:- তুমি এভাবে সেজেগুজে আমার সামনে আসবে না ঠিক আছে ?
তোমাকে এভাবে দেখলে আমার ভিষন অসহ্য লাগে । সাজলে একটা মানুষ কে এতো খারাপ লাগে আমার ধারনা ও ছিল না।
:- জী সাজবো না।
:- আর শোন ,, কপালে ওই লাল টিপ কেন দাও ? মনে হয় একটা পেত্নি আমার সামনে ঘুড়াঘুড়ি করছে ।
:-জী এখন ই তুলে ফেলছি ।
:- এতো জী জী করো কেন ??? যওসব , যাও ভাল করে কফি বানিয়ে আনো। খেতে যেন ভাল হয়।
:- জী এখনই যাচ্ছি ।
রান্না ঘরে চলে এলাম। এই বদমেজাজি লোকটা আমার বর। মাঝে মাঝে আমি কষ্ট করে সাজলে ও এমন করে । আমি আবার সব মুছে ফেলি। কপাল থেকে টিপ টা তুলে রেখে দেই। সারা দিন বাসায় একা থাকতে হয়। আমার বরের বিরাট বিজনেস । আমাকে সময় দেওয়ার টাইম তাঁর নেই। খুব খারাপ লাগে একা একা। কোথায় ঘুরতে গেলে আমার হাত ছোট বাচ্চা দের মতো ধরে রাখে। মনে হয় আমি হয়তো হারিয়ে যাব। কোথায় খেতে গেলে আমার খাবার টা খুটিয়ে খুটিয়ে বেছে দিবে। মনে হয় আমি গলায় কাটা বেধে ফেলবো। আমার সব কিছু তেই তাঁর নজর। একটু
বেশিই নজর। যা আমার কাছে অসহ্য লাগে ।
:- কফি বানাতে এতো সময় লাগে ??
:- আনছি । ( ওইযে আবার শুরু হলো )
:- এটা কোনও কফি হলো , যাও আবার বানিয়ে আনো।
তাড়াহুড়ো করে আবার কফি বানাতে গেলাম । আমি কফি বেশ ভালোই বানাই কিন্তু আমার বরের এক কাপ খেয়ে পরের বার ভালো হয়নি বলে আবার বানাতে হয়। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে এক কাপ কফি নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসলাম । আকাশের বুকে মেঘ জমে আছে । কোথায় কালো মেঘ কোথায় সাদা মেঘ। আকাশ টা অদ্ভুত লাগছে । মাঝে মাঝে ঠান্ডা একটা বাতাস এসে গায়ে লাগছে । ঠিক তখন ই চুল গুলি এলোমেলো হয়ে পড়ছে নাকে মুখে । আকাশ টা দেখে মনে হচ্ছে কোনও শিল্পী এই মাত্র ছবি এঁকে রেখে গেছে । ছবির রঙটা এখন কাঁচা রয়েছে । সে এক অন্য রকম অনুভূতি । খুব ইচ্ছে করছে এই রঙ তুলির খেলা দেখতে আমার বর কে সাথে নিয়ে ।
ওর কথা মনে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে গেল। কেন করে আমার সাথে এমন । ঠিক এই সময় হঠাৎ করে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো। বাহ অসাধারণ দৃশ্য । একদিকে বৃষ্টি এক দিকে শেষ বিকেলের রোদ। মন ভাল করে দিল সাথে সাথে । দেখতে দেখতে চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেল। এবার ওঠা দরকার । ঘরে এসে লাইট অন করলাম । টেবিলের উপরে একটা নীল মলাটের ডায়েরি চকচক করছে । একে বারে নতুন । কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে গেলাম । উপরে খুব সুন্দর করে লেখা ,, তোমার জন্য, আমি অবাক হয়ে গেছি এটা আমার জন্য । দেরি না করে খুলতে লাগলাম । একটা লাল টুকটুকে গোলাপ এসে পড়লো হাতে।
আমি আরো মুগ্ধ । প্রথম পৃষ্ঠা খুলে দেখতে পেলাম গোটা গোটা করে লেখা কিছু কথা নীরা ঘুম ভেঙেছে তোমার । তুমি কি জানো যখন তুমি ঘুম থেকে ওঠো তোমাকে কতো সুন্দর লাগে । ঠিক যেন একটা মায়াবতী । আচ্ছা তুমি এতো সাজো কেন ? তুমি সাজলে আমার কোনও কাজে মন থাকে না। ইচ্ছে করে সারা দিন তোমাকে মন ভরে দেখি। তুমি এতো সুন্দর কেন নীরা ? তোমার কপালের ওই লাল টিপের ভিতরে কি যাদু আছে বলতে পারো ? কেন আমি চোখ ফেরাতে পারিনা। আমার ভীষণ ভয় করে যদি আমি ওই লাল টিপের মানুষ টাকে হারিয়ে ফেলি। তাহলে যে আমি পাগল হয়ে যাবো। তোমাকে হারাবার ভয় আমার মাঝে এতো তীব্র যে তোমার হাতটা আমার ছাড়তে ইচ্ছে করে না। মনে হয় এই বুঝি তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেলে । তুমি খেতে গেলে ও আমি ভয় পাই। যদি তোমার কিছু হয় । এই গুলি তোমার প্রতি আমার অভিযোগ নয় নীরা। ভালোবাসা গভীর ভালোবাসা ।
তুমি ঘুমালে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি। তুমি সেই কথা জানো না জানবার কথা ও না। আমি তোমাকে কফি দিতে বলি বার বার কেন জানো আমার কাছে পৃথিবীর সব থেকে সেরা তুমি তোমার হাতের বানানো সব কিছু । তাইতো তোমাকে এই ভাবে জ্বালিয়ে মারি। তুমি বিশ্বাস করো ভিষন ভালোবাসি তোমাকে আমি ভিষন । এর পরে যদি কোনও জনম থাকতো তাহলেও আমি তোমাকেই শুধু চাইতাম তোমাকেই ।
তুমি কি ভুলে গেছ আজ তোমার জন্ম দিন। তোমাকে নিয়ে আমি অনেক অনেক ঘুরবো। তুমি আজ আমার মনের মতো করে সাজবে। দেখ তোমার জন্য আমি নতুন শাড়ি রেখে এসেছি। সাথে একটা লাল টিপ। ওটা পড়ে তুমি সেজে থাকবে আমি আসছি তোমার কাছে তোমার ওই লাল টিপের মাঝে হারাতে । দিবে আজ আমাকে লাল টিপের মাঝে হারিয়ে যেতে ????? তোমার বদমেজাজি বর। লেখা টা কয়বার পড়লাম জানি না। কিন্তু চোখ থেকে পানি পড়ছে সেই থেকে । না আমাকে এখন কাদলে হবে না। এখন অনেক কাজ ও এলো বলো। আজ আমি ওর মনের মতো করে সাজতে চাই। রাঙাতে চাই ওর আমার পৃথিবী।
( সমাপ্ত )