ভালোবাসা

ভালোবাসা

নিশির বান্ধবির বোনের বিয়েতে এসেছে নিশি। চারদিকে অনেক আয়োজন। ডিজে পার্টি আসছে। গান গাওয়ার জন্যও লোক আছে। নিশি আর তার বান্ধবিরা ছাদে বসে আছে। হঠাৎ একটা গান শুনে নিশি স্টেজ এর দিকে তাকালো। নিশি গানটা শুনেই দৌড়ে নিচে নেমে আসলো। স্টেজ এর সামনে গিয়ে দেখে একটা ছেলে গান গাচ্ছে। যেমন দেখতে ছেলেটি মায়াবি।তেমনি গানের গলা। নিশি তার বান্ধবিকে জিজ্ঞেস করলো

-ছেলেটা কেরে?
-আমার ভাইয়ার বন্ধু।
-খুব সুন্দর গান গায়।
-প্রেমে পরে গেলি?
-হ্যা। তবে ছেলেটির গানের। গান শেষ করে স্টেজ এর নিচে নামলো ছেলেটা। সাথে সাথে নিশি গিয়ে হাজির।

-এক্স কিউজ মি। আমি কি আপনার সাথে কথা বলতে পারি?
-জি বলেন।
-আপনি খুব ভাল গান গাইতে পারেন। আপনার গান গাওয়ার গলাটা খুব সুন্দর।
-ধন্যবাদ।
-আপনি কি নিয়মিত গান গান?
-না। মাঝে মাঝে শখ করে গাই।
-ও। আপনার মোবাইল নাম্বার টা পেতে পারি?
-কেন আমার মোবাইল নাম্বার দিয়ে কি করবেন?
-আপনার সাথে কথা বলবো।
-আমার সাথে কথা বলার কি আছে? আমি আইনস্টাইন? নাকি নিউটন? নাকি অন্য নামকরা কেউ?
-দিবেন না নাম্বার?
-আমি ছেলেটা খারাপ। আমার থেকে যত দুরে থাকবেন ততই ভাল।

বলেই চলে গেল ছেলেটা। নিশি অবাক হল। কত ছেলে নিশির মোবাইল নাম্বার পাওয়ার জন্য পাগল। আর নাম্বার চাইলে ছেলেরা নাম্বার দিতে লাইন দিয়ে দারাবে। সেই নিশিকে নাম্বার না দিয়ে চলে গেল। নিশিও ছাড়ার পাত্রি না। নিশি তার বান্ধবির ভাইয়ের কাছে নাম্বার চাইলো। নিশির বান্ধবির ভাই বলল

-ওর নাম্বার সবসময় চালু থাকে না।
-তবুও নাম্বার টা আমাকে দিন।

নিশি নাম্বার নিয়ে সেভ করে রাখলো। ছেলেটার নাম রানা। পরেরদিন কল দিলো ছেলেটাকে। রানা কল রিসিভ করে বলল

-হ্যালো।
-হ্যালো। রানা বলছেন?
-জি।
-আমি নিশি।
-নিশি কে?
-ওই যে বিয়ের অনুষ্ঠানে দেখা হল।আপনার গান শুনে আপনার নাম্বার চাইলাম।
-তো কি?
-চিনতে পারছেন?
-হ্যা। আমার কাছে কি চান?
-আপনার সাথে বন্ধুত্ত করতে চাই।
-আমার সাথে আমি বন্ধুত্ত করতে চাই না। অন্য কারো সাথে চেষ্টা করুন।
-কেন? কি হয়েছে?
-কিছুই হয় নি। আমি আপনার সাথে বন্ধুত্ত করবো না।
-আপনি জানেন। আমার সাথে কত ছেলে বন্ধুত্ত করার জন্য সিরিয়াল দিয়ে থাকে। আর আপনি আমার সাথে বন্ধুত্ত করতে চাচ্ছেন না কেন?
-তো তাদের সাথে বন্ধুত্ত করুন। আমার সাথে না।

বলেই ফোন রেখে দিলো রানা। নিশি তার বান্ধবির ভাইয়ের কাছ থেকে রানার সম্পর্কে সব জানতে পারে। রানা আসলে নেশার প্রতি আসক্ত। নেশাজাত দ্রব্য নিয়েই রানার জিবন। রানা কোন মেয়ের সাথে বন্ধুত্ত করতে চায় না। বা কোন মেয়ের সাথে নিজে থেকে পাত্তা দেয় না। কারন জানতে চাইলো। তারপরে নিশির বান্ধবির ভাই সব বলল

আর দশটা ছেলের মত রানার ও সাভাবিক জিবন ছিল। সারাদিন গিটার নিয়ে গান করা পড়ালেখা আর বন্ধুদের সাথে ঘোরাই ছিল রানার কাজ। রানা মিমি নামের একটি মেয়েকে অনেক ভালবাসতো। এমন কি নিজের চেয়েও বেশি। হঠাৎ একদিন মিমি রানাকে কোন কারন ছাড়াই সবার সামনে অপমান করে। আর রানার সাথে সম্পর্ক নষ্ট করে ফেলে। রানা সেদিন অনেক দুঃখ পায়।পরে জানতে পারে মিমি অন্য একটা ধনি ছেলেকে বিয়ে করেছে। তাই রানার সাথে এমন করেছে।

তারপর থেকে নেশাজাত দ্রব্য রানার সঙ্গি হয়েছে। রানা কোন মেয়েকে বিশ্বাস করে না। এই সব শুনে নিশি রানার সাথে প্রেম করার জন্য জেদ করে বসে। যেভাবেই হোক রানাকে নিশি ভাল পথে ফিরিয়ে আনবে। ভালবাসা দিয়ে রানাকে ভাল পথে ফিরিয়ে আনবেই। সব কথা নিশির বান্ধবির ভাইকে বলল। এবং নিশির ভালবাসার কথাও বলল। রানার বন্ধুরা সবাই নিশির কথা রানাকে বলল। কিন্তু অনেক চেষ্টাতেও রানা নিশির সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক করতে রাজি হয় না। এভাবেই কেটে যায় এক মাস। এই এক মাসে নিশি রানার সাথে অনেক কথা বলেছে। একদিন নিশি রানাকে বলল

-তুমি আমার জিবন সঙ্গি হবে?
-না।সেটা সম্ভব না।
-কেন?
-কারন আমি ভাল মানুষ না। আমার এই খারাপ জিবনের সাথে আমি অন্য কাওকে জড়াতে পারবো না।আমার ভালবাসার মন নেই।
-তুমি শুধু আমার পাশে থাকবে এতেই আমার চলবে।
-আমি পারবো না।
-তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলবো।
-যা পারো করো।

পরেরদিন রানার ফোনে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে। নাম্বারটা নিশির বাবার। নিশির বাবা বলে

-বাবা তুমি এখন ই একটু হাসপাতালে আসো।
-কেন?
-নিশি সুইসাইড করতে গিয়েছিল। এখন হাসপাতালে। তুমি আসো প্লিজ।
-আমি আসতে পারবো না।
-আমি বাবা হয়ে তোমার কাছে হাতজোর করছি। প্লিজ আসো
-আচ্ছা আসছি।

হাসপাতালে গিয়ে দেখে নিশি বেডে শুয়ে আছে। নিশি রানার জন্য নাকি সুইসাইড করতে গিয়েছিল। রানা নিশির কাছে না গিয়ে বাইরে দাড়িয়ে থাকলো। সবাই মিলে রানাকে বোঝালো। নিশির বাবা বলল “বাবা আমি তোমার পায়ে পরি।ওকে ফিরিয়ে দিও না। তোমাকে না পেলে ও মারা যাবে।” অবশেষে রানা রাজি হল। রানা নিশির কাছে গেল।রানাকে দেকে নিশি রানার দিকে তাকালো। রানা বলল

-এই পাগলি। এই কাজ করতে গিয়েছিলে কেন?
-তোমাকে না পেলে আমি বেচে থেকে কি করবো?
-অনেক ভালবাসো আমায়” এই হল ভালোবাসা, ভালোবাসা কাউকে খারাপ এবং ভালো করতে পারে।।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত