অতঃপর ভালবাসি

অতঃপর ভালবাসি

সকাল ৮টা বেজে গেছে কিন্তু গোলু-পুচকুর বাপের এখনো ঘুম থেকে ওঠার নাম নেই। উফফফফফ! এত্ত ঘুমকাতুরে ক্যান ছেলেটা। ঠিক ১০টার মধ্যে অফিসে পৌছতে হবে। গোসল আর নাস্তার ঝক্কি পোহাতেই তো উনার একঘন্টা লেগে যায়। তার উপরে উনি আবার খুবই রুপ সচেতন। ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সাথে উনার বিরাট সখ্যতা। রোজ দুইবেলা বেশ কিছুক্ষণ তাদের চুটিয়ে প্রেম চলে।

আমি প্রিয়ন্তি, আমার “গোলু-পুচকুর বাপ” ওরফে মি.আসিফ এর ওয়ান এন্ড অনলি বেটার হাফ। আর গোলু-পুচকু আমাদের ভবিষ্যত বাচ্চাকাচ্চা যাদের কথা ভেবে এখন থেকেই আমি উনাকে এই অদ্ভুত নামে ডাকি। আর উনি আমাকে ডাকে “প্রিয়” বলে। সাধারণত প্রিয়ন্তীকে ছোট করে ডাকলে সবাই প্রিয়া বলে ডাকে কিন্তু উনি আমাকে কি ভেবে প্রিয় বলে ডাকেন বুঝিনা। অবশেষে আল্যার্ম ঘড়িটার সাথে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ করে প্রিয়তমা কোলবালিশের আলিঙ্গন ছেড়ে উনি বিছানা ছাড়লেন। উঠেই কিচেনের সামনে দাড়িয়ে হাকডাক শুরু করলেন,

-প্রিয়, ব্রেকফাস্ট কই?

-টেবিলেই তো রাখা আছে।

-কই? আমি তো শুধু এখানে কিছু আধপোড়া ব্রেড টোষ্ট আর জ্যাম ছাড়া কিছুই দেখতে পারছি না।

-দৃষ্টিসীমার পরিধিটা আরেকটু বিস্তৃত করলেই ওগুলোর পাশে রাখা ফ্লাস্ক ভর্তি চা দেখতে পাবা।

-এইগুলা ব্রেকফাস্ট!!!

-হুম, নয়ত কি!

বেচারা মুখটা ভেটকিমাছের মত এক্সপ্রেশন দিয়া চইলা গেলো। পেট ফেটে হাসি পাচ্ছে আমার। হইত আশা করছিল বউ তেলেভাজা মচমচে পরোটা আর মোরগ মসল্লাম বানিয়ে বসে আছে। আর এসে পেল কি না পাউরুটি আর জ্যাম। আসলে ওরই বা কি দোস! বিয়ের পর তো বউএর কাছে এতটুকু আশা করা স্বাভাবিক। আসলে আমি হয়ত ওর সাথে এটা ঠিক করছিনা। আমারই বা কি করার রান্নাবান্নার ক্ষেত্রে তো আমি অশ্বডিম্ব। অফিসের জন্য তৈরি হয়ে আসিফ বেড়িয়ে পড়বে এমন সময় মনে পরলো যে ওর লাঞ্চ বক্স রেডি করা হয়নি। তরিঘরি করে প্যাক করে ওর হাতে গুজে দিলাম। আসিফ দেখি মুচকি মুচকি হাসছে।

-অই হাসো ক্যান?

-লাঞ্চে কি দিসো? ফ্রাইড রাইস, মোরগ পোলাও নাকি কাচ্চি বিরিয়ানি?

-আরো স্পেশাল কিছু। ভাত আর ডিম ভাজি।

-হাঃহাঃহাঃ।

-এতে এত দাঁত বের করে হিঃহিঃ করার কি হইল! যাও ভাগো, তারাতারি অফিস যাও। বলেই তেড়ে উঠলাম আর আসিফ আমার ভয়ে ভোঁ দৌড়!

আসিফ আর আমার এর‍্যেঞ্জ ম্যারেজ। বিয়ের আগে কেউ কাউকে চিনতাম না। অল্পকয়েক দিনের পরিচয়ে বিয়ে। জানিনা ছেলেটা আমাকে ভালবাসে কি না। কখনো বলেনি মুখ ফুটে। আমিও বলিনি, বলতে লজ্জা লাগে। প্রেমের চেয়ে খুনশুটিটাই বেশি। মিষ্টি মিষ্টি অভিমান, টুকরো টুকরো ঝগড়া যেন টম এন্ড জেরি। অসাধারণ একটা সম্পর্ক।

সন্ধ্যে গড়িয়ে গেছে। ব্যালকনিতে চুল এলিয়ে বসে আছি। আসিফের ফেরার সময় হয়ে গেছে। আজ কি মনে করে শাড়ি পড়েছি। সচরাচর পড়িনা তবে আজ খুব পড়তে ইচ্ছা করল। হাত ভর্তি কাচের চুড়ি আর কপালে কালো টিপ। কফির কাপ হাতে নিয়ে সময়টা কাটানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ঘড়ির কাটা যেন আজ আর নড়তেই চাচ্ছেনা। ধ্যাত! ঘড়িটাও আজ এমন শুরু করছে ক্যান! আমাদের বিয়ের আগের কথাগুলা ভাবতে লাগলাম। যেদিন আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল, সে লাজুক লাজুক ভঙ্গিতে আড়চোখে আমাকে দেখছিল। আর আমি হ্যাংলামি করে তার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিলাম। সোজা কথায় বলতে গেলে দৃষ্টি আটকে গিয়েছিল আমার। একটা মানুষ এত সুন্দর করে হাসতে পারে ওকে না দেখলে হয়ত আমার জানাই হত না। ডিংডং..ডিংডং..কলিং বেলের আওয়াজে বর্তমানে ফিরলাম। উনি আসছেন। ঘরে ঢুকেই মোজা খুলে সোজা আমার মুখে উপর ধপ! কত্তবড় বদমাইশ! ওয়াক্‌ ওয়াক্‌!!!

-এইটা কি হইল! আরেকটু হইলে তোমার মোজার গন্ধে আমার আমি অকালে পটল তুলতাম। শ্যাওড়া গাছের খবিশ একটা!

-এটার জন্যই ছুড়লাম। আরেকটা বিয়া করব। তোমার একটা বান্ধবী হবে। সারাদিন দুইজনে গলাগলি উফফফ সরি চুলাচুলি করবা।

-শুনো এমনিতেও আমার সতিনের অভাব আছে নাকি। ড্রেসিংটেবিলের আয়না,প্রিয়তমা কোলবালিশ, তোমার লুতুপুতু সেলফোন এগুলার যন্ত্রনায় অস্থির আবার আরো!

-আরেকজন হলে ভালো হয়না!

-কিইইইইইইইইইইই! যাও করোগা বিয়ে আমার কি!

অভিমান করে গাল ফুলিয়ে চলে আসলাম। কত্তবড় কথা! আবার মিচকে শয়তানের মত হাসি দেয়া হচ্ছে। আমাকে উপেক্ষা করে এখন আবার সেলফোন নিয়ে পড়ছে। টেক্সট করলাম,

-আমি তোমার সাথে কথা বলব না আর।

-অকা অকা। কথা বলতে হবে না, চ্যাটিং করলেই হবে।

-এটাই লাষ্ট টেক্সট। আমি আমার বাপের বাড়ি চইলা যাব।

-যাও তবে আমার খাবারটা রেখে যাও। ক্ষুদা লাগছে।

-তোমার বউকে বলো বানাই দিতে।

-বউকেই তো বলতেছি। তুমি ছাড়া আর কে আমাকে এত স্পেশাল ডিম ভাজি খাওয়াবে বল। আর হ্যা, আরেকটা কথা। শাড়িতে দারুন লাগছে।

-তাই!!!

-ফল ইন লাভ ওয়িথ ইওর ডিম ভাজি এন্ড…

-ধানাইপানাই বন্ধ কইরা এখন খাইতে আসো। ঘুমাতে যাব এমন সময় পিছন থেকে দুটো হাত জড়িয়ে ধরল।

-আজ হটাৎ কি হইল?

-“এন্ড”

-কি?????

-এন্ড ফল ইন লাভ ওয়িথ মাই গোলু-পুচকুর মা।

-সত্যিই?

জীবনে প্রথমবার। কেউ এমন করে বলল। তার পরের মুহুর্তগুলোর জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। “আই লাভ ইউ প্রিয়” “হুমমম আমিও” লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম।

-ইসসসসসস! লজ্জা পেলেতো আমার বউটাকে আরো সুন্দর লাগে।

বলেই কোলে তুলে নিলো। তারপর কপালে একটা আদুরে চুমু। অতঃপর আমাদের গোলু-পুচকু ইজ কামিং ভেরি সুন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত