রিলেশন ব্রেকাপের পাঁচ বছর পর হঠাৎ রেল ষ্টেশনে তানিম আহমেদ এর সাথে লামিয়া রহমানের দেখা হলো। প্রায় ছয় বছরের রিলেশন ছিলো তাদের। কিন্তু কিছু ভুল বুঝাবুঝির কারনে তাদের রিলেশনশিপ নষ্ট হয়ে যায়। এতদিন পর হঠাৎ দেখায় তানিম একটু অবাকই হলো, কতটা বদলে গেলো সেই প্রিয় মানুষটা, কত সুখময় সৃতি জুড়ে আছে ওর সাথে,আজ ও কতটা দুরে ভাবতে লাগলো তানিম। লামিয়া ও চুপ করে আছে তানিম কে দেখে। লামিয়ার সাথে কথা বলা কি ঠিক হবে, এত বছর পর দেখা কথা না বলেই থাকি কি করে এইসব ভাবতে ভাবতে লামিয়ার সামনে এসে দাড়ালো তানিম।পাঁচ বছর পর তানিম আর লমিয়া দুইজনই সামনাসামনি, তানিম লামিয়ার দিকে আর লামিয়া তানিমের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কেউ কথা বলছে না, কিছুক্ষণ পর তানিম লামিয়ার সাথে কথা বলা শুরু করলো
– তুমি এখানে, লামিয়া আমি তানিম!
— আমি ভুলে যাইনি তুমি তানিম,আর বাসায় যাচ্ছি তাই এখানে আমি।
– ওহ, আমি ভাবছি হয়তো ভুলেই গেছো।
— কিছু কিছু মানুষ কে চাইলেও ভুলে যাওয়া যায়না, আচ্ছা তুমি এখানে কি করছো?
– আমিও বাসায় যাবো, বাবা মাকে দেখিনা অনেক দিন হলো, ছুটি পেয়েছি তাই ভাবছি দেখা করেই আসি৷
— ভালো, আচ্ছা ট্রেন কখন আসবে জানো? অনেকক্ষণ ধরেই অপেক্ষা করে আছি।
– কেনো তুমি জানোনা, আগের স্টেশনে একটু সমস্যা হয়েছে যাতে করে দুই ঘন্টা দেরি হবে ট্রেন আসতে৷
— ধ্যাথ ভাল্লাগেনা, কি করবো এখন। ( রেগে গিয়ে )
– লামিয়া তোমার সাথে কথা বলা যাবে?
— কথা তো বলছোই,
– ওহ, হ্যা তাইতো। চলো কোথায় বসি?
— আচ্ছা চলো৷ তানিম আর লামিয়া দুইজনে একটা কফি শপে এসে বসলো,তারপর..
– তো কেমন আছো লামিয়া ?
— আলহামদুলিল্লাহ ভালোই, তুমি?
– আমি! যেমনটা রেখে আসছো।
— মানে?
– না, এমনি কিছু না। তুমি একা, তোমার সাথে আর কাউকে দেখছি না যে, তোমার হাজবেন্ড, ছেলেমেয়ে ওরা কেউ আসেনি?
— কেউ থাকলে তো আসবে , তোমার সাথে কেউ আসছে, তোমার বউকে দেখছি না যে?
– কেউ থাকলে মানে?
— আগে আমার উত্তরটা দাও, তোমার বউকে সাথে নিয়ে আসো নাই?
– না, আসলে এখনো বিয়ে করা হয় নাই।
— কি বলছো, এখনো বিয়ে করো নাই, আজব!
– হুম করা হয় নাই, আসলে তুমি যাওয়ার পর থেকে আমার সব উলট পালট হয়ে যায়, বাবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে, পরিবারের সব দায়িত্ব আমার উপর চলে আসে, এইনিয়ে আর বিয়ে করা হয়ে উঠে নাই। এবার তোমার কথা বলো?
— আমি, আমিও বিয়ে করি নাই।
– কেনো, ( অবাক হয়ে )
— ভালো তো একজনকেই বাসছি, কি করে অন্য একজনের হাত ধরবো, একজনকে নিয়েইতো হাজারো স্বপ্ন দেখেছি, পারবো না অন্য একজনের সাথে থাকতে তাই হয়তো করি নাই। লামিয়ার কথা শুনে তানিম চুপ হয়ে গেলো, লামিয়া কথা গুলো বলেই চোখের কোনে জল মুছলো। দুইজনেই চুপ করে রইলো, কিছুক্ষন পর তানিম জিগ্যেস করলো
– লামিয়া , চা না কফি খাবে?
— তুমি কি ভুলে গেছো আমি কফি খাই না?
– না, আসলে
— ভুলে যাওয়ারই তো কথা, আমাকেই ছেড়ে চলে যেতে পারছো, আর ছোট্ট এইসব তো এমনি ভুলে যাবে না চাইলেও৷
– আমি তোমাকে ছেড়ে যাইনি বরং তুমিই আমাকে স্বার্থপরের মতো ছেড়ে চলে গেছো।
— আমিইইইইইই? ভালো বলছো! আবারো দুইজন চুপ করে রইলো, পাঁচ মিনিট পর তানিম বললো..
– খেয়াল করেছো তোমার রাগটা এখনো একটুও কমেনি, এখনো ঠিক আগের মতোই রাগ গুলো জমে আছে ।
— কই, কখন রাগ দেখলে?
– একটু আগেই তো ট্রেন আসতে দেরি হবে শুনে কেমন করলে।
— ওহ, তো তোমার কি ভাল্লাগছে শুনে ট্রেন আসতে দেরি হবে?
– না, ভালো লাগে নাই। কিন্তু এখন ভাল্লাগছে।
— কেনো?
– এই যে তুমি আছো।
— ওহ!
লামিয়ার কথা শেষ হতেই তানিমের চোখ পড়লো লামিয়ার হাতের আঙ্গুলের দিকে। তানিমের দেয়া রিংটা এখনো লামিয়া হাতে পড়ে আছে, রিং এর কথা তানিম লামিয়াকে বলতে লাগলো
– তোমার হাতে এখনো আমার দেয়া রিংটা আছে।
–হুম দেখতেই তো পাচ্ছো।
– সম্পর্ক শেষ হবার পরও ?
–তোমার দেয়া শেষ গিফট ছিলো এটা, এক মিনিটের জন্য এখনো এটা খুলতে পারিনি, অনেক চেষ্টা করছি ফেলে দিবো কিন্তু পারিনি৷ তাই এখনো হাতেই পড়ে আছে।
– আমার কথা কি এখনো মনে পড়ে তোমার?
— মনে পড়লেও কি করার আছে।
– আচ্ছা, আমাদের সেই ভুল বুঝাবুঝি গুলিতো চাইলেই আমরা মাথা ঠান্ডা করে সমাধান করতে পারতাম, তাহলে তো আজ সময়টা আমাদের অন্যরকম হতে পারতো।
— হুম, এখন ভেবে আর কি হবে!
– এখনো ভালোবাসো?
— জানিনা, কিন্তু তোমায় নিয়ে এখনো আমি ভাবি, যতবারই ভাবি ততবারই চোখে জল চলে আসি। হয়তো তোমার প্রতি এখনো অনুভূতি গুলো সত্যি আছে।
– বিয়ে করবে না?
— বল্লাম তো তখন না, তুমি কি করবা নাকি?
– হুম করবো, যদি সে করে৷
— মানে, কেউ আছে নাকি তোমার পছন্দের?
– হু, আছে তো।
— বিয়ের দাওয়াত দিয়ো, আসবো!
– পাগলি, বিয়ে করবা আমায়?
— কিইইইইইই, হুম করবো ( কান্না চোখে )
– আর কখনো কষ্ট দিবো না ভুল ও বুঝবো না৷ অনেক ভালোবাসবো।
— কেনো দুরে চলে গেলে ?
– কখনো কখনো কাছে আসার জন্য ও দুরে যেতে হয় লামিয়া ।
— রাখো তোমার দুরে, ভালোবাসি তোমায়।
– আমিও, এতটাই ভালোবাসি । ভালোবাসা, আবেগ যদি সত্যি থাকে তাহলে যত দুরেই যাক না কেনো একদিন না একদিন ঠিক ফিরে আসবে।