কাহিনী – কালোচোখি, মানে মেয়েটা কালো কিন্তু চোখটা সেই!
ডেডিকেটেড – মায়া নামের সব কালো মেয়ে..
______
কালোর ব্যাখা হিসাবে আমি অনেক ভেবেছি , কালো মানে গা’য়ের রং সাদার বিপরীত!! এই কাল দুইভাবে বিভক্ত করা যায়! – জন্মগত ভাবে কালো
– রোদে পুরে কালো
ন্যালসন মেন্ডেলা যার জন্য এতকিছু করল অথচ আমি মেঘ সেই বর্নবাদী মনোভাব দূর না করে নজরুলের একটা চরন মনে এলো – বাহিরে কেবল কালা র ধলা ভিতরে কিন্তু সমান রাঙা…
যাক বাবা কালো নিয়ে গবেষনা করে লাভ নেই!! কমার্সের ছাত্র তাই লাভ নেই তো আমইও নেই!!
আমার আব্বু বলতেন যুগ পাল্টায়ছে সবায় ধকাবাজ!!!
_____
এই মেয়েটার নামধাম কিছুই জানিনা!! তবে আমি দুদিন দেখেছি ভ্যানে করে পড়তে আসতে!! গা”য়ের রং কালা ( কালো কে আমি ইচ্ছা করে বিকৃতি করে কালা বলি) চোখে একটা বড় ফ্রেমের চশমা, হাতের কব্জি পর্যন্ত বোরখার হাতা গোছানো! পা’য়ে জুতার মত কি যেন একটা!! ফিগার মাঝামাঝি!! দূর থেকে একবার তাকালেই আমার সবকিছু দেখা হয়ে যায়!! মানে লিখালিখির জন্য এসব দেখতে হয়কি!! এরপরে যেদিন দেখেছিলাম সেদিন অনেকক্ষণ চোখাচোখি হয়েছিল আমার!! আর তেমন কিছুই না!! এরপরে মেয়েটা চলে গেল আমিও চলে এলাম…
___
আমার বর্ননা নেই!! আফসোস আমার এক্টায় – আমার কেন গফ নাই- ( টেনে টেনে উচ্চারণ করেন মজা পাবেন “আমার” টা বেশি টানবেন) আমার ফ্রেন্ডস যারা আছে হারামী রা প্রেম তো করেই আবার ব্যাকআপ রাখে!! ভরশা নেই প্রেমে কি কচু করবে!! আজকালকার মেয়েরা যেমন ছেলেরাও তেমন!! বলবে – বিশ্বাস করো জান কিচ্ছু করিনি,
অথচ সবকিছু ওই করেছে!! আড্ডাবাজি আমার খুব প্রিয়!! বিকালে আড্ডাদিতে হেব্বি লাগে!! যদিও বাসায় থাকি সবসময় রুমে থাকার জন্য আমার ক’টি কুখ্যাত নাম আছে!
→ নতুন বউ
→ ডিমে তা দেওয়া মুরগি
→ কুইচ্ছা মুরগি
!→ ঘড়কুনো
→ ঘোরমুখো
এসব আর কি!! ফ্রেন্ডস রা ডাকে
→ খ্যাতের কবি
→ সাহিত্যিক
→ দেবদাস
→ সাহিত্য সাগর
→ ফাজিল
→ মাল
এইসব আর কি কি যেন!!!
___
একদিন আড্ডা দিচ্ছি সব ফ্রেন্ডস রা মিলে!! রাফি’র গফের বিয়ে পরশুদিন!! কিন্তু রাফি মেয়েটাকে অনেক ভালবাসে এজন্য কিছু একটা করতে হবে!! তো কিছু একটা মানে নিসন্ধেহে – ভাগো ভাঙালি ভাগো – টাইপের কিছু একটা!! সব ফ্রেন্ডস’রা মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম – রাফি গফ কে নিয়ে পালাবো তারপর ওদের বিয়ে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো রাফির কাজিনের বাসায় ঢাকা!! কাজিন তো অনেক হ্যাপি এটা শুনে!! খাপে খাপ রাফির বাপ!!
___
তো বিয়ে বাড়িতে গেলাম গেষ্ট সেজে!! একটা বান্ধবি কে দিয়ে চিরকুট পাঠালাম মেয়ে ছাদে এলো! এরপরে পিছনের দরজা দিয়ে পগারপার!! রাফি সহ কজন গাড়ি নিয়ে দারিয়ে ছিল তারপর সোজা কাজীর অফিসে!! তারপর বাইরে এলে রাফি সবায় কে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো!! আমার গালে একটা চুমো দিছিল!! কিন্তু মনে হচ্ছিল হালায় দাত মাজে নাই!! অন্যদিন হলে টাকা খেতাম এরজন্য!! কিন্তু আজকে বলে আমরা সবায় মিলে ১৪,৬, ৩৮ টাকা দিয়ে বললাম এটা দিয়ে চলিস বাকিটা পরে দিবো!! কান্না করতে করতে টাকা নিল!! ভাবি কে সালাম দিয়ে ঢাকার ট্রেনে পৌছে দিয়ে এসে সবায় মিলে বেয়ার খেলাম!! জসস জাম্পেস আড্ডা!! রাফি কে ফোন করে বললাম!! মেয়েটাকে কখনো কষ্ট দিস না!! আর হ্যা আগামী ক’দিন দূরে থাকবি কারন আমরা সিঙ্গেলস তারপর সবায় অট্টহাসি!!
সে রাতে অনেক আড্ডা মেরে বাসায় এলাম
_____
রাফি চলে যাবার পর আমার সবকিছু আলাদা হতে লাগলো!! আমার সাথে রাফির মতের মিল থাকে অনেক!! মানে প্রায় সময় আমরা একি বেপার নিয়ে ভেবেফেলি!! এজন্য আমাদের মিল টাও অনেক!! খারাপ লাগতো বেশি তখন যখন দেখতাম সব ফ্রেন্ডস মিলে জাম্পেস আড্ডা দিচ্ছি ঠিক তখুনি শুরু হল কল আসা!! আর এক একজন ছুট নির্জন জাইগা প্রেম করার জন্য পড়ে থাকতাম কেবল আমি!! এজন্য রাগ দেখিয়ে মাঝেমাঝে আমি যেতাম না আড্ডায়!! শালা রা প্রেম করবা আর আমি কি আঙুল চুষবো?? হারামী রা….!!
—
এদিকে ভূলেই গেছি সেই কালা মেয়ের কথা যদিনা সেদিন বাজারে যেয়ে আবার দেখা হত!! ভাবলাম এই মেয়ের সাথে প্রেম করব আমি!! কারন আমার সব ফ্রেন্ডস এর গফ সুন্দরি এজন্য গফ গুলো যা যা বলে আমার ফ্রেন্ডস রা তায় তায় করে!! রাগ দেখিয়ে ভাবলাম কালা মেয়ের সাথে প্রেম করব তাহলে আমি যা বলব মেয়ে তাই শুনবে!! যা ভাবা তায় কাজ… ঠিক তার ৪ দিন পর মেয়েটার পিছনে লেগেগেলাম আঠার মত!! মেয়ে যা যা করে সব আমি দেখছি!! মেয়েটা মনে হয় অবাক হয়েছিল _ আমি ওর পিছনে ঘুরছি এটা ভেবে!! তো আমি মেয়েটাকে ডাক দিলাম _
↓↓
আমি- আচ্ছা শুনো কথা আছে!
মেয়ে- জ্বী বলুন!!
আমি- কাল সোমবার তোমার পড়া নেই আমি জানি!! কাল বিকাল ৩ টায় হলুদ ড্রেস পড়ে স্কুল পার্কে আসবে কথা আছে!!
মেয়ে- কিন্তু কেন যাব?? এখানেই বলুন, আমি বাইরে যায়না!!
আমি- যাওনা এখন থেকে যাবা! যেতে হবে!!
মেয়ে- কিন্ত কেন??
আমি – এত কথা কেন!! যা বলেছি তায় করবা এখন বাসায় যাও!!
____
ভয় পাবার মত ছেলে আমি না!! তায় সোজাসুজিভাব ভাবে বলে দিলাম কারন কালা মেয়েদের কাছে বেশি ঢং করা লাগেনা!! এরা আগেই বোঝে!!
—
তো আজ সোমবার দুপুর ২ টা আমি রেডি হয়ে হাতে একটা গিফটের প্যাকেট নিয়ে আর ক’টা হলুদ, শাদা ফুল নিয়ে পার্কের উদ্দেশ্যে গেলাম!! যেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগবে আমি জানি!! তায় আস্তে আস্তে যাচ্ছি!! যেয়ে দেখি একটা মেয়ে বসে আছে বেঞ্চিতে হলুদ ফ্রক পরে!! একদম হলুদ পরির মত লাগছে!! আর চোখে হাল্কা কাজল আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে!! হাতে মেহেদি তাতেও চোখ সরেনা…!!
আমি- বসো!! কখন এসেছ??
মেয়ে- অনেক্ষন তো!! আপনি এত লেট করলেন??
আমি- কাজ ছিল তায়!! তোমার নাম কি? কিসে পড়ো??
মেয়ে- আপনি আমার নাম জানেন না?? আমার নাম মায়া, এবার এস, এস, সি দিবো,, আপনি??
আমি- ভাল!! আমি মেঘ অনার্সে ১ম বর্ষ এবার!! আচ্ছা শুনো যেজন্য ডেকেছি!! আমি তোমাকে পছন্দ করেছি আমার জন্য!! আর তুমি কালো বলে!! সুন্দরি হলে করতাম না!! সো নিজেকে ছোট করে দেখবেনা!! আর আমি তোমাকে রাগ করলেও কিছুই বলতে পারবানা!! আর হ্যা আমি খুব দ্রুত রেগে যায় তায় তুমি আমাকে ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করবা!!
মায়া- আপনি আমাকে ভালবাসেন??
আমি- হ্যা ভালবাসি!! তুমি বাসনা??
মায়া- পরে বলব আজ আসি!!
আমি- আচ্ছা তোমার জন্য এই গুলো এনেছি নাও!! আর নাম্বার টা দাও!!
____
৪ দিন পর মায়া আমাকে প্রপোজ করে তারপর প্রেম শুরু…!! আজ আমাদের রিলেশন প্রাম ৩ মাস হতে গেল….!!
সকালে মায়ার কল↓↓
মায়া- জান ঘুমাচ্ছ??
আমি- না তোর বাপের সম্পদ পাহারা দিচ্ছি
মায়া- কি হল আবার এই সকালে?
আমি- আবার মানে তুই বলিস আমার সবসময় ঝামেলা লেগেই থাকে??
মায়া- আমি সেটা কখন বললাম, আর কি হল বলবা তো??
আমি- তোকে না আমি বলেছি তুই ১১টার আগে কল দিবিনা এখন কত বাজে??
মায়া- জান তোমার কন্ঠ টা খুব শুনতে ইচ্ছা করছিল তায় কল দিলাম!!
আমি- ইচ্ছা হলেই কল দিবি?? তোর খুব সাহস হয়ছে তাইনা রে??
মায়া- জানিনা!!
আমি– এবার তোর শাস্তি দুইদিন সিম অফ রাখবো!!
মায়া- কিন্তু জান??
আমি- কোন কিন্ত না!! ফোন রাখ বাইই ফাজিল….
টুট টুট
_____
মায়া কালো হলেও ওর কন্ঠটা খুব মিষ্টি!! আর ওর চোখজোড়া আমার খুব প্রিয়!! কেমন যেন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে!! ঐ চোখ যেন সবকিছু বলে দিতে পারে!! ঐ চোখ যেন শতশত কবিতা বলতে পারে!! আমি মায়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে দিতে পারতাম ওর মনের কথা!! মায়া মাঝেমাঝে অবাক হত আমার এসব কান্ড শুনে!! মেয়েটা এখন একটু শ্যামলা হয়েছে…!! কিন্তু আমি রেগে গেলে মায়াকে অনেক বকা দেই!! কিন্তু মায়া কিছুই বলেনা!! কারন মায়া আমাকে অনেক ভালবাসে!! আর প্রকৃত ভালবাসায় কখনোই ব্রেকাপ বা রাগ অভিমান দু’দিনের বেশি থাকেনা!! তায় আমি চিন্তামুক্ত!! কারন মায়া আমাকে ছেড়ে যাবেনা!! দু’দিন পর নিজেই সিম অন করে বলেফেলি!!
আমি- পাগলী তোকে খুব মিস্ করছি রে
মায়া- চুপ
আমি- তোকে খুব মনে পরছে এখন বল তো কি করি??
মায়া- চুপ
আমি- তুই কি বাসার নিচে আসবি একটু??
মায়া- চুপ
আমি- আমি দারিয়ে আছি তুই আই….
____ ৫ মিনিট পর
মায়া দারিয়ে আছে আমার পাশে চুপ করে!! চোখমুখ ফুলিয়ে ফেলেছে এই দু’দিনে বুঝেছি অনেক কেঁদেছে পাগলী টা!! খুব মায়া হচ্ছিল আমার!! পাগলীর হাত টা ধরলাম শক্ত করে!! তারপর বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম সরি বাবু…!! মায়া এখন চুপ করে কান্না করছে…!! আমার শার্ট টা ভিজে গেছে ওর কান্নায়…!! মায়া মুখ তুলে বলল!!
মায়া- আপনি আমাকে এত কষ্ট দেন কেন?? ( সামনাসামনি আপনি)
আমি- কষ্ট দেই নাকি??
মায়া- তো কি আমাকে কাঁদালেন কেন এই দুদিন?? জানেন আমি কিছুই খায়নি, আর সারারাত জেগেছিলাম ভেবেছিলাম আপনি কল দিবেন!! কিন্তু ( বলেই কান্না) আপনার সাথে আর কথা বলব না আমি!!
আমি- আচ্ছা বাবা সরি তো!! এই যে তোমার প্রিয় চকলেট আর আইসক্রিম!! পেট ভরে খাও…
মায়া- আপনি একটা হুনুমান
আমি- হুম তোমার হুনুমান!!!
তারপর জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে!! মায়া এবার বলল – আমাকে সারাজীবন এইভাবে ধরে রাখবেন তো??
আমি বলেছিলাম – শশুর মসায় যদি চান তো…!!! মায়া – হেসে দিল_
____
এভাবেই চলে আমাদের দিন!! খুনসুটি আর ঝগড়া সবসময় লেগেই থাকে!! থাকে সবসময় তোমাকে খুব মিস করছি এই কমন কথাটা!! আমি জানি আমার চেয়ে পাগলী টা আমাকে বেশি ভালবাসে!! কারন আমি পরিক্ষামূলক ভাবে পেয়েছি “কালো মেয়েড়া নিজের থেকেও তাদের বফ কে বেশি ভালবাসে” সেইম একটা কালো ছেলেও!! এজন্য কালোরঙ আমার কাছে একটা আলাদা ভাললাগা কাজ করে !!
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা