বেস্টু গার্লফ্রেন্ড

বেস্টু গার্লফ্রেন্ড

ফোনে কল আসতেছে একনাগাড়ে। আসুক আজ সুনামি,আইলা, নার্গিস, তিতলি যাই আসুক ঘুম থেকে উঠব না।এদিকে ফোনের রিংটোনের আওয়াজে কান ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। ফোনটা সাইলেন্ট করে রাখি। ফোনের স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। আজকে আমার কপালে কি পরিমাণ দুঃখ আছে সেই চিন্তা করছি। আমার গার্লফ্রেন্ড একুশ বার কল দিয়েছে। কি করব রাতে ঘুমাইছি তিনটার দিকে, ঘুম ভাংলে তো ফোন ধরবো! কথা হচ্ছে আমার গার্লফ্রেন্ড তনু বলেছিল বারটার মধ্যেই যেন ঘুমিয়ে যাই। আমিও ফেসবুক লগ আউট দিয়েছিলাম ঘুমানোর জন্যই। কিন্তু ফেইক আইডিতে সামিয়া নামের এক মেয়ে নক দিয়েছিল, চ্যাটিং করতে গিয়ে তিন ঘন্টা উধাও। কিন্তু সে কথাতো আর তনুকে বলতে পারব না। আমার চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করে দিবে। প্রচন্ড ভয় কাজ করছে। কল ব্যাক করলে তনুর মুখে কি শুনি আল্লাহ মালুম!

প্রচন্ড রাগ হচ্চে শালা সুমনের উপর। তনুকে দেখিয়ে এই হারামীই বলেছিল দুস্ত একেবারে শান্তশিষ্ট ভদ্র মেয়ে, এই তার নমুনা! শালারা নিজেরা ফেসে আমাকেই গার্লফ্রেন্ড নামক ঝড়ের মধ্যে ফাসিয়ে দিল। প্রথমে বেস্টু বানালো, পরে আমি গার্লফ্রেন্ড বানাইলাম। এখন এই বেস্টুগার্লফ্রেন্ড মেয়ে প্রত্যেকটা দিন নতুন নতুন প্যারা দেয়। না, এইসব কথা চিন্তা করে লাভ নাই আর। কল ব্যাক করা দরকার। ভয়ে ভয়ে কল দিলাম রিং হচ্ছে। ওপ্রান্ত থেকে- “এই হারামী সারারাত কি চুরি করা হয়েছে এখন কয়েকটা বাজে এখনো তোর ঘুম ভাংলো না!? আমি কয়টা কল দিয়েছি ভাল করে দেখ।”

একনাগাড়ে কথা বলে যাচ্ছে নিশ্বাসের বিরতিও নিচ্ছে না! “এই মাহিনের বাচ্চা চুপ হয়ে গেলি কেন? জবাব দে, এত কিসের ঘুম তোর,হ্যা? দশ মিনিটের মধ্যে যদি কলেজের সামনে না আসতে পারিস, তাইলে রিলেশন ব্রেকাপ করে দিব!” এই বলে কল কেটে দিল। এ খোদা আমি তিরিশ মিনিটের রাস্তা দশ মিনিটে কিভাবে যাবো। খোদা, দড়ি ফালাও আমি উপরে উঠে যাই। কি আর করার যেতে হবে। উঠলাম বিছানা ছেড়ে। ব্রাশ করতে করতে বাথরুমে গেলাম শালার কপাল এত খারাপ ট্যাপে পানি নাই।

দৌড়াইয়া নিচে নামলাম চাপ কলে যেতে হবে। শার্টে হাত দিয়ে দেখলাম পকেটের অবস্থা বেশি ভাল নেই। কি করার ছোট বইনের ব্যাগ আছে তো! আমি বুঝি না মেয়েরা এত টাকা জমায় কিভাবে! আমি তো, দশ টাকা থাকলেও দোকানে দৌড় দেই। ছোট বইনের ব্যাগ থেকে একশ টাকার চকচকে নোট হাতিয়ে নিলাম।যাক এবার যাওয়া যাবে। একি! কি পড়ে যাব?! সবগুলা টি শার্টের যে অবস্থা! এগুলো পড়ে গেলে এমনিতেই ব্রেকাপ করে দিবে। আল্লাহ, দশ মিনিট শেষ!!! আমিও আজকে শেষ। প্রেম আর আমার কপালে নাই।

বারান্দায় বাবার পাঞ্জাবি ঝুলতে দেখলাম, দৌড়াইয়া পাঞ্জাবি পড়ে নিলাম। কপালের নাম গোপাল, পাঞ্জাবি আধ-ভিজা, আধ-শুকনো। যাই হোক, এটা পড়েই বাসা থেকে বের হইলাম। একটা রিক্সারও দেখা নাই, তনুর দেওয়া দশ মিনিট কবেই শেষ হয়ে গেছে। আল্লাহ আজকের মতো বাঁচিয়ে দাও। আর কোনো দিন ফেইক আইডি দিয়ে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করতে যাব না। রিক্সা একটা পাইলাম,তাও ভাড়া দশটাকা বেশি দিয়ে যাচ্ছি, যদি প্রেমটা বেঁচে যায়! “ভাই একটু দ্রুত রিক্সা চালানো যায় না?”

রিক্সাওয়ালা যা জবাব দিল- “এর থাইক্যা তাত্তারী সম্ভাভ না, পারলে আফনিই চালান, আমি উপ্রে বহি।” মনে মনে বলি থাক ভাই,আমাকে রিক্সা চালাইতে হবে না, যা নিয়ে যা। যেমনে মন চায়,চালা। কলেজের গেইটে দাড়িয়ে দেখি রেগে কটকটির মত দাড়িয়ে আছে তনু। বুক ধকধক করছে। হুট করে আমার হাতটা ধরে একটান দিয়ে বটতলায় নিয়ে উরাধুরা কিল ঘুসি দিয়ে যাচ্ছে। “এই হারামী কাল রাত্রে কয়টা সময় ঘুমিয়ে ছিলি বল?” আমি খুব ভাব নিয়ে বললাম- “কয়টা সময় মানে! তুই বলার পরপর ডাটা অফ করে ঘুম।”

“এই মিথ্যা বলবি না, সত্যি করে বল তর চোখ লাল হয়ে আছে। ঘুম কম হইছে, আমি বুঝতে পারছি। বল বলছি, কয়টায় ঘুমিয়ে ছিলি?” “সত্যি বলছি, বিশ্বাস কর তনু বারোটায় ঘুমিয়ে গেছিলাম।” “এই হারামী,মিথ্যুক, সারারাত জেগেছিলি আর বলছিস আমি বলার সাথে সাথে ঘুমিয়ে গেছিলি?” “আরে না ঘুমিয়ে গেছি।” “এই শালা সামিয়ার সাথে চ্যাটিং করিস নাই? রাত তিনটা পর্যন্ত তুই চ্যাটিং করেছিস।” আল্লাহ! আমি শেষ মরার আগেই মরে যাবো এখন।

রেগেমেগে আবার বললো- “চুপ হয়ে গেলি যে? কি বলেছিলি? তর গার্লফ্রেন্ড নাই? তুই জীবনেও কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে দেখিসনা?” আমি মাথা নিচু করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম। বললো– “শুন,শেষ বারের মতো মাফ করে দিলাম। আর…আজ রাত ঠিক বারটায় আমার বাসায় আসবি। যদি এক মিনিট লেইট হয় তাহলে বলে দিলাম,একেবারেই ব্রেকাপ।”

এইকথা বলে তনু হন হন করে চলে যাওয়ার জন্য এগুচ্ছে। আমি পেছন থেকে ডেকে বললাম- “এই বলার জন্য আমাকে তুই ঘুম থেকে তুলে নিয়া আসলি! এই কথা ফোনেও বলা যেত। আমার ঘুমটা হারাম করে দিলি।” “চুপ কর মিথ্যুক, ফোনে কি কিল ঘুসি দিতে পারতাম! “তাই বলে ঘুম হারাম করে তিরিশ টাকা খরচ করে আসতে বলবি?” “হুম, এখন আমার রিক্সা ভাড়াও তোকেই দিতে হবে, তুই তিরিশ টাকার খোটা দিলি,তাই।”

“হুর তোর ভাড়া আমি দিতে যাব কেন? এমনিতেই টাকাটা…” “টাকাটা কি? নিশ্চিত ছোট বোনের ব্যাগ হাতিয়ে এনেছিস। লজ্জা শরম কিছু নাই? আবারো বলি, শোন- মনে থাকে যেন, ঠিক বারটায় আমার রুমে আসবি কি করে আসবি সেটা আমি জানি না, তবে বলে দিলাম না আসলে কিন্তু সত্যি সত্যি ব্রেকাপ করে দিবো।” “এই তুই রাত বারটায় রুমে ডেকে কি করবি? দেখ তনু উলটাপালটা কিছুতে আমি নেই কিন্তু।”

“মাইর খাবি? খাইতে চাস? আসতে বলছি আসবি না হয় “হইছে আর কইতে হবে না, বুঝে গেছি। ব্রেকাপ করে দিবি সে অনেক বার হয়েছে।” “এখন সত্যি সত্যি করে দিবো।রিক্সা ডেকে ভাড়া দিয়ে দে, বাসায় যাব।” কি আর করার রিক্সা ডেকে ভাড়া সহ দিয়ে দিলাম। মানুষ কেন যে প্রেম করতে যায়! সুখে থাকলে ভুতে কিলায় আরকি। শালার হারামীগুলো কি রোমান্সের গল্প বলতো! সেটা শুনেই প্রেম করার ইচ্ছে হয়েছিল। আর আজ আমার কি দশা! কি করে তনুর বাড়িতে যাব! মাথায় কিছু আসছে না। সত্যি সত্যি যদি ব্রেকাপ করে দেয়, আমি শেষ। যতই প্যারা দেয় তাও তনুরে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।

যাক আগে বাসায় পৌঁছাতে হবে।হেঁটে হেঁটে বাসায় যাচ্ছি মাত্র পঞ্চাশ টাকা আছে পকেটে। বাসায় কি অপেক্ষা করছে আল্লাহপাক জানেন। ছোট বোনের ব্যাগ থেকে একশো টাকার চকচকে নোট হাতিয়ে নিলাম, বাবার পাঞ্জাবি নিয়ে আসলাম এই নিয়ে বাসায় কি ঝড় উঠবে, কি জানি! গার্লফ্রেন্ডের জন্য কত কি যে হজম করতে হবে। এদিকে, কি করে যাব তনুর রুমে? এমনিতে ওদের বাড়ির সামনে দিয়ে গেলে ওর বাবা,বোন এমন ভাবে তাকায়, মনে হয় আমাকে কাঁচাই খেয়ে নিবে।আর রাতের বেলায় যেতে হবে, তাও তনুর রুমে। বাসায় পা দিয়েই বুঝলাম বাবার চিল্লাচিল্লি। ওহ! আজ তো শুক্রবার! জুম্মায় যাওয়ার জন্য বাবা পাঞ্জাবি ধুয়ে দিয়েছিলেন। এগিয়ে এসে বাবা বললেন- ”হারামজাদা পাঞ্জাবি খুল।” কি আর করার খুলে দিলাম। যাক একটু ঘুমিয়ে নেই।রাতে আবার যুদ্ধ করতে যেতে হবে। রাত দশটা বাজে, সুমনকে কল দিলাম,বললাম- “দোস্ত আজ তনুর বাসায় যেতে হবে, না হয় সত্যি সত্যি ব্রেকাপ।” “ভাই তুই যা, আমার এমনিতেই ব্রেকাপের সীজন চলছে, আমাকে বলিস না।”

“শালা তরে যাইতে বলি নাই জানাইলাম।”  এগারোটা বেজে গেছে আর মাত্র এক ঘন্টা। তনুকে কল দিলাম- “বেবি জানালা খোলা থাকবে তো?” “থাকবে, থাকবে” এগারোটা পঁচিশ বাজে তনুর বাসার সামনে। কি করে বাসায় ডুকব সেই চিন্তা করে যাচ্ছি। আল্লাহ একটা উপায় বলে দাও। আমি দেয়াল টপকাতে পারবো, কিন্তু এত উপরে কি করে উঠবো? আবার ফোন দিলাম তনুকে- “বেবি, কলিজাটা ফুসফুস করছে, প্লিজ দরজা খুলে দাও ভেতরে ডুকে যাই।”

“হারামী আমার জন্য এতটুকু উপরে আসতে পারবি না? আসতে পারলে আয় না আসলে ব্রেকাপ।”-গার্লফ্রেন্ডের উওর। আল্লাহ এই মেয়েকে কেন আমার ঘাড়ে চাপালে, একা ছিলাম ভালই ছিলাম। আমার মন ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে। একটা কথা মনে পড়ছে- “মদ খা গাজা খা পারলে একটা সিগারেটের খা, তবুও প্রেম করিস না। কলিজা পুড়ে যাক মনটা ভাল থাক।”

আল্লাহর নাম নিয়ে দেয়াল টপকাতে গেলাম। দেয়াল ঠিকই টপকাতে পারলাম, কিন্তু, একি! টি-শার্টের অর্ধেক ছিড়ে দেয়ালের লোহায় আটকে আছে।এখন কি উপায়? খালি গায়ে যাব!? কি আর করার পাইপ বেয়ে উপরে উঠে গেলাম, তখনো দুইমিনিট বাকি বারটা বাজতে।যাক প্রেমটা বেঁচে গেল। বলতে লাগলাম- “তনু অই তনু, কিরে মেরে ফেলবি নাকি এমন অন্ধকার কেন?”অন্ধকারে আমার ভয় হয় কিন্তু।” তখন মোমবাতির আলোয় হুট করে তনু সামনে আর বলছে, হেপি বার্থডে টু ইউ!

আমি ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে বললাম- “তনু আজ তর বার্থডে, আগে বললি না? আমি কিন্তু খালি হাতে এসেছি, পকেটে অবশ্য কুড়ি টাকা আছে।” “লাত্তি খাবি শালা, বিলাই কোথাকার! সেদিন মাত্র আমার বার্থডে গেল। আমি কি দুইদিন পর পর জন্ম নেই?” হারামী আজ কত তারিখ মনে করে দেখ।আজ তোর বার্থডে।” আমি তো আসমান থেকে জমিনে পড়লাম! বললাম, -“বলিস কি!” “যাক আয়, কেক কাট আমি তোর জন্য রান্না করেছি, বিরিয়ানী আর সাথে ফ্রিজের ঠান্ডা মিষ্টি।” “বলিস কি!!! মুখে দেওয়ার মত হইছে তো?” “উস্টা চিনিস? উস্টা দিমু শালা বিলাই কেক কাট।”

“আচ্ছা আয় প্রচুর ক্ষিদা লাগছে।” কেক কেটে যেই না বিরিয়ানী খাওয়া শুরু করলাম তখনই হবু শশুড় আব্বা দরজা ধাক্কানো শুরু করছে। হবু শশুর আব্বা চিল্লাচ্ছে- “তনু বাসায় চুর ডুকেছে মনে হয়, দরজা খোল।” তনু ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ফিসফিস করে বললো- “এই মাহিন এখন কি হবে। তুই পালা তাড়াতাড়ি।” “হুর, আমি পালাবো কেন? তুই আসতে বলেছিস এসেছি, প্রচুর ক্ষিদা লাগছে আগে খেয়ে নেই।” “প্লিজ মাহিন পালা, আমি তোকে পরে বিরিয়ানী খাওয়াব।”

কি আর করার, গার্লফ্রেন্ডের ধাক্কাধাক্কিতে বের হলাম। পাইপ দিয়ে নামতে গিয়ে পড়ার শব্দে হবু শশুড় আব্বা আর হবু শালা বাবু চোর চোর করে চিল্লানি দিচ্ছে।সাথে পাশের বাসার কয়েকজন জড়োসড়ো হয়ে গেলো। আমি খালি গায়ে দৌড়াচ্ছি প্রান বাঁচাতে। এইবারের যাত্রায় যদি বেচে যাই, আর না। দৌড়াচ্ছি আর মনে মনে বলছি- তনু, বেচে থাকলে দেখা হবে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত