–এই ছেলে এইদিকে আসেন তো এদিক ওদিক ভালোমত তাকিয়ে দেখলাম।নাহ আমি ছাড়া এখানে আর কেউই নেই
–জ্বী আমাকে বলছেন…??
–তো আপনি ছাড়া এখানে কি আর কেউ আছে…???
–হ্যাঁ আছে তো।এই যে আপনি
–ফাজলামো হচ্ছে তাই না….?? এইদিকে আসতে বলছি না…???
ফাজলামো করা এটা বরাবরের মতই আমার একটা অভ্যাস। আস্তে আস্তে মেয়েটার কাছে গেলাম
–জ্বী বলুন…??
–তা বলছি প্রতিদিন এখানে দাঁড়িয়ে থাকা হয় কেন…??
–এটা রাস্তা। দাঁড়িয়ে থাকতেই পারি না।
–তা তো থাকতেই পারেন।কিন্তু আমি একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছি যখন আমি এখানে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে থাকি একমাত্র তখনই আপনার এই চাঁদবদন মুখটা দেখা যায়।ঘটনা কি….???
–নাহ কোনো ঘটনা নাই
–কাল থেকে যেন এখানে আর না দেখি
–এহহহ বললেই হলো নাকি….!! আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব।তাতে আপনার সমস্যা কই….???
–আমি এখানে আসলেই আপনাকে দেখি।কই বাকি সময় তো দেখি না………
–এমনি আসি না
–বাকি সময় আসেন না কেন…??? আমি আসি না বলে….???
–হ্যাঁ একদম ঠিক বলেছেন
–চুপ ফাজিল। থাপ্পড় দিয়ে না একেবারে বত্রিশটা দাঁত ফেলে দিব মেয়েটার মুখের দিকে ভালোমত তাকালাম। মুখের মধ্যে রাগের স্পষ্ট ছাপ লেগে আছে।
–আমার আটাশটা দাঁত। বত্রিশটা এখনও হয় নি।হলে যোগাযোগ করব নে…….
–ফাজিল,ইডিয়ট বলেই মেয়েটা রিকশায় করে চলে গেল। আমি ফারাবী। ফারাবী। ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ছি।আর এই মেয়েটা হচ্ছে লিয়া।একই কলেজএ পড়ি। ও সাইনছে পড়ে আর আমি আরছ এ । লিয়া মনে হয় আমাকে চিনে না।কিন্তু আমি লিয়াকে ঠিকই চিনি। পাশাপাশি ফ্লাটেই থাকি আমরা। রাস্তার এইপাশে লিয়ারা থাকে আর রাস্তার ওপাশে আমরা থাকি। কলেজে নবীনবরণ অনুষ্ঠান থেকেই লিয়া আমার ক্রাশ।
কলেজটির লাইব্রেরিতে…
লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখি লিয়া মনোযোগ দিয়ে কি যেন পড়ছে। আমি হুট করেই সেখানে গিয়ে লিয়ার পাশে বসে পড়লাম.
–হাই লিয়া ভ্রু-কুঁচকে আমার দিকে তাকালো
–কি ব্যাপার আপনি এখানে কেন….???
–ও মা লাইব্রেরিটা কি আপনার একার নাকি…??
–তা না কিন্তু আপনি এই কলেজ এ কেন…???
–আমি তো পড়িই এখানে
–অন্য জায়গায় গিয়ে বসুন
–কেন…???
–এমনি।আমার সাথে বসবেন না
–বসব। একশবার বসব
–উফফফফ থাকুন আপনি এখানে। আমি গেলাম. লিয়া রাগ করে চলে গেল। যাহ মেয়েটা মনোযোগ দিয়ে বই পড়ছিল দিলাম তো রাগিয়ে। বাইরে গিয়ে দেখি লিয়া পুকুরপাড়ে একা একা বসে আছে।হাতের মধ্যে একটা চিপ্স। মেয়েটা বড় হয়েছে ঠিকই কিন্তু স্বভাবটা এখনও বাচ্চাদের মতই রয়ে গেছে। তা না হলে এই বয়সে কেউ চিপ্স খায়….!!!
–ম্যাডামকে রাগিয়ে দেয়ার জন্য স্যরি –উফফ আপনি এখানেও চলে আসছেন।একটু কি শান্তিতে থাকতে দিবেন না আমাকে….???
–আচ্ছা আমি আসাতে আপনার শান্তি নষ্ট হলো কিভাবে বুঝলাম না
–আচ্ছা আপনি কি চান বলুন তো
–নাহ কিছুই চাই না
–তাহলে আমার আশেপাশে কেন এমন ঘুরঘুর করেন…..???
–আপনাকে ভালো লাগে তাই কথাটা বলার পর লিয়া আমার দিকে অন্যরকমভাবে তাকালো। মনে হচ্ছিল দুইদিনের ক্ষুধার্ত বাঘ।আমাকে এখনই চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে
–ওহহহ আচ্ছা এই কথা….!! স্যরি ভাইয়া আমার বিয়ে হয়ে গেছে।
–ওহহ তাই….?? তা আপনার স্বামী কোথায়…???
–আমার স্বা…স্বা…স্বামী….!!! তিনি তো আমেরিকাতে থাকেন
–বাহ আপনি বললেন আর আমি বিশ্বাস করে নিলাম….!!
–না সত্যি বলছি তো –আপনার নাম লিয়া। দুই ভাই আর আপনি।বাবা সরকারী চাকরি করে।বিয়ে এখনও হয় নি।আর কিছু জানতে চান…..???? কথাটা শোনার পর লিয়া আমার দিকে বড়বড় চোখ করে তাকালো। লিয়া আশা করতে পারে নি যে আমি ওর ফ্যামিলির খবর পুরোটাই আমি জানি। আসলে আমি জেনেছি আমার এক ফ্রেন্ডের থেকে। লিয়ার ছোট ভাইকে আমার ওই ফ্রেন্ড পড়ায়।সেখান থেকেই আমি জেনেছি
–আপনি জানলেন কিভাবে…???
–আমি এমনি জেনেছি
–ভালো হয়েছে। আমি যাই লিয়া চলে যাচ্ছিল।আমি আবার পিছন থেকে লিয়াকে ডাক দিলাম
–এই যে মিস লিয়া শুনুন লিয়া ভ্রু-কুঁচকে আমার দিকে ঘুরে তাকালো
— আই এম ইন লাভ উয়িথ ইউ লিয়া কিছুই বলল না।আমাকে একটা ভেংচি কেটে চলে গেল।
পরেরদিন সকালে আবার সেই এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইলাম।কিছুক্ষন পর লিয়া কলেজ যাবার জন্য আসল।
–হাই লিয়া
–আপনি আজকেও এখানে….???
–হ্যাঁ কলেজ এ যাব
–উফফফ আল্লাহ
–আচ্ছা আমি কি দেখতে খুব খারাপ যে আপনি এমন করেন…..???
–জানি না
–কি জানেন তাহলে আপনি….???
–ঘোড়ার ডিম
–আপনি না…..!!
–আমি কি…???
–আপনি কচু
–আপনার জম… কলেজ থেকে আসার সময় রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিন্তু কোথাও রিকশা পাচ্ছিলাম না। প্রতিদিন এই একটা সমস্যা হয়। দুপুরবেলা কলেজ থেকে বাসায় যাওয়ার সময় রিকশা পাওয়া যায় না। হঠাতই দেখতে পেলাম লিয়া কোথা থেকে যেন রিকশা নিয়ে আমার সামনে চলে আসল।রিকশাটা একেবারে আমার সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে। আমার মনে হচ্ছিল সে বলবে আমাকে তার রিকশায় উঠতে।কিন্তু পরক্ষনেই ভাবলাম তার সাথে আমার সাপেনেউলে সম্পর্ক। এই রিকশায় উঠার চিন্তাটা সম্পূর্ণই আমার কল্পনার বাইরে
–আমার পাশের সিটটা খালিই ছিল।কেউ যদি ইচ্ছে করে তাহলে বসতে পারে এখানে…. আশেপাশে ভালোমত তাকিয়ে দেখলাম।নাহ আমি ছাড়া মনে হয় আর কেউই নেই এখানে…
–তা পাশের সিটটা কি সরকারী নাকি….???
–চুপ ছেড়া . লিয়া চোখ রাঙিয়ে আমাকে ধমক দিল
–আচ্ছা আমার পাশের সিটটাতে যদি উনাকে সারাজীবনের জন্য বসার অনুমতি দেই তাহলে কি উনি সেটা করবে…..??? লিয়ার কথা শুনে পুরো থ হয়ে গেলাম।বলে কি মেয়েটা….!! ওর থেকে তো এমন কথা বাপের জন্মেও কল্পনা করি নি
–উনি তো পাশের সিটটা দখল করার জন্যই এতদিন ধরে চেষ্টা করছিল. লিয়া আমার দিকে তাকিয়ে ছোট্ট একটা হাসি দিল। তারপর বলল.
–তা উনি কি এখনও এখানে দাঁড়িয়ে থাকবে…?? পরে কিন্তু অন্যকেউ এসে জায়গাটা দখল করে ফেলবে ! লিয়া কথাটা বলার সাথে সাথেই আমি রিকশায় উঠে পড়লাম।
–তা ম্যাডাম এখন আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন….???
–ম্যাডাম এখন আপনাকে নিয়ে তার ভালোবাসার কারাগারে বন্দি করে রাখবে।যাতে আপনি কখনও তার থেকে পালাতে না পারেন..
–হুম যদি ম্যাডাম সেই কারাগারের দায়িত্বে থাকেন তাহলে আমি বন্দি থাকতে রাজি আছি –হুম এই ম্যাডামই সেই কারাগারের দায়িত্বে থাকবেন
–ম্যাডাম যেন আবার বদলি না হয়ে যায়।তাহলে কিন্তু অন্যকেউ এসে কারাগারটা দখল করে নিবে হাহাহা
–কিহহহ…???? তবে রে দেখাচ্ছি মজা…….. . ভালোবাসার অধ্যায়টা একটু দুষ্টামী দিয়েই শুরু হোক না। খারাপ হয় না তো….