এইই বাবু উঠো না ! দেখো না ঘড়িতে রাত ২টা বেজে গেছে। উঠো প্লিজ। উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও।
— একটা মধুর স্বপ্ন দেখছিলাম কিন্তু আমার জান টা এসে সেই স্বপ্নটি মাটি করে দিল । আরেকটু ঘুমায় না জান তার পরে উঠবো, বলে বউয়ের হাতটা আমার বুকের ভিতরে জড়িয়ে রেখে আবার ঘুমাতে চেষ্টা করিলাম । কিন্তু বউ আমার এক ঝটকাতে হাতটা ছাড়িয়ে নিল ।
–এইই তুমি কি উঠবে । না হলে কিন্তু আমি পানি ঢেলে দিব । বলতে না বলতেই এক গ্লাস পানি হাতে নিয়ে বউ আমার পাশে এসে বলে, “এই বার কিন্তু সত্যি সত্যি পানি ঢেলে দিব ।”
–এইইইই না ! মাইরালচে রে!! এই তো আমি উঠেছি । ঘুম চোখে বউয়ের দিকে তাকাতেই দেখি বউ মুচকি হাসছে । ইহা দেখে বউয়ের উপরে প্রচণ্ড রাগ হল । মন চাইতেছে ঠাডাইয়া একটা থাপ্পর দেই…..। কিন্তু পরক্ষনেই বউ আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে “প্লিজ এবার ফ্রেশ হয়ে নাও তারপরে এক সাথে তাহজ্জত পড়ব” । কি আর করার
“বউ আমার এত মিষ্টি করে বলল, এমন মিষ্টি কথার জন্য পাহাড়ের উপর থেকে হাসিমুখে লাফ দিতেও পারবো ।” (প্যারাসুট নিয়ে)। আর থাপ্পর মারিতে পারি না ।
–চোখে ঘুমের আভাসটা কেটে গেল। বউকে জড়িয়ে ধরতে খুব ইচ্ছে করছে। ভাবলাম রাতের রোমান্সটা সেরে নেই। কিন্তু বউকে জড়িয়ে ধরিতেই বউ আমায় একটা ঝারি দিল।
–হইছে হইছে । অত ঢং দেখাতে হবে না বলেই বউ আমার টুথ ব্রাশে একটু পেষ্ট লাগিয়ে আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দেখলাম মায়ের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
— ৪২০ ভোল্টেজে শক খাইলাম । যাক বাবা ! “আমার বউকে আমি জড়িয়ে ধরব এতে ঢংয়ের কি হলো! ” মনে মনে বাবা মায়ের উপর খুব রাগ হলো। দেশে এত মেয়ে থাকতে কেন যে তারা এমন মুখোশধারী (হিজাব পড়া) মেয়েকে আমার গলায় ঝুলালো বুঝলাম না । আফসুস! এক গ্লাস আফসুস! কলিগদের বউদের দেখি কত্ত সুন্দর টাইট জামা পড়ে মার্কেটে যেতে মার্কেটিং করতে । আর আমার বউকে সেভাবে কখনো মার্কেটে নিয়া যেতে পারলাম না । আর যদিও যায় তবে সেই মুখোশ (হিজাব) পড়ে যায় । যাক গা, বাদ দেন সেই দুঃখের কথা । এখন দ্রুত ফ্রেশ না হলে হয়তো আবার বউয়ের ঝারি খেতে হবে। (ঝারি টা এখন তিন বেলার খাদ্যে পরিণত হইছে)
–ফ্রেশ হয়ে ওযু করে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করতেই অবাক হলাম । অকা ! “একি দেখি! বউ আমার জায়নামাজের পাটি ফেলছে ।” আমাকে দেখে বলে এতো দেরি করছো কেন? আসো এখানে আসো। কি আর করার? অবাধ্য ছেলের মত বউয়ের পাশাপাশি দাঁড়ালাম। অকা! বউ দেখি জায়নামাজের পাটি থেকে একটু পিছিয়ে দাঁড়ালো! মনে মনে ভাবলাম আমাকে বোধ হয় স্বামী হিসাবে পছন্দ হয় নি । তারপর বললাম, কি গো! পিছিয়ে দাঁড়ালে যে!! আসো পাশা পাশি দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ি। বউ আমার তখন আদুরে গলায় বলে , “জী না স্যার, আপনে ঐখানে দাঁড়াবেন আর আমি এইখানে”। অতঃপর বউ আমাকে কোরআন হাদিসের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিল যে স্বামী স্ত্রীকে একটু আগে পিছে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হয় ।
–তাহজ্জদ শেষ করে মনে মনে ভাবলাম এবার বউয়ের সাথে একটু রোমান্স করা যাক । বউ জায়নামাজের পাটি ভাজ করছে । আমি বউকে পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে বউয়ের ঘাড়ে মাথা রাখলাম । কানে কানে ফিস ফিস করে বললাম “এই চলনা একটু দুষ্টুমি করি, তারপর না হয় সেহরী খাব”? বউ সামনে ঘুরে আমার নাক ধরে বলে খালি শয়তানি বুদ্ধি । ফাজিল একটা মনে মনে বললাম নিজের বউ কে এ কথা গুলা বলা আবার কি এমন শয়তানি বুদ্ধি হল? রাগ করে মাথা নিচু করে আছি আর ভাবছি, বউয়ের সাথে আর কথাই বলবো না।
অকি ! পরক্ষণেই দেখি বউ আমার গোমরা মুখ খানা দুহাতে আলতো করে ধরে বলে , “উলে বাবুলে , আমার বাবুটা দেখছি সত্যি সত্যি রাগ করেছে ।” এমন মিষ্টি করে বলে যে আর রাগ করে থাকতে পারি না । তারপর গালে আলতো করে একটা ছোট্ট মিষ্টি আদর দিয়ে বলে আম্মাজানের সেহেরীটা ঘরে দিয়ে আসি তারপর হবে । বউ মায়ের ঘরে চলে গেল । এদিকে আমার মনে সুখের বাতাস বইতে আরম্ভ করলো । আনন্দে বিছানা ঠিক করতে লাগলাম । কিছুক্ষণ পর বউ ঘরে আসলো । তারপরে বুঝেনইত! (বাকিটা ইতিহাস) বাকিটা নাহয় না ই জানলেন।
–মসজিদ থেকে মাইকে শুনা যাইতেছে যে সেহেরীর আর মাত্র ৪৫ মিনিট সময় আছে । অতঃপর আমরা গোসল করে ফ্রেশ হইলাম । বউ আমাকে নিজ হাতে সেহরী খাইয়ে দিল । মনে মনে খুব খুশি হইলাম । সেহরী শেষে বউয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়েছিলাম । আর বউ আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিতেছিল । রাতের প্রহর কাটিতে লাগল । দুর থেকে আযানের সুর ভেসে আসছে ।
চোখে ঘুম ঘুম ভাব। নামাজে যেতে বড্ড আলসেমি লাগছে । বউ আমার পাশ থেকে উঠে জায়নামাজের পাটি নিয়া আমার হাতে ধরিয়ে দিল । বুঝতে পারলাম নামাজে যাওয়াই লাগবো । তারপর জায়নামাজের পাটি হাতে নিয়ে মসজিদে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটছি আর বউয়ের কথা ভাবছি । বউ টা আমাকে খুব ভালোবাসে। এমন বউকে সারা জীবনই বুকে আগলে রাখতে ইচ্ছে করে । এমন বউ যার ভাগ্যে থাকে তার জীবন এমনিতেই সুন্দর হয়ে ওঠে।