবাক করে দিয়ে রাজি হয়ে গেল,
বন্ধুত্বের সাত মাস পর থেকেই সম্পর্কটা শুরু হয়,
দুজনের কেয়ারিংশেয়ারিং এ ভালো চলতে লাগল,
ও সবসময় আমার খেয়াল রাখত,কি করছি না করছি খাইছি কিনা,
বলতে গেলে আমি ওকে যতটুকু না ভালোবাসতাম তার থেকে ও আমাকে বেশি ভালোবাসত,
একসাথে চলা ফেরা,বিভিন্ন জায়গায় ঘোড়াঘুরি করা,
দুজনের দিনগুলো খুব সুন্দর ভাবেই চলতে লাগল,
,
,
দেখতে দেখতে সম্পর্কের আড়াই বছর পার হয়ে গেছে
কথায় আছে না সবার কপালে বেশি সুখ সহ্য হয় না
আমার ও তাই,
অনার্স শেষ করে বসে আছি,এখনো কোন চাকরি পাইনি,অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু হচ্ছে না,
এর মাঝেই একদিন স্নিগ্ধা ফোন দিয়ে বলল দেখা করতে,
আমিও প্রতিদিনের মত দেরি করে গেলাম
দেখি ও একটা বেন্চে চুপ করে বসে আছে,পাশে গিয়ে বসলাম
আমার বসা ও দেখেছে কিনা জানিনা,
তবে ও কোন কথা না বলে যেভাবে বসে ছিল সেভাবেই বসে আছে
,
,
-চুপ করেই বসে থাকবে না কিছু বলবে?
-নিলয়?
-হুমম।
-তোমার চাকরির কি খবর?
-আগের মতোই।
-মানে?
-চেষ্টা করতেছি কিন্তু হচ্ছে না।
-ওহ
(দুজনেই আবার চুপ,কিছুক্ষন পর নিরবতা ভেঙে ওই বলল)
-বাসা থেকে আমার বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে।
-আমার কথা বলনি?
-কিভাবে বলব?তুমি তো চাকরি কর না, তাহলে বাসায় তোমার কথা কিভাবে বলব বলতে পার?আর বলেই বা কি হবে,,,

বাবা কখনোই বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিবে না।
,
(আমি আর কি বলব,আমার যে চুপ করেই বসে থাকা ছাড়া কিছু বলার নেই আছি)
.
-আমার মনে হয় আমাদের সম্পর্কটা এখানেই শেষ করা উচিত(কেঁদে কেঁদে বলতেছে)
-প্লিজ, এসব কথা বলো না,আর আমি তো চেষ্টা করতেছি।
-আমাদের হয়ত আর দেখা হবে না,ভালো থাকো।
,বলেই কাদতে কাদতে চলে গেল।আমি ওখানেই চুপ করে বসে রইলাম,ভাবতে লাগলাম বেকাত্ব টাই কি বড় ভালোবাসার থেকে
একটা চাকরি না থাকার কারনে এতোদিনের ভালোবাসা হারাতে হল
,
,
ফোনের শব্দে আমার ঘোর কাটল,
স্নিগ্ধা ফোন দিছে
,
-হ্যা বলো।
-আমি বের হচ্ছি, তুমিও বের হও।
-হুম।
,
বাসা থেকে বের হলাম উদ্দেশ্য পার্কের পাশের বটগাছ।
পার্কে পৌছে বট গাছের নিচে বসে আছি কিন্তু স্নিগ্ধা আসতেছে না,
এভাবে ববসে থাকার কিছুক্ষন পর দেখি ও আসতেছে,
একটা নীল শাড়ি পড়ে,
নাহ দূর থেকে মেয়েটাকে দেখলে এখনো বাচ্চা বাচ্চা লাগে।তাকিয়ে আছি অপলক ভাবে
.
-কখন আসলে?
-এইতো পাঁচ মিনিট হবে।
-ওহ।
-হঠাৎ দেখা করতে বললে যে?
-ইচ্ছে করতেছিল তোমাকে দেখার তাই,কেমন আছ?
-বলতে পারো অনেক ভালো।
-আমি কেমন আছি জানতে চাইলে না?
-আমি জানি তুমি ভালো নেই ।
– ভালোই আছি,স্বামির সংসার নিয়ে।
-কেন মিথ্যা বলো?
-কই মিথ্যা বললাম, আর তুমি ভালো করেই জানো আমি মিথ্যা বলি না।
-স্নিগ্ধা তোমার সাথে আমার পাঁচ বছরের সম্পর্ক, তুমি ভুলে যেও না তোমার প্রতিটা নিংশ্বাসের এর শব্দ আমি বলতে পারি।
-তখন পারতে কিন্তু এখন পারবে না,কারন এখন যে এই নিংশ্বাস অন্য কারো সাথে মিশে আছে।
-হয়তো।
-তুমি কি এখনো আমার উপর রাগ করে আছো?
– না,রাগ তার উপর করা যায় যে জেনেশুনে ভুল করে।
-সেদিন হয়তো চাইলে আমি বাসা থেকে পালিয়ে তোমার সাথে চলে যেতে পারতাম,কিন্তু আমি যে চাইনি বাবা,মাকে কষ্ট দিতে।
-এসব কথা ভেবে কেন নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ?
-সত্যি আমি পাপি, তোমার মতো কাউকে কষ্ট দিলাম,আমাকে ক্ষমা করে দেও।(জোরে কান্না করে)
-প্লিজ কান্না কর না,,আর এতে তো তোমার কোন দোষ নেই,,হয়ত আমাদের ভাগ্যে ছিল না এক হবার, তাই হতে পারি নি।
,
(কান্না থামিয়ে একটা গিফট এর বক্স হাতে দিয়ে)
,
-এটা তোমার জন্য।
-এটা কি?
-আমাদের সম্পর্কের পাচ বছর আজ পূরন হল,,,তাই তোমার জন্য এটা,,আর এটা বাসায় গিয়ে খুলে দেখ।
-হুমম,আমি পারলাম না তোমাকে কিছু দিতে।
-হয়তো তোমার মনে ছিল না তাই আনোনি তবে যাবার আগে একটা জিনিস চাইবো দিবে?
-হুম দিবো বলো কি চাও?
-সেটা যাবার সময়ই বলব
,
,
কত দিন পর আবার পাশাপাশি দুজন।
কত স্বপ্ন দেখতাম বিয়ের পর দুজনে প্রতিদিন বিকালে হাতে হাত রেখে হাটবো,
এগুলো এখন শুধু স্বপ্নই
সারাটা বিকাল দুজনে এক সাথে ঘুরলাম,
চারদিকে সন্ধার পরিবেশ নেমে আসছে
ওর ও চলে যাবার সময় হয়েছে
,
-নিলয়
-হুম
-যাবার আগে একবার শক্ত করে জরিয়ে ধরবে আমাকে??
,
আমি আর কিছু না বলে জরিয়ে ধরলাম।
স্নিগ্ধা আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতেছে,আর বলতিছে খুব ভালোবাসি তোমায় নিলয়,খুব ভালোবাসি।।
,
…………………………………..সমাপ্ত…………………………………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত