চৌদ্দ বছরের এক কিশোরীকে বিয়ে করে সতেরো বছরের কিশোর আজাদ ভীষণ বিপদে পড়েছে। বউ কিছুই বোঝে না, না বুঝে সংসার, না বুঝে স্বামী। সারা দিন শুধু কিত্ কিত্ খেলেই সে দিন কাটায়। মাঝে মাঝে খেলতে খেলতে বাপের বাড়িও চলে যায়। বউকে গোসল করানো, চুল ঘষে দেয়া থেকে শুরু করে চুলে তেল মাখিয়ে বেনি করে দিতেও হয় আজাদকেই। এমনকি খাইয়ে না দিলে সারা দিন না খেয়েই থাকে আজাদের আদরি বউ। আসলে সারা দিন কিত্ কিত্ খেলার চাপে রাবুর খাওয়ার সময় পায় না। এই সব দেখে আজাদের মা ভীষণ বিরক্ত হয়ে বলেন-
–লাজ লজ্জা সব দুনিয়াত্তে উঠ্যা গেছে, কেয়ামত আইলো বুইলা।
উনার কথাতে রাবুর কিচ্ছু যায় আসে না। আজাদ ওর মাকে বুঝাতে গিয়ে উল্টা ঝাড়ি খায় কিন্তু সে সব সময় রাবুর সামনে ঢাল হয়ে দাড়িয়ে থাকে। রাত্রে ঘুমানোর সময় আজাদকে রাবুর মাথায় হাত বুলিয়ে রাজপুত্তুরের গল্প শোনাতে হয়। রাবু ঐ রাজপুত্তুরকে কল্পনা করতে করতে ঘুমিয়ে যায়। রাবুর পাশে শুয়ে থাকা বাস্তব রাজপুত্তুরকে চোখে পড়ে না রাবুর। একদিন রাতে আজাদ তার ভালবাসার কথা বলে ভীষণ বিপদে পড়ে গেলো।
–রাবু তোমারে একখান কথা কইতে চাই
–কি কইবা? কও
–রাগ করবা না তো?
–রাগ করুম ক্যা?
–তাইলে কমু?
–হ কও
আজাদ কথাটা বলার আগে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। তারপর বিসমিল্লাহ্ বলে চোখ বন্ধ করে বললো-
–রাবু আমি তোমারে ভালোবাসি
–ওমা তাই? আব্বাও আমারে খুব ভালোবাসে।
রাবুর এমন অবুঝ কথায় আজাদ হতাশ হলেও হাল ছাড়লো না। রাবুকে বোঝানোর কোনো ভাষা খুঁজে না পেয়ে আজাদ বললো-
–উহু এইডা অন্য ভালোবাসা।
–হেইডা আবার কেমুন ভালোবাসা আজাদ ভাই?
রাবু যখন আজাদকে আজাদ ভাই বলে ডাকে তখন আজাদের সব অনুভূতি ফিকে হয়ে যায়। কাচুমুচু মুখ করে আজাদ বলে-
–তোমারে না কইছি আমারে ভাই ডাকবা না!
–তো কি কমু?
–হ্যাগো ওগো কইবা?
–সেই ছুডু কাল থাইকাই তো তোমারে আজাদ ভাই ডাকি তখন তো হ্যাগো ওগো কইতে কওনী আজাদ ভাই?
–তখন তো আর বিয়া হইছিল না!
–বিয়া হইছে তাও তো আমি আব্বারে এখনো আব্বাই ডাকি তাইলে তোমারে আজাদ ভাই কওন যাইবো না ক্যা?
–স্বামীর নাম ধইরা ডাকতে চাইলে ডাকো কিন্তুক ভাই ডাইকো না!
–তো কি চাচা মামা কমু নাকি?
রাবুর কথায় আজাদ স্তব্ধ হয়ে যায়। সে বুঝতে পারে যে এই মেয়ে এই সব এর মানে বুঝবে না। আজাদ হতাশ হয়ে বলে-
–নাহ আজাদ ভাই-ই কইবা। আজাদের শেষ কথাটা শুনে রাবু খুশি হয়ে আজাদকে জড়িয়ে ধরে হুট করে গালে একটা চুমু বসিয়ে দিয়ে বলে-
–বুবুও আমারে খুব ভালোবাসে, বুবুরেও আমি এমনেই চুম্মা দেই তাই তোমারেও দিলাম আজাদ ভাই।
বলেই রাবু খিলখিল করে হাসতে শুরু করে। আজাদ মুগ্ধ নয়নে রাবুকে দেখে। যে কারণেই রাবু চুমু দিক না কেনো আজাদের মনে শিহরণের ঝড় উঠে যায়। কিন্তু এই অবুঝ মেয়েটাকে সেটা বোঝানোর ভাষা পায় না আজাদ।
–রাবু তুমি কবে ভালোবাসা বুঝবা? কবে স্বামীর সোহাগ বুঝবা?
–সোহাগ কি আজাদ ভাই?
সোহাগ কি এই প্রশ্নে আজাদ থমকে যায়। কি করে সে রাবুকে এটা বোঝাবে! এটা যে বর্ণনার মত কোনো বিষয় নয়।
রাবু গেছে বাপের বাড়ি নায়রে। যদিও একই গ্রামে রাবু আর আজাদের বাড়ি তবুও মেয়েদের নায়র করানো বাবা মায়ের কর্ত্বব্য। আজাদের মন ভার, রাবু এক সপ্তাহ বাপের বাড়ি থাকবে, এত দিন রাবুকে ছেড়ে থাকতে হবে ভেবেই আজাদের দম বন্ধ হয়ে আসে।
তার কত সাধনার ধন রাবু। একই গ্রামের এ প্রান্তে আর ও প্রান্তে আজাদ আর রাবুদের বাড়ি। সেই এগারো বছর বয়স থেকেই আজাদ রাবুকে ভালোবাসে তখন রাবুর বয়স ছিল আট বছর কিন্তু এত বছরে এই ভালোবাসাটা রাবুকে বুঝিয়ে উঠতে পারেনী সে। যেখানে বারো বছরে মেয়েরা অর্ধেক সংসার বুঝে ফেলে সেখানে রাবু কিছুই বোঝে না। রাবুকে পাবার জন্য আজাদের পাগলামীর শেষ ছিল না। রাবুদের বাড়ির পাশের বড় কাঁঠাল গাছটাতে বসে থেকে সে রাবুকে দেখতো। এসব ঘটনা রাবুর জানার বাহিরে ছিল। এক দিন রাবুর বাবার চোখে পড়ে গিয়ে সে কি কেলেঙ্কারী কান্ড! বেচারা আজাদ ভয়ে ধুপ করে গাছ থেকে পড়ে গেলো। এরপর আর কি বা বলার থাকে! রাবু খায় দায় কিত্ কিত্ খেলে, পাড়া বেড়ায় আর সখ হলে স্কুলে যায়। আজাদ স্কুলে যায় আর অবসরটা কাঁঠাল গাছে উঠে বসে থাকে। নদীর ওপারে স্কুল তাই নৌকোয় চড়ে রাবুকে স্কুলে যেতে হয়। যেদিন রাবু স্কুলে যায় সেদিন আজাদ নৌকো ভাড়া নিয়ে মাঝির বেশ ধারণ করে। আজাদকে মাঝি রূপে দেখে রাবু হেসেই ব্যকুল হয়, বোঝে না এই মাঝি রূপের বিশেষত্ব।
–আজাদ ভাই তুমি মাঝি হইল্যা কবে থাইকা?
আজাদ রাবুর প্রশ্নের জবাব খুঁজে পায় না। আজাদ মনে মনে খুশি হয় রাবুকে কাছে থেকে দেখতে পায় বলে। সেই খুশি আজাদ দাঁতে দাঁত চেপে উপভোগ করে কিন্তু কোনো ইঙ্গিতেই বুঝিয়ে উঠতে পারে না যে সে তাকে ভালোবাসে।
রাবুর জীবনটা কিত্ কিত্-ময়। সারাটা দিন বান্ধবীদের নিয়ে কিত্ কিত্ খেলেই জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পায় রাবু। ভালোবাসার মানে কি সেটা রাবু জানে না। রাবু শুধু জানে রাবুর বাবা রাবুর জন্য হাট থেকে বাতাসা আর কদমা কিনে আনে তাই বাবা তাকে ভালোবাসে। এত বড় মেয়েকে খাইয়ে দিতে হয়, তেড়ে এনে গোসল করাতে হয়, মাথায় তেল দিয়ে চুল বেঁধে দিতে হয়, সব কিছু আগে রাবুর বড় বোন রেবা করতো। রেবার বিয়ের পর এই কাজ গুলো রাবুর মাকেই করতে হয়। রাবুর মা এই সব কাজ করে আর রাবুকে বকে। এসব বকা ঝকা নিয়ে রাবুর কিচ্ছু যায় আসে না। রাবু ওর মাকে বলে-
–ঐ মা এতই যখন বিরক্ত লাগে তখন আমারে খেলা থাইকা টাইনা আনলা ক্যা? আমি কি কইছি যে আমার খিদা লাগছে আমি খামু?
–সারা দিন তো পাইছস ঐ এক কিত্ কিত্ খেলা। বিয়ার পরেও কি কিত্ কিত্ খেইলাই জীবন কাটাইবি নাকি?
–হ কাটামু
–তাইলে কেউ তরে বিয়া করবো না।
–না করে না করবো তাতে আমার কি? আমি কিত্ কিত্-ই খেলুম।
কোনো কালেও রাবুর মা রাবুর সাথে তর্কে পেরে ওঠেনী। এভাবেই দিনে দিনে বড় হয় রাবু আর আজাদ। কিন্তু সেই সরলা বালিকা রাবু অবুঝই থেকে যায়। বয়সের সাথে সাথে আজাদের ভালোবাসার ঘনত্ব বাড়ে। কিন্তু রাবুর মাঝে পরিপক্কতার কোনো আশঙ্কাই নেই, তবুও আজাদ হাল ছাড়ে না। অনেক কৌশলে রাবুকে বোঝাতে গিয়ে আজাদ ব্যর্থ হয়। হঠাৎ একদিন রাবুর বিয়ের কথা শুনে আজাদ অন্য রকম হয়ে যায়। ঘর থেকে বের হয় না, কারো সাথে কথা বলে না এমনকি নাওয়া খাওয়াও ঠিকঠাক করে না। ছেলের এমন অবস্থা দেখে আজাদের বাবা একদিন ছেলের ঘরে গিয়ে বললেন-
–তর কি হইছে বাজান? এমন কইরা সারা দিন ঘুমষি মাইরা থাকস ক্যা, কি হইছে আমারে ক!
আজাদ কিছু বলতে পারে না, বাবার কথা শুনে অনকটা সময় থমকে থাকে আজাদ। আজাদের বাবার চোখে উৎকন্ঠা, উনি কিছু শোনার অপেক্ষায় চেয়ে আছেন ছেলের মুখের দিকে। হঠাৎ আজাদ বাবাকে জড়িয়ে ধরে হু হু করে কেঁদে উঠে বলে-
–রাবুরে না দেইখা বাঁচুম ক্যামনে আব্বা?
আজাদের বাবার বুঝতে আর বাকী নেই যে আজাদ কি চাইছে। এরপর আজাদের বাবা রাবুর বাবার সাথে কথা বলে বিয়ে পাকা করে ফেলে। এই সেই সাধনার সম্পদ যে এক সপ্তাহের জন্য বাপের বাড়ি যাচ্ছে বলে আজাদের কলিজা ছিড়ে যাচ্ছে। বাপের বাড়ি এসে রাবু বেশ খুশি। আজাদের ভাবনা তার মাথাতেই নেই। কিন্তু নিজ হাতে সে খাবে না, তাকে আগের মতই খাইয়ে দিতে হবে এটাই রাবুর আবদার। রাবুর মা সংসারের কাজের ঝামেলার মধ্যেও রাবুকে খাইয়ে দেয়। আর নানান প্রশ্নে জর্জরিত করে রাবুকে।
–এই তর তো বিয়া হইয়া গেছে অহন শ্বশুর বাড়ীতে ক্যাডা খাওয়াইয়া দেয় তরে?
–ক্যা আজাদ ভাই খাওয়াইয়া দেয়।
–তওবা তওবা স্বামীর নাম মুখে আনছস হ্যারপর আবার ভাই ডাকতাছস কত পাপ হইতাছে জানস?
–তো কি কইয়া ডাকুম?
–তাই বুইলা নাম ধইরা ভাই ডাকবি?
–ছুডু কাল থাইকা তো আজাদ ভাইরে আজাদ ভাই-ই ডাকছি তাইলে অহন ডাকলে কি হইবো?
–আমি তর আব্বারে নাম ধইরা কি ভাই ডাকি?
–তুমি কি আব্বারে বিয়ার আগে চিনতা নাকি?
আর তুমি তো বুবুর নাম লইয়া আব্বারে রেবার আব্বা কইয়া ডাকো। নামের শ্যাষে আব্বা ডাকার থাইকা ভাই ডাকাই ভালা। আর আমার তো আর পোলা মাইয়া নাই যে তাগো নাম নিয়া হ্যার বাপেরে ডাকুম! রাবুর এমন বেশরম কথায় চুপসে যায় রাবুর মা। জানেন এরপর রাবু একটার পর একটা বেফাঁস কথা বলবে। তাই রাবুর মা আর কথা বাড়ায় না। বাপের বাড়ি রাবুর মন টিকছে না। রাবুর মা রাবুর ঠিকঠাক যত্ন নিতে পারছে না। চুলে তেল দিতে গিয়ে নাকি রাবুর মা চুল ধরে জোরে টানে এই অভিযোগে এই ভর সন্ধ্যেয় রাবু শ্বশুর বাড়ী চলে যাবে। বাবা মা কারো কথা না শুনে রাবু এক দৌড়ে শ্বশুর বাড়ী চলে গেলো।
দু’ দিন ধরে রাবুকে দেখতে না পেয়ে আজাদের মন শোক নেমেছে, সব সময় তো আর শ্বশুর বাড়ী যাওয়া যায় না তাই সে দুপুর বেলা রাবুদের বাড়ির পাশের সেই কাঁঠাল গাছে উঠে রাবুকে দেখে এসেছে তবুও তার পিপাসা মেটেনী। নিজের বউকে দূর থেকে চুরি করে দেখাটাকে আজাদের দেখা মনে হয়নী। ভর সন্ধ্যায় বাতি নিভিয়ে শুয়ে আছে সে। হঠাৎ দরজা ঠেলে প্রদীপ হাতে রাবু রুমে ঢুকতেই আজাদ চমকে উঠে বসে পড়লো। রাবুর তো আজ আসার কথা নয় আর এই সন্ধ্যে বেলায় সে আসবেই বা কেনো? মনের ধান্দা ভেবে আজাদ শুয়ে পড়তেই রাবু প্রদীপ রেখে আজাদের চুল টেনে ধরে বললো-
–তুমি আমারে দেখতে যাওনী ক্যা বর? রাবুর মুখে বর শব্দটা শুনে আজাদ অবাক হয়ে চেয়ে থেকে বললো-
–আজাদ ভাই না কইয়া বর তুমি কইলা নাকি অন্য কেউ কইলো? আজাদের কথা শুনে রাবু রেগে গিয়ে আরো জোরে চুল টানতে শুরু করলো।
–সব চুল ছিইড়া নিবা নাকি বউ?
–হ সব ছিইড়া নিমু
–কি অপরাধ করছি আমি? রাবু চুল ছেড়ে দিয়ে বললো-
–আমাগো একখান পোলা হইবো তার নাম আমার নামের লগে মিল রাইখা রইচ রাখুম আর তোমারে রইচের বাপ কইয়া ডাকুম।
হঠাৎ রাবুর মুখে এমন কথা শুনে আজাদ হতবাক হবার ঠ্যালায় লজ্জা পেতেই ভুলে গেলো। সে বুঝেই উঠতে পারছে না যে এখন তার কি বলা উচিত। রাবু এমন একটা কথা বলেও লজ্জা পেলো না দেখে আজাদ আরো হতবাক হলো। যে মেয়ে স্বামী সংসার কিচ্ছু বোঝেনা সে মুখ ফুটে মা হতে চাইছে। রাবু খিল খিল করে হেসে উঠে বললো-
–শোনো বর, পোলা পাইন যে কালেই হোউক না ক্যা আমি আইজ থাইকাই তোমারে রইচের বাপ ডাকুম আর তুমি আমারে রইচের মা ডাকবা।
–পোলা পাইন হওয়ার আগেই এই সব কইয়া ডাকলে মাইনষে কি কইবো?
–যা ইচ্ছা কইকগা আমি তোমারে রইচের বাপ কইয়াই ডাকুম।
আজাদ ওর পাগলী বউয়ের নতুন পাগলামীতে খুশি হয়। সে চায় শত যুগ ধরেই তার রাবু এমন পাগলীই যেনো থেকে যায়। এমন পাগলামীতে আরো দু’বছর কেটে যায়, আজাদ ঊনিশ বছরের যুবক আর রাবু ষোল বছরের ষড়ষী। রাবুর মনেও ফাগুন দোলা দেয়। কিত্ কিত্ খেলতে রাবুর আর ভাল্লাগে না, এখন সে শ্বাশুড়ীর সাথে দু’ একটা কাজও করে। গঞ্জে আজাদের বাবার একটা মুদির দোকান আছে, এক বছর ধরে আজাদ সেই দোকান সামলায়। আগের মত রাবুকে সে সময় দিতে পারে না।
প্রথম যে দিন আজাদ দোকানে বসার জন্য গেলো সেদিনটাতে রাবুর জীবনটা উল্টে গেলো, খাইয়ে দেবার মানুষটা নেই বলে সারা দিন রাবুর খাওয়া হলো না। আর গোসলটাও একই কারণে হলো না। ওদিকে সারা দিন রাবুকে দেখতে না পেয়ে আজাদের অস্থিরতার সীমা নেই। ছেলের অস্থিরতা দেখে আজাদের বাবা ছেলেকে বিকেল গড়াতেই ছুটি দিতে বাধ্য হলো। সাইকেল নিয়ে গঞ্জে থেকে বাড়ি ফিরতে আজাদের সন্ধ্যে গড়িয়ে গেলো। বাড়ি ফিরে দেখে তার বালিকা বধূ না খেয়ে, না নেয়ে, না কিত্ কিত্ খেলে বসে আছে। বউয়ের মলিন মুখ দেখে আজাদ হতভম্ব। সে ভাবতেই পারেনী যে, খাইয়ে না দিলে রাবু সারা দিন না খেয়ে থাকবে। আজাদ মনে মনে ভাবে রাবু তো চাইলেই তার মায়ের কাছে গিয়ে খেয়ে আসতে পারতো! আজাদকে দেখে রাবু অগ্নি মূর্তি ধারণ করে আজাদের চুল ধরে টানতে শুরু করলো তারপর এক সময় কেঁদেই দিল। আজাদ হতবাক থেকে হতবাক হয়েই চলেছে। রাবু তার সারা দিনের অপেক্ষার শোধ নিচ্ছে। আজাদ হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
–কি হইছে কইবা নাকি?
–কমু না তোমারে
–তাইলে কি কইরা বুঝুম যে আমার রইচের মা রাগ করচে ক্যা?
–দুপুরে একবার বাড়িত আইলে কি ক্ষতি হইতো?
–তোমার মায়ের কাছে গিয়া এক দিন খাইলে কি ক্ষতি হইতো শুনি?
–মা ভালো কইরা খাওয়াইতে পারে না।
রাবুর কথায় আজাদ অবাক হয়ে রাবুর দিকে চেয়ে থাকে। রাবু যে একটু একটু করে আজাদকে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা আজাদ টের পায়। এরপর আজাদ গঞ্জে থেকে দুপুরে বাড়ি আসে তার বালিকা বউকে গোসল করাতে আর খাওয়াতে। দিনে দিনে রাবু বড় হয়, কিছু অভ্যেস বাতিল হলেও কিছু অভ্যেস রয়েই যায়। রাবুর বদলে যাওয়া মনে আজাদের প্রতি গভীর ভালোবাসার জন্ম হয় যেটা রাবু উপলব্ধি করলেও আজাদের কাছে অপ্রকাশ্যই রয়ে যায়। কিছু ভালোবাসা বোধ হয় প্রকাশের অবকাশ রাখে না। যাকে ভালোবাসি তাকে কখনোই ভালোবাসি বলা হয়নী তাই বলে কম ভালোবাসি না তো!
রাবু আর আজাদ দু’জনার ভালোবাসাই অপ্রকাশ্যে একটা প্রেমের গীতি রচনা করে। দু’জনার মনে মনে রাখা ভালোবাসা গুলো ভেতরে ভেতরে একটা মহল গড়ে যার কোনো পরিসীমা নেই। রাবু সারা দিন ধরে আজাদের জন্য অপেক্ষা করে। রাতে আজাদ বাড়ি ফিরে রাবুকে খাইয়ে দিয়ে রাজপুত্তুরের গল্প শুনিয়ে ঘুম পাড়ায়। আজাদের বুকে মাথা রেখে চোখ বুজে রাবু রাজপুত্তরকে কল্পনা করে, তার বন্ধ চোখের আঙিনায় আজাদ এসে সামনে দাড়ায়।