-আপনি আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না। বাসর ঘড়ে ঢুকে বউয়ের কথা শুনে অবাক হোলাম না।কারণ, এটা আমার দ্বিতীয় বিয়ে ।আর ওর প্রথম।কোন মেয়েই দ্বিতীয় বিয়ের কোন পাত্রকে মেনে নিতে চাইবেনা এটাই স্বাভাবিক। আমি বললাম,
– আচ্ছা, সমস্যা নেই।তো আমি কি আপনার সাথে বেড শেয়ার করতে পারি, নাকি সোফায় যাবো?
-সোফায় যান।
-আচ্ছা।একটা প্রশ্ন বারবার করতে মন চাচ্ছে, করতে পারি কি?
– আপনি কি প্রশ্ন করবেন আমি জানি, আমি যেনে শুনেও কেন আপনাকে বিয়ে করেছি তাইতো?
-জ্বি!
-আমার বাসা থেকে বিয়ের চাপ দিচ্ছিলো। আমার কাছে দুটো অফশন ছিলো, এক আপনাকে বিয়ে করলে আমি আমার লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারবো।আর দুই হচ্ছে বাসা থেকে আমাকে আর পড়াশোনা করানো হবেনা।তাই ভেবে চিন্তে এটাই ডিসিশন নিলাম।
-আচ্ছা বুঝলাম।
সোফায় এসে শুয়ে পরলাম।ভাবতে থাকলাম পুরোনে দিনের স্মৃতি গুলো,নিলীমার সাথে কাটানো দিনগুলো।ভার্সিটিতে উঠে নিলিমার সাথে পরিচয়,তারপর বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা।ভালোবাসা রাগ অভিমান সব কিছু মিলিয়ে কেটে যাওয়া ৪ বছরের একেকটা দিন একেকটা মূহুর্ত একেকটা স্মৃতি বয়ে বেড়ায়। ভার্সিটি লাইফ শেষে ওর বাসা থেকে বিয়ের চাপ দেয়,এর মধ্যে আমারও একটা মাল্টিনেশনাল কোম্পানিতে চাকরী হয়।তারপর পারিবারিক ভাবে বিয়ে।আমার পরিবার গ্রামে থাকে। শহরে আলাদা বাসায় উঠি দুজনে ।আমি সারাদিন অফিসে থাকি সন্ধায় বাসায় ফিরি সারাদিন ও বাসায় একাই থাকে বোর হয়, ভেবে ওকে একটা চাকরী নিতে বলি। নিলিমাও রাজি হয়।
চাকরী নেওয়ার পর আমরা রুটিন করে রান্না করি আমার অফিস একটু দেড়িতে তাই আমি সকালের রান্না আমি করি।আর ওর অফিস তাড়াতাড়ি শেষ তাই রাতের রান্না ও করে।ভালোই কাটছিলো দিনগুলো।কিন্তু হঠাৎ করে নিলিমার মাঝে পরিবর্তন লক্ষ করি ।রাতে দেড়িতে ফেরে অফিস থেকে।আমাকে এভয়েড করে।রাতে আমি ওকে স্পর্শ করতে চাইলে বলে অফিসে অনেক কাজের প্রেশার দেখোনা দেরিতে আসি, আমি অনেক টায়ার্ড ।আমি আর কিছু বলিনা, ওর পরিবর্তন গুলো লক্ষ্য করে যাই।
একদিন নিলীমা আমাকে বলে , কোম্পানির কানাডায় একটা প্রজেক্ট আছে।অফিস থেকে তার বস সহ তিনজন যাবে কানাডায়।সেখানে সেও নাকি সিলেক্ট হয়েছে।আমি প্রথমে না করলে ও বলে, আমি ওখানে যাওয়ার জন্যই এতোদিন ধরে পরিশ্রম করতেছি, ওখানে ভালো প্রেজেন্টেশন করতে পারলেই ভালো একটা পদে প্রমোশন নিশ্চিত, কয়টা দিনেরইতো ব্যাপার।আমি পরে ভেবে বলি আচ্ছা যাও।ও শুনে খুশি হয়।সেদিন রাতে ও আমাকে স্পর্শ করতে দেয়, আমিও খুশি হই ওর মন ভালো দেখে। দুইদিন পরই ও কানাডা চলে যায় ।আমি ওকে এয়াপোর্টে ড্রপ করে দিয়ে বাসায় আসি।রাতে ঘুমাতে গিয়ে আমার বালিশের নিচে ভাজকরা একটা চিরকুট দেখতে পাই। যার উপরে গাড়ো নীল কালি দিয়ে লেখা, “ক্ষমা করে দিও আকাশ ।” “এইযে শুনছেন.. ” মেয়েটির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে।সকাল হয়ে গেছে।সারাদিন ক্লান্ত ছিলাম।রাতে ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।
-সকাল হয়ে গেছে, আপনার আম্মা এসে ডেকে গেছেন ।
-আচ্ছা।
-আমি এখন গোসলে যাবো, সকাল বেলা গোসল করার অভ্যাস আমার।
– আচ্ছা।
– আর একটা কথা আমাদের মধ্যে যে এরকম সম্পর্ক, আমার এবং আপনার পরিবারের কেউ যেন তা জানতে না পারে,ওকে?
– আচ্ছা ।
-বারবার আচ্ছা আচ্ছা বলছেন কেন? আমি বিরক্ত হচ্ছি।
-ওকে আর বলবোনা।
-ওকে।
-ওকে আচ্ছা, আপনার নামটা এখনো জানা হয়নি।বলবেন কি?
মেয়েটি এবার সত্যি বিরক্ত হয়ে বললো,নাম নবনী।যাকে বিয়ে করেছেন তার নামটাও এখনো শুনেন নাই! কি লোক আপনি? আপনার জন্য আমার জীবনটাই শেষ। আমি বললাম, “হুম” আমারো সকাল বেলা গোসলে করার অভ্যাস। গোসল করে সবার সাথে নাস্তা করলাম।সারাদিন নবনীর সাথে কয়েকবার দেখা হলো।রাতের বেলা ভালো করে দেখতে পারিনি, দিনের বেলা শাড়িতে মেয়েটাকে দারুণ লাগছিলো।মেয়েটাক ে শাড়ি পড়া দেখে আমার নিলীমার কথা পড়ে গেলো ।ওকে আমি কলেজে নবীন বরণ অনুষ্ঠানে প্রথমে শাড়ি পড়া অবস্হায় দেখেই প্রেমে পড়ে গেছিলাম।নিলীমা আমার নেই কিন্তু স্মৃতিগুলো এখনো আমারই রয়ে গেছে। দিনের আলো ফুরিয়ে রাত হলো,রাতের খাবার পর রুমে সবাই মিলে আড্ডা দিলাম।এগারোটার দিকে সবাই চলে গেলো।আমি দড়জা লাগিয়ে সোফায় যাচ্ছিলাম । নবনী বললো, আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
-জ্বি বলুন।
-আপনি ঢাকায় যেতে চাচ্ছেন কোনদিন?
-চারদিনের ছুটি নিয়ে এসেছি, দুদিন তো হলো।আগামী পরশু যেতে চাচ্ছি।
-আমাদের বাসায়তো কালকে যাবেন?
-জ্বি।নিয়ম অনুযায়ী তো যেতেই হবে।ওখান থেকেই গাড়িতে উঠবো নাহয়।
-হুম সেটাই বেটার।আপনার ওখানের বাসায় কয়টা রুম।
-এখনো বাসা নেওয়া হয়নি।আমি মেসে থাকি।
-আচ্ছা, আমাকে নিয়ে কই রাখবেন তাহলে।
-বন্ধুকে ফোন করে দিয়েছি বাসা দেখতেছে।কালকে জানাতে চাইছে।চিন্তা করিয়েন না, গেষ্ট রুম থাকবে।
-আচ্ছা, সেটাই।
-আচ্ছা ঘুমান তাহলে।গুড নাইট।
-আপনার জন্য গুড নাইট আমার জন্য ব্যাড নাইট।জীবনটাতো শেষ করে দিছেন।
আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম।শুয়ে নিলীমার কথা ভাবতে লাগলাম নিলীমার স্মৃতিগুলো।চার ভাজে মোড়ানো নীল কালিতে লেখা চিঠিটার কথা। নিলীমা তাতে লিখেছিলো, “আকাশ তুমি যতক্ষণে চিঠিটা পেয়েছো ততক্ষণে আমি হয়তো ইংল্যান্ডে চলে এসেছি অথবা ইংল্যান্ডের উদ্দেশ্যে উড়াল দিয়েছি। কি আশ্চর্য হলে? তুমি ভাবতেছো আমি আমি অফিসের কাজে কানাডা যাচ্ছি ।এটা সত্যি না।আমি আসলে কানাডা যাচ্ছিনা যাচ্ছি ইংল্যান্ডে।আমি যখন নতুন অফিসে জয়েন্ট করি তখনই আমার অফিসের বস নিলয়ের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠে।এক বছর আগে ওর ওয়াইফ মারা যায়।
দুই বছরের একটা বাচ্চা আছে নাম সিজান।খুবই মায়াবী।মাঝেমধ্যেই সিজানকে অফিসে আনতো নিলয়।আমার কাছেই থাকতো সবসময় ।আস্তে আস্তে বাচ্চাটাকে আমার খুব ভালো লেগে যায়।ওকে ছাড়া আমি থাকতেই পারিনা। দুই মাস আগে নিলয় আমাকে একদিন বলে, ও নাকি আমাকে পছন্দ করে।আমি প্রথমে না করে দেই ।কিন্তু আস্তে আস্তে কেমন জানি আমি পাল্টে যাই। নিলয়কে আমার ভালো লাগতে শুরু করে, তোমাকে আমার তখন অসহ্য লাগতো, সেজন্য তোমাকে এভয়েড করতাম।অফিস থেকে নিলয়ের সাথে প্রতিদিন ওর বাসায় যেতাম সিজানকে দেখে আসার জন্য সেজন্য আমার দেরি হতো বাসায় আসতে।
কিছুদিন আগে নিলয় বললো সিজানকে নিয়ে সে ইংল্যান্ডে চলে যেতে চায় সেখানে সে ব্যবস্যা সামলাবে।আমিও চাইলে যেতে পারি তাদের সাথে।আমি প্রথমে না করি, কারণ তুমি কষ্ট পাবে ভেবে।আমাদের এতবছরের ভালোবাসার কথা ভাবি, কিন্তু সবকিছু আমার কাছে তুচ্ছ মনেহয়। কল্পনা করে দেখি, সিজান আর নিলয়কে ছাড়া আমি নিজেকে কল্পনা করতে পারিনা এখন।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো আকাশ।” সকালে ঘুমথেকে উঠি নবনীর ডাকে।ওসব ভাবতে আজকেও আবার কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি মনে নেই।নবনী গোসল করে আজকেও শাড়ি পড়েছে শাড়িতে ওকে দারুণ লাগছে। মনে হচ্ছে ওকে কাছে টেনে ভেজা চুলের ঘ্রাণ নেই।কিন্তু সে ইচ্ছা পূরণ হবার নয়। আমার কপাল খারাপ।
-কি ব্যাপার, কি ভাবছেন এতো। গন্ডারের মতো এভাবে ঘুমোতে হয় প্রতিদিন।
আমি কোন উত্তর না দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসি।বিকেলে বাসায় থেকে সবকিছু গুছিয়ে নবনীদের বাড়িতে আসি।এখান থেকেই ঢাকায় যাতে হবে কালকে।এখানে আসার পর নবনী কিছুটা পরিবর্তণ হয়, আমার কেয়ার করে ভালোই।হয়তোবা নিজের বাসার মানুষকে দেখানোর জন্য।মানুষের মন বোঝা বড় কঠিণ।নিজের স্বার্থটা আদায় করার জন্য মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে! যেমন, নিলীমা আমাদের ৬ বছরের ভালোবাসাকেও ভুলে গেছে।এসব ভেবে লাভ নেই, নিলীমা যাওয়ার পর যতটা কষ্ট পেয়েছি এগুলা তার চেয়ে তুচ্ছ।
রাতে খাওয়াদাওয়া করে ছাঁদে এসেছি চাঁদ দেখতে।আজকের চাঁদটা হঠাৎ করে মেঘের মধ্যে হারিয়ে যাচ্ছে, আবার মেঘ চলে গেলে চাঁদও ফিরে আসছে।ঠিক মানুষের জীবনের দুঃখ সুখের হিসেবের মত।হঠাৎ করেই সুখ আসে কোন মেঘের কারণে তা হারিয়ে যায় তখন দুঃখ আসে, আবার মেঘ চলে যায় দুঃখ হারিয়ে যায় আবার সুখ আসে।
এসব ভাবতে ভাবতে পিঠের ওপর হঠাৎ কারো স্পর্শ অনুভব করি।কিছুটা চমকে উঠি, তাকিয়ে দেখি নবনী।
-কি ভয় পেয়েছেন?
-না।
-তো চমকে উঠলেন যে।
-কল্পণার বাইরের কেউ এসে । হঠাৎ করে স্পর্শ করলে, যে কেউ চমকে উঠবে তাইনা?
-আমি কি আপনার কল্পণার বাইরে?
-কেউ কল্পণায় জায়গা না নিতে চাইলে, তাকে জোড় করে ঢোকানো কি ঠিক?
-হ্যা, তা ঠিক বলছেন।
-তো হঠাৎ করে ছাঁদে এসে, এভাবে স্পর্শ করার কারণ কি?
-কফি নেন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। আম্মা পাঠিয়েছে আপনার জন্য।.
-নিজে থেকে নিয়ে আসেননি তাহলে?
-যার কল্পণায় জায়গা করে নিতে চাইনা, তার জন্য নিজে থেকে নিয়ে আসবো নাকি!
-ঠিক বলছেন।
-হুম।
দুজনে দাড়িয়ে আছি চুপচাপ।নিলীমার সাথে এভাবে দাড়িয়ে, কতযে গল্প করেছি তার হিসেব নেই।ও চলে যাওয়ার পর , ছাঁদে আসলেই ওর স্মৃতি গুলো মনে পরে যেত।তারপর আস্তে আস্তে সময় গড়িয়েছে।আমিও সেগুলো ভোলার চেষ্টা করেছি, ভুলেও গেছি অনেক কিছুই।
-ঘুমাবেন না? রাততো অনেক হলো।
-আপনি ঘুমান গিয়ে, আমার ঘুম পাচ্ছেনা।ঘুম পাইলে যাচ্ছি।
-আচ্ছা থাকেন, তাহলে।
নবনী চলে যায় ।আমি আবার ভাবতে থাকি পুরোনো কথা গুলো নিলীমার নীল কালিতে লেখা চিঠি পড়ে আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি।ভাবতেই পারিনি যে নিলীমা আমার সাথে এমন করতে পারবে।প্রথম দিকে আমি অনেক ভেজ্ঞে পরেছিলাম, চাকরী ছেড়ে বাড়িতে চলে এসেছিলাম।নেশা টেশাও করেছিলাম কিছুদিন। কিন্তু পরে ছোট বোন বাবা মার কথা ভেবেছি, তারা আমার জন্য অনেক করেছেন, আমিতো তাদের জন্য কিছু করিনি।পরে বাস্তবতাকে বুঝে নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়েছি।নতুন চাকরীতে জয়েন্ট করেছি।পরে নিলীমার সাথে সেভাবে আর যোগাযোগ হয়নি।
এর পর কেটে গেছে তিনটি বছর।কিছুদিন ধরে বাসা থেকে বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছিলো কিন্তু আমি রাজি হচ্ছিলাম না।নতুন করে কষ্ট বাড়াতে চাচ্ছিলাম না।কিন্তু সেদিন আব্বা ফোন করে বলতেছে, আকাশ তোর আম্মা খুব অসুস্হ তাকে শেষ দেখা দেখতে চাইলে আজকে রাতের গাড়িতেই বাড়িতে চলে আয়।আমি আব্বার কথা শুনে অফিসে জরুরীভাবে ছুটি নিয়ে বাড়িতে এসে দেখি, আম্মা সুস্হ।নবনীর সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছেন, মেয়ে নাকি খুব ভালো। তাই তারা জরুরী বিয়ের ব্যবস্হা করেছেন।আমি সত্যি শুনলে আসবোনা, তাই মিথ্যে বলে নিয়ে এসেআমাকে ফাসিয়েছেন।তাই বিয়ের আগে শর্ট টাইমের মধ্যে, নবনীর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। নবনী আমাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক কিনা, এ বিষয়ে তার সাথে আগে থেকে কথা বলতে পারিনি।
-এইযে, অনেক রাত হয়েছে।এখনো কি ঘুমাবেন না? কারো কথা শুনে চমকে উঠি, দেখি নবনী।আমি বলি,
-হুম ঘুমাবো।চলেন।
-আচ্ছা চলেন। রুমে গিয়ে নবনীকে জিজ্ঞেস করি,
-আপনি ঘুমান নাই এখনো?
-না ।
-এতো রাত জেগে আছেন কেন?
-আপনি বুঝবেন না!
-হাহা তাই?
-হুম।
-আপনার রুমেতো দেখছি সোফা নেই আমি ঘুমাবো কই?
-জানিনা।
-মেঝেতে আমি ঘুমাতে পারিনা, ঠান্ডা লাগে ।তারবদল বাইরেই রাতটা কাটিয়ে দেই ।এমনিতে ভালোই লাগছিলো। কি বলেন?
-ওকে ।
-হুম, থাকেন।
-বাইরের দিকে এক পা বাড়ালে আপনার পা কেটে ফেলবো।
-আল্লাহ বলে কি! তো কি করবো এখানে দাড়িয়ে থাকবো?
-না আমার সাথে ঘুমাবেন।
-এটা হয় নাকি?
-হ্যা হয়, যা বলছি তাই করেন।আমার পাশে শুয়ে পরেন।
আমি কিছু বুঝতে পারিছিনা।কি করছে নবনী এসব, একেক সময় একেক রুপ ধারণ করছে।ওর কথা মতো শুয়ে পরলাম ওর পাশে দেখি কি হয়।শুয়ে আছি চুপ করে । হঠাৎ নবনী বলে…
-জানেন, আমার বয়স যখন পাঁচ বছর আমার মা বাবাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে নিয়ে নানু বাড়ি চলে আসে।কারণ কি জানেন, আমার বাবা নেশা করতো। আর প্রতিদিন আম্মাকে ধরে মারতো।তাছাড়াও আনেক অন্যায় আবদার করতো।নানু বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে যাবার জন্য আম্মাকে চাপ দিতো।কিন্তু আম্মা অন্যায়কে কখনো প্রশ্রয় দিতেন না, সেজন্য আম্মাকে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।আমি ছোট বেলায় এসব আমি নিজের চোখে দেখেছি বুঝেছেন?
-হ্যা বুঝলাম ।তারপর?
-আপনার সাথে আমার যখন বিয়ের কথা হয়।যখন শুনিযে আপনার বউ আপনাকে রেখে চলে গেছে। তখন আপনার প্রতি আমার একটা ঘৃণার সৃষ্টি হয় ।ছোটবেলায় স্মৃতি গুলো মনে পরে যায়, ভাবি আপনিও মনেহয় ওরকম।কিন্তু মামা বলে ছেলে খুবই ভালো ।ভালো জব করে।আমি তবুও মানতে পারিনি।এক প্রকার জোড় করেই আমাকে বিয়ে দেওয়া হয় আপনার সাথে।সেজন্য আপনার সাথে আমি ওরকম ব্যাবহার করেছি।
-বুঝলাম।তো এখন আবার হঠাৎ এতো ভালো ব্যবহার করছেন।আবার এগুলো বলার কারণ কী?
– কালকে আপনি ঘুমানোর পর, ড্রয়ার থেকে আপনার ডায়েরীটা নিয়ে পরেছি।
-আল্লাহ! অন্যের ডায়েরী নিয়ে পড়া কি ঠিক?
-ঠিক কিনা জানিনা।তবে এখন পড়ার পর থেকে মনে হয়েছে একদম ঠিক করেছি।নাহয় সারাজীবনের জন্য আপনার মতো একজন মানুষকে হারাতাম।
-আমাকে হারালেতো ভালো কাউকে পেতেন?
-আমি আপনাকে চাই।নিলীমার চেয়ে বেশি করে ভালোবাসবেন আমাকে ওকে?
-বেশি ভালোবাসলেতো মানুষ থাকেনা।হারিয়ে যায়।
-আমি হারিয়ে যাবোনা।না বাসলে আপনাকে খুন করে ফেলবো।
-হাহা দেখা যাবে ।
-হাসবেন না মুখ শেলাই করে দিবো।
-ওকে।
-আরেকটা কথা জানার ছিলো।
-বলেন….
-নিলীমার সাথে আপনার পরে কি আর যোগাযোগ হয়নি সত্যি?
-না!
-আমি আপনার বউ, আমার কাছে কিছু লুকাবেন না।আমি আপনার বোনের কাছ থেকে শুনেছি, আপনাকে নিলীমার ভাই একটা চিঠি দিয়েছিলো। কি লেখাছিলো ওই চিঠিতে বলেন?
-মিতু আপনাকে বলেনাই কি লেখা ছিলো?
-আপনি ওকে নাকি নিষেধ করেছেন কাউকে না বলতে সেজন্য বলেনি।এখন বলেন না হয় আপনার সাথে আর কথা নাই।
-বলতেই হবে….
-হ্যা বলেন তাড়াতাড়ি ।
আমি হঠাৎ নবনীর এরকম অধিকার খাটানো দেখে অবাক হয়ে গেলাম।একটা মানুষ এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে চেঞ্জ হতে পারে ।এসব মেয়ে মানুষের দ্বারাই সম্ভব। খুব তাড়াতাড়ি কাউকে ভালোবাসতেও পারে। বিশ্বাসও করতে পারে।আবার ভুলে যেতেও পারে খুব তাড়াতাড়ি ।
-কি হলো কি ভাবছেন ।বলছেন না কেন?
আমি চমকে উঠলাম আর স্মৃতিগুলোকে মনে করে ওকে বলতে লাগলাম, সেটাও চার ভাজের নীল কালির লেখা চিঠিই ছিলো। তাতে লেখা ছিলো, “আকাশ চিঠিটা যখন তুমি পড়ছো তখন আমি ভালো নেই, আত্নহত্যা মহাপাপ দেখে আমি এখনো বেঁচে আছি।
তোমাকে ছেড়ে গিয়ে জীবনে একটা পাপ করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত আমাকে করতে হচ্ছে।তোমাকে ছেড়ে আমি ইংল্যান্ডে আসি নিলয়ের সাথে।প্রথমে এখানে ওর সাথে আমার ভালোই কাটে।কিন্তু কিছুদিন পর ও কেমন যানি পাল্টে যেতে শুরু করে।বেশিরভাগ রাতেই বাসায় ফেরেনা।অন্য মেয়েদের সাথে রাত কাটায়।আমরা এতোদিনে বিয়েও করিনি।ওকে বিয়ের কথা বললে ও এড়িয়ে চলে।ও একদিন আমাকে একটা হোটেলে পার্টিতে নিয়ে যায় এর একটা ক্লায়েন্টের সাথে আমাকে রাত কাটাতে বলে ।আমি রাজি না হওয়ায়।আমাকে মারধর করে বাধ্য করে।তারপর থেকে প্রায় রাতেই আমাকে এই কাজ করতে হয়।নাহয় ও আমাকে মারধর করে ।আমার পাসপোর্টও ওর কাছে।কিছু বললে ও আমাকে হোটেলে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকি দেয়।আর কিছু বলতে চাইনা হয়তো এটাই আমার তোমাকে ঠকানোর পরিণতি।পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও আকাশ।”
-আপনি কি এরপর আর ওর সাথে যোগাযোগ কার চেষ্টা করেন নি?
-না।
-কেন?
-কারণ আমি ওতোটা মহৎ না।
-ঠিক করেছেন।
-কেন?
-নাহয় আমি আপনাকে পেতাম না।
-হাহা তাই?
-হ্যা, তাই।ঠান্ডা লাগছে আমাকে এখন একটু জড়িয়ে ধরুণ।
আমি ওর কথা শুনে মুচকি হসি ।আর ভাবতে থাকি আরেকবার নাহয় নবনী নামের পাগলী মেয়েটাকে ভালোবেসেই দেখি।হতেও পারে ও আমার সত্য ভালোবাসার উপহার।