সীমাহীন ভালোবাসা

সীমাহীন ভালোবাসা

তানিয়া:(রান্না করার সময় জরে ডাক দিয়ে বললো)ওগো উঠছো না কেনো!

তুষার:(নিম্ম স্বরে বলে উঠলো) উঠছি!

তানিয়া:(সময় লাগছে বলে উঠাতে গেলো তানিয়া,শরীরে হাত দিতেই দেখলো গরম) একি তোমার তো শরীর অনেক গরম, জ্বর হয়েছে!

তুষার:(নিম্ম স্বরে) একটু আকটু গরম হয়েছে শরীর তাছাড়া কিছুনা!

তানিয়া:(একটু রাগান্বিত ভাবে) এটা একটু আকটু শরীর গরম নাকি, শরীর পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে আর শরীর কাপছে এটাকে কি না শরীর গরম বলছে!

তুষার: ও কিছু না এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে কাজে গেলে!

তানিয়া: আজ যেতে হবে না!

তুষার:অনেক কাজ আছে বুঝছো না কেনো, না করতে পারলে চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যাবে!

তানিয়া:থাক অন্যখানে চাকরী নিবে সমস্যা নেই, যেতে না করছি যাবে না ব্যাস!

তুষার: বেশী খারাপ লাগলে ছুটি নিয়ে এসে পড়বো ঠিক আছে!

তানিয়া: আমার কথা কবেই বা শুনেছো যাও চাকরী করো গিয়ে, তোমার চাকরী নিয়ে তুমিই থাকো!

এই বলে তানিয়া চলে গেলো রান্না ঘরে।রান্না করছে আর এদিকে এই অবস্থা দেখে মনটাও ভীষন খারাপ তানিয়ার।রান্না করতে করতে হঠাৎ একটা আওয়াজ পেলো মেঝেতে ভারী কিছু পড়ার।তানিয়ার মনে হলো তার রুমে কিছু একটার পড়ার শব্দ।তানিয়া গ্যাস বন্ধ করে চলে গেলো।গিয়েই দেখলো তুষার মেঝেতে পড়ে রয়েছে অজ্ঞান হয়ে।তানিয়া দেখে কাদতে লাগলো আর ডাকতে লাগলো “ওগো শুনছো, উঠো দেখো আমি এসেছি, উঠো” বলে। কিন্তু উঠছে না।বাড়ীতে তানিয়া আর তুষার ছাড়া কেউ থাকে না।তাই তানিয়া তুষারকে ধরে বিছানায় উঠালো কষ্ট করে।তারপর পানি এনে ঢালতে লাগলো মাথায়।কিন্তু জ্ঞান ফিরছে না।তানিয়া ল্যান্ড লাইন থেকে ডাক্তারকে বাসায় ডাকলো।তারপর এসে আবার পানি ঢালতে লাগলো। কিন্তু জ্ঞান ফিরছে না। ডাক্তার এসে গেলো এর মধ্যে।ডাক্তার এসে দেখতে লাগলো তুষারকে।

এদিকে তানিয়া চিন্তায় একাকার হয়ে গেলো।তানিয়ার শরীর ও কাপতে লাগলো ভয়ে।কিছু হয়নি তো।ডাক্তার তুষারকে দেখে পেস্ক্রিপশনে কিছু ঔষুধ লিখে দিয়ে বললো “তেমন কিছু হয়নি,সামান্য জ্বর হয়েছে, ঠিক মতে কয়েকদিন বিশ্রাম নিলে আর ঔষুধ খেলে ঠিক হয়ে যাবে আর রোগীর জ্ঞান ফিরলে নরম কিছু খাইয়েই ঔষুধ গুলো খাওয়াতে!” এই বলে ডাক্তার চলে গেলো!  তানিয়া ঔষুধ গুলো গিয়ে নিয়ে আসলো।এসেই তুষারের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।হঠাৎ কিছুক্ষণ পর জ্ঞান আসলো তুষারের। চোখটা খুলেই দেখলো বিছানায় শুয়ে আছে আর পাশে তানিয়া বসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর কাদছে ফুপিয়ে ফুপিয়ে।তুষার তখন বললো:-

তুষার:কাদছো কেনো এরকম করে!

তানিয়া:তোমার জ্ঞান ফিরিছে তাহলে(এই বলে আল্লাহর কাছে দোয়া করলো) তুমি শুয়ে থাকো চুপচাপ কথা বলবে না!

তুষার:আচ্ছা আগে কান্নাটা তো থামাবে নাকি!

তানিয়া: আমি কাদলেই তোমার কি,তুমি তো চাও ই আমাকে সারাজীবন কাদাতে!

তুষার:এরকম কথা বলো নাতো!

তানিয়া:চুপচাপ শুয়ে থাকো তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি তারপর ঔষুধ ও খেতে হবে এখনি! এই বলে তানিয়া চলে গেলো খাবার আনতে।এরই মধ্যে ছুপ বানিয়ে নিয়ে আসলো।এসেই তুষারকে ধরে একটু উপরে উঠিয়ে বসালো।তারপর বললো:

তানিয়া:হা করো তো আগে!

তুষার:আমি খেতে পারবো তো নিজে!

তানিয়া:হ্যা, জানাই আছে আপনার ক্ষমতা আমার, এবার হা করেন চুপচাপ!

তুষার:আচ্ছা,” হা “!

তানিয়া:(গরম ছুপটাকে চামুচে করে নিয়ে ফুদিয়ে জুরিয়ে মুখে দিয়ে দিলো) আমার হয়েছে যত জ্বালা!

তুষার:(ছুপটা গিলেই বললো) আমি তো বললাম খেতে পারবো!

তানিয়া:(রাগান্বিত স্বরে) খাওয়ার কথা কে বলছে তোমারে, তুমি এক লাইন বেশীই বুঝো, খাওতো আগে চুপচাপ!

তুষার:আচ্ছা, খাচ্ছি চুপচাপ! খাওয়া শেষে!

তানিয়া: অফিসে যাবা না যাও এখন!

তুষার:এরকম করছো কেনো তুমি!

তানিয়া: কই কই করে বললাম যাওয়া লাগবে না কিন্তু কে শোনে কার কথা!

তুষার:না গেলে তো চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়ে যেতো এতক্ষণে পড়েও গেছে হয়তো!

তানিয়া:হলো না তোমার চাকরীতে যাওয়া এখন!

তুষার: হলো নাতো!

তানিয়া:এত কষ্ট দেওয়ার থেকে মেরে ফেলতে পারো না আমাকে!

তুষার: দেখো এখন কিন্তু অনেক রাগ হচ্ছে আমার আর যদি বলো এসব তাহলে কিন্তু—!

তানিয়া: হ্যা, রাগ তোমারী আছে আর কারো নেই, তুমি পড়ে ছিলে মেঝেতে কত কষ্ট লাগছে জানো!

তুষার:হুমমম!

তানিয়া:কি হুমমম, জানো কত চিন্তা হচ্ছিলো, নিজেকেই হারিয়ে ফেলে ছিলাম আমি, তোমার জ্ঞান আসছিলো না মনে হচ্ছিলো আমি কি ক্ষতি করে ফেলেছি তোমার, তোমার পাশ থেকে যাওয়াতেই এই অবস্থা হয়েছে!

তুষার: মাথাটা ব্যাথা করছে অনেক!

তানিয়া: দেখি ঔষুধ গুলো খেয়ে শুয়ে পড়ো,মাথা টিপে দিচ্ছি ব্যাথা কমে যাবে!

তুষার:তুমি খেয়েছো!

তানিয়া: না খাইনি, তোমার এই অবস্থা দেখে কি আমি খেতে পারি!

তুষার:খেয়ে নাও এখন!

তানিয়া:খাবো নি তোমার বলা লাগবে না!

তুষার:আচ্ছা!

তানিয়া:শুয়ে পড়ো এখন(খালি তো কষ্ট দিতে পারো মনে মনে)!

তুষার:ঠিক আছে!

তানিয়া: মাথার কোন কোন জায়গায় ব্যাথা করছে গো!

তুষার:বাম পাশটায় বেশী করছে!

তানিয়া: টিপে দিচ্ছি কমে যাবে!

তুষার: আচ্ছা এখন যদি খারাপ কিছু হতো আমার সাথে!

তানিয়া: মুখ সেলাই করে দেবো একেবারে শয়তান একটা,তোমার কিছু হলে আমি কি বাচতে পারবো নাকি, আরেক বার বললে খবর আছে এসব কথা!

তুষার:আচ্ছা আর বলবো না!

তানিয়া: মনে থাকে যেনো (বুকের উপর মাথা রাখলো তুষারের)!

তুষার: জ্বর তো শরীরে তার উপর ব্যাথা হচ্ছে তো বুকে!

তানিয়া:থাকুক জ্বর আর হোক ব্যাথা,তোমার ব্যাথা হওয়াই উচিত! তুষার জড়িয়ে ধরলো তানিয়াকে।আর তানিয়া তুষারের কপালে একটা চুমু এঁকে তুষারের বুকে মাথা রেখে তার সব কষ্ট দূর করে দিলো তানিয়া!!!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত