জাস্ট ফ্রেন্ড

জাস্ট ফ্রেন্ড

সকাল থেকেই শায়লা খুব ব্যস্ত। যে শায়লা ঘুম থেকে ওঠে খুব বেলা করে,আজ সে খুব ভোরে উঠেছে। তার যাবতীয় কাজ দুপুরের আগেই শেষ করেছে। দুপুরবেলা তিনটা মেয়ে আসল। তারা সবাই খুব সেজেগুজে এসেছে। মনে হচ্ছে কোনো পার্টিতে যাবে। প্রথমে ভাবলাম,হয়তো বনভোজনে যাচ্ছে স্কুল থেকে। পরক্ষণেই মনে হল, বনভোজনে গেলে তো সকালে যেত,বিকালে না। কৌতুহল দমন করতে না পেরে,শায়লাকে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,কোথায় যাচ্ছ?

–: পার্টিতে।
–: ভার্সিটিতে পড়েন আর জানেন না আজ কীসের পার্টি।
–: উহু। আর ভার্সিটিতে পড়ি বলে,কীসের পার্টি তা বলতে পারব কেন?
–: আজ কতো তারিখ বলেন তো?
–: ৩১ তারিখ।
–: হুম,আজ বছরের শেষ দিন। তাই থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করব। আজ সারা দেশেই তো এই রাতটি পার্টি করে উদযাপন করে।

–: হুম,তবে তুমি যাবে কেন। ওখানে কতো ছেলে থাকবে। তোমার ভয় করবে না।
–: ভয় করবে কেন? ওরা তো সবাই আমার ফ্রেন্ড।
–: ওখানে তোমার প্রেমিকও থাকবে?
–: না,আমার প্রেমিকতো ঢাকাতে। ওরা সবাই আমার জাস্ট ফ্রেন্ড।
–: ওহ, এখন কোথায় যাবা?
–: আগে পার্লারে,তারপর পার্টিতে।
–: ওহ, ভালোভাবে থেকো।
–: আরে ভয় নেই,সবাই আমার ফ্রেন্ড।

শায়লা মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে।পশ্চিমা সংস্কৃতির সাথে তাল মিলিয়ে চলে সে। তার পোশাক, চলাফেরা সবকিছুতেই আধুনিকতা নামক বেহায়াপানায় ভরপুর। মাঝে মাঝে আমাকে বলে,আপনি ভার্সিটিতে পড়েন দেখলে মনেই হয়না। ভার্সিটির মেয়েরা জিন্স,টপস,টি-শার্ট পড়ে। কই আপনিতো পড়েন না। আমি তখন বলি,ওসব আমার দ্বারা হবে না। ও প্রায় সময় পার্টি থেকে অনেক রাতে ফিরে। দু-চারদিন পরপর ঘুরতে যায়। ওকে একদিন জিজ্ঞাসা করি কয়টা প্রেম করো তুমি?

–: কেন, একটাই তো করি।
–: তাহলে,এতো ঘুরতে যাও কেন? আর কার সাথে ঘুরতে যাও?
–: আরে আমি যাদের সাথে ঘুরি,ওরাতো আমার জাস্ট ফ্রেন্ড।

সবাই এখন জাস্ট ফ্রেন্ড শব্দটা বেশি ইউজ করে। সেদিন ভিক্টোরিয়া পার্কে দেখলাম,একটা ভাইয়া এক আপুকে বাদামের খোসা ছাড়িয়ে খাইয়ে দিচ্ছে। আর মেয়েটি ভাইয়াটার কাধে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে। হঠাৎ তার প্রেমিক এসে দেখে ফেলে। দেখেই মেয়েটার গালে এক থাপ্পর মারল মেয়েটির প্রেমিক। মেয়েটি তখন রেগে গিয়ে বলল, ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। তুমি এতোটা নিচু মানসিকতার যে,আমাকে জাস্ট ফ্রেন্ডের সাথেই সহ্য করতে পারো না। তোমার সাথে ব্রেকআপ।

শায়লাও একই ধরনের। ও জাস্ট ফ্রেন্ডদের সাথেই বেশি ঘোরাফিরা করে।শায়লার আম্মুকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, ও এরকম চলাফেরা করে। কিছু বলেন না আপনি? আন্টি বলে, এখনকার মেয়েরা কতো প্রেম করে। আমার মেয়েতো সেরকম না। প্রেম তো একটাই করে। মাঝে মাঝে জাস্ট ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে যায়। এখানে তো আমার বলার কিছু নেই। আর এই আধুনিক যুগেও এরকম ড্রেস পড়লে আমি বকা দেই কি করে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে তো চলতেই হবে।

আমরা এমন এক জাতি,যারা আরবী কতো সাল, কোন মাস প্রথম আসে তা জানিনা। এমনকি বাংলা কতো সাল তাও জানিনা। আর ইংরেজী সাল শুধু জানলেই হবে না। থার্টি ফাস্ট নাইট,হ্যাপি নিউ ইয়ারও উদযাপন করতে হয়। তা না হলে,এ যুগে বসবাস করা যাবে না। এটা অনেকেরই ধারনা। বাঁচতে হলে, এই সমাজে থাকতে হলে নাকি আধুনিক হতে হয়। রাত তখন বারোটা। শায়লার বাবা বাসায় ফিরেই শায়লার খোঁজ করে। শায়লার মা বলে,ও আজ পার্টিতে গেছে।

–: কীসের পার্টি?
–: ওর ফ্রেন্ডেদের সাথে গেছে। আজ বছরের শেষ দিন। একটু মজা করতেই পারে। তুমি অতো চিন্তা করোনা।
–: তুমি পাগল হয়ে গেছ.? এখন রাত বারোটার বেশি।

এখনো বাসায় ফিরেনি। তুমি বলছো চিন্তা করতে না। এতো রাতে একটা মেয়ে পার্টিতে কি করতে পারে। তোমার চিন্তা হচ্ছে না। কেমন মা তুমি? বলেই শায়লার বাবা শায়লার ফোন নাম্বারে একের পর এক কল দিতে লাগল। কিন্তুু ফোন বন্ধ। অজানা আশঙ্কায় বুক কাপছে তার। শায়লার মা ঘুমোতে গেলেও শায়লার বাবা ঘুমোতে পারলো না। সারা রাত সে শায়লার ফোনে কল দিল। কিন্তুু ফোন বন্ধ।

সকাল হল। তবুও শায়লার কোনো খবর নেই। শায়লার বাবা রফিক চৌধুরি মন খারাপ করে বসে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। মন ভালো করার জন্য সংবাদপত্র নিয়ে বসল। হঠাৎ একটা নিউজের শিরোনামে গিয়ে চোখ আটকে গেল। শিরোনাম লিখা,” থার্টি ফাস্ট নাইটের স্বীকার চার যুবতী” রফিক চৌধুরির বুকটা কেঁপে উঠল অজানা আশঙ্কায়। সে নিউজটা পরা শুরু করল চার যুবতী তাদের তথাকথিত জাস্ট ফ্রেন্ডদের সাথে থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করে। মধ্যরাতে সবাই মিলে মদপান করে গানের তালে তালে নাচতে শুরু করে। নাচার এক পর্যায় তাদের তথাকথিত জাস্ট ফ্রেন্ড নামক জানোয়ারের দল হামলে পড়ে তাদের ওপর। পুলিশের হেফাজতে আছে যুবকরা। আর মেয়ে চারজনকে হাসপাতালে নিয়ে গেছে স্থানীয়রা। রফিক সাহেবের হাত কাঁপছে। কারণ নিউজের নিচে যে চার মেয়ের ছবি দেওয়া,তাদেরই একজন তার মেয়ে শায়লা। রফিক সাহেব খুব অসুস্থ। তার মেয়ের ক্ষত বিক্ষত চেহারা দেখতে হবে,সে কখনো কল্পনাও করেনি। আর আজ এমনটাই ঘটেছে বাস্তবে। থানা থেকে কল দিয়ে বলেছে,শায়লাকে আনতে যেতে। রফিক সাহেব যায়নি। শায়লার মা রেহানা বেগম একাই গেছে। পুলিশ রেহানা বেগমকে জিজ্ঞাসা করেন,

–: আপনি মা হয়ে কীভাবে মেয়েকে বাসা থেকে বের হতে দিয়েছেন বেহায়াপানা করতে। লজ্জ্বা করছে না এখন মেয়েকে এরুপে দেখতে।
–: আসলে ও বলতো, এরা ওর জাস্ট ফ্রেন্ড। এরা কোনো ক্ষতি করবে না।
–: হা হা। হাসাইলেন আপনি। জাস্ট ফ্রেন্ড দ্বারা আপনি কি বুঝাতে চেয়েছেন। ওরা তো ছেলে। আপনি শিয়ালের সামনে যদি মুরগী রেখে বলেন,ওরা তো ভদ্র শিয়াল। ওরা আমার মুরগী খাবে না। তা বললেই কি শিয়াল মুরগী খাওয়া থেকে বিরত থাকবে। আর আপনার মেয়ের পোশাকের কি অবস্থা দেখেছেন?

–: এসব ড্রেস না পড়লে তো ফ্রেন্ডরা মিশে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়।
–: আপনি আধুনিকতার নামে বেহায়াপানা করাতে চাচ্ছেন। মেয়েকে উগ্র পোশাক পরিয়ে আপনি আধুনিক করতে চাচ্ছেন। কেমন মা আপনি। এই যে এখন আপনার মেয়ে এই আধুনিকতার স্বীকার, মেয়েকে এরুপে দেখতে কষ্ট হচ্ছে না। শায়লাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেন ছেলেদের সাথে পার্টি করতে গেলে?

–: আসলে ওরা তো আমার জাস্ট ফ্রেন্ড। আমি কখনো ভাবিনি। ওরা আমার ক্ষতি করতে পারে। ওদের আমি কতো ভালো বন্ধু ভাবতাম।
–: ভালো বন্ধু ভাবতে ঠিক আছে। কিন্তুু তাই বলে তাদের সাথে এতো রাতে পার্টি করতে হবে কেন। আর একজন মুসলিম হয়ে কেন থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন করবে। আর যখন করছোই তাহলে এখন এই জাস্ট ফ্রেন্ডদের নামে কেন মামলা করতে চাও? তোমার জাস্ট ফ্রেন্ডদের অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে। তবে আগে নিজে সচেতন হতে হবে। যতোটা সম্ভব নিজের নিরাপত্তা বজায় রেখে চলতে হবে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত