: “ছাড়ো, চা তৈরি করে ভাত তরকারি রাঁধতে হবে। অনেক কাজ।”
: “না, ছাড়বো না। বলেই শ্যামা’র ঘাড়ের উপর মুখটাকে সেঁটে দিয়ে ওর সরু কোমরটায় আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো শিশির।
: আজব! ছাড়তে বললাম না? আর হুট করে ব্যাটাছেলেদের রান্নাঘরে ঢুকতে হয়না জানোনা? ছাড়ো এবং দূর হও এখান থেকে।
: ঢুকতে হয়। আমার বাবা ঢুকতেন। আমিও ঢুকবো। আমার বৌয়ের রান্নাঘরে আমি ঢুকবোই।
: তুই যাবি নাকি আমি ঝাড়ু হাতে নিবো? আমি তোর মুখ দেখতে চাইনা।
শ্যামার কথায় এবার শিশিরের কপাল ঘামতে থাকলো। পরিস্থিতি খুবই খারাপ। ভয়ে ভয়ে বেচারা বললো, “কই তুমি আমার মুখ দেখছো? আমি তো তোমার পিছনে। এই যে লতার মতো জড়িয়ে আছি তোমায়!”
: হইছে, আর ঢং করা লাগবে না। সমস্ত দুপুর গেছে লোকটা উধাও। কি খেয়েছে, কই খেয়েছে আল্লাহ্ জানেন। ১০১ বার ফোন দিয়েছি। ফোনটাও ধরেনি। সারাবেলা উধাও থেকে এখন সন্ধ্যাবেলায় এসেছে আহ্লাদ করতে।
: আমি স্যরি!
: লাগবে না আমার কোন স্যরি।
: কী লাগবে?
: আমাকে ছেড়ে দিলেই হবে। রান্না করবো। আমার মেলা কাজ। এক লোকের সারাদুপুর যেমন কাজ থাকে, আমার অমন সারা সন্ধ্যা কাজ।
: আমি তো কারোর হাত ধরিনি। কাজ করুক সমস্যা কি?
: উনি দুপুরে খেতে আসেন না, উনাকে একশ’ একবার ফোন করেও পাওয়া যায়না। মোবাইলেও পাওয়া যায় না, অফিসের টেলিফোনেও পাওয়া যায়না। বিয়ের একবছর হয়নি এখনই এমন ঢং-ভং, ভাব-ভঙ্গি শুরু করেছেন উনি।
: ভেবেছিলাম সন্ধ্যায় একসাথে চা খাবো, না মানে পান করবো। শিশিরের কণ্ঠস্বরে দুষ্টামির আভাস পেয়ে শ্যামা দ্বিগুণ রেগে গেল। কোমর থেকে এক ঝাকুনিতে শিশিরের হাতটা সরিয়ে দিয়ে শোবার রুমে চললো। শিশিরও পেছন পেছন গেল। পরিস্থিতি আরও খারাপ। শ্যামা আলমারি খুলে বসেছে। এক এক করে নিজের সব কাপড় গোছাচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে,” দুপুরের সব খাবার কুকুরকে খাইয়েছি। পরে মনটা নরম করলাম। ভাবলাম, থাক্ যা হবার হয়েছে। লোকটা রাতে এসে খাবে তো। রান্নাটা করে রাখি। কিন্তু নাহ্! নরম হওয়া চলবে না।”
: হুম। শুনেছি হাত দিয়ে কাপড় কাচলে নাকি হাত শক্ত হয়। আপনি কি ম্যাডাম এখন শক্ত হবার জন্য নিজের সব কাপড় ধুবেন?
: চুপ! একদম চুপ! কোন কথা হবেনা। আমি বাপের বাড়ী চলে যাবো।
শ্যামার কাপড় গোছানো আর শেষ হচ্ছেনা। আলমারিতে, বারান্দায়, ঘরের এ কোণে, ও কোণে ওর যতো পোশাক রয়েছে সব গোছাচ্ছে। শিশির বুদ্ধি বের করলো। শ্যামার চোখের আড়ালে শব্দহীন তুরি বাজিয়ে নিজের কয়েকটা শার্ট, প্যান্ট, টাই, শীতের পোশাক বগলের নিচে ঝুলিয়ে দরজা সোজা যেতে যেতে বলতে লাগলো,” এ ঘরের মহিলাটির বাপের বাড়ী আছে। আমারও তো বাপের বাড়ী আছে! সে যাবে, আমিও যাবো বাপের বাড়ী। তাঁর তো সবাই আছে। আমার তো মা নাই, বাপও নাই, ভাই-বোন কেউ নাই। ঐখানে আমাকে রেঁধে খাওয়াবে এমন কেউই তো নাই! তাতে কি? বৌয়ের হাতে নির্বাসিত হয়ে কতো পুরুষ দিনকে দিন না খেয়ে থাকে; তাঁরা কি বাঁচেনা? বাঁচে তো। আমিও বাঁচবো। না হয় না খেয়েই বাঁচবো।” এইবার শ্যামা এক চিৎকারে দরজার সামনে এসে কোমড়ে দু’হাত দিয়ে দারোগার মতো করে দাড়ালো।
: অদ্ভুত! ঐ গ্রামে যাবে তুমি? প্রথমত, ওখানে কেউ নাই। দ্বিতীয়ত, এই শীতের মধ্যে গ্রামে গেলে নিশ্চিত তোমার ঠাণ্ডা লেগে যাবে। একদম ফাজলামো করবে না কিন্তু! শার্ট-প্যান্টগুলো যেখানে ছিল সেখানে রাখো। আমি রান্না করতে যাচ্ছি। শিশির শ্যামার থেকে চোখদু’টো অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,” না, না, না, চোখ রাঙিয়ে শাসালে আজ আর ভয় পাবো না। আজ আমি বাপের বাড়ী যাবোই। শ্যামা শিশিরের দিকে এগিয়ে এসে ওর বাঁ গালে ডান হাতটা রেখে বললো,” লক্ষ্মীটি! এর’ম করেনা! ঠাণ্ডা লেগে যাবে ওখানে গেলে।” সকালের মিষ্টি রোদ লাগা মুখের মতন রঙিন হয়ে উঠলো শিশিরের মুখ। কিন্তু সেটা এখন শ্যামাকে বুঝতে দেয়া যাবেনা। শিশির ভাব নিয়ে মুখটা ভার করে বললো,”আমি ভালো মানুষ নয়। খালি উল্টাপাল্টা করি, উধাও হয়ে যাই।বৌয়ের সংসারে থাকার কোন অধিকার আমার নেই। আমাকে কেউ চায় না!”
: কে বললো কেউ চায়না? এমন উল্টাপাল্টা, উধাও হয়ে যাওয়া প্রেমিকটাকেই আমি চাই। সারাজীবন চাই। উধাও হয়ে ফেরত আসা এই ফাগুন হাওয়াটাকেই আমার চিরকাল দরকার! কোথাও যাবেনা তুমি। আমার সাথে আসো। আমি রান্না করবো, তুমি বসে বসে দেখবে।
শিশির বগলের নিচের শার্ট-প্যান্টগুলো উড়িয়ে দিয়ে শ্যামাকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় গিয়ে পড়লো। মুখ থেকে ভারী ভারী ভাবখানা উঠিয়ে দিয়ে দানবের মতো হাহা করে হাসতে হাসতে বললো,” এই উধাও হয়ে যাওয়া প্রেমিকটা আজকে আপনাকে রান্না করতে দিবে না ম্যাডাম। আজ দুপুরে মোবাইল, টেলিফোন সব অগ্রাহ্য করে, না খেয়ে একটানা অফিসের সব কাজ গুছিয়েছি সন্ধ্যায় আপনার সাথে চা খেয়ে, আপনাকে এত্তো এত্তো চুমু দিয়ে তারপর রাতের বেলা আপনাকে আপনার প্রিয় রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাবো বলে।”