সঙ্গ

সঙ্গ

“স্যার, একটা মেয়ে এসে আপনার খোঁজ করছে। ভেতরে পাঠিয়ে দেবো?”
“এখন নয়, একটা জরুরী ফাইল চেক করছি। তাকে কিছুক্ষণ বসতে বলো। আমি পরে ডেকে নেবো।”
“জ্বি স্যার।”

আবিদ সাহেব ২ ঘটার আগে নিজেকে কাজের হাত থেকে মুক্ত করতে পারলেন না। অর্থাৎ, দুই ঘন্টা পর হঠাৎ মনে হলো কেউ একজন তার খোঁজ করেছিলো। ততোক্ষণে মেয়েটি অবশ্যই চলে গেছে, এমনটাই ভেবেছিলেন আবিদ সাহেব। কিন্তু এই দীর্ঘ সময় পরও মেয়েটাকে ডেকে পেলেন। দু ঘন্টা ধরেই অপেক্ষা করছে সে।

“স্যার, আসবো ভেতরে?”
“হুম, আসো।”

একটা হালকা সবুজ রঙের শাড়ি পরে মেয়েটা এসে আবিদ সাহেবের মুখোমুখি বসলো। বয়স আনুমানিক ২০-২২ বছর হবে। মসৃণ চেহারায় অক্লান্ত একটা হাসি লেগে আছে। এতোক্ষণ অপেক্ষা করেছে, অথচ তার চোখেমুখে ক্ষোভের ছাপ নেই। স্বভাবতই সহাস্য।

“এতোক্ষণ অপেক্ষা করানোর জন্যে আমি দুঃখিত। আসলে তুমি যে আমার খোঁজ করছিলে, সেটা প্রায় ভুলেই বসেছিলাম। যাহোক, কে তুমি? আর কি দরকার আমার কাছে?”
“আমি ঈশিতা। আপনার কাছে একটা আবদার নিয়ে এসেছি।”
“কোনোকিছুর জন্য অনুদান চাইলে তুমি কাগজপত্র আমার সহকারীর কাছে রেখে যাও। আমি বরং পরে বিবেচনা করে দেখবো। আমার তাড়া আছে একটু, বেরুতে হবে।”

“না না, ওরকম কিছু না।”
“তবে?”
“পরশু তো আপনার অফিস বন্ধ, তাই না?”
“হুঁ, ক্যানো?”
“সেই দিনটা আমি চাই।”

আবিদ সাহেব এতোক্ষণ একটা ফাইল উল্টাতে উল্টাতেই কথা বলছিলেন। এবার ভ্রু কুঁচকে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললেন, “সেই দিনটা চাও মানে?”

“মানে, পরশু সারাদিন আপনি আমার সাথে ঘুরবেন। যেখানে ইচ্ছে সেখানে যাবো। পায়ে হেঁটে বা রিকশায়। প্লিজ, না করবেন না।” ঈশিতা কাতর কন্ঠে অনুরোধ করলো।
“এই মেয়ে, আমার বয়স কতো জানো? আমার পঞ্চাশ ছুঁয়েছে। আর আমি তোমার সাথে ঘুরতে যাবো রিকশায় করে? কে তুমি বলো, পরিচয় দাও ঠিকঠাক।” এবার আবিদ সাহেব কিছুটা কড়া গলায় কথা গুলো ঝাড়লেন।
“নাম তো বললাম-ই। বাকি পরিচয় পরে দেবো। আগে বলুন, যাবেন তো আমার সাথে? প্লিজ?”
“না, কোনোভাবেই সম্ভব না। তুমি এখন আসতে পারো। আমি বেরুবো।”

“আপনি রাজি না হলে আমি পাগলামো করবো। আপনার অফিস থেকে বের হয়ে চলন্ত গাড়ির নিচে ঝাঁপ দেবো।”
আবিদ সাহেব কিছুক্ষণ চুপ করে রইলেন। তিনি ভালো করেই জানেন, এই মেয়ে এমন অতি সাধারণ একটা কারণে চলন্ত গাড়ির নিচে ঝাঁপ দেবে না। তবুও মেয়েটার কথার প্রতি এক ধরনের আগ্রহ জাগলো। অহরহ ঘটে এমন কোনো বিষয়ের প্রতি মানুষের সাধারণত আগ্রহ জন্মায় না, কিন্তু কদাচিৎ ঘটে যাওয়া কোনো বিষয়ে সবারই আগ্রহ জন্মাবে, এটা খুবই স্বাভাবিক। একটা অপরিচিতা সুন্দরী মেয়ে আসলো, এসেই অফার করলো ঘুরতে যাওয়ার, তাও একজন অর্ধবয়স্ক লোককে, আগ্রহ জন্মাবে না? “কোথায় যেতে হবে তোমার সাথে? আর ক্যানোই বা যাবো আমি সেটা তো বলবে?” “আমি জানি না এতোকিছু। পরশু সকাল ১০ টায় আমি আপনার অফিসের সামনে এসে অপেক্ষা করবো। আপনি সময় মতো চলে আসবেন। এখন আমি আসি। ভালো থাকবেন।” ঈশিতা দম না ছেড়েই কথা গুলো শেষ করলো। তারপর প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

কিছু কিছু মানুষ আছে যাদের বাহ্যিক প্রকাশভঙ্গী গুলো কঠোর হলেও ভেতরটা অনেক কোমল। কিন্তু আবিদ সাহেবের সবকিছুই কঠোর। চোখে সবসময় তীব্র লাল রেখা ভেসে বেড়ায়। পুরো চেহারাটা দেখলে মনে হয় দারুণ কড়াকড় অংকের একজন শিক্ষক। তাছাড়া তার পঞ্চাশ বছর বয়সের ছাপ তাকে আরো ভয়ংকর ভাবে উপস্থাপন করে। তিনি নিজের কাজ ব্যতীত কোনোকিছুতেই অধিক সময় ব্যয় করেন না। তার মুখে হাসির ছায়া যেনো এক মহা আশ্চর্য, তিনি হাসেন না বললেই চলে। প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া ঠোঁটও নড়ে না কখনো। অত্যন্ত স্বল্পভাষী। তিনি সবসময় ক্যামন যেনো শাসন মুখর মেজাজে থাকেন। আহ্লাদ পছন্দ নয় তার। সবমিলিয়ে সত্যিই একজন কঠোর মানুষ।

আর ওদিকে ঈশিতা ভেবে বসে আছে এই কঠোর মানুষটা পুনরায় সদ্য যুবক হয়ে তার সাথে ঘুরে বেড়াবে, আনন্দ উল্লাস করবে। ভাবনাটা মিথ্যেও হয় নি অবশ্য। ঠিক ১০ টায় আবিদ সাহেব এসে ঈশিতার সামনে হাজির।
পুরো শহরে ব্যস্ততার মিছিল শুরু হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এই যে শহরটায় শতো শতো মানুষ, প্রত্যেকের মস্তিষ্কেই আলাদা আলাদা চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে। সবাই নিজ নিজ কাজে ছুটোছুটি করছে। অনুরূপ, আবিদ সাহেবের মস্তিষ্কও হয়তো থেমে নেই। ঈশিতা কে, ক্যানো ডাকলো, কি চায়- হয়তো এইসব-ই ভাবছে। আবিদ সাহেব আজ বেশ পরিপাটি হয়েই বেরিয়েছেন। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী, চুলে নতুন কালি, গোঁফে কেঁচি চালানো হয়েছে নিশ্চয়। দারুণ লাগছে! বয়সের ছাপটাও খানিক দূর হলো বটে। দুজন চুপচাপ রিকশায় বসে দুদিকে ফিরে আছে প্রায় ১০ মিনিট ধরে। আবিদ সাহেব আর চুপ না থেকে বললেন,

“আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি?”
“শহর থেকে কিছুটা বাইরে একটা বিল আছে, সেখানেই যাচ্ছি।”
“বিলে গিয়ে কি করবো?” ঈশিতা কোনো কথা বললো না।
“তুমি এভাবে ক্যানো আমার পিছু নিলে বলো তো? কি চাও? কে তুমি?”
“আমি আপনার পিছু নিই নি, পাশাপাশি বসে আছি। সবকিছুই সমান্তরাল।”
“আর বয়স?”
“সেটাও।”
“কিভাবে?”
“বুঝবেন পরে।”

আবিদ সাহেব একটু পরপর বিভ্রান্তিতে পড়ছেন। কিছুই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারছেন না। অনেক আপত্তি করেও শেষমেশ ঈশিতার সঙ্গে নৌকায় উঠতেই হলো। দুজনে চুপচাপ বসে নৌকাটা বিলের ঠিক মাঝখানে নিয়ে গেলো।
“আপনাকে কি আমি কেবল ‘আবিদ‘ বলে সম্বোধন করতে পারি? অন্তত আজকে?” আবিদ সাহেব আড়চোখে তাকিয়ে চুপ থাকলেন। “দেখুন, চারপাশে কতো শাপলা ফুটে আছে। প্রত্যেকটা শাপলাই গল্প করতে চায়, প্রত্যেকটা শাপলাই তাদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে। অথচ তাদের সঙ্গী নেই, কেউ সঙ্গ দেয় না। আচ্ছা, আপনার কি কোনো সঙ্গী আছে? কেউ সঙ্গ দেয় আপনাকে?” অনেকক্ষণ ভেবে আবিদ সাহেব না-সূচক উত্তর দিলেন। তিনি আপন মনে ভাবলেন, তার স্ত্রী বেঁচে থাকলে হয়তো উত্তরটা ভিন্নও হতে পারতো।

“আজকের আকাশটা মেঘলা ক্যানো জানেন?”
“না। ক্যানো?” ঈশিতা মুচকি হেসে উত্তর দিলো, “আমিও জানি না।”
“তুমি খুব অদ্ভুত একটা মেয়ে।” এই বলে আবিদ সাহেবও কিছুটা হাসলেন।
“আমি কি একদম আপনার মুখোমুখি এসে বসতে পারি?”
“হুম, বসতে পারো।”

“পড়ে যাবো তো, আমার হাতটা একটু ধরুন না।” আবিদ সাহেবের কোনো কিছুতেই আপত্তি করতে ইচ্ছে করছে না আর। হাত ধরে ঈশিতাকে সামনে এনে বসালেন। তার ভেতরে কিছু একটা ঘড়ির কাঁটার মতো টিকটিক করছে। তিনি খুব কাছ থেকে ঈশিতাকে দেখছেন। মেয়েটা দেখতে দারুণ! আজকে হয়তো একটু বেশিই রূপবতী লাগছে। কিন্তু আজকে বেশি রূপবতী লাগার কারণ কি? ঈশিতার মসৃণ দুধেআলতা শরীরে পাতলা কালো শাড়ির প্রলেপ? তার আঁখির মায়া? নাকি হাসিমাখা ঠোঁঠের চঞ্চলতা? নাকি আবিদ সাহেবের বয়সী দৃষ্টির আচমকা কোলমতা? আবিদ সাহেব কখনোই ভাবে নি এমন নীরব নিস্তব্ধ বিলের মাঝখানে শাপলা ফুলের সাথে মিশে যেতে পারবে কখনো। তাও ঝুম বৃষ্টির মধ্যে। মাত্রই বৃষ্টি নামলো। “আমাকে কিছু শাপলা তুলে দেবেন?” “ক্যানো নয়? অবশ্যই দেবো।” ঈশিতা ঠোঁটে হাসি ছড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো “আচ্ছা, আপনার বয়স কতো বলুন তো?”

এবার আবিদ সাহেব রীতিমতো শব্দ করেই হেসে বললেন, “বয়স? জানি না, জানি না। সবকিছুই সমান্তরাল বোধহয়।”
তিনি একগুচ্ছ শাপলা ফুল তুলে ঈশিতাকে দিলেন। কিন্তু এবার ঈশিতার ভিন্ন আবদার। তার খোঁপায় শাপলা গুঁজে দিতে হবে। আবিদ সাহেব ঠিক একজন বাধ্য প্রেমিকের মতো এক তরুণীর সব আবদার পূরণ করছেন। আবিদ সাহেব পুরুষ মানুষ। তার দৃষ্টি কোনোভাবেই ঈশিতাকে এড়িয়ে চলতে পারছে না। এই ঝুম বৃষ্টিতে ঈশিতার নাক বেয়ে টপটপ করে বৃষ্টির ফোটা পড়ছে, চোখের ভেজা পালক, চঞ্চল ঠোঁট, শাড়ির গহীনে ভেজা শরীরের ভাঁজ- কোনো কিছুই আবিদ সাহেবের দৃষ্টির আড়াল হতে পারছে না। তবে আবিদ সাহেবের এই বোধ আছে যে, সবকিছুই তার স্পর্শের বাইরে, সবকিছুতেই সীমাবদ্ধতা। আবিদ সাহেব নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন কলেজ পড়ুয়া এক যুবকের ভূমিকায়। কি অদ্ভুত! কতোখানি বদলে গেছেন তিনি। মনের ভেতর বয়সের মোটা আবরণ নেই। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততা নেই। দুঃখ নেই একটুখানিও। তার চারপাশে কেবলই স্নিগ্ধ অনুভূতি, পরম সঙ্গ।

বিকেল নেমে এসে বৃষ্টিটাকে তাড়িয়ে দিলো। বৃষ্টি শেষে যে শীতল বাতাস বইছিলো, তা সত্যিই একপ্রকার শান্তির নিঃশ্বাস। বাতাসটা এসে একটা দারুণ উপকার করলো তাদের। ভেজা কাপরে আর কতোক্ষণ থাকা যেতো! সন্ধ্যার আগেই ফিরে এলো দুজন। আজ ঈশিতার সঙ্গে মন খুলে গল্প করেছেন আবিদ সাহেব। দারুণ সঙ্গ পেয়েছেন।
তারপর তারপর দশদিন পেরিয়ে গেলো, ঈশিতার কোনো খোঁজ নেই। আবিদ সাহেবের কাছে খোঁজ করার মতো কোনো ঠিকানাও নেই। তার মন বারবার ঈশিতার সন্ধান মিনতি করে। সেই দিনটার কথা মনে হলে ভেতরে ঝড় ওঠে। নিজের বয়সের প্রতি খেয়ালই থাকে না। তার ভেতরে নতুন করে ফিরে পাওয়া কোমলতা তাকে মুহূর্তে মুহূর্তে আঘাত করে। হঠাৎ ই মনে হয়, তার কি যেনো নেই। কি নেই? ক্যানো এমন হচ্ছে? কি প্রয়োজন তার? আসলে তার সঙ্গী প্রয়োজন, সঙ্গ প্রয়োজন। নিঃসঙ্গতা বড়োই যন্ত্রণাদায়ক। ১২ দিন পরে আবিদ সাহেব ঈশিতার একটা খোলা চিঠি পেলো।

“প্রিয় আবিদ সাহেব,
আপনি ক্যামন আছেন সেটা আমি আন্দাজ করতে পারছি, তাই জিজ্ঞেস করছি না। আপনি আমাকে মনে মনে খুব খুঁজছেন, সেও জানি। আমার সাথে আপনার আরো অনেক কথা আছে, আমার সে ধারণাটাও হয়তো মিথ্যে নয়। কিন্তু আমার খোঁজ করে কোনো লাভ নেই। পাবেন না আমায়। আমি আপনাকে সঙ্গ দিয়েছিলাম কেবলই নিঃসঙ্গ করার জন্যে। নিঃসঙ্গতার স্বাদ দারুণ যন্ত্রণাবোধ জাগায় ভেতরে, তাই না? আর হ্যাঁ, এখন হয়তো প্রশ্ন করবেন এমন করার কারণ কি! তাই তো? উত্তরটা আমি দিয়ে দিচ্ছি- আপনার ঘরে মা-মরা মেয়েটা সারাদিন কি অসহায়ের মতো সময় কাটায় আপনার খেয়াল আছে?

বাবা হিসেবে কখনো তার নিঃসঙ্গতা বোঝার চেষ্টা করেছেন? টাকাপয়সা আর একটা যান্ত্রিক পরিবেশ ছাড়া বাবা হিসেবে আপনি আপনার ১৫ বছরের মেয়েটাকে কি দিয়েছেন? টাকাপয়সা, যান্ত্রিকতা, দু চারটে চাকর- এইসব কি বাবার ঘাটতি পূরণ করতে পারে? নিজেকে তো নাগরিক ব্যস্ততায় সঁপে দিয়েছেন, আর ওদিকে মেয়েটা নিঃসঙ্গতায় মিলিয়ে যাচ্ছে। তার উপর ওর মা বেঁচে নেই। মেয়েটা যে কি পরিমাণ আপনাকে ভালোবাসে, সেটা আপনি কখনোই বুঝতে পারেন নি। আমার সাথে যখনই ওর কথা হয়, ও শুধু বাবার আক্ষেপ প্রকাশ করে। আপনার মেয়ে আপনাকে প্রচণ্ড ভয় পায়। বাবা ডাকার সময় পর্যন্ত ওর গলার স্বর আটকে যায়। মেয়েকে সময় দিন, আপনার মেয়ে ভালো নেই। এই বয়সে ওর বাবা-মার সঙ্গ ভীষণ প্রয়োজন। ও খুব একা। নাগরিক ব্যস্ততা ফেলে মেয়েটার যত্ন নিন। নিঃসঙ্গতা খুবই ভয়ংকর। যন্ত্রণাদায়ক। আর হ্যাঁ, আমাকে আর খুঁজবেন না। আমি ঈশিতা নই। আমি অপরিচিতা, আপনার শুভাকাঙ্ক্ষী।

ইতি
অপরিচিতা”

আবিদ সাহেব তাড়াহুড়ো করে অফিস থেকে বের হয়ে মেয়ের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। তার মতো সব বাবাদের মধ্যেই পিতৃত্ব জেগে উঠোক। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে কাছের মানুষদের সঙ্গ দিতে শিখুক, নিঃসঙ্গতা দূর করুক। পৃথিবীর সকল মানুষেরই ভিন্ন ভিন্ন সঙ্গ প্রয়োজন। নিঃসঙ্গতা বড়োই যন্ত্রণাদায়ক।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত