গল্পের শেষটা সুন্দর

গল্পের শেষটা সুন্দর

অফিসে বসেই অনলাইনে কিছু জরুরী কাজ সেরে নিচ্ছি।বাসায় বউর জন্য পারিনা।খুবি প্যাড়া দেয়।মেয়ে মানুষ লাইফে আসলে এত যন্ত্রণা কল্পনাই করতে পারিনি।এর চেয়ে চব্বিসঘন্টা মাথাব্যথা থাকাও উত্তম।অথচ বিয়ের আগে প্রেম করার সময় যতবার নীলার সাথে দেখা হতো আর বুকে চেপে ধরতাম, সে চুপটি করে থাকতো বাজপড়া পাখির মতো।মনে হত স্বর্গের ফুল বাগিচায় আছি।আহ!কি শান্তি!কি আরাম!পুরান ঢাকার হাজীর বিরিয়ানি ফেল সেই আরামের কাছে। আর এখন তাকে বুকে চেপে ধরলেই, নিশিরাতের দমকা হাওয়ার মতই শোঁ শোঁ শব্দ করে,বলতে থাকে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটেনা বিজন!বাসায় এসি লাগাচ্ছনা কেনো?

আমার ডি এস এল আর কই?ওভেন কই?প্রেম করার সময় খুব ত গলা ফাটিয়েছ,আমাকে কত আরামে রাখবা,হেপি রাখবা,কই এসব এখন?ফালতু পুরুষ কোথাকার! তখন আরাম হারাম হয়ে যায়,মন চায় তাকে মাংসের কিমা করে সারা বাসায় ছড়িয়ে রাখি।পুলিশ এসে ধরে নিয়ে যাক আমাকে। আমার ফেসবুক আইডি অন ছিলো।টুক করে শব্দ হতেই মেসেঞ্জারে চোখ ফেললাম। আননোন আইডি থেকে আসা একটি খুদেবার্তা। হাই বিজন বাবু কেমন আছো? ” আমারও ইচ্ছে করে টুকরো টুকরো করে কেটে ফেলি তোমার শরীর।” কে বলেছে এই কথা বলতে পারবেন? প্রতিবাদী রোমান্টিক কবি হিসেবে খ্যাত রুদ্র মহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন এই কাটাকাটির বাণীটি। আপনি গুগল সার্চ করতে জানেন না?

বিপরীত আইডি থেকে হাসি ও ইমু যোগে রিপ্লাই আসলো, কাটাকাটির বাণী মজা পেলাম আর গুগল সার্চ করতে জানিনা আমার সম্পর্কে এমন সস্তা ধারণা আপনার কি করে হলো? আপনি আমার সাথে এড থাকলেও এর আগে চ্যাটিং হয়নি কখনও। একজন ফিমেইল হয়ে যেচে অপরিচিত একজন ছেলেকে কিছু জিজ্ঞেস করলে তার সম্পর্কে এর বেশি কিছু কি ধারণা করা যায়, তা আপাতত আমার বোধগম্য নয়। ভালো থাকবেন বাই বাই। কি মুখ কাটা পুরুষরে! মনে মনে বললো মেয়েটি। শুনুন শুনছি আমার আইডিকে কি আপনার ফেক আইডি মনে হচ্ছে? এই মেসেজ দেখেই তড়িৎ করে আমি সে আইডিতে গিয়ে একনজর দেখে নিলাম যে, রিয়েল আইডি, তবে কোন ছবি নেই।

রিপ্লাই দিলাম,আমি কি তা মিন করে কিছু বলেছি নাকি আপনাকে? তা অবশ্য বলেন নি। আমার নাম বিথীকা। জেলা সাতক্ষীরা। বর্তমান বাস ঢাকায়। বিবিএ কমপ্লিট করে আপাতত শহরের ভেজাল হাওয়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। গান কবিতা পছন্দ করি। মনে মনে ভাবছি যুগ পাল্টেছে। নইলে এমন যেচে কেউ নিজের পরিচয় দেয়? অভদ্র মেয়ে কোথাকার। মেয়েটি রিপ্লাই না পেয়ে আরেকটি মেসেজ সেন্ড করলো। আচ্ছা আমি আননোন হয়ে আপনার কাছ থেকে কেন সেই কথাটি জানতে চাইলাম, এটা জানতে কৌতুহল হয় না আপনার? একদম না আমি এখন বিজি।

আমার পার্সোনালিটিতে সে মুগ্ধ হলো।আমার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করল এটা তার নাকি খুব ছোটবেলা থেকেই অভ্যাস,জানালো পরবর্তী মেসেজে। কেউ যতই তাকে এভোয়েড করুক না কেন সে নাকি তাকে জয় করবেই বলে মনে মনে শপথ করে। “বিজন বাবু এমন একদিন আসবে, তুমি বিথিকা নামে বিভোর থাকবে আমি যে কি চিজ,তা শুধু আমি জানি।”সে মেসেজটা দিয়ে রিমুভ করার আগেই আমি পড়ে নিয়েছি এবং নৈব্যত্তিক রিপ্লায় দিলাম। ‘ওকে।’ দুদিন পর ফেসবুকে ঢুকেই দেখি সেই মেয়েটির মেসেজ। বলা যায় একেবারে রচনা।

হাই…বিজন বাবু জানিনা আপনি আমাকে নিয়ে মনে মনে কি ভাবছেন। ভাবলে কিছুই যায় আসে না কারণ ধরণীতে আমার নিশ্বাস পড়বে আর মাত্র দুই ঘন্টা। কোন উল্লেখযোগ্য কারণ ছাড়াই আমার বয়ফ্রেন্ড আমার থেকে হারিয়ে গিয়েছে। একাকীত্ব আর বিষন্নতা এখন আমার নিত্য সঙ্গী। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে সেই সেলফিস কে তুলে এনে বুকে ছুরি মেরে দেই। সেজন্যই তো ওই কথাগুলো কার জানতে চেয়েছি আপনার থেকে। তার আগে বহুজনকে জিজ্ঞেস করেছি কেউই বলতে পারেনি উল্টো আমাকেই কথা শুনিয়েছে। বলে এটা কোন মানুষের কথা হতে পারে না কেমন বিধ্বংসী রক্তক্ষয়ী সংলাপ। আপনার প্রোফাইল দেখে মনে হল আপনি কেবলমাত্র সেই ব্যক্তি, যে কিনা আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন। মনকে ডাইভার্ট করার জন্য কথার পিঠে কথা বলেছি। আপনার মূল্যবান সময় কেড়ে নেবার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী। ভালো থাকবেন দিবানিশি প্রিয়জনের সান্নিধ্য ভালোবাসায়। বিদায় আপনি,বিদায় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমু, ইন্সট্রাগ্রাম। বিদায় এই নিষ্ঠুর পৃথিবী। বিদায় উদার প্রকৃতি। বিদায় পৃথিবীর সমস্ত চেনা অচেনা মানুষ ও পশু পাখি। বিদায় সেই কালপিট। বিথীকা স্থান স্টোররুম। সময় গভীর রজনী

আমি হতভম্ভ হয়ে যাই এমন মেসেজ পেয়ে।যেহেতু আমি একজন মানবিক মানুষ তাই, রিপ্লাই দিয়ে তাকে আমার অফিসে আসার অনুরোধ করলাম। সে বিস্মিত হয়ে, ইমুযোগে রিপ্লায় দিলো,রাস্তায় বের হওয়া নাকি তার জন্য লাইফ রিস্ক।মেসেজ করেই সব বলতে হবে।ফোন নাম্বার চাইলাম।দিলোনা সমস্যা নাকি গুরুতর। কি আর করা,মেয়েটির কথা ভেবে আমিও রচনা দিলাম।

দেখুন মিস বিথিকা,জীবন আপনার সো সে জীবনের সিদ্ধান্ত নেবার দায়িত্ব ও আপনার।কিছু করার আগে অন্তত একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন আপনার মায়ের কথা।যে মা দশমাস আপনাকে গর্ভে ধারণ করেছে,যত্ন করে লালল পালন করেছে,আপনি মরে গেলেত বেঁচেই গেলেন,কিন্তু আপনার মায়ের বুকের অতলে আপনার জন্য যে পাঁজরভাঙা আর্তনাদ হবে,এই যন্ত্রণা মুছে যাবার মত কিছু আছে এই পৃথিবীতে? জীবন দিয়েছেন যিনি জীবন নেবার মালিক ও তিনি।আপনার কোন অধিকার নেই নিজের জীবন কেড়ে নেওয়ার।মাকে দুঃখের সমুদ্রে নিক্ষেপ করার।কল্পনা করুনতো মিস বিথিকা,আজ আপনি যদি মরে যান,আগামীকাল এই সবুজ পৃথিবীর যে সুন্দর মুহুর্তগুলো আপনার জন্য ভালোবাসার অর্ঘ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,তা থেকে আপনি বঞ্চিত হয়ে গেলেননা?

নিজের সমস্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে বেঁচে উঠুন।আমার বাসায় আসবেন সময় করে।আমার বউ নীলা ভারী মিষ্টি মেয়ে।যদিও আমাদের মাঝেও ভুল বোঝাবুঝি হয়।এসব মেনে নিয়ে মানিয়ে নেয়ার নামই তো জীবন।নীলার সাথে কিছুসময় কাটালে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে আমি নিশ্চিত। ও হ্যাঁ, আমার ঝগড়াটে বউ মজার কিমাপুরি বানাতে পারে।বাসার এড্রেস দিলাম।পার্থনায় রইবেন মোর।

রিপ্লাই আসলো, মেয়েটি আমার সাথে বাইরে একটু মিট করতে চায়,তার পছন্দের একটি স্থানে। তার দুদিন পর…আমি অপেক্ষা করছি বসুন্ধরার সিনে কমপ্লেক্স এর সামনে।যেহেতু আমি নীলা ছাড়া আর কোন মেয়ের সাথে এভাবে দেখা করিনি,তাই উত্তেজনা, সংকোচ,দ্বিধা প্রবলভাবে ভর করছে মনের ভিতর। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সে আসলো। বোরকা পরা।আপাদমস্তক ঢাকা মেয়েটির।সানগ্লাস এর জন্য চোখ ও ভালো করে দেখা যায়না।ইশারায় হাত উঁচিয়ে আমাকে সালাম দিলো।

আসেন কফি খেতে খেতে আলাপ করি,বলে আমি সামনে টেবিলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আকস্মিকভাবে আমি আমার শক্ত হাতের ভিতর একটি কোমল হাতের চাপ অনুভব করতেই ঘাড় ঘুরালাম।মাই গড!মেয়েটি আমার হাত চেপে ধরে আছে।এর আগে সে মুখে কোন কথা বলেনি।এই প্রথম সে বলে উঠলো বিজন তোমার পছন্দের কিমাপুরি সাথে তেঁতুলের সস বাসায় বানিয়ে রেখে এসেছি।চলো আমি নীলা আয়ায়ায়া…তু…উ…মিইইইইই…??? বলে চিৎকার দিতেই কিছুলোক চারপাশ দখল করে নিলো। আমার দস্যিবউ সবার উদ্দেশ্য বললো, সবাই নিজের চরকায় তেল দেন।স্বামী স্ত্রীর রাগ অনুরাগে হস্তক্ষেপ কাম্য নয় আমার।

আমি কটমট দৃষ্টিতে নীলার চোখে চোখ রাখতেই আমার জন্য তোমার হৃদয়ে আগের মত অনুভূতি আছে, নাকি নদীর জলের মত অন্যদিকে গড়িয়ে যাচ্ছে,তা বুঝতেই এই উতুপুতু খেলা। আমি প্রেমময় চোখে চেয়ে বললাম, কি বুঝলে দস্যি? উহু…বুঝলাম… আমি যতকাল তোমায় ভেবে ভেবে জেগে রইবো তুমি ঠিক ততকাল ঘুমাতে পারবেনা।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত