কল্পনা

কল্পনা

দুই ঘন্টা হল শ্বশুর বাড়িতে এসেছি। অবশ্য আমি আসতে চাইনি। একদম ইচ্ছেই ছিল না। কিন্তু নোজাইফা আর জোহা মামুনির জোরাজুরিতে আসতে হল। অবশ্য না এসে উপায় ছিলনা। কাল থেকে দুজনেই খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিল। নোজাইফার সাথে, মেয়েটাও একি তালে এগিয়ে চলছে। মায়ের পুরো কপি। সোফায় বসে পত্রিকা পড়ছিলাম। তখনি নোজাইফার বড় ভাই এসে সামনে দাঁড়ালেন..

– আসসালামু আলাইকুম!
– ওয়ালাইকুম আসসালাম, তা কেমন আছ এমদাদ?
– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ্‌ ভাল। আপনি?
– আছি। তা আজকাল কি করছ?
– এই একটা ফার্মের ছোটখাটো একটা চাকরী করছি।
– ওহ। তাইলে তো নুন আনতে পান্তা ফুরায় এইরকম অবস্থা।
– হ্যা, ওইরকমি।
– হাহাহা! কপাল।

মনটা খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু কথা সত্য। তাহলে এখানে মন খারাপের কিছু নাই। কপালে যা আছে তা হবে। ওর ভাই উঠে যাওয়ার দশমিনিট পরই দেখলাম নোজাইফা ব্যাগপত্র নিয়ে আমার সামনে এসে হাজির।

– কি ব্যাপার! কি হয়েছে, ব্যাগপত্র নিয়ে কোথায় যাচ্ছ?
– বাসায় চলে যাব।
– মানে?
– বাসায় যাব বলছি।
– একটু আগেই তো আসলাম, এখন আবার চলে যাবে?
– হ্যা, কানে কি কম শুন না কি। এই বাসায় আমি আর এক ফোটা জলও স্পর্শ করব না।

জোহা এসে আমার কোলে উঠে গেছে। নোজাইফা আমার একহাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। এখানে আসার জন্য দুজন কি কাণ্ডটাই না করল, আর এখন এসেই চলে যাচ্ছে। ব্যাপার কি? রিক্সায় উঠে নোজাইফার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তার চোখে পানি। মনে হচ্ছে বেশি রেগে গেছে। অতিরিক্ত রেগে গেলেই ওর চোখ দিয়ে পানি চলে আসে।

– আব্বু?

জোহার দিকে তাকালাম। মায়ের কান্না দেখে মেয়ের চোখেও জল।

– মামুনি কি হয়েছে?
– খালামণি না খুব পঁচা। আম্মুর সাথে ঝগড়া করছে।
– কেন?
– খালামণি বলছে তুমি না কি উবান্ডার ছেলেদের মত কালো। তাই আমিও খালামণির হাতে কামড় দিয়ে রক্ত বের করে দিছি।
– মামুনি, এসব ঠিক করনি। আর ওটা উবান্ডা না উগান্ডা হবে।
– আম্মু বলছে ভাল করেছি।

ঘটনা তাইলে এই। আমি আবার ভাবলাম কি না কি? এটা অবশ্য ঠিক, সব মেয়েরাই নিজেদের স্বামীর সাথে কেউ মজা করলে নিতে পারেনা। এটা তাদের আলাদা একটা গুণ বলা যেতে পারে। তবে যদি ঝগড়াটা খাওয়াদাওয়ার পর করত তাইলে ঠিক ছিল। খাবারের গন্ধটা আমার নাকে লেগে আছে। অবশ্য খাওয়াদাওয়ার জন্যও কপাল লাগে। আমার সেই কপাল নেই। নোজাইফার দিকে তাকিয়ে দেখি সে এখন ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করে দিয়েছে। আমি বললাম..

– তোমার কিন্তু এভাবে রিয়েক্ট করা ঠিক হয়নি। হয়ত উনি মজা করে বলেছেন।
– মজা করার কি আর কোনো বস্তু নেই না কি যে শুধু তোমাকে নিয়েই করবে। আর ভাই কি বলছে তোমাকে?
– কই কিছু না।
– আমি কিন্তু সব শুনছি। ওর সাহস কি করে হয় তোমাকে এসব বলার।
– আচ্ছা, ঠিক আছে চুপ থাকো।
– আমার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ট সম্পদ তুমি আর এই মেয়ে। আমি আর কিছু চাইনা।
– বুঝতে পারছি। তবে ঝগড়াটা খাওয়াদাওয়ার পর করতে পারতে? ক্ষুধায় তো শেষ।
– এই ব্যাটা বর, চুপচাপ বসে থাক। আমি তর জন্য ঝগড়া করছি, আর তুই খাওয়ার চিন্তা করছিস? ব্যাটা বিশ্ব খাদক।

উপাধিটা খুব ভালই দিয়েছে। তবে আমি বিশ্ব খাদক নই। শুধু সিঙ্গারার পাগল আছি। বাস স্ট্যান্ডে এসে রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম। পরবর্তী বাস খুঁজে উঠে পড়লাম। গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে। জোহা মামুনিটা আমার কোলে ঘুমিয়ে পড়ছে। নোজাইফা কাঁধে মাথা রেখে চুপচাপ বসে আছে। চোখে এখনো জল দেখা যাচ্ছে।

– সরি এমদাদ। (নোজাইফা)
– সরি বলছ কেন?
– এমনি।

সে আবারও কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নিয়েছে। জানালা ভেদ করে বাতাস এসে ঢুকছে। তার চুল গুলা এলোমেলো হয়ে উড়ছে। আমি মুগ্ধ ভাবে তাকিয়ে আছি, আমার এ মুগ্ধতা যেন শেষ হওয়ার নয়। হঠাৎ করেই যেন বলতে ইচ্ছে করছে…

আমি তার প্রেমে পড়েছি! কখনও মুগ্ধ রূপ বা সৌন্দর্যে, কখনও আবার কাজল লেপটানো চোখে । আমি তার প্রেমে পড়েছি! শ্যামল মায়াময় মুখে, কিংবা মায়াবী চোখের দৃষ্টিতে। আমি বারবার, পতিব্রতা সেই কাল্পনিক রূপসীর প্রেমে পড়েছি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত