কুয়াশা

কুয়াশা

সরিষাখেতের আলে দাঁড়িয়ে আমরা কুয়াশা কুয়াশা খেলতাম। শীতের সকালে রায়পুরা গ্রাম কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ত।

আমরা দুজন মুখোমুখি দাঁড়াতাম—আমি আর সুমি। একজন আরেকজনের দিকে চেয়ে চেয়ে একপা করে পিছিয়ে যেতাম। একসময় দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসত। তারপর ছুমন্তর।

চাকরির মৌখিক পরীক্ষার আগে বসে বসে ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়ল হঠাৎ করেই। আরেকটা মেয়ে এসেছে পরীক্ষা দিতে। সুমির মতোই লাগছে। ঠিক বলতে পারছি না যদিও। পনেরো বছর আগের কথা। এসএসসির আগে আগে একদিন শুনি সুমি নেই।

ওর বাবার বদলি হয়ে গেছে। তখন আমাদের কোনো ফোন ছিল না, ফেসবুক ছিল না। দুম করে হারিয়ে ফেললাম মেয়েটাকে। একটা চিঠি ছিল সেদিন আমার পকেটে, সুমির জন্য লেখা। পনেরো বছর হয়ে গেছে। না পারলাম বুকপকেট থেকে চিঠিটা ফেলতে, না খুঁজে পেলাম আর কাউকে।

আমরা দুজন শুধু বাকি আছি। সবার ডাক এসে গেছে। একবার ভাবি, যাই, কথা বলি। পনেরো বছর আগে কি আমার মুখে এ রকম দাড়ি-গোঁফ ছিল? সুমি চিনবে কেমন করে? আমি মনে মনে কথা সাজাতে থাকি। ‘আপনি, মানে, তুমি সুমি না?

মনে আছে, রংপুরের রায়পুরা গ্রামের কথা? আমরা শীতের কুয়াশায় খেলতাম, বর্ষায় ভিজতাম, শরতে নৌকায় ঘুরতাম।

তুমি হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলে বলো তো? দেখো, পনেরো বছরের পুরোনো একটা চিঠি। দেব দেব করে আর দেওয়া হয়নি। তোমার জন্য বুকপকেটে রেখে দিয়েছি। পড়বে?’

তখনই একটা ফোন বেজে উঠল। ‘হ্যাঁ, মামণি। খেয়েছ? বাবা এসেছে? আমি পরীক্ষা দিতে যাব, ফোন বন্ধ থাকবে। বাবা-মেয়ে মিলে লক্ষ্মী হয়ে ভাত খেয়ে নেবে, কেমন? রাখি মামণি।’

বেয়ারা ডাক দিল, ‘সুমি ইসলাম, ভেতরে আসেন।’

সুমি, হ্যাঁ, সুমিই তো। ও এক পা করে এগোচ্ছে আর আমি এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছি। এই জীবনটায় অনেক শীত। ভীষণ কুয়াশা। এই কুয়াশায় হারিয়ে গেলে কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।সরিষাখেতের আলে দাঁড়িয়ে আমরা কুয়াশা কুয়াশা খেলতাম। শীতের সকালে রায়পুরা গ্রাম কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ত।

আমরা দুজন মুখোমুখি দাঁড়াতাম—আমি আর সুমি। একজন আরেকজনের দিকে চেয়ে চেয়ে একপা করে পিছিয়ে যেতাম। একসময় দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসত। তারপর ছুমন্তর।

চাকরির মৌখিক পরীক্ষার আগে বসে বসে ছোটবেলার কথাগুলো মনে পড়ল হঠাৎ করেই। আরেকটা মেয়ে এসেছে পরীক্ষা দিতে। সুমির মতোই লাগছে। ঠিক বলতে পারছি না যদিও। পনেরো বছর আগের কথা। এসএসসির আগে আগে একদিন শুনি সুমি নেই।

ওর বাবার বদলি হয়ে গেছে। তখন আমাদের কোনো ফোন ছিল না, ফেসবুক ছিল না। দুম করে হারিয়ে ফেললাম মেয়েটাকে। একটা চিঠি ছিল সেদিন আমার পকেটে, সুমির জন্য লেখা। পনেরো বছর হয়ে গেছে। না পারলাম বুকপকেট থেকে চিঠিটা ফেলতে, না খুঁজে পেলাম আর কাউকে।

আমরা দুজন শুধু বাকি আছি। সবার ডাক এসে গেছে। একবার ভাবি, যাই, কথা বলি। পনেরো বছর আগে কি আমার মুখে এ রকম দাড়ি-গোঁফ ছিল? সুমি চিনবে কেমন করে? আমি মনে মনে কথা সাজাতে থাকি। ‘আপনি, মানে, তুমি সুমি না?

মনে আছে, রংপুরের রায়পুরা গ্রামের কথা? আমরা শীতের কুয়াশায় খেলতাম, বর্ষায় ভিজতাম, শরতে নৌকায় ঘুরতাম।

তুমি হঠাৎ কোথায় হারিয়ে গেলে বলো তো? দেখো, পনেরো বছরের পুরোনো একটা চিঠি। দেব দেব করে আর দেওয়া হয়নি। তোমার জন্য বুকপকেটে রেখে দিয়েছি। পড়বে?’

তখনই একটা ফোন বেজে উঠল। ‘হ্যাঁ, মামণি। খেয়েছ? বাবা এসেছে? আমি পরীক্ষা দিতে যাব, ফোন বন্ধ থাকবে। বাবা-মেয়ে মিলে লক্ষ্মী হয়ে ভাত খেয়ে নেবে, কেমন? রাখি মামণি।’

বেয়ারা ডাক দিল, ‘সুমি ইসলাম, ভেতরে আসেন।’

সুমি, হ্যাঁ, সুমিই তো। ও এক পা করে এগোচ্ছে আর আমি এক পা করে পিছিয়ে যাচ্ছি। এই জীবনটায় অনেক শীত। ভীষণ কুয়াশা। এই কুয়াশায় হারিয়ে গেলে কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত