প্রিয়দর্শিনী

প্রিয়দর্শিনী

‘সাতরঙ্গা পাড়ের নীল শাড়িটা আর দেওয়া হলো না তোমায়, রেখে দিলাম আমার ভালবাসায়।’ “কালো পান্জাবিতে নীজ হাতে ফুল এঁকেছিলাম। তুমি বলেছিলে তোমার পছন্দ। পান্জাবিটা আর দেওয়া হলো না তোমায়, রেখে দিলাম হৃদয় কুটিরে, আমাদের ভালবাসায়।”

শুরুটা হয়েছিলো নিয়ারগ্রুপ নামের মেসেন্জারের একটা অ্যাপ থেকে। ওখানে গিয়ে সামান্য কিছু নিজের সমন্ধে জানাতে হবে। তারপর তারা একজন পার্টনার খুজে দিবে। অবশ্যই সেটা হবে বিপরীত লিঙ্গের কেউ। যার শুধু নামটা জানা যাবে। অনেকটা অজানাভাবেই কথাবার্তা হওয়ার কিছু পরে দুজনের প্রফাইল ছবি সামনে আসবে। কিন্তু এর বেশি কিছুই জানা যাবে না। অচেনা মানুষের ক্ষনিকের প্রাপ্তি বলা যায়।

তখন ভার্সিটিতে কেবল দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছিলাম। যেকোন কিছুর প্রতি একটু বেশিই জানার ইচ্ছে ছিল। তো সেদিন রাতে ফেসবুকে ঢুকেই দেখি কোন মেসেজ দেয় নি কেউ। তাই ম্যাসেন্জারে বিভিন্ন সেটিংস দেখতে গিয়ে নিয়ার গ্রুপ অ্যাপটি সামনে আসলো। ওখানে ঢুকে অনেকটা কৌতুহল হয়েই যেসব কিছু তথ্য চাইলো দিয়ে দিলাম। তারপর তারা কিছু সময় চাইলো আমার পার্টনার খোজার জন্য। আশ্চর্যভাবে একটু পরেই একজন পার্টনার পেয়েও গেলাম। তখনও জানতাম না আমি কি করতে যাচ্ছি। হাই হ্যালো থেকে শুরু হয়ে নিজেদের মাঝে অনেক কথা হলো। যদিও তখনও মেয়েটিকে তেমন ভাবে গুরুত্ব দেই নি। তবে কেবল মনে হলো মেয়েটি হয়তো অনেক ভাল মনের।

সেদিন শুধু টুকটাক পরিচয় নিয়ে কোথায় থাকি, কি করি এসব বিষয়েই কথা হয়েছিলো। মেয়েটার নাম দেখেছিলাম তিয়ানা। যদিও আমার পুরো নাম শোনার পর তার নাম জিজ্ঞেস করলে সে বলেছিলো, এটা আমার ফেইক নাম। আমার ভালো নামটা নাহয় একটু অজানাই থাক। আমার মজা লেগেছিলো কথাটা। সেদিন রাতে একে অপরকে ঘুমোতে বলেই বিদায় নিয়েছিলাম। এরপর দুদিন কোন কথা হয়নি আমাদের মাঝে। সন্ধ্যায় এককাপ চা হাতে নিয়ে অনলাইনে আসলাম। কিছু পরেই অ্যাপ থেকে মেসেজ আসলো, কেমন আছেন? নিজের অজান্তেই একটু হাসি চলে এলো আমার। বললাম, ‘এইতো জিবন চলছে জিবনের গতিতে। আপনি?’ “ভাল থাকতেই তো জিবনে যতো যুদ্ধ, তাই ভালই থাকতে হয়।” ‘অনেক আধ্যাতিক কথা বলে ফেলেছেন। কোন কারনে কি আপনার মন খারাপ?’

“মন খারাপের আজকাল আর কারন খুজিনা। সব সময়ই খারাপই থাকে তাই আর হিসেবে রাখিনা। আচ্ছা, আপনি এই অ্যাপে কেনো এসেছেন?” ‘অনেকটা বলতে পারেন একাকিত্ব থেকে। তবে ম্যাসেন্জার ঘাটাঘাটি করতেই এটা হুট করে পেয়ে যাই। আপনি কেনো এসেছেন?’ “কাউকে ভোলার জন্য। যার নিঃসঙ্গতা আমায় কুড়ে কুড়ে শেষ করে দিচ্ছে।” ‘বয়ফ্রেন্ড?’ “আজকালের দুনিয়া অনুযায়ী বয়ফ্রেন্ডই বলে তবে আমি তো নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলেছি তাকে। তবুও কেনো এমনটা হলো?” ‘জিবনটা এরকমি কেনো যেনো। খুব কম মানুষই তার প্রিয়জনকে নিজের করে পায়। তবে আমি বলবো আপনি ধৈর্য ধরুন। হয়তো পেয়ে যেতে পারেন জিবনে নতুন করে বেঁচে থাকার কিছু বিষয়বস্তু।’

“জিবনকে এই মুহুর্তে অনেকটা বদ্ধ ঘরের মতো মনে হয় জানেন। চাইলেও আলো বাতাসের খোঁজে বের হওয়া যায় না। আচ্ছা মামুন সাহেব, আপনার জিবনে কি এরকম কেউ ছিল?” ‘হাহাহা, নাহ। আমি এখনো বন্ধুদের হাসি আড্ডাতেই সীমাবদ্ধ। তবে আপনার জন্য খারাপ লাগছে। আচ্ছা আপনি যে আমাকে এতো কিছু বলছেন, আমাকে কি বিশ্বস্ত মনে হয়েছে আপনার?’ এর কিছু পরেই ছবি রিভিউ হলো। একে অপরের প্রোফাইল ছবি দেখতে পেলাম। সাথে সংক্ষিপ্ত প্রোফাইলের নাম। উনি বললো, “ঠিক কি কারনে জানিনা আপনার সাথে কথাগুলো বলতে নিজের মাঝে কোন বাধা দেখতে পেলাম না। আপনি নিশ্চয়ই বিরক্ত হচ্ছেন অনেক?” ‘কি যে বলেন? বিরক্ত নই তবে অজানা কোন একজনের সাথে নিজের মতো করে কথা বলতে কেমন যেনো এক প্রশান্তি কাজ করছে।’

“আচ্ছা আমরা কি সত্যিই বন্ধু হতে পারি?” ‘কবিতা শোনাতে হবে তাহলে ভেবে দেখতে পারি।’ “তা জনাবের বুঝি কবিতা খুব পছন্দ?” ‘না ঠিক তা না। আমি নিজের ডায়রীতে কিসব আবোল তাবোল লিখি। জানিনা ওসবকে কবিতা বলে কিনা? তাই একটু শোনার ইচ্ছে আরকি। যাচাই করবো সেগুলো কবিতা না ছাই?’ “তাহলে তো আপনার থেকে কবিতা শুনতে হয়। আচ্ছা আমরা আমাদের নিজেদের আইডিতে কথা বলতে পারি না?” ‘অবশ্যই পারি তবে আপনি কি তা দেবেন?’ “দিতে পারি তবে কবিতা শোনাতে হবে।”

এরপর নিজেরা আইডি নিয়ে নিলাম। তার আইডির নাম দেখলাম তিয়ানা জামান অরু। নামটা অনেক সুন্দর। মামুন আর ওরু, মানাচ্ছে কি? একটু হেসে বললাম, আপনার নামটা অনেক সুন্দর। উনি মুচকি হেসে বললো, এটাতো আমার ফেইক নাম। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তবে আসল নামটা কি? মৃদু হেসে ও বললো, “এতোটা উদগ্রীব কেনো মশাই? একদিনেই যদি সব জেনে যান তবে পরে কি নিয়ে কথা বলবো? আর থাকনা কিছু লুকোনো বিষয় আমাদের মাঝে।” আমি হাসলাম। বললাম, ‘এই রহস্যটা যেনো আবার আকড়ে না ধরে। পরে দেখা গেলো যে এই রহস্যের জাল থেকে বের হতে পারছি না।’ উনি বললেন, “এরকম কিছু হওয়ার সুযোগ নেই জনাব। আমার কাছে রহস্য আছে তবে সেটি জাল দিয়ে ঘেরা নয়।” ‘এরকম রহস্যকে এভাবে ফেলে রাখা কি ঠিক? যদি কেউ চুরী করতে আসে তখন কি হবে?’ “তখন আমি ছড়িয়ে দিব এই রহস্যকে আর চোরকে বলবো, পারলে আমার মনটা চুরী করো, আমার একাকিত্বকে নয়।“ আমি অনেকটা হাসির ইমো দিয়ে বলি, ভালো বলেছেন এটা। উনিও কিছু হাসির ইমো দিয়ে বিদায় জানালো আজকের মতো।

এরপর কথা হয়েছে অনেক। পেরিয়ে গেছে মাস। হাসি আড্ডায় আর কিছু সুপ্ত খুনসুটিতে আমি হারিয়ে ফেলেছিলাম নিজেকে। এমনি একদিন হঠাৎ বৃষ্টি, সাথে খোলা জানালার সামনে মৃদু বৃষ্টির ঝাপটা আমায় তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করলো। ভাবতে বাধ্য করলো যে এই মেয়েটার মতো আর কারও সাথেই এতোটা মুক্ত নই আমি। মেসেজ দিলাম তাকে, ‘আপনাকে না দেখেই যদি কেউ আপনার একাকিত্বকে অনুভব করতে পারে তবে সেটাকে কি বলা যায় বলুন তো?’ ওপাশ থেকে উত্তর এলো, “সেটাকে নিছক আবেগ বলেই কাটিয়ে দেবো। বলবো, মরিচিকা চোখেই ধোঁকা দিতে পারে, অনুভবে নয়।“ ‘আর কেউ যদি এটাকে নিজের করে নিয়ে আপনাকে স্বাধীনতা দেয়, তবে?’ “তবে আমার জন্য সেটা হবে অনেক বড় একটা আশা। যেটা কোন মানুষ তার স্বপ্নে ভেবে থাকে। আমার ক্ষেত্রেও তাই।”

‘প্রতিটা কথার মাঝে লুকোনো কিছু দীর্ঘশ্বাস আমার অনুভবে প্রতিফলিত হচ্ছে। মন খারাপের কারনটা কি জানা যাবে?’ “আমি অতীতে ফিরে তাকাতে চাই না কিন্তু অতীত বারবার আমাকে ফিরে তাকাতে বাধ্য করে। আজ আমি আমার অতীতের একটা পুরো স্বপ্নকে নিজ হাতে হত্যা করেছি। তাই ভাবছি বর্তমানে যে অতীতটা তৈরী করছি সেটা কি ঠিক?” ‘বর্তমানে যা করেছেন তা অনেকটা বুঝে শুনেই করেছেন। তবে কেনো অযথা চিন্তা করছেন? অতীত থেকে শিক্ষা নিন হয়তো ভবিষ্যতে গিয়ে পেছনে একটা ভালো অতীত দেখবেন।’ “আপনি আমার খারাপ সময়ে অনেক ভালো বন্ধু হয়ে পাশে ছিলেন। আপনাকে তাই একটা কথা বলি, জিবনেকখনও কাউকে ভালবাসবেন না, কষ্ট পেতে পেতে মরেও যেতে পারেন।”

‘আপনার এই ধারনাটাও অনেকটা ভুল। জিবনে ভালবাসতে মানা নেই। তবে আমাদের হারানোর ভয়টা বেশি। তাই আজকাল বলি, প্রেমে পরা বারন। তবে আমি বারবার প্রেমে পরতে চাই।’ “কেনো? কষ্ট পেতে কি খুব ভালবাসেন নাকি?” ‘ভালবাসায় কষ্ট নেই তবে আছে সুপ্ত অনুভুতি। হতে পারে এটা নিজস্ব অথবা দুজনের মধ্যে। কিন্তু আমি ভালবাসলে কারও তো ক্ষতি দেখছি না।’ “আর কেউ যখন ধোঁকা দিয়ে চলে যায়, সেটাকে কি বলবেন?” ‘তখন আমি বলবো সে অভাগা। প্রকৃত ভালবাসা পেয়েও সে এটার মর্ম বোঝেনি। তার চেয়ে অভাগা আর কেইবা হতে পারে? তাই বলে আমি আমার ভালবাসাকে খারাপ বলবো না। এটা খাটি এবং আমার কাছে একটি মুল্যবান সম্পদ।’

অনেকক্ষন পর রিপ্লাই আসলো, “এই কথাটা কি আপনার আগে বলা উচিৎ ছিল না? আপনি জানেন এই একটি কথার অভাবে আমি কতো ছটফট করেছি নিজেকে নিয়ে। সবগুলোই এখন কেবল নিজের বোকামি মনে হচ্ছে। যান, আপনার সাথে আর কথা নেই, হুহ।” আমি কয়েকটি হাসির ইমো দিয়ে চলে আসি। বৃষ্টি থেমে গেছে তবে বেড়ে চলেছে তার জন্য আমার অনুভুতি গুলো। আচ্ছা তাকে তো বলাই হলো না এখনও যে, এই বৃষ্টির মৃদু ঝাপটাটাও আমাকে তার কথা মনে করিয়ে দেয়। দুদিন সে কোন মেসেজ দেয় নি হয়তো কোন কারনে রেগে আছে। আমি কি সেদিন রাগ করার মতো কিছু বলেছি? নাকি অভিমান করেছে সে? সর্বনাশ অভিমান, তাও আমার ওপর? বিকেলে ঘুমিয়ে পরেছিলাম প্রায় কিন্তু হঠাৎ মেসেজ টোনে জেগে উঠি। মেসেজ দিয়েছে উনি। কি উনি উনি করছি। উনার জন্য একটা নাম ঠিক করতে হয়। মেসেজটা দেখলাম, “জনাব কি এখনও রেগে আছেন আমার ওপর?” ‘ঠিক রাগ না তবে অভিমান।’

“অভিমান কিন্তু সবার ওপর করা যায় না। তবে কি আমি স্পেশাল কেউ?” ‘হলে সমস্যা কি? এখনও তো আপনি কারও বাম পাজরের হাড় হয়ে যান নি।’ “তা হইনি তাই বলে কি আপনি এভাবে বলবেন? একটু অন্যরকম বাতাস বইছে মনে হচ্ছে।” ‘হাহাহা, তা আপনি ভাবতেই পারেন। আচ্ছা, আপনার তো সঠিক নাম জানি না। আপনার জন্য একটা নাম ঠিক করেছি।’ “তাই নাকি? তা জনাব কেমন নাম ঠিক করেছে একটু শুনি?” তখনি আমি তার আগের নাম পরিবর্তন করে নিক নেম দিলাম, প্রিয়দর্শিনী। এটা দেখে ও বললো, “অনেকটা আগের যুগের সাদাকালো রুপকথায় পড়া গল্পের চরিত্রের মতো নামটি।” ‘পছন্দ হয়েছে আপনার?’ “আপনি দিয়েছেন, পছন্দ না হয়ে কি পারা যায়?” ‘কেনো? আমি কি স্পেশাল কেউ?’ “হতে পারেন আবার নাও।”

‘ইশশ, আচ্ছা আমি যে এই রহস্যের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছি, যদি ডুবে মরে যাই তাহলে কি হবে?’ “তাহলে এই প্রথম কোন রহস্যের বেড়াজালে কোন জীবিত লাশের দাফন হবে।” ‘আর যদি বলি এই রহস্যময়ীর প্রেমে আমি মরতে চাই। অসীমে তাকিয়ে কল্পনায় হাত বাড়িয়ে যদি বলি হবে কি আমার একাকিত্বের সঙ্গী, প্রিয়দর্শিনী?’ “তখন আমি বলবো এই নামের কাউকে চিনি না। তবে এটা শুধুই একটা ভুলের গুচ্ছ। শুধু শুধুই অনুভুতি গুলো ভোঁতা হচ্ছে।” ‘তবে আমি বলবো, ভুল থেকেই হোক না শুরু। কেই বা জানবে তুমি আমি আর উনি ছাড়া।’ “আল্লাহ, তখন তো ভুলে ভুলেই জিবন পেরিয়ে যাবে।” ‘আর কি বা চাই আমরা। ভুলে ভুলেই যদি জিবন পেরিয়ে যায় তাহলে আর কিছু চাই না এ জিবনে। ভুল থেকে হলেও প্রতিটা মুহুর্তে জানান দিবো তোমায়, ভালবাসি প্রিয়।’

“বাব্বাহ, জনাব দেখি আজ অনেক রোমান্টিক মুডে আছে।” ‘খুব বেশি বলে ফেললাম কি?’ “হুম, অনেক পাঁজি হয়ে গেছেন আজ আপনি।” ‘কারও মুখের হাসিটা দেখতে একটু তো পাঁজি হওয়াই যায় তাই না?’ “কিন্তু আপনি তো আমার হাসিমুখ দেখেননি কখনোও।” ‘যাক আপনি তাহলে বুঝতে পারছেন যে কথাগুলি আপনার উদ্দেশ্যেই বলা।’ “আপনি খুব চালাক জানেন। কিভাবে আমার থেকেই বের করলেন বিষয়টা।” ‘তো মহারাণীর যদি খুব সমস্যা না হয় তবে কি তার হাসিমুখ খানা একটু দেখতে পারি?’ “সমস্যা না তবে ভয় হয়।” ‘কিসের ভয়? এখনও কি বিশ্বাস করতে পারছেন না নাকি অন্যকিছু?’“আমি বিশ্বাস করি আপনাকে তবে ভয় হয় আমাকে দেখার পর হারিয়ে যাবেন না তো?” ‘যাকে না দেখেই আমি অনুভব করতে পারি তাকে না দেখলেও চলবে। আমার অনুভবে নাহয় তাকে আমি আমার করে নেবো।’

ঠিক এর পরেই গুনে গুনে চারটা ছবি আসলো। ছবির দিকে তাকিয়ে আমি আর আমাতে নেই। মেয়েটি অনেক সুন্দর তবে আমি হারিয়েছি তার কাজল কালো চোখে। কারও চোখ কি কখনও এতো গভীর হতে পারে? মেয়েটিকে রিপ্লাই দিতে গিয়ে দেখি, সে অফলাইনে চলে গিয়েছে। হয়তো সব কিছু বন্ধ করে ভাবছে আমি তাকে কিভাবে দেখছি? হয়তো ভাবছে এটাই শেষ কিনা? একটু হেসে আমিও অফলাইনে চলে এলাম। ভাবলাম একটু অপেক্ষা করি নাহয়।

রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে আর থাকতে পারলাম না। রিপ্লাই দিলাম তাকে, আমাকে ভালবাসতে হবে না, ভালবাসি বলতে হবে না, মাঝে মাঝে গভীর আবেগ নিয়ে আমার ঠোঁট দুটো ছুয়ে দিতে হবে না, কিংবা আমার জন্য রাতজাগা পাখিও হতে হবে না, অন্য সবার মতো রুটিন মেনে দেখাও করতে হবে না, এতো অসংখ্য না এর ভীড়ে শুধুমাত্র একটা কাজ করতে হবে, আমি যখন প্রতিদিন একবার করে ভালবাসি বলবো, তখন তুমি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে একটু আদরমাখা গলায় বলবে, পাগল। আমি খুব অল্প কিছু চাই- হুমায়ুন আহমেদ মেসেজটা দিয়ে অপেক্ষা করলাম অনেকক্ষন। কিন্তু নাহ, এই মেয়ে যে কিসের এতো ভয়ে আছে, জানি না।

পরেরদিন বারবার চেক করেও কোন উত্তর আসলো না। রাতে হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। আবারও জানালা পাশে দাড়িয়েছি। হালকা বৃষ্টির ঝাপটা সাথে এক কাপ চা। তখনি একটা মেসেজ আসলো। যাতে লিখা ছিলো, “পাগল” কখনও এতোটা খুশি হয়েছি কিনা জানি না তবে নিজেকে বাতাসে উড়ে যাওয়ার মতো হালকা লাগছিলো। রিপ্লাই দিয়েছিলাম, ‘শুধু তোমার পাগল আর কারও নয়।’ “আমি জানি৷ থাকবে সারাজিবনতো, আমার পাগল হয়ে? ‘আমি থাকবো বলে তোমার মন জয় করতে চাইছি না তবে সারাজিবন তোমার পাগল থেকে নিজেকে প্রমান করতে চাই, আমি বিশ্বাসের যোগ্য।’ “আচ্ছা লক্ষ্য করেছো আমরা তুমিতে চলে এসেছি?” ‘তুমি খুব ছোট জিনিসটা ধরেছো অথচ এটা লক্ষ্য করলে না যে আমরা নিজের অজান্তে একে অপরকে কতটা ভালবেসে ফেলেছি।’

“তুমি ছেড়ে গেলে এবার আমার বেঁচে থাকার মতো কোন পৃথিবী থাকবে না। ছেড়ে যাবে নাতো?” ‘যদি বলি তোমাকে ছাড়া আমার আলো এবং অন্ধকার দুটোই হারিয়ে যায় তবে কি তুমি আমার দিনে আলো আর রাতে অন্ধকার হয়ে পাশে থাকবে? মেসেন্জারে তখনি ও ফোন করলো। রিসিভ করলে অপাশ থেকে কাঁদতে কাঁদতে ও বললো, “থাকবো, সবসময় থাকবো। শুধু তোমার বাহুজোড়া থেকে আমায় আলাদা করো না।” এতোদিন মেসেজের পরে এইপ্রথম তার গলার স্বর শুনছি। আমার চোখটাও কি একটু ঘোলাটে হয়ে এসেছিলো। মৃদু গলায় বলেছিলাম, ‘এই পাগলী, কাঁদছো কেনো? তুমি কি জানো তোমার গলার স্বর কতোটা সুন্দর?’ “না জানি না, শুধু এটুকু জানি যে তুমি ছাড়া এসবের কোন সৌন্দর্য নেই।”

আমি হাসলাম। মান অভিমান সবকিছু মিলিয়ে কথা হলো অনেক। সম্পর্কটা অনলাইন থেকে হলেও ভেতরের বন্ধনটা ওই আগের যুগের মতই ছিলো। আমি বলেছিলাম তাকে, এক ঝড়ো বৃষ্টিতে তার সাথে কফির ধোয়ায় নিজেকে মাতিয়ে তুলতে চাই। দেখতে চাই অপরুপা তোমায় কাজল কালো মিস্টি চোখে। ও হেসেছিলো এটা শুনে। প্রচুর হেসেছিলো।

বেশ কিছুদিন পরে হঠাৎ টানা তিনদিন সে অনলাইনে আসলো না। আমি তখন ভার্সিটির শেষ দিকে। তার কোন ফোন নাম্বার আমার কাছে ছিলো না। প্রয়োজন পরে নি। আমরা সবসময়ই অনলাইনে পেতাম নিজেদের। সেদিন নীলক্ষেত থেকে আজিমপুরের দিকে হেঁটে আসছিলাম। হঠাৎ বৃষ্টির কারনে দৌড়ে একটা কফিশপের ছাউনীতে এসে দাড়ালাম। বৃষ্টিটা বেড়েই চলেছে আর আমার বিরক্তি বাড়ছে। পেছন থেকে কে যেনো বললো, কফি খাবে?
পেছনে তাকিয়ে আমি অবাক। এযে আমার প্রিয়দর্শিনী। ওর সাথে সমবয়সী একজন মেয়েও আছে। আমার অবাকের পালা যখন শেষ হচ্ছে না তখন ও নিজেই হাতটা ধরে কফিশপের ভেতরে নিয়ে গেলো। দুজনি বসলাম জানালার পাশে আর ওই মেয়েটি অন্য টেবিলে বসলো। কফি অর্ডার দিয়ে বসে আছি। কেউ কোন কথা বলছি না। এমন অবস্থায় কফিও চলে এলো। কফিতে এক চুমুক দিয়ে ও বললো, “কথা বলবে না? এই দেখো আমায় নিয়ে তোমার স্বপ্ন কিন্তু পুরন করলাম।”

আমার কথাকলি আমার সামনে অথচ আমি কিছু বলতে পারছি না৷ তাকিয়ে দেখলাম ওকে। সত্যি কি কফির ধোয়া ফুকোর সময় কাজল কালো চোখে কোন মেয়েকে এতো সুন্দর লাগে? আমার জানা নেই। শুধু বললাম,
‘তুমি এখানে? কিভাবে কি?’ “দেখতে এলাম আমার রাজকুমার তার স্বপ্ন পুরন হলে কি করে?” ‘তো কি দেখলে?’ “দেখলাম সে ঠিক তেমনটাই যেমনটা আমি জানতাম। শুধু জানতাম না যে অবাক হলে তাকে এতো বোকা বোকা লাগে।” আমি হাসলাম। বললাম, ‘তিনদিনে কতো মেসেজ, কত চিন্তায় ভুগেছি জানো তুমি? কেনো আসলেনা তুমি অনলাইনে?’ “সেজন্যই এই সারপ্রাইজ। তোমার এতোশত অভিমানি প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই জানো। ওই যে মেয়েটা দেখছো, ও আমার চাচাতো বোন হয়। ওকে সাথে নিয়েই এসেছি এখানে। তোমাকে এক নজর দেখবো বলে। একটু ছুয়ে দিয়ে তোমার স্পর্শটা অনুভব করবো বলে। তোমার স্বপ্নকে পুর্নতা দিবো বলে।”

আমি কিছু না বলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকি। কফি শেষ হয়ে আসে। ও বলে, আমাকে উঠতে হবে। একটু অস্থির হয়ে বললাম, আরেকটু থেকে যাও না? এটা শুনে ও আরেকটু বসলো। এরপর উঠে দাড়ালো। আমি কেনো যেনো দাড়ালাম না। মনে হলো, ও চলে গেলে আর আমি ওকে পাবো না। আমার গালে ওর হাতটা রেখে বললো, পাগলটাকে সবচেয়ে বেশি ভালবাসি। বলেই মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো, বিদায় দেবে না আমায়? আমি উঠে দাড়াই। ধীরে ধীরে পা বাড়িয়ে এগিয়ে দিই ওকে। একটু পরে ওর বোন একটা বাস আসছে দেখে ওকে নিয়ে দৌড়ে স্টান্ডে গেলো। বাসে তাড়াহুড়ো করে উঠতে উঠতেই ও আমার দিকে তাকালো। আমি স্পষ্ট ওর করুন চোখে পানি দেখতে পেলাম। আশ্চর্য ও কাঁদছে কেনো?

ডাইরিতে আর কোন লিখা নেই। কয়েকটা পৃষ্ঠা পরপর লিখা, জানি তুমি আর ফিরবেনা। কিন্তু তোমাকে আমার বাহুজোড়া থেকে আমি আলাদাও করবো না। এই মামুন নামের পাগলটা অপেক্ষায় থাকবে তোমার। তোমার অনুভুতি গুলো নিয়েই আমি জিবন সাজাবো আমাদের মতো করে। তুমি শুধু হারিয়ে যেও না আমার কল্পনায়।

ডাইরিটা বন্ধ করে আলমারী থেকে নাফি ওর মায়ের ডাইরিটা বের করলো। তিয়ানা জামান অরু যদিও ওর মা নন। তবুও নাফির যখন ছয়মাস বয়স তখন থেকেই অরু ওকে মানুষ করেছে। ওর মায়ের বোন অরু। নাফির বাবা মা একটা রোড এক্সিডেন্টে ওর ছয়মাস বয়সেই মারা যায়। তাই সবটা জানার পরেও অরুকেই মা বলে ডাকে সে। ডাইরির সুতোটা উল্টোতেই ও পড়তে শুরু করলো,

খুব কষ্ট হচ্ছিলো যখন কফিশপ থেকে বেড়িয়ে আসছিলাম। মামুনের চোখে ওই ভয়টা দেখেছিলাম যেটা একসময় আমার চোখে ছিলো। হারিয়ে ফেলার ভয়। কিন্তু আমি ছিলাম নিরুপায়। বেচারা তো জানতও না যে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে দুদিন আগেই। ঠিক পারিবারিক চাপে নয়, তবে বাবার মানসম্মানের দিকে তাকিয়ে আমার বিবেক ওই বিয়ের পিড়িতে বসে তিনবার কবুল বলতে বাধ্য করেছিলো। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! যেই মানুষটাকে বিয়ে করলাম সেই মানুষটাও এ ভুবন ছেড়ে চলে গেলো ওপারে। বড় বোনটাকে নিয়ে আসতে গিয়েছিলো আমার বিয়ে করা স্বামী। বিয়ের তখন দুমাস বয়স। আমার বোন আর বোনজামাইকে নিয়ে আসতে রাস্তায় এক্সিডেন্টে মারা গেলো বোন, বোনজামাই আর সেই মানুষটা। বেঁচে থাকলো শুধু বোনের ফুটফুটে ছেলেটা। তাকে নিয়েই পরবর্তী জিবন কাটানোর শক্তি অর্জন করতে হয়েছিলো আমায়।

এরপরে জিবনে আর কাউকে জড়ানো হয় নি। যাকে বিয়ে করেছিলাম ওই মানুষটাও অনেক ভাল মনের ছিলো। তার আমার প্রতি সম্মান ছিলো অগাধ। যদিও এই দুমাসও পারেনি আমার পাগলটাকে ভোলাতে তবে ওই লোকটির প্রতিও একটা সম্মান চলে এসেছিল আমার। এতকিছুর পরেও আমি চাইলেই পারতাম মামুনের সাথে যোগাযোগ করতে। কিন্তু এতোটা স্বার্থপর তো আমিও নই। ফেসবুক আইডি থেকে শুরু করে সিম, জিমেইল সবকিছু শেষ করে দিয়েছিলাম। পাশেই একটা প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করে ছোট নাফিকে নিয়ে জিবন পার করার সিদ্ধান্ত নিলাম। একটা জিনিস উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম তখন, এখন আমার আর ভয় করে না কিছু হারানোর।

অনেকদিন পর আজ ডাইরি লিখছি। কেটে গেছে বিশটি বছর। অতীত কখনও কাউকে ছেড়ে দেয় না এটা মামুন বুঝিয়েছিলো। তেমনিভাবেই আজ দেখা হয়েছিলো মামুনের সাথে। নাফির আর্মিতে চাকরী করার খুব শখ ছিলো। তাই সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে পরিক্ষা দিয়ে সে টিকেও যায়। আজ ওর ট্রেনিং শেষে ব্যাচ লাগানো হয়েছে। আমি গিয়েছিলাম ওই অনুষ্ঠানে। অনেকটা গর্ব হয়েছিল যে আমার নাফি এখন দেশের এক যোদ্ধা। কিন্তু যে ওকে ব্যাচ পরালো ওকে দেখেই আমার বুকে তোলপাড় শুরু হলো। এ যে আমার পাগলটা। মামুন।

ব্যাচ লাগানো শেষ হলে নাফি মামুনকে নিয়ে আমার সামনে এসে পরিচয় করিয়ে দিলো, মা, ইনিই আমার ব্যাচ লাগিয়েছেন। মামুন আমার দিকে তাকিয়ে ঠিক সেই কফিশপের দিনের মতো অবাক হয়েছিলো। ততোক্ষনে আমার চোখ দিয়ে একফোটা পানি গড়িয়ে পরছে। নাফিকে তার বন্ধুরা একসাথে ছবি তোলার জন্য ডাক দিলে মামুন ওকে যেতে বললো। নাফি চলে যেতেই মামুন বললো, ‘কেমন আছো প্রিয়দর্শিনী? চিনতে পেরেছো তোমার পাগলটাকে?’ কান্না মুছে মৃদু হাসলাম। বললাম, এখনো তুমি আমার পাগলটিই কি আছো? ও হেসে বললো, চলো ওখানে বসি।

একটা ছাউনির নিচে বসে আছি আমরা। হঠাৎ ও বললো, ‘তোমাকে কিন্তু এখনো এই বাহুজোড়াতে আবদ্ধ করে রেখেছি আমি। ছেড়ে যেতে দেই নি।’ “তোমার বউ রাগ করে না বুঝি?” m‘সমস্ত কিছুতে যখন আমার প্রিয়দর্শিনীর বসবাস তখন অন্য কারও রাগ কি শোভা পায় বলো?’ আমি কিছু বলতে পারিনি ওকে। ও আবারও বললো, ‘আমি জানি না কি হয়েছিলো। জানতেও চাই না। কারন আমি বিশ্বাস করি খুব কঠিন কিছু না হলে আমার পাগলীটা আমাকে তার থেকে দুরে রাখতো না। তবে এটুকু আফসোস, আমাকে কি একবার জানাতে পারতো না সে?’ “জানলে কি তুমি বেঁচে থাকতে পারতে বলো?”

‘তোমার কি মনে হয় আমি বেঁচে আছি প্রিয়দর্শিনী?’ আমার চোখ যেনো আজ বাধা মানছেই না। অনবরত কেঁদেই চলেছি। খুব কষ্টে ওকে বললাম, “তুমি যাই বলবে তাই ঠিক তবে সবকিছুর মুলে শুধু এটুকু বলবো, আমি প্রতারনা করতে জানিনা। তোমার মতো ভালো আমি দ্বিতীয় কাউকে বাসিনি। তবে আমি স্বার্থপর হতে পারিনি অন্য সবার মতো। তাই আমরা আজকে একে অপরের বিপরীতে নিজেরা দোষী।” ‘এখনো কি কবিতা লিখে কেউ তোমার জন্য?’ হাসি পেলেও মনে পরে গেলো আমার জন্য ওর লিখা অদ্ভুত সব কবিতাগুলো। কিছু বলতে যেয়েও পারলাম না এবারও। ‘আমরা কি আগের মতো ফিরে আসতে পারি না?’ “ মৃদু হেসে বলি, চাইলে অনেক আগেই পারতাম আমি তবে প্রকৃতি হয়তো অন্য কিছু চায়। তাছাড়া, আমার জন্য তোমার সংসারে আমি অশান্তি চাই না।”

অনেকটা হেসে ও বলেছিলো, আমার সংসারে তো শুধু তুমি আর আমি। আর কেউ নেই। তুমি চাওয়া না চাওয়াতে কিছু যায় আসে না। তুমি আমার ছিলে, আমারি থাকবে। তোমার অনুভুতিগুলো আমার থেকে কেউ ছিনিয়ে নিতে পারবে না। একটু পরেই নাফি চলে আসলে আমার চোখে পানি দেখে নাফি বললো, কি হয়েছে মা তুমি কাঁদছো কেনো? চোখের পানিটা মুছে মৃদু হেসে বললাম, ও কিছু না বাবা। চল, বাড়ি চল। মামুনের থেকে বিদায় নেওয়ার সময় মামুন নাফির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, তোমার মায়ের খেয়াল রেখো। আর নিজেকেও দেখে রেখো।

মামুনের থেকে বিদায় নিয়ে আমরা স্টেশনে দাড়িয়ে আছি। একটু পরেই ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকবে। হঠাৎ মামুন হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে সামনে এসে হাঁপাতে লাগলো। আমি অবাক চোখে তাকিয়ে দেখছি ওকে। নাফি ওর হাতটি ধরে বললো, স্যার আপনি ঠিক আছেন? কি হয়েছে স্যার? হাত বাড়িয়ে আমাকে তার ডাইরিটা দিয়ে বললো, কিছু দিতে পারিনি তোমায়, এটা আমার স্মৃতি হিসেবে রেখো। বলেই ও চলে গেলো। এদিকে নাফি অবাক হয়ে অনেক প্রশ্ন করলেও সেগুলো আমার কানে এলো না। বাসায় এসে আমাদের গল্পটা আমার ডায়রীতেই শেষ করলাম। ভালো থেকো মামুন। কিছু আফসোসের শেষ আমরা জানিনা তবে এটুকু জানি তোমায় ভেবে আমিও ভালো আছি।

অনেকদিন পর ছুটিতে বাড়ি এসে দুটো ডাইরি শেষ করলো নাফি। ওর মা স্কুলে গেছে বিধায় বসে বসে ওর মায়ের জিবনের গল্প শেষ করলো। এদিকে দরজা খোলার শব্দ শুনে ও ডাইরি দুটো আগের জায়গায় রেখে দিলো। একটু পরে অরু এসে ছেলেকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, “আমার বাবটা কখন এসেছে? আমাকে একটাবার জানানোর ইচ্ছেও কি হয় নি তার?”

নাফি বললো, সারপ্রাইজ তো হতো না তাহলে। এটা শুনে অরু নাফির নাকটা টেনে দিয়ে বললো, আমার ছেলেটা তো অনেক বড় হয়ে গিয়েছে। কিছু খেয়েছে ছেলেটা? নাফি তখন আহ্লাদী কন্ঠে বললো, তোমায় ছাড়া খেয়েছি কখনও? অরু নাফির কপালে একটা চুমু খেয়ে বললো, আয় আমার সাথে। একসাথে মা বেটা খাওয়া করে নাফি রুমে এসে ঘুমিয়ে পরলো। সন্ধ্যায় একটু বেরিয়ে রাতে বাসায় এলো নাফি। রুমে এসে ফ্রেস হতেই হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হলো। নাফির মনে পরে গেলো ওর মা আর মামুন স্যারের কথা। আচ্ছা মামুন স্যার কি জানে যে ওর মা সেই তখন থেকেই একা। এদিকে মা তো জেনেছে যে মামুন স্যার আর বিয়েই করে নি। তবে কি আমার সবকিছু মামুন স্যারকে খুলে বলা উচিৎ।

পরোক্ষনে আবার ভাবলাম, প্রকৃতি যা হবার তা করে দিয়েছে৷ এখন তাদের মাঝে আর আগের মতো বেপারটা নেই৷ থাকলেও তা দুজনের মাঝেই আপেক্ষিক। তাড়াতাড়ি দুকাপ কফি বানিয়ে মায়ের রুমে গেলাম। দেখলাম মা বারান্দায় বসে আছে। মায়ের হাতে এককাপ কফি দিয়ে মায়ের পাশে বসলাম। অদ্ভুত এক অনুভুতি। হালকা বৃষ্টির ঝাপটা সাথে গরম কফি। আচ্ছা মায়ের কি তার কথা মনে পরছে না? মায়ের দিকে তাকাতেই দেখলাম, চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরছে। পানিটা মুছে দিয়ে মায়ের কাধে মাথা রাখলাম। মা গালে একটু আদর করে দিলো। আমার তখন দুই ডাইরির শেষপাতায় লিখা কথাগুলো মনে হতে লাগলো, ‘সাতরঙ্গা পাড়ের নীল শাড়িটা আর দেওয়া হলো না তোমায়, রেখে দিলাম আমার ভালবাসায়।’ “কালো পান্জাবিতে নীজ হাতে ফুল এঁকেছিলাম। তুমি বলেছিলে তোমার পছন্দ। পান্জাবিটা আর দেওয়া হলো না তোমায়, রেখে দিলাম হৃদয় কুটিরে, আমাদের ভালবাসায়।”

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত