মেয়েটা ছেলেটাকে চারটি অপশন দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, বলোতো আমি কেমন? ১. বোকা। ২. খুব বোকা। ৩. বুদ্ধিমান। ৪. খুব বুদ্ধিমান।
খানিক সময় পর ছেলেটা জবাব দিলো, তুই খুব বেশী বুদ্ধিমান। মেয়েটা অবাক হয়ে বললো, ‘কেন?! কেন এমনটা মনে হলো?’
‘‘আমি তোর কয়বছরের সিনিয়র?’’
‘‘মাত্র ছয় বছরের!’’
‘‘এটা তোর কাছে মাত্র?!”
“হুম। কারণ তুমি বিয়ে করবে ৫/৬বছর পর! তখন আমিই হয়ে যাব বিয়ের পাত্রী! তাহলে এতো সিনিয়র হয়ে তোমার লাভটা কি?!”
বলেই খিলখিল করে হাসছে নিতু। ফাহাদ অবাক হয়ে তার হাসি দেখছে। ক্লাস সেভেনে পড়ুয়া একটা মেয়ে এতো সুন্দর করে হাসবে, এটা ঠিক না।
তাকে আরো বড় হয়ে হাসতে হবে।
ধুরর হাসির সাথে বয়সের কি সম্পর্ক! ব্যাপারটা ঝেড়ে ফাহাদ নিতুকে বললো, ‘এবার বুঝতে পারছিস, তোকে কেন এতো চালাক বলছি?!’
নিতু কিছু বললো না। সে ফাহাদের কথা এড়িয়ে গিয়ে বললো, ‘ফাহাদ ভাইয়া, শুনেছি তুমি খুব ভালো কবিতা লিখ। আমাকে একটা কবিতা লিখে দিবে?’
“তোকে কে বলছে আমি কবিতা লিখি?”
“তোমার বোন নুসরাত।”
“ও মিথ্যে বলেছে?!!!”
নিতু মুচকি মুচকি হাসছে। ফাহাদ জিজ্ঞেস করলো, ‘কিরে হাসছিস কেন?’ নিতু বললো, ‘আমি গতকাল তোমার রুমে গিয়ে…..!’
– কি?
“ডায়রী খুলে তোমার লেখা কবিতাগুলো পড়ে এসেছি।”
ফাহাদ রাগের ভাব করে বললো, ‘কিহ্ তোর এত্তো বড় সাহস?!!’ নিতু বললো ‘সরি ভাইয়া।’ বলেই সে হন হন করে হেঁটে চলে গেছে।
.
ফাহাদ মনে মনে হাসছে। বয়সের বিশাল ফারাক থাকাসত্ত্বেও নীতুকে তার অসম্ভব ভালো লাগে। শুধু যে ভালো লাগে তা না। পছন্দও করে।
কিন্তু এটা প্রকাশ করা যাবে না। তার দুইটা কারণ আছে, একটা হলো নিতু তার ছোট বোনের বান্ধবী আর দ্বিতীয়তো মেয়েটার বয়স কম।
অল্পবয়সী মেয়েদের আবেগ বেশী। আবেগ দিয়ে তারা যেকোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
.
.
পরদিন সকালে ফাহাদের আব্বু রফিক সাহেব এসে বললেন, ‘ফাহাদ তোমার পরীক্ষা তো রবিবার থেকে শুরু, তাই না?’
“হ্যা আব্বু।”
“ভার্সিটির পাশেই তোমার জন্য বাসা ঠিক করে রাখা হয়েছে। তুমি শনিবার সকালেই ঢাকা চলে যাও।
আর এই নাও তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের ফাস্টক্লাস টিকেট।”
রফিক সাহেব পুত্রের হাতে টিকেট ধরিয়ে দিয়ে নিজের রুমে চলে গেলেন। ফাহাদ টিকেট হাতে অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে।
খনিকের জন্য তাকে ভিক্ষুক মনে হচ্ছে। ভিক্ষুক ফাহাদ সাহেব।
.
ফাহাদের ঢাকা শহর একদম ভালো লাগে না। ঢাকা শহরের আকাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জোৎস্নাগুলোকেও তার কৃত্রিম মনেহয়।
চাঁদটাকে মনেহয় নাসার বিজ্ঞানীরা বড় ধরণের কোনো একটা থালা বাঁকা করে টাঙিয়ে রেখেছে।
সবচেয়ে বড় কথা হলো ঢাকা শহরে নিতুর মতো কোনো মেয়ে নেই। সবগুলো মেয়েই খুব সুন্দর। কিন্তু নিতুর মত অমায়িক না।
নিতুর মধ্যে কেমন যেন একটা মায়া আছে। একটা ঘোর লাগানো টান আছে।
.
.
শনিবার সকালে নাস্তা সেরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে ফাহাদ রেলস্টেশনের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। মাঝপথে নিতুর সাথে দেখা। সে যাচ্ছে প্রাইভেটে।
“ফাহাদ ভাই এতো সকালে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কোথায় যাও?”
“ঢাকা চলে যাচ্ছিরে নিতু।”
“কোনদিন আসবা?”
“ মাস তিনেকের আগে আর আসা হবে না।”
এই কথাটা শুনার সাথে সাথে নিতুর মনের মধ্য দিয়ে একটা কম্পন বয়ে গেলো। ভূমির উপর দিয়ে হলে তার মাত্রা হতো ৭.৫!
ফাহাদ নিতুর মুখের দিকে তাকাতেই দেখে মেয়েটার চোখে জল। “কিরে নিতু তুই কাঁদছিস কেন?”
“একটু কষ্ট হচ্ছে।”
“কেন?”
“তুমি চলে গেলে আমি কার সাথে কথা বলবো! কে আমাকে তোমার মত প্রশ্রয় দিবে!”
“নিতু…..!”
“হু।”
“তুই আমাকে পছন্দ করিস?”
“তুমি বুঝো না?”
এমন সময় ট্রেনের হর্ন বেজে উঠলো। ফাহাদ প্যান্টের পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে নিতুর হাতে দিলো।
“নিতু এই নে, তোর জন্য লেখা কবিতা।”
নিতু কাগজটা খুলে পড়তে লাগলো,
“কোনো একদিন ক্লান্তহীন মধ্যদুপুরে, যদি হুট করে এসে দেখি তুমি নেই! তবে আমি চিৎকার করে তোমাকে ডাকবো,
দিশাহীন পাগলের মত তোমায় খুঁজবো, আমার জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত…..!”
কবিতাটা পড়ে নিতু মাথা তুলে স্টেশনের দিকে তাকালো। ট্রেন ততক্ষনে চোখের আড়ালে চলে গেছে।