ক্লাশের প্রথম দিন!
স্যার অনেক কিছুই বুঝালো!
আমি একজন কে বললাম, ভাই! আগের ক্লাশের শিটগুলো কি পাওয়া যাবে?
ছেলেটা- আমিও তো আগের ক্লাশে আসি নি, আপনি ভাইয়া ঐ যে নিল-সাদা ড্রেস পড়ে আছে ঐ মেয়েটার কাছে চেয়ে নেন।
তবে উনি দিবে কিনা সন্দেহ, যদি না দেয় তবে আমার কাছে ২ টা ক্লাশের শিট আছে,
বাকী ২ ক্লাশের আপনার অন্য জনের কাছে ব্যাবস্থা করে নিতে হবে।
আমি- জি আচ্ছা ধন্যবাদ।
।।
নতুন শহর সব কিছু নতুন করে সাজিয়ে নিতে হয়, যদিও আমার জন্য একটু ভালো হলো, অন্তত ঢাকার জ্যাম থেকে অনেক দূরে।
কিন্তু আমার পড়াশুনা?
।।
আমি ইমরান! পড়াশুনার পাসাপাশি একটা চাকুরী করি, নাকি চাকুরীর মাঝে পড়াশুনা ঠিক বুঝি না।
যখন ঢাকায় ছিলাম, যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তাম, একটু বন্ধুদের সাহায্য আর স্যারের একটু সাহায্যে আমার পড়াশুনা টা ঠিক মতো চলছিল,
কিন্তু হেড অফিস থেকে আমার বদলী বগুড়াতে করে দিলো।
।।
কি আর করার! বগুড়াতে এক সপ্তাহ থাকার পর আমি একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে যোগাযোগ করে ট্র্যান্সফার হয়ে চলে আসলাম।
কিন্তু নতুন সব কিছু, কীভাবে মানাবো।
আমি এখন বিবিএ ৬ সেমিস্টার। আমি যেহেতু নিয়মিত ক্লাশ করতে পায় না তাই আমার ভরসা হচ্ছে বন্ধুদের কাছ থেকে একটু সাহায্য,
তার ওপর স্যার বলছে ৩ সাবজেক্টে ট্রাম পেপার জমা দিতে হবে।
কিন্তু সেই মেয়েটা কই? আমি গাধা মেয়েটার নাম-ই জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। যায় হোক, এখন নিল-সাদা ড্রেসের মেয়েকে কয় খুঁজে পায়।
।।
অবশেষে খুঁজে পেলাম।
আমি- এই যে শুনছেন!
মেয়েটা ঘুরে দাঁড়ালো, একটু বেশি সুন্দর, নাকি মেকাপের জন্য এতো সুন্দর লাগছে ঠিক বুঝলাম না,
অবশ্য আমার এতো জানার দরকার ও নাই, যে কাজ এর জন্য এসেছি সেটা হলেই আমি খুশী।
।।
মেয়েটা- আমার একটা নাম আছে।
আমি- দুঃখিত আমি সেটা জানি না।
মেয়েটা- অনন্যা।
।।
কথাটা শুনে আমি একটা শক খেলাম।
না না আমি ছেকা খায় নি।
অনেক দিন আগের কথা, তখন আমি ক্লাশ ওয়ান এর ছাত্র।
তখন আমরা পরিবার সহ দিনাজপুরে থাকতাম, আমার বাবা ওখানে চাকুরী করতো, তখন আমি সবে মাত্র পড়াশুনা শুরু করেছি,
তখন আমার এক মাত্র বান্ধবী তার নাম ছিল অনন্যা।
।।
আমাদের দুজনের মধ্যে অনেক মিল ছিল, এই নিয়ে অনেকেই হিংসা করতো, অতটুকু বয়সেই আমি সেটা বুঝতাম।
অনন্যার বাবা একজন সরকারী চাকুরীজীবী ছিল, তবে বড় অফিসার ছিল। আর আমারা ছিলাম মধ্যবিত্ত,
কিন্তু তারপর ও অনন্যার আম্মু-আব্বু আমাকে অনেক বেশি ভালোবাসতো। ওর আম্মু তখন টিফিন নিয়ে
আসতো তখন অনন্যার সাথে সাথে আমাকেও খাইয়ে দিতো।
।।
আমরা ২ বছর ওখানে ছিলাম! অনন্যার আম্মু আমাকে জামাই জামাই বলতো, তখন বুঝতাম না, জামাই কাকে বলে,
তবে এর যে একটা মূল্য আছে সেটা বুঝতাম, অনন্যা বাবা-মায়ের একটাই মেয়ে। হয়তো বড়লোকের একটাই সন্তান হয়,
তখন বাংলা ছবি দেখে সেটা মনে করতাম, কিন্তু ছবি তে মেয়েটার অনেক অহংকার থাকতো,
কিন্তু অনন্যা তো অনেক ভালো আমার সাথে একটুও ঝগড়া করে না। কিন্তু ওর বাবা তো অনেক বড়লোক।
।।
কি অদ্ভুত সব চিন্তা ভাবনা।
মেয়েটার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসলাম, ওহ সরি, মেয়েটার নাম ও অনন্যা!
অনন্যা- কি সমস্যা? দিনের বেলায় স্বপ্ন দেখতে শুরু করলেন নাকি?
আমি- না মানে আপনার নাম…।।
অনন্যা- নামে কি সমস্যা? আর আমার নাম নিয়ে আপনার গবেষণা না করলেও চলবে।
আমি- আসলে ছোট বেলায় আমারা যখন দিনাজপুরে থাকতাম, আমি তখন প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হয় তখন আমার একটা
বান্ধবী ছিল ওর নাম অনন্যা ছিল, তাই
।।
অনন্যা- নাম কি আপনার?
আমি- আমার নাম ইমরান আহমেদ।
অনন্যা- হ্যাঁ তো আপনি আমাকে ডাকছেন কেন সেটা বলেন।
আমি- আসলে আমি তো আজকেই নতুন ক্লাশে আসলাম, তো আপনি যদি আগের শিট গুলো দিতেন?
অনন্যা- আমি কাউকে শিট দেয় না, আমি কষ্ট করে ক্লাশ করবো, আর আপনারা শুধু ঘুরে বেড়াবেন।
আমি- আমি তো একটা চাকুরী করি, তাই ক্লাশ করার যথেষ্ট সময় পায় না।
।।
অনন্যা- আপনার বাবা কি করে?
আমি- আগে নির্বাচন কমিশনে চাকুরী করতো, এখন পেনশান এ চলে এসেছে।
অনন্যা- তো আপনাকে নতুন দেখছি,
আমি- আমি আগে ঢাকায় থাকতাম, ক্রেডিট ট্র্যান্সফার নিয়ে এসেছি।
অনন্যা- ওহ, তো ওখানে কি করতেন?
আমি- ওখানে আমার ক্লাশের ২-৩ জন আমাকে সাহায্য করতো, ওরা অনেক ভালো ছিল, আর স্যার ও অনেক ভালো ছিল, সমস্যা বুঝতেন।
অনন্যা- তার মানে বলতে চাচ্ছেন যে আমি খারাপ?
।।
কি মেয়েরে! এতো দেখি গায়ে পেতে ঝগড়া করবে।
আমি- না না, সেটা কেন বলবো। মানে তারা আমার অনেক খোঁজ খবর নিতো।
অনন্যা- আচ্ছা শিট দিলেই কি আপনি ৪-৫ দিনের মধ্যে ৩ টা কমপ্লিট করতে পারবেন?
আমি- আমি চেষ্টা করবো।
অনন্যা- এখানকার টিচার এতো ভালো না, সবাই আমার মতো। সময় মতো ট্রাম- পেপার জমা না দিলে শূন্য পাবেন।
।।
১ মিনিটের জন্য ভাবলাম! ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে ভুল করলাম নাকি? নাকি বগুড়াতে এসে ভুল করলাম।
আমি- না আপনি শিট গুলো দিলেই হবে, বাকিটা আমি চেষ্টা করবো।
অনন্যা- ঠিক আছে কালকে সব পাবেন।
আমি- আবার কালকে?
অনন্যা- কেন আপনার কি মনে হয় যে আমি সব নিয়ে ঘুরে বেড়ায়?
আমি- না মানে।
অনন্যা- আমার কাছে একটা শিট আছে ওটা কপি করে নিয়ে যান। বাকিটা কালকে পাবেন।
আমি-জি ধন্যবাদ! বাকিটা কালকে নিতে আসবো।
।।
আমি শিট নিয়ে চলে আসলাম। সন্ধার পর অফিসে গেলাম, কিন্তু একটা দুঃখের সংবাদ।
আমাকে নাকি ঢাকা যেতে হবে ৩-৪ দিনের জন্য। স্যার কে বললাম স্যার আমার সমস্যা আছে,
উনি আরও রেগে গিয়ে বললেন, হয় চাকুরী ছেড়ে দিন না হয় পড়া লিখা।
কাল পরীক্ষা! আর আমি এখন ও ঢাকাতে। রাত ১২ টার সময় বাসে উঠলাম, সকালে বগুড়া পৌঁছে গেলাম, একটু পর পরীক্ষা কি যে করি?
স্যার সত্যি বলছে হয়তো ঠিক বলেছে হয় চাকুরী করি না হয় পড়াশুনা।
।।
সকাল সাড়ে ৯ টায় আমি ইউনিভার্সিটিতে গেলাম। আমি নেমে পাশের দোকানে চা খাচ্ছি, ঠিক এই সময় রাস্তার ওপারে দেখলাম,
অনন্যা অটো থেকে নেমেই একটা ছেলেকে চড় মেরে দিলো, তারপর অনেক কিছু বলল,
শুনতে না পেলেও হাতের ইশারা দেখে ঠিক বুঝলাম, যে সে ছেলেটার ওপর কি অত্যাচার হলো,
বেচারা হয়তো কাল থেকে আর ইউনিভার্সিটি আসবে না।
কি মেয়েরে বাবা!
।।
পরীক্ষা দিলাম, মেয়েটা হয়তো অন্য ঘরে পরীক্ষা দিচ্ছে, সকালের দৃশ্য দেখে
যে ভয় পেয়েছি আমি আর শিটের ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস পেলাম না, রেজাল্ট যায় আসুক কিন্তু ঐ মেয়েকে কিছু বলা যাবে না,
।।
পরীক্ষার ১৫ দিন পর আমি ইউনিভার্সিটি গেলাম।
শুনলাম রেজাল্ট দিয়েছে।
আমি তো রেজাল্ট দেখে অবাক! ত্রাম-পেপারে আমি ১০/১০ পেয়েছি। কিন্তু আমি তো জমা দেয় নি।
আমি স্যারের কাছে যাবো, ঠিক এই সময় অনন্যা পিছন থেকে ডাক দিলো।
।।
অনন্যা- কি ব্যাপার কানে শুনতে পান না নাকি?
আমি- না মানে খেয়াল করিনি।
অনন্যা- শিট চেয়ে আসলেন না, আবার পরীক্ষায় এসেও আমার সাথে দেখা করলেন না, আবার আজকেও এড়িয়ে যাচ্ছেন,
ব্যাপার কি? প্রেমিকা কি মেয়েদের সাথে কথা বলতে মানা করেছে নাকি?
আমি-একসাথে এতো প্রশ্ন করলে কোনটার উত্তর দিবো?
অনন্যা- এক এক করে সব দিন।
আমি- আগে স্যারের কাছ থেকে ঘুরে আসি, উনি হয়তো ভুল করে আমাকে ত্রাম-পেপারে নম্বর দিয়েছে,
আমি তো ত্রাম-পেপার জমা দেয় নি, বলে আসি সামনে সপ্তাহে জমা দিয়ে দিবো।
।।
অনন্যা- ভুল স্যার করে নি, ত্রাম-পেপার জমা আমি দিয়েছি। আপনি তো আসলেন না, তাই ভাবলাম লিখে জমা দিয়ে দেয়,
না হলে ফেল করতেন।
আমি- আপনাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো।
অনন্যা- চলেন হোটেলে যায়, এখন তো ক্লাশ নাই, ওখানে কথা বলবো।
আমি-ঠিক আছে।
।।
অনন্যা- এখন বলেন কেন পরীক্ষার আগে ইউনিভার্সিটি আসেন নি?
আমি- পরীক্ষা আগে আমাকে অফিসের কাজে ঢাকা যেতে হয়েছিলো, আমি পরীক্ষার দিন সকালে বগুড়াতে আসি।
অনন্যা- তো পরীক্ষার দিন ও তো দেখা করলেন না?
আমি- করতাম কিন্তু, সকাল সকাল আপনার যে রুপ দেখলাম সেটা দেখে ভয়ে আর দেখা করি নি।
অনন্যা- মানে?
..
আমি- সে দিন দেখলাম আপনি অটো থেকে নেমেই একটা ছেলেকে চড় দিলেন তার ওপর যে ভাবে কথা শুনালেন…
অনন্যা- ওহ এই কথা! ছেলেটা আমার ফোন নাম্বার পেয়ে আমাকে অনেক বিরক্ত করতো,
তাই ওকে প্লান করে একটু আগের রাতে কথা বলে জানতে পারলাম যে ছেলেটা আমাদের ইউনিভার্সিটির ব্যাস
সকালে দেখা করার নাম করে ডাকলাম, তারপর দিলাম আচ্ছা করে। এখন বলেন আমার কি দোষ?
।।
আমি- না ঠিক আছে।
অনন্যা- আপনার নাম্বার টা দেন।
আমি- না থাক!
অনন্যা- কেন?
আমি- আমার চড় খাবার ইচ্ছা নাই।
অনন্যা- আপনি সব সময় আমাকে খারাপ ভাবেন কেন?
আমি- না খারাপ ভাবলাম কখন?
।।
অনন্যা- এজন্য তো নাম্বার দিতে চান না, নাকি গার্লফ্রেন্ড আছে?
আমি- কোন টায় না, কিন্তু আপনার চড় খেতে ভয় করছে তাই।
অনন্যা- দেন তো।
আমি- ঠিক আছে নেন। ০১………৬৯
অনন্যা- ধন্যবাদ।
আমি- আপনার টা দেন।
অনন্যা- যখন ফোন করবো পেয়ে যাবেন।
আমি- কি?
অনন্যা- এখন চলেন। কালকে ইউনিভার্সিটিতে দেখা হবে। ভালো থাকবেন।
আমি- ঠিক আছে।
।।
পরের দিন আমি ইউনিভার্সিটি যায় নি, অনন্যা ফোন করলো। কিন্তু আমি ব্যাস্ত থাকার কারণে ফোন ধরতে পারিনি।
পরে রাতে সে আবার ফোন দিলো, তখন বলল যে সে সকালেও ফোন করেছিলো।
যায় হোক এভাবে মাস খানিক পার হয়ে গেলো।
।।
সকালে আমি ইউনিভার্সিটি গেলাম, অনন্যা ফোন করে বলল, ক্লাশ টেস্ট আছে।
অনন্যা- এই যে আপনার ট্রাম- পেপার।
আমি- লিখার কি দরকার ছিল? আপনি শিট দিয়ে দিলেই আমি লিখে নিতাম।
অনন্যা- আপনি তো অফিস নিয়ে ব্যাস্ত তাই লিখে দিলাম। আচ্ছা আপনাকে একটা প্রশ্ন করবো?
আমি- জি বলেন।
অনন্যা- আপনি বলেছিলেন যে অনন্যা নামে আপনার একটা ছোট কালের বান্ধবী ছিল, ওর ব্যাপারে কিছু বলবেন?
আমি- কি বলবো?
।।
অনন্যা- এই ধরেন সে কি রকম, তার বাবা-বা পরিবার এর ব্যাপারে।
আমি-অনন্যার বাবা সরকারী চাকুরী করতো, তবে কিসের মধ্যে জানতাম না, ওর বাবা মা অনেক ভালো ছিল।
ওনারা বড়লোক কিন্তু অহংকার ছিল না, আর অনন্যা ও অনেক ভালো ছিল। সব থেকে মজার ব্যাপার কি জানেন?
ওর মা আমাকে জামাই জামাই বলতো? আমারা ওখান থেকে চলে আসার পর আর দেখা হয় নি।
।।
অনন্যা- ওহ তাই নাকি? তা আপনার বউ কেমন আছে এক দিন ও তো খোঁজ খবর নেন নি।
আমি- আরে জামাই বলতো সে তো ছোট বেলায় মজা করে, ওরা কতো বড়লোক আমাকে ওনার মেয়ে দিবে নাকি?
অনন্যা- একবার চেয়েই দেখতেন। যদি পেয়ে যেতেন।
আমি- হা হা হা। ভালোই মজা করতে পারেন।
অনন্যা- আচ্ছা আমার ও নাম তো অনন্যা, তাহলে আমরা কি বন্ধু হতে পারি না?
আমি- হ্যাঁ অবশ্যই।
।।
অনন্যা- ধন্যবাদ।
আমি- আচ্ছা আপনার বাবা কি করে?
অনন্যা- ব্যবসা করে, আর আমার একটা ছোট বোন আছে নাম আদ্রিতা।
আমি- জি ভালো।
।
এরপর থেকে অনন্যা আর আমার বন্ধুত্ব অনেক ভালো হয়ে যায়। আমি যতটুক সময় ইউনিভার্সিটিতে থাকি অনন্যা আমার পাশে থাকে।
এভাবে আরেকটা সেমিস্টার শেষ হয়ে যায়।
কয়েক দিন পরের কথা!
আমি সকালে ইউনিভার্সিটিতে গেলাম, অনন্যাকে ফোন করলাম কিন্তু সে ধরলো না, ক্লাশ শেষ করলাম!
আবার অনন্যাকে ফোন করলাম, এবার একজন মহিলা ধরলো, আমার মনে হলো উনি অনন্যার আম্মু।
।।
আমি- আসসালামু, এটা অনন্যার নাম্বার না?
অনন্যার আম্মু- হ্যাঁ। আমি অনন্যার আম্মু, তুমি কে?
আমি- অ্যান্টি আমি ইমরান! অনন্যার সাথে পড়াশুনা করি।
অনন্যার আম্মু- অনন্যা তো অসুস্থ। তুমি বাসায় আসো।
আমি- না থাক।
অনন্যার আম্মু- তুমি অনন্যার সাথে কথা বলো।
।।
অনন্যা- কেমন আছেন?
আমি- ভালো, কি হয়েছে?
অনন্যা- তেমন কিছু না, বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম তাই জর এসেছে। আজকে ইউনিভার্সিটিতে যান নি?
আমি- গেছিলাম তো, এসে দেখলাম আপনি নাই তাই ফোন দিলাম,
অনন্যা- আপনি চলে আসেন। আমি ঠিকানা ম্যাসেজ করে দিচ্ছি।
।।
ঘণ্টা খানিক পর আমি অনন্যাদের বাড়ী গেলাম।
ওদের বাড়ী যাবার পর-ই ওর আম্মু এসে আমাকে অনন্যার রুমে নিয়ে গেলো। ভালোই বাড়ী বানিয়েছে ওর আব্বু।
আর অনন্যার ঘর টাও অনেক সুন্দর। সামনে এতো বড় বারান্দা, খোলা মেলা ঘর। ঘরে গিয়ে দেখলাম, অনন্যা চুপ করে শুয়ে আছে।
ওর আম্মু চলে গেলো।
।।
অনন্যা আমার দিকে ঘুরে তাকালো।
অনন্যা-কি দেখেন?
আমি- না কিছু না।
অনন্যা- কিছু তো অবশ্যই
আমি- না আপনাকে প্রথম মেক-আপ ছাড়া দেখলাম তো তাই একটু দেখছি।
অনন্যা- কেন মেকআপ ছাড়া আমি দেখতে কি অনেক খারাপ?
আমি- মেকআপ ছাড়াই তো বেশি ভালো লাগছে।।
।।
অনন্যা- হা হা হা! তাই নাকি? তো এতো দেরি কেন হলো?
আমি- ক্লাসের সব আপনার জন্য ফটোকপি করলাম তাই। আচ্ছা আমি এখন যায়। দুপুরের পর আমার আবার অনেক কাজ আছে।
অনন্যা- যান, আম্মু আপনার জন্য বসে আছে। আপনাকে না খাইয়ে পাঠাবে না।
আমি- না থাক।
।।
অনন্যার আম্মু- কি থাক?
অনন্যা- আম্মু ইমরান চলে যেতে চাচ্ছে।
অনন্যার আম্মু- সেটা কীভাবে হয় ? প্রথম এসেছো আমাদের বাড়ীতে?
অনন্যা- চলেন তো, তাড়াতাড়ি খেয়ে নেন, না হলে অফিসে দেরি হয়ে যাবে।
আমি- ঠিক আছে।
।।
ডাইনিং টেবিলে বসে তো আমার মাথা খারাপ? পুরো টেবিল ভর্তি খাবার।
আমি- আজকে কোন অনুষ্ঠান নাকি?
অনন্যা- না, সব আপনার জন্য। এখন ও শেষ হয় নি কিছু রান্না চুলো তে আছে।
আমি- কিন্তু এতো কেন?
অনন্যা- আমি কি জানি।
।।
আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করলাম, যেহেতু প্রথম বার এসেছি, একটু ফরমাল থাকার চেষ্টা করলাম।
আমার খাওয়া তখন প্রায় শেষ অ্যান্টি আবার খাসির মাংস নিয়ে আসলো।
আমি- অ্যান্টি আমার খাওয়া তো শেষ।
অনন্যার আম্মু- সেটা কি বললে হয় বাবা? প্রথম এসেছো। তাছাড়া এখানে মেসে খাওয়া দাওয়া করো, শরীর কি শুকিয়ে গেছে।
একদিন মায়ের হাতে একটু বেশি না হয় খেলে।
।।
আমি মনে মনে ভাবলাম, আমি মোটা ছিলাম কখন? আর একদিনে কি আমাকে খাইয়েই মেরে ফেলবে নাকি?
।।
খাবার শেষে আমি অনন্যাদের বাড়ী থেকে বিদায় নিয়ে আমি অফিস গেলাম।
পরের দিন থেকে মাঝে মাঝে অনন্যার আম্মু আমার জন্য খাবার দিয়ে পাঠাতো, জানিনা এটা কেমন ভালোবাসা।
হয়তো ওনার ছেলে নাই তাই উনি আমাকে এতো বেশি ভালোবাসে।
।।
কয়েক দিনের ছুটিতে আমি বাড়ী আসলাম! বাড়ী এসেই আমাকে জোর করে মেয়ে দেখতে নিয়ে গেলো।
মাশ আল্লাহ্ মেয়েও দেখতে অনেক সুন্দর, বাড়ীর সবাই রাজী। যদিও আমি জানি এই অনন্যা ঐ অনন্যা না,
আর তাছাড়া ওনারা অনেক বড়লোক, তাই আমাকে নিজের কতো টুকু ক্ষমতা সেটা জেনেই সাহস করা উচিৎ।
।।
অনেক ভেবে চিন্তে আমিও রাজী হয়ে গেলাম।
পরের দিন ওনারা আমাদের বাড়ী আসতে চাইলেন।
সে দিন আমার আর ঘুম হলো না, কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগছে।
।।
বিকেলে আমি বাজারে মন খারাপ করে বসে আছি, অনন্যার প্রতি কেমন জানি একটা মায়্যা হয়ে গেছে,
তাকে পাশে রাখা একটা কেমন জানি অভ্যাস হয়ে গেছে, বিয়ের পর তার সাথে এভাবে আর মিশতে পারবো না।
তখন আমার বউকে ভালোবাসতে হবে, সেটা আমার বউয়ের অধিকার। তখন আমার জীবনে অন্য মেয়ে আসবে।
কিন্তু আমি কি সব পাল্টে ফেলতে পারবো?
।।
বাড়ী থেকে আম্মু আমাকে ফোন করলো। আমি বাড়ী গেলাম, আজ বাড়ীর সবাই খুশী। আম্মু আমাকে একবার জিজ্ঞেস করলো,
কিরে তোর মন খারাপ কেন?
আমি কিছু বললাম না, একটা পাঞ্জাবী পরে বের হলাম।
।।
কিছুক্ষন পর মেয়ের পরিবারের সবাই আসলো, কিছু ফরমালি কথা বার্তা হলো, সব ঠিক এখন বিয়ে দিন ঠিক করবে
।।
ঠিক এই সময় একজন ডাক দিলো, তারপর অনন্যা কে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো।
অনন্যা আমাকে দেখেই একটা চড়!
অনন্যা- তোমার এতো বড় সাহস? একটা বউ এ মন ভরে না? আবার বিয়ে করতে চাও?
আমি- মানে?
অনন্যা- একটু না হয় ঝগড়া হয়েছে তাই বলে এভাবে আমাকে ধোঁকা দিবা? কি দোষ ছিল আমার?
আমি না হয় শুধু বলেছি যে রান্না করতে পারি না।
আমি- কি বলছেন?
।।
মেয়ে পক্ষ- ছি বাবা! তোমাকে আমারা একটা ভালো ছেলে ভেবে আমাদের মেয়েকে তোমার হাতে দিচ্ছিলাম,
আর তুমি আগেই একটা বিয়ে করে নিয়েছো?
।।
আমাকে আর কিছু না বলার সুযোগ দিয়েই ওনারা চলে গেলো।
ওনারা যাবার পর আব্বু-আম্মু আমার পিছনে লেগে গেলো।
।।
এই রকম একটা ছেলে মানুষ করলাম, যে বাবা-মায়ের মান সম্মান সব ডুবিয়ে দিলো। বিয়ে করে নিলি একদিন ও জানালি না?
এই মেয়ে তোমার নাম কি?
অনন্যা- আম্মু! আমি অনন্যা! আর আপনি ও তো আমাকে ভুলে গেছেন।
আম্মু- মানে?
।।
অনন্যা- ছোট বেলাতে আমি যখন আপনার বাসায় আসতাম আপনি আমাকে কতো আদর করতেন,
আমাকে কোলে নিয়ে বলতেন আমার বউ মা। আমি সেই দিনাজপুরের অনন্যা, আপনার পিচ্চি বউ।
আমি- কি? কয় তুমি তো একদিন ও বলো নি,
অনন্যা- আমি ভাবছিলাম পড়া শেষ করে নেই, আর তো ৬ মাস তারপর বলতাম।
কিন্তু এর মধ্যেই যে তোমার বিয়ে করার শক জাগবে সেটা তো বুঝিনি।
।।
আমি- আরে আব্বু-আম্মু জোর করে বিয়ে দিচ্ছিল।
অনন্যা- সব বুঝি। আম্মু-আব্বু কালকে আপনাদের বাড়ী আসবে। তা আজকে পর্যন্ত কি আপনার হবু বউকে
আপনাদের বাড়ীতে রাখবেন নাকি হোটেলে গিয়ে থাকতে হবে?
আম্মু- কি বলো মা! আসো আমার সাথে, কতো দিন তোমার সাথ কথা হয় নি।
অনন্যা আমার দিকে চোখ টিপ দিয়ে আম্মুর সাথে আমুর ঘরে চলে গেলো।
।।
আর আমি বোকার মতো চড় খেয়েই বসে থাকালাম।
মনে মনে বললাম, ঠিক আছে আমার-ও দিন আসবে। কালকে রাতেই দেখা হবে।
…………………………………..সমাপ্ত……………………………….