না বলা ভালোবাসা

না বলা ভালোবাসা

সকাল থেকেই গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি, তবে একটানা, আজ থামবে বলে মনে হয় না। পিয়াসদের বাসা টা আধা পাকা। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার তাদের। টিনের চালে বৃষ্টির ফোটা গুলি রিনিঝিনি শব্দ নিয়ে পড়ছে। পিয়াস বারান্দায় দাড়িয়ে দাড়িয়ে এই ফোটা গুলো কে অবলোকন করছে যাদের অস্তিত্ব বিলিন হচ্ছে সোজা তার হৃদপিন্ডে। এই রকম দিনে নানা স্মৃতি এসেভীড় করে মনের কোণে।

কিছু পাওয়া, না পাওয়ার ভীড়ে মানব জীবন। পাওয়া গুলো মানুষ খুব তাড়াতাড়ি ভুলে যায় কিন্তু না পাওয়া গুলো তাড়িয়ে বেড়ায় সারাজীবন। মাহী নামের এক খন্ড মেঘ অনেক দিন তার আকাশে প্রচুর বৃষ্টি ঝরিয়েছিলো। এক সাথে পড়ালেখা দু-জনের। প্রথম পরিচয় কলেজে। সিলেট সরকারী কলেজ এ বিজ্ঞান বিভাগের student ছিলো তারা। খুব ভালো বন্ধুত্ব তাদের।

H.S.C পাশ করার পর কাকতালীয় ভাবে একই UV তে পদার্থবিজ্ঞানে চান্স পায় দুজনেই। একজন আরেক জনেরবেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। অনার্সের প্রথম দিকে মাহীর একটা রিলেশন হয় তার ডিপার্টমেন্ট এর এক বড় ভাইয়ের সাথে। রিলেশন হবার পরে পিয়াস আর মাহীর কিছুটা দুরত্ব সৃষ্টি হয়। আগে যেমন প্রায় বিকেলে তারা ক্যাম্পাস এ বিভিন্ন যায়গায় আড্ডা দিতো বন্ধুদের সাথে,আর এখন সেই আড্ডায় শুধুই মাহী অনুপস্থিত। পিয়াস ভীষন মিস করতো মাহীকে। আগে প্রায় দিন সকালে মাহীর ফোনে ঘুম ভাঙত পিয়াসের, “” কিরে বুদ্ধুরাম, উঠ জলদী। ক্লাস এ আয়। মানুষ এতো ঘুমায় কেমনে?

আজব!!!! উঠ গাধা “” উত্তরে পিয়াস বলতো, “” হুম আমি বুদ্ধুরাম আর তুই হলি ভেটকি মাছ “” বিকেলের আড্ডায় খুনশুটি হতো আরো বেশী। আর রিলেশন হবার পর আগের মতো কিছুই নাই। কিন্তু সে বুঝত, আর ভাবত হয়তো রিলেশন করলে বন্ধুত্বে কিছুটা দুরত্ব সৃষ্টি হয়। পিয়াস মেনে নিয়েছিলো। ২য় বর্ষে মাহী একটা সেমিস্টার ড্রপ দেয়। এই নিয়ে পিয়াসের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়।কয়েক দিন কথা পর্যন্ত বন্ধ ছিলো তাদের। পিয়াস ঠিক বুঝতে পারে না কেন দূরত্ব অভিমান টা পিয়াসেরই বেশী ছিলো। একদিন বিকেলে, পিয়াসকে মাহী ফোন দিয়ে ক্যাম্পাস এর শহীদ মিনার এর কাছে আসতে বলল।

মাহী- কি রে একটা ফোন দিলে কি হতো?

পিয়াস- আমি কে?

মাহী- রাগ করছিস??

পিয়াস- করলেই বা কি??

মাহী- sorry বলব?

পিয়াস- বেশী ফর্মালিটি দেখাস না।

কেনো ডাকছিস বল? মাহী পিয়াসকে সব খুলে বলল,যার সারমর্ম এটাই যে, মাহীর BF এর সাথে মিল হচ্ছিল না,, সে ডিপ্রেশন এ ভুগছিলো। তাই সেমিস্টার ড্রপ। এছাড়া কোন উপায় ছিলো না মাহীর কাছে।

পিয়াস- তুই আর ফোন দিবি না ঐটা কে প্রমিজ কর।

মাহী- প্রমিজ।

তার পর সব কিছু ঠিক আগের মতো।বরং তাদের বন্ধুত্বআরো গাঢ় হলো। একটা পর্যায়ে পিয়াস বুঝতে পারলো সে মাহীর প্রতি দুর্বল হয়ে গেছে। এমন কি তার পরিবারের সবাই ব্যাপারটা জানে। পিয়াসের বড় আপি, ভাইয়া সবাই তাকে মাহীকে নিয়ে ফান করে। কিন্তু পিয়াস নির্বাক। দেখতে দেখতে পিয়াসের অনার্স কমপ্লিট হয়ে গেলো। এক সেমিস্টার ড্রপ দেওয়ায় মাহী পিছনে রইলো। পিয়াসের জন্মদিন ছিলো। পারিবারিক ভাবে ছোট একটা আয়োজন। mবাইরের শুধুই তার কয়েকটা বন্ধু। মাহী নীল একটা পাঞ্জাবী পিয়াসকে গিফ্ট করেছিলো। আর সেদিন সে সারপ্রাইজ হিসেবে জানতে পেরেছিলো যে, মাহীর বিয়ে মোটামোটি ঠিক হয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ান প্রবাসী এক ছেলের সাথে। খবরটা শুনার পর, সে মাহীকে বললো

পিয়াস- কিরে আগেতো কিছুই বললি না?? মাহী– সারপ্রাইজ রে… বন্ধু।

পিয়াস- ওওও

মাহী– ও মানে কি? তুই হ্যাপি না??

পিয়াস — হ্যা অনেক অনেক হ্যাপি। তুই ভালো থাকবি এর চেয়ে বড় কিছু আর কি হতে পারে?

মাহী– ফরহাদ নাম ছেলেটার।

সেখানেই MBA কমপ্লিট করে job এ আছে। পিয়াস কষ্ট লুকানো একটা হাসিদিলো যে হাসিতে মিশে ছিলো অনেক না বলা কথা। পিয়াস তার রুমে যায়। চৌকির নিচের থেকে ছোট একটা বাক্স বের করে সে। বাক্সটাতে ধুলো জমে গেছে। এই বাক্সটা তার আরেক টা আলাদা পৃথিবী। যেটা শুধুই মাহীকে নিয়ে। যে পৃথিবীতে আছে অনেক গুলো টিস্যু, তার দিকে মাহীর ছুড়ে দেয়া তিনটা কালি বিহীন কলম, একটা চাবির রিং, একটা গল্পের ডায়রী যার সবগুলো গল্পই মাহীকে উৎসর্গ করা, মাহীর লেখা কয়েকটা কবিতা আর সলিড মার্কার দিয়ে একটা অফসেট পেইজে মাহীর হাতে লেখা”” বুদ্ধুরাম””পিয়াস”” মাহীর বিয়েতে তার দেয়া নীলপাঞ্জাবী টা পিয়াস পড়েছিলো। কারন কষ্টের রং টা নাকি নীল হয়!!

মাহী তোকে বলতে ইচ্ছা করে- অনেকদিন ভেবেছি, কোনো উত্তর পাইনি তোমার সামনে দাড়ালেই কেন এমন হয় আমার সব কিছু কেন এলোমেলো হয়ে যায় যা বলার ইচ্ছা জাগে মনে , বলতে পারিনা তার কিছুই তোমার সনে এত বছর কেটে গেল তবুও হলনা পরিবর্তন পারলামনা আজো বলতে তোমায় মনের কথা বলতে ইচ্ছা করছিল আমার হাসির পেছনে এত কষ্ট লুকানো তুমি কি দেখতে পাওনা? না পাওয়ার বেদনায় নীল হয়ে আছি কেন তোমার কি জানতে ইচ্ছা করেনা? নাকি তোমার মাঝে ভালোবাসার কিছুই ছিলনা? তোমাকে হলনা কিছুই বলা, জানতেও পারলাম না তোমার মুখে তাকিয়েই ভুলে গেলাম সব যা তুমি বললে নিজের থেকে,

তাই শুনে গেলাম নত মুখে জানো মাহী আজ গান শুনে কাটিয়ে দেয় দিবা-নিশি: একটা গান তোমাকে উৎসর্গ করলাম- শ্রাবনের মেঘগুলি জড়ো হলো আকাশে অঝরে নামবে বুঝি শ্রাবনেই ঝরায়ে আজ কেন মন উদাসী হয়ে দূর অজানায় চায় হারাতে শ্রাবনের মেঘগুলি জড়ো হলো আকাশে অঝরে নামবে বুঝি শ্রাবনেই ঝরায়ে কবিতার বই সবে খুলেছি হিমেল হাওয়ায় মন ভিজেছে জানালার পাশে চাঁপা মাধবী বাগান বিলাসী হেনা দুলেছে আজ কেন মন উদাসী হয়ে দূর অজানায় চায় হারাতে মেঘেদের যুদ্ধ শুনেছি সিক্ত আকাশ কেঁদে চলেছে থেমেছে হাঁসের জলকেলী পথিকের পায়ে হাঁটা থেমেছে আজ কেন মন উদাসী হয়ে দূর অজানায় চায় হারাতে শ্রাবনের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে অঝরে নামবে বুঝি শ্রাবনেই ঝরায়ে।।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত