মরুদ্যান

মরুদ্যান

আজ টাকাকে বিয়ে করলাম! ওপাশে শুয়ে আছে আমার নতুন বউ! যে কিনা ৪ মাসের অন্তসত্তা, যদিও সে সন্তানের পিতা আমি না।
।।
দূরত্ব আর অসহায়ত্ব জিনিসটা কি সেটা আজকে ঠিক অনুধাবন করতে পারলাম।
।।
চোখ দিয়ে না চাইতেও কেন জানি জল গড়িয়ে পড়ছে, হয়তো অতীত গুলো আজ খুব মনে পড়ছে।
।।
বয়স তখন উনিশ কি বিশ, আইরিন নামের একটা মেয়ের প্রেমে পড়লাম! ভদ্র ছেলের মতো অপেক্ষা করতে থাকলাম,

কখন ও তাকে ভালো করে দেখিনি, এভাবে তিনটা বছর পার হয়ে গেলো…
সব ঠিক ঠাক যাচ্ছিলো, জানতাম পড়া শেষ করে যে কোন একটা চাকুরী পেলে সে মেয়েকে পাবো,

কারণ ছেলে হিসাবে আমার একটা ভালো সুনাম আছে।
।।
কিন্তু একদিন আমি টাকার কাছে হেরে গেলাম, যে মেয়ে পড়া শেষ না করে বিয়ে করবে না,

সে মেয়ে হুট করেই রাতের অন্ধকারে বিয়ে করে নিলো, আমার কাছে সব কিছু কেমন জানি স্বপ্ন মনে হলো,

পরে বূঝলাম এটা স্বপ্ন না এটাই বাস্তবতা!
সে দিন আমি বুঝলাম টাকার আসল ক্ষমতা! ছেলে নাকি মাসে ষাট হাজার টাকা বেতন পায়,

আর মধ্যবিত্ত ঘরে ৬০ হাজার টাকা বেতন লটারির টিকিটের মতো, তাই আইরিনের আব্বু আর দ্বিতীয় বার ভাবলও না,

যেখানে টাকা আছে সেখানে সুখ আছে, তাই আইরিনও রাতের অন্ধকারে এভাবে বিয়ে করে নিলো।
।।
আমি সে দিন একটা জিনিস শিখলাম, আপনার কাছে যদি টাকা থাকে তবে সব আছে, সেই টাকাই আপনাকে দিবে ভালো মানুষের সার্টিফিকেট,

সেই টাকাই দিবে সুখ, আর সত্যি তো মেয়েটাকে আমার সাথে বিয়ে করলে বাসের ধাক্কা খেয়ে জীবন পার করতে হতো,

এখন হয়তো ওর স্বামী ওর জন্য গাড়ী কিনবে, আমার সাথে থাকলে তাকে সারা জীবন ভাড়া বাড়ীতে থাকতে হতো,

দুই ঈদের মধ্যে ভাগ করে নিতে হতো, কোন নিজের জন্য আর কোনটা পরিবারের জন্য, কিন্তু এখন সেটা করতে হবে না, সত্যি তো টাকাই সব।
।।
সে দিন থেকে আমি সিরধান্ত নিলাম, আমিও টাকাকে বিয়ে করবো, হোক সে মেয়ে কালো, বা অন্ধ বা ডিভোর্সি। বড়লোকের মেয়ে হলেই হবে।
।।
দুই বছর আগে, আমি এই কোম্পানিতে জয়েন্ট করি! তাই বলে যে মারিয়াকে(কোম্পানির মালিকের মেয়ে)

বিয়ে করবো সেটা কোন দিন স্বপ্নেও ভাবি নি, কারণ স্বপ্নেরও কিছু সীমানা থাকা উচিৎ।
কিন্তু গত কালকে হটাৎ স্যার(মারিয়ার আব্বু) এসে বলল, এ বিয়ে করতেই হবে, না হলে তার মান সম্মান কিছু থাকবে না,

প্রয়োজনে উনি কোম্পানির ৫০% আমার নামে লিখে দিবে।
।।
মনে মনে ভাবলাম এই সুযোগ হয়তো হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না, আর মারিয়া দেখতেও অনেক সুন্দরী। আর বাচ্চা ওটা ব্যাপার না,

নিজের বলে চালিয়ে দিবো।
।।
ব্যাস হয়ে গেলো বিয়ে!
কি অদ্ভুত ব্যাপার! কাবিন-নামা তে তারিখ এক বছর আগের! সাক্ষী কাজী সাহেব সবাই খুশী,

আমার স্যার কাজী সাহেব কে ১ লক্ষ টাকা দিয়ে দিলো, উনি খুশী হয়ে চলে গেলো, উনি বলল, স্যার আপনি চিন্তা করবেন না,

আমি সব ব্যাবস্থা করে দিবো, এই বিয়ে আজ না আজ থেকে ১ বছর আগে এই তারিখে হয়েছে।
।।
এই হচ্ছে টাকার ক্ষমতা! নিয়ম শুধু গরিবের সময়! গরিবের মেয়ে পালিয়ে গেলে সেটা মানুষ বলে রহিমের মেয়ে বাড়ী থেকে পালিয়েছে,

আর বড়লোকের মেয়ে পালিয়ে গেলে বলে, আরে বন্ধুর সাথে কক্সবাজার ঘুরতে গেছিলো। টাকা থাকলে সব নিয়ম-কানুন পকেটে
।।
পরের দিন সকালে!
স্যার- বাবা, নীরব! আজ সন্ধ্যায় একটা পার্টি আছে, আর দুপুরে তোমাকে অফিসে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাই ১২ টার মধ্যে অফিস চলে আসো।
আমি- জি আচ্ছা!
।।
এই পর্যন্ত আমি আমার বউয়ের সাথে এক বার ও কথা বলেছি কি না ঠিক মনে পড়ে না।
।।
বড়লোক বাবার মেয়েদের প্রতি আমি ধারণা আগে থেকে ভালো না, হয়তো ছবি আর খবর দেখে এই মনোভাব আর

মারিয়া কে দেখে সে ভাবনা যেন ১০০% সত্যি হয়ে গেলো। হয়তো কোন ক্লাবে গিয়ে ফুর্তি করতে গিয়ে পেট বাধিয়ে দিয়েছে,

হয়তো ওর বাবা কে সেটা ডিএনএ টেস্ট না করলে সঠিক ভাবে বলা যায় না।
।।
যাক আমার এসব ভেবে লাভ নাই, আমার টাকা চাই, আমি সেটা পেয়ে গেছি।।
দুপুরে অফিস গেলাম! আমাকে নতুন এমডি করা হলো!
আমি- একটা কথা বলবো?
স্যার- হা বলো বাবা!
আমি- আমার বেতন কতো?
স্যার- তুমি হয়তো বুঝো নি, আজ থেকে আমার কোম্পানির ৫০% মালিক তুমি নিজে,

মাসে তোমার কোম্পানি থেকে লাভ আসবে কম করে হলেও ৫ কোটি টাকা!
আমি- এই পদের বেতন কতো?
স্যার- আগের জন কে আমি ৪ লক্ষ ৫০ টাকা দিতাম।
আমি- আমাকেও তাই দিবেন। আর কোম্পানির যে লাভ হবে সেটা কোম্পানিতেই থাক।
।।
সন্ধ্যায় স্থানীয় একটা বড় কমিউনিটি সেন্টারে আমাদের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হলো।
সবাই জানলো, আমারা ১ বছর আগে পালিয়ে বিয়ে করি, কালকে আমার শ্বশুর জানতে পারে তাই আজকে অনুষ্ঠান!
হাজার হলেও এক মাত্র মেয়ে বলে কথা!
শ্বশুর ২ কোটি টাকার একটা নতুন গাড়ী আমাকে উপহার দিলো! ভাগ্যক্রমে ছোট বেলা থেকেই এই গাড়ী আমার খুব পছন্দ!

ইংলিশ ছবিতে দেখতাম নায়ক এই গাড়ী নিয়ে যুদ্ধ করতে যেত।
আমার জীবনটাও কি যুদ্ধের চেয়ে কম?
রাতে আমাকে গাড়ীর চাবিটা দিলো, আমি মারিয়াকে নিয়ে বাড়ীর উদ্দেশ্যে বের হলাম, সাথে আমার পিছনে আরও ৪-৫ টা গাড়ী।

মাস দুয়েক পরের কথা!
সন্ধ্যায় হটাৎ করে মারিয়া মাথা ঘুরে পড়ে গেলো, আমি খবর পেয়ে অফিস থেকে সোজা হাসপাতাল গেলাম!
ডাক্তার আমাকে বলল যে নিয়মিত না খাওয়ার কারণে সে অনেক দুর্বল হয়ে গেছে, তার ওপর সে সব সময় চুপ করে বসে থাকে,
।।
সত্যি তো এই দুই মাসে আমার মনে পড়ে না যে ঠিক মতো প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে দুই মিনিট কথা বলেছি…
অথচ আমি সেই ছেলে যাকে বড় ভাইয়ারা বউ পাগল বলতো, কারণ আমি ওদের বলতাম বিয়ে করে বউকে সময় দেন,

টাকা না দিতে পারেন ভালোবাসা দেন, সময় দেন।
সত্যি মানুষ পরিবর্তন শীল। তাই তো আমিও এই রকম হয়ে গেছি।
।।
মারিয়া কে নিয়ে আমি হাসপাতাল থেকে বের হলাম, ডাইভার কে আমি আগে ছেড়ে দিয়েছিলাম, তাই গাড়িটা আমি চালাচ্ছিলাম!

রাস্তার এক পাশে থামলাম! যায়গা টা খুব পরিচিত, কারণ ১০ বছর আগে একবার যখন একটা ট্রেনিং এর জন্য ঢাকা এসেছিলাম তখন স্বপ্ন অন্যরকম ছিল,

জানতাম আমার কাছে কোটি টাকা আসবে না আমি লাখ টাকা বেতন পাবো না তাই রাস্তার পাশের কিছু সস্তা কিন্তু সুন্দর যায়গা

গুলো আমি বেছে রেখেছিলাম আমার মনের ডায়রি তে, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সব কিছু আবছা হয়ে গেছে।
।।
আমি গাড়িটা থামালাম!
মারিয়া- এখানে গাড়ী থামালেন কেন?
আমি- নামেন!
মারিয়া- কেন?
আমি- এতো প্রশ্ন কেন? নামেন!
।।
আমি মারিয়া কে নিয়ে রাস্তার পাশে হাঁটতে শুরু করলাম, রাস্তার পাশ দিয়ে একটা ব্রিজ আছে, ব্রিজ বললে হয়তো

ভুল হবে ঠিক এমন ভাবে কথা আছে যেন অর্ধেক ব্রিজ কারণ অর্ধেক গিয়ে শেষ, নীচে পানি ওটায় বসার যায়গা!
।।
সত্যি যদি কোন কিছু ভয়ংকার না হয় তবে সেটা হয়তো বেশি সুন্দর হয় না।
আমি ওখানে গিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে আর একটা ছেলে বসে আছে।
আমি- ভাইয়া, আপনারা কি একটু উঠবেন
ছেলেটা – কেন উঠবো ভাই?
আমি- আমারা বসবো তাই।
ছেলেটা- তো আমরা কোথায় বসবো?
আমি- কোথায় বসতে চান?
ছেলেটা- যেখানে বলবো মনে হচ্ছে বসিয়ে দিবেন।
আমি- আপনি বলেন।
।।
ছেলেটা- সামনে এই ইটালিয়ান রেস্ট্রুরেন্ট দেখেছন, আমার ইচ্ছা আমার বউকে নিয়ে ওখানে ডিনার করবো।
আমি- আচ্ছা যান! আমি করাবো, ওখানে গিয়ে আমার এই কার্ড দিয়ে বলবেন, যে আমি পাঠিয়েছি, শেষে ম্যানেজারের

সাথে আমার কথা বলিয়ে দিবেন, যা বিল হবে আমি দিয়ে দিবো।
ছেলেটা- আমাকে বোকা পেয়েছেন?
আমি- আমি কে জানেন?
ছেলেটা- আর-কে গ্রুপের এমডি। আপনি যান সমস্যা নাই।
।।
ছেলেটা চলে গেলো। আমি মারিয়া কে নিয়ে ওখানে বসলাম!
মারিয়া- এসবের কি দরকার ছিল? এখানে কি এমন আছে যে ওদের টাকা দিতে হবে?
আমি- আপনি টাকার চিন্তা করছেন? আমি অন্য চিন্তা করছি?
মারিয়া-কি?
আমি- এখানে আমি ২ টা স্বপ্ন পূরণ করলাম।
মারিয়া- কি কি?
।।
আমি- ১০ বছর আগে আমি যখন ঢাকায় আসি, আমি জানতাম আমি হয়তো অতো বেতন পাবো না

যে আমার বউকে ফাইভ-স্টার হোটেলে নিয়ে গিয়ে ডিনার করাতে পারবো,

তাই তাকে অল্প টাকায় কীভাবে সুখে রাখা যায় সে চিন্তা করতাম, আজ এখানে এসে ঐ ছেলেকে দেখে আমার সেই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেলো।
।।
তাই তাকে টাকা দিয়ে তার স্বপ্ন পূরণ করলাম আর এই খানে বসে আমার স্বপ্ন পূরণ করলাম।
জায়গাটা অনেক শান্ত! তাই না?
মারিয়া- এদিক অদিক কি খুঁজছেন?
আমি- বাদাম!
মারিয়া- ওহ!
আমি- এই পেয়েছি,
।।
আমি ২০ টাকার বাদাম কিনে বসলাম,
মারিয়া- আজ এতো ম্যায়া হলো কীভাবে? নাকি আমি মরে যাবো এ কথা শুনে এতো খুশী?
আমি- না ভাবলাম! বিয়ে যখন করেছি, তখন নিজের স্বপ্ন গুলো অন্তত পূরণ করে নেই।
মারিয়া- দেখেন আমার শরীর এখন ভালো নাই, তাই আপনার কিছু পূরণ করতে পারবো না। আর কয়েক মাস পর বাচ্চাটা হয়ে যাক,

আমি সুস্থ হয়ে যায়, তখন!
আমি- আচ্ছা একটা কথা প্রশ্ন করবো?
মারিয়া- কি বলেন?
আমি- এই বাচ্চা আসলো কীভাবে?
মারিয়া- মানে?
আমি- না মানে, এই বাচ্চার বাবা কে? কীভাবে আপনার সাথে আপনার পরিচয় হলো? সে এখন কোথায় আছে?
।।
মারিয়া- ৩ বছর আগে ছেলেটার সাথে আমার পরিচয়, ছেলেটার নাম আরিফ! প্রথম তার সাথে পরিচয় হয় সে আমার বান্ধবীকে প্রাইভেট পোড়াতো,

সেই সুত্রে আমিও মাঝে মাঝে কোন সমস্যা হলে তার কাছে জিজ্ঞেস করতাম, এভাবে ৬ মাস পর তার সাথে আমার রিলেশন হয়,

ছেলেটা নাকি গরীব ছিল, কিন্তু অনেক মেধাবী।
ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে তখন গনিতের ওপর মাস্টার্স করছিলো, আমি তাকে অনেক ভাবে হেল্প করতাম, তার ইচ্ছা সে আমেরিকা গিয়ে পিএইচডি করবে,

এজন্য সে স্কলারশিপ ও পাই আর বাকী ব্যাবস্থা আব্বু তাকে করে দেয়।
।।
কিন্তু ঘটনা ঘটে তার যাবার ১ মাস আগে এক দিন সে আমাদের বাড়ী আসলো, সে দিন বাসায় কেউ ছিল না আর রাতেও আসবে না আব্বু-আম্মু।

সে দিন রাতে কি থেকে কি হয়ে গেলো, বুঝলাম না! আমি এসব করতে চাই নি, সে বলল,

দুই বছর পর সে আমেরিকা থেকে ফিরে এসে সে আমাকে বিয়ে করে নিবে, ওকে অনেক ভালবাসতাম তাই ওর কথা ফেলতে পারিনি,
।।
কিন্তু যার এতো উপকার করলাম যাকে এতো বিশ্বাস করলাম সে যে আমাকে এইভাবে ধোঁকা দিবে কখনও বুঝিনি, সে আমাকে একটুও ভালোবাসে নি,

সে শুধু আমাকে ব্যাবহার করেছে, আমার বাবা তার আমেরিকা যাবার জন্য প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ করেছে,

সেটা কোন ব্যাপার না কিন্তু আমার এই রকম ক্ষতি করলো কেন?
।।
দুই মাস পর জানতে পারলাম যে আমি প্রেগন্যান্ট! আমি তাকে অনেক বার ফোন করলাম, কিন্তু সেই নাম্বার বন্ধ। আমার আব্বুও খোঁজ নিলো,

আব্বুর এক বন্ধু তার সাথে দেখা করলে সে বলে সে আমাকে ছুয়েও দেখেনি, এই বাচ্চার বাবা সে না, সে আমার শুধু বন্ধু।
।।
আমি তো এই শুনে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম, আমি আত্মহত্যা ও করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু আমি বেঁচে যায়,
তখন জোর করে আপনার সাথে আমার বিয়ে দেয়! আপনিও তো শুধু আমাদের টাকা দেখে বিয়ে করেন।
।।
আচ্ছা একজন কে মন থেকে ভালোবাসা কি পাপ? আমার বাবার অনেক টাকা, এটা কি আমার জন্য অভিশাপ? আমি কি ভালোবাসা পাবার যোগ্য না?
।।
মারিয়াকে কিছু বলতে পারিনি, শুধু চোখ দুটো মুছলাম!
আমি আমার কষ্ট টা কে অনেক বড় মনে করতাম, কিন্তু ওর গল্প শুনে মনে হলো, আমার কষ্ট ওর সামনে ছোট্ট একটা আঁচড় মাত্র!

মেয়েটা পাহাড় পরিমাণ কষ্ট নিয়ে একটা লোভী মানুষের সাথে সংসার করে যাচ্ছে।
সত্যি প্রতিটা মানুষের জীবন এক একটা উপন্যাস।

আর কয়েক দিন পর ঈদ! এখন ও ঠিক করতে পারছি না, আমি একা যাবো নাকি মারিয়াকেও নিয়ে যাবো। বাবা-মা বলল,

বিয়ে না হয় একা করলি, বউ তো গ্রামে নিয়ে আয়। কিন্তু এই পরিবেশে কীভাবে ওকে ওখানে নিয়ে যাবো!
।।
আমি- আপনি কি আমার সাথে আমাদের গ্রামের বাড়ী যাবেন?
মারিয়া- এই শরীরে কি এতো দূর জার্নি করা ঠিক হবে?
আমি- আমি জোর করবো না!
।।
আমি তাকে আর কিছু বললাম না, আর মনে হয় বলার অধিকার ও নাই! আমিও চাই সুস্থ ভাবেই বাচ্চা টা হয়ে যাক,
তিন দিন পর!
রাত ১১ টায় আমার বাসের টিকিট! যদিও ঈদ এখন ও ৫ দিন পর! জ্যামে পড়ার আগেই যাওয়া ভালো হবে।
।।
মারিয়া- আপনি কি আজকে চলে যাবেন?
আমি- হ্যাঁ! বাসের টিকিট রাত ১১ টা!
মারিয়া- বাস কেন? নিজের গাড়ী রেখে!
আমি- এভাবে বউ ছাড়া গাড়ী নিয়ে গেলে খারাপ দেখাবে, তাছাড়া আমি সাধারণ ভাবে থাকতে বেশি পছন্দ করি,

অনেক দিন ধরে এই ইট-পাথরের জগতে নিজেকে আঁটকে রেখেছি, গ্রামে মুক্ত বাতাসে একটু মুক্ত হতে চাই।
।।
মারিয়ার আব্বু- বাবা, নীরব! মারিয়া বলল, তুমি নাকি আজকেই গ্রামের বাড়ী চলে যাচ্ছ?
আমি- জি হ্যাঁ!
মারিয়ার আব্বু- তো মেয়েকেও নিয়ে যাও। তোমার আব্বু আমাকে ফোন করেছিলো।
আমি- আপনার মেয়ে তো অসুস্থ এজন্য।
মারিয়ার আব্বু- কিছু হবে না, তোমরা এসি বাসে যাও। আমি কালকে গাড়ী পাঠিয়ে দিবো, বাসে ঝাকি লাগবে না।
আমি- আপনার মেয়ে রাজী থাকলে আমার কোন সমস্যা নাই।
।।
রাত ১১ টা আমারা গাড়ীতে করে বাস স্ট্যান্ড এ আসলাম! তারপর বাস নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ছেড়ে দিলো।
মারিয়া- এই ঈদের সময় এতো তাড়াতাড়ি আমার টিকিট পেলেন কীভাবে?
আমি- আগে থেকেই ২ টা টিকিট কেটেছিলাম।
মারিয়া- আপনি কীভাবে জানলেন যে আমি যাবো, আর আপনার যদি ইচ্ছা ছিল আমাকে নিয়ে যাবার সেটা তো আগে বলেন কি।
আমি- আপনাকে জোর করতে চাই নি।
মারিয়া- আমি জোর করার কথা বলি নি, বলেছি বলতে! আপনি এতো পেচিয়ে উত্তর দেন কেন?
আমি- সরি!
।।
স্যার! নামেন, কিছু খেয়ে নিলে খেয়ে নেন, বা ওয়াশ-রুমে গেলে এখুনি যান, এখানে গাড়ী ৩০ মিনিট দাঁড়াবে।
ঘড়ি দেখলাম পুরো ৩ টা বাজে।
মারিয়া- এটা কোন যায়গা?
আমি- সিরাজগঞ্জ!
মারিয়া- আমি ওয়াশ-রুমে যাবো।
।।
আমি মারিয়াকে নিয়ে গেলাম, এই প্রথম আমি মারিয়ার সাইড-ব্যাগ/পার্স নিজ হাতে নিলাম। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি, ফোনটা ভাইব্রেট হচ্ছে,

মনে মনে ভাবলাম, আমার বউয়ের প্রেমিক আছে নাকি? এতো রাতে কোন হারামির বাচ্চা ফোন করছে।
।।
আমি- আপনার ফোন বাজচ্ছে বার বার।
মারিয়া- তো ধরেন নি কেন?
আমি- আপনার ফোন, আমি কেন ধরবো
মারিয়া ফোন বের করে কথা বলল, তার পর বলল, আপনার ফোন বন্ধ কেন? বাবা বার বার ফোন দিচ্ছিল।
আমি- কই দেখি! হা তাই তো।
।।
মারিয়া- আমি এর আগে একা কোথাও যায় নি, মানে বাবাকে ছাড়া! স্কুল বা কলেজ থেকে গেলেও আমাকে বাবা একা পাঠাতো না,

আজ এতো দূরে যাচ্ছি তাও বাসে তার ওপর এই শরীরে তাই বাবা একটু চিন্তা করছে।
আমি- না ঠিক আছে! আমরা ঈদ শেষ করেই তাড়াতাড়ি ফিরে যাবো।
মারিয়া- আমি কি সেটা বললাম, যে আমি বাড়ী যাবো? শুধু কথা পেঁচান কেন?
আমি- সরি!
।।
আমি- আপনি কিছু খাবেন না?
মারিয়া- না!
আমি- চলেন এখন ও অনেক সময় আছে, রাস্তার ওপাশে যায়।
মারিয়া- এই অন্ধকারে ঐ পারে? আচ্ছা আপনার ভয় করে না?
আমি- কিসের ভয়? মানুষের নাকি ভুতের?
মারিয়া- ভুতের!
আমি- মানুষ যতটা খারাপ ভুত ততোটা খারাপ না!
মারিয়া- অভিজ্ঞতা আছে মনে হয়!
আমি- প্রতিটা মানুষের জীবন এক একটা উপন্যাস!
মারিয়া- আমি কি সেই উপন্যাসের কাহিনীটা শুনতে পারি?
আমি- বলবো অন্য দিন।
মারিয়া- আজকে কি সমস্যা! অন্ধকার রাস্তা! চারপাশ চুপ-চাপ! বলেন শুনি! ভুতের প্রেমে পড়েছিলেন নাকি?
আমি- ভাজ্ঞিস পড়তাম!
।।
আমার কথা শুনে মারিয়া হাসতে শুরু করলো, এই প্রথম মেয়েটাকে আমি হাসতে দেখলাম!
মারিয়া- আর ২০ মিনিট সময় আছে বলেন।
আমি- তখন আমি ক্লাশ ফোরে! নতুন স্কুল নতুন সব কিছু! একটা মেয়েকে খুব ভালো লাগতো, তবে ভালোবাসা নাকি অন্য কিছু বুঝতাম না,

শুধু তাকে দেখার জন্য প্রতিদিন স্কুল যেতাম। স্কুলে হয়তো ৩০০ মেয়ের মধ্যে সেই ছিল আমার জন্য আলাদা!
।।
মারিয়া- বাহ! ছোটকালের প্রেম! তারপর তারপর!
আমি- তারপর কি সময় যেতে থাকলো আমি বুঝতে থাকলাম সেটা ভালোবাসা! ক্লাশ এইটে পড়ার সময় সে জানতে পারে যে আমি তাকে ভালোবাসি,

সে আমাকে নাও বলে না হ্যাঁ ও বলে না, সময় গড়িয়ে যায় আমি অপেক্ষা করতে থাকি,

ক্লাশ টেন এ উঠার পর জানতে পারলাম সে অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম করছে,
।।
আমি প্রথমে কিছুটা অবাক হলাম! কারণ ছেলে হিসাবে আমার প্রচুর সুনাম ছিল, আর যে ছেলের সাথে প্রেম করতো সে তো ভালো না,

এক বন্ধু বলল, বন্ধু ভালো ছেলে হলেই প্রেম হয় না, টাকাও থাকা লাগে! সত্যি তো,

যে ছেলেটার সাথে মেয়েটা প্রেম করছে তার বাইক আছে আর আমার বাপ আমাকে একটা ভাঙ্গা সাইকেল কিনে দিয়েছে।

তাহলে প্রেম কীভাবে হবে।
মারিয়া- এটা দেবদাস হবার কারণ!
আমি- না আরেকটা আছে?
..
মারিয়া- মানুষের দুই বার প্রেম হয়?
আমি- আমিও আগে তাই ভাবতাম, যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের না হয়েছে।।
মারিয়া- হ্যাঁ বলেন,
আমি- আমি ভাবলাম আর প্রেম করবো না, ভদ্র ছেলের মতো সময় যেতে থাকলো, কিন্তু যখন ভার্সিটি তে পড়া শুরু করলাম,

তখন আবার প্রেমে পড়লাম! আবার আমার সেই হাতিয়ার সাহস আর নিজের প্রতি ভরসা!
কিন্তু এবার টাকা যে কি জিনিস? সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম! মেয়েটা বলেছিল যে সে পড়া শেষ হবার আগে কাউকে বিয়ে করবে না,

কিন্তু যখন ছেলের বেতন ৬০ হাজার টাকা শুনে তখন সব সমীকরণ বদলে গেলো। রাতা রাতি বিয়ে…।
।।
মারিয়া- আপনি তখন কি করছিলেন?
আমি- কি করবো? টাকার কাছে ভালোবাসা পরাজয়!
মারিয়া- আপনি ড্রিংক করেন?
আমি- না!
মারিয়া- সিগারেট খান না?
আমি- না।
মারিয়া- তাহলে কেমন করে হলো?
আমি- মানে?
।।
মারিয়া- না মানে আমি শুনেছি বা অনেক কে দেখেছি প্রেমে ব্যার্থ হয়ে অনেক মদ, গাজা, সিগারেট খায় তাই জিজ্ঞেস করলাম!
আমি- যে আমার না আমি তার জন্য কেন নিজেকে ধ্বংস করবো। সে আমার হয় নি তার মানে কেউ তো আমার হবে!
মারিয়া- এর পর থেকেই আপনি শুধু টাকা টাকা আর টাকা!
আমি- হ্যাঁ তাই।
মারিয়া- আচ্ছা আপনি কোম্পানিতে বেতন কতো পান?
।।
আমি- এই সব মিলিয়ে ৫ লক্ষ হবে, কেন?
মারিয়া- না এমনি। আচ্ছা এই টাকা নিয়ে আপনি কি সুখী?
আমি- টাকা কখনও সুখ দিতে পারে না! তবে সুখের রাস্তা এই টাকা দেয়।
মারিয়া- আপনি অদ্ভুত মানুষ!
আমি- বিশ্বাস হয় না? আপনাকে একটা উদাহারণ দেয়। এখন কয়টা বাজে?
মারিয়া- কেন? ৩:৩৬
।।
আমি- সুপার ভাইজার কতো সময় বলেছিল?
মারিয়া- ৩০ মিনিট।
আমি- তখন কয়টা বাজছিলো?
মারিয়া-৩ টা! ওহ তাই তো তাড়াতাড়ি চলেন, বাস না চলে যায়।
আমি- যাবে না, এখন ও ৪ মিনিট সময় আছে।
মারিয়া- কীভাবে?
আমি- আমার ধরনা ছিল হতে পারে আমাদের আরও ১০ মিনিট লাগতে পারে তাই আসার সময় সুপারভাইজারকে ২০০০ টাকা দেয়,

বলি আমি যদি না আসি আরও ১০ মিনিট দেরি করে।
।।
মারিয়া- লাভ কি হলো?
আমি- আমি ২০০০ টাকা দিয়ে ২ টা কাজ করেছি।
মারিয়া-কি?
আমি- এক সুপারভাইজারের মুখে হাঁসি কিনেছি আর তার বিনিময়ে সে আমাকে ১০ মিনিট দিয়েছে আর

সে ১০ মিনিটে আমি আমার বউয়ের মুখে হাঁসি ফোঁটাতে পেরেছি। তাহলে টাকা কি আমাকে সুখে থাকার রাস্তা দিলো না?
মারিয়া- আপনাকে কথায় পারা যাবে না। আপনি জয়ী, এখন চলেন! সময় শেষ।
আমি- চলেন।
।।
আমি মারিয়া কে নিয়ে বাসে উঠলাম, উঠার সময় সুপারভাইজার একটা মুচকি হাঁসি দিলো।

ফজরের আজান দিচ্ছে! মারিয়া ঘুমাচ্ছে, আমি ওর দিকে হা করে চেয়ে আছি, মেয়েটাকে আজ বড্ড বেশি সুন্দর

লাগছে নাকি আমি এতো দিন তার দিকে ভালো করে তাকায় নি ঠিক বুঝলাম না, হালকা শীত পড়েছে,

আমি শাল টা ব্যাগ টা বের করে মারিয়ার ওপর দিয়ে দিলাম!
ঘুমাক মেয়েটা! অনেক দিন পর হয়তো আজ শান্তিতে ঘুমিয়েছে।
।।
চারপাশ আসতে আসতে পরিস্কার হয়ে যাচ্ছে! আমি একটু চোখ বন্ধ করলাম।
হটাৎ করে সুপারভাইজার এসে ডাক দিলো, স্যার!
আমি- আস্তে, বলেন! ম্যাডাম ঘুমাচ্ছে।
– সরি! স্যার আর ঘণ্টা খানিকের মধ্যে আমরা পোঁছে যাবো, আপনি কি শহরে নামবেন নাকি শহরের বাইরে?
আমি- বাইরে! এই এলাকা।
– ঠিক আছে স্যার!
ঘণ্টা খানিক পর সুপারভাইজার আমাকে ডাক দিলো।
আমি- মারিয়া! উঠো, আমারা চলে এসেছি।
মারিয়া ঘুম থেকে উঠে তার গায়ে শাল দেখে চমকে গেলো, কারণ শাল সে নেই নি।
আমি- শাল আমার ব্যাগে ছিল, তোমার ঠাণ্ডা লাগছিলো তাই দিয়েছি, এখন চলো।
।।
আমি মারিয়াকে নিয়ে নীচে নেমে গেলাম,
মারিয়া- এখানে আপনাদের বাড়ী?
মারিয়া- এখন কীভাবে যাবো?
আমি- ওটায় ভাবছি।
মারিয়া- আর কতো দূর?
আমি- বেশি না ১ কিমি।
মারিয়া- রিক্সা নিয়ে নিন।
আমি- হ্যাঁ কিন্তু রাস্তা অনেক খারাপ, আর এই শরীরে এভাবে যাওয়া যাবে না।
মারিয়া- তো কীভাবে যাবো।
আমি- একটা অটো দেখি।
।।
আমি- এই ভাই! যাবেন?
-কোথায় যাবেন?
আমি- ভিতরে
– যাবো না ভাই
আমি- রিজাভ যাবো।
– আসার সময় ফাকা আসতে হবে।
আমি- ডবোল ভাড়া নিয়ে নিন।
-১০০ টাকা নিবো।
আমি- ২০০ দিবো চলেন।
।।
আমি ব্যাগ নিয়ে অটো তে উঠলাম, কিন্তু কিচ্ছুক্ষণ পর মারিয়া বলল, রাস্তার ঝাকুনির ফলে ওর পেট ব্যাথা করছে,
আমি ওকে অটো থেকে নেমে গেলাম। নেমে দেখি রাস্তার অবস্থা সত্যি অনেক খারাপ, আমি অটো ওয়ালাকে বললাম,

আপনি ব্যাগ নিয়ে চলে যান, আমারা হেঁটে আসছি।
অবশেষে আমি ১০ মিনিট পর বাড়ী গেলাম।
।।
আমি মারিয়াকে বললাম একটু রেস্ট নিতে। আমি বাজারের দিক গেলাম, ওখানে এক বড় ভাই কে নিয়ে চেয়ারম্যান সাহেবের কাছে গেলাম,

সম্পর্কে উনি আমাদের চাচা!
।।
আমি- আসসালামু! চাচা কেমন আছেন?
চাচা- হ্যাঁ বাবা ভালো, ঢাকা থেকে কখন আসলে তুমি?
আমি- একটু আগেই, আপনার কাছে আসলাম, একটা অভিযোগ নিয়ে, রাস্তার এই অবস্থা কেন? ২ বছরের ও একটুও ভালো হয় নি,
চাচা- আমি কি করবো বলো বাবা। এমপি সাহেব কে কতো বার বললাম, বলছে এই বাজেটে মনে হয় হবে না।
।।
আমি- তার মানে আপনি কোন উপকার করতে পারবেন না?
চাচা- বাবা! এই রাস্তায় প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা খরচ হবে। আমার একার পক্ষে সেটা সম্ভব না।
আমি- যদি আমি সেই রাস্তা তৈরি করে দেয়,
চাচা- কি বলো?
আমি- হ্যাঁ! তবে শর্ত আছে রাজনৈতিক কোন ঝামেলা যেন না হয়।
চাচা- আমি এখুনি এমপি সাহেবের সাথে কথা বলছি।
আমি- বলেন! আর আমি রাস্তার বানানোর সব ব্যাবস্থা করছি।
।।
তারপর আমি কিছু বাজার করে বাড়ী গেলাম!
।।
মারিয়া- কোথায় গেছিলেন?
আমি- বাজার করতে, আর একটু ঘুরলাম।
।।
আম্মুর সাথে দেখলাম মারিয়ার ভালো ই কথা বার্তা চলেছে, যাক ভালো।
বিকেলে চেয়ারম্যান সাহেব আমাদের বাড়ীতে আসলো।
চাচা- নীরব!
আমি- জি চাচা আসেন।
চাচা- এই নাও এমপি সাহেবের অনুমতি পত্র, আর এটা আমার অনুমতি পত্র। আর এই ৩ জনের সাথে কথা বলে নাও,

এরা তোমাকে তোমার চাহিদা মাফিক, যা চাইবা তাই দিবে।
আমি- ধন্যবাদ চাচা। আচ্ছা এই রোড করতে কয় দিন লাগতে পারে?
চাচা- আমাদের হিসাব অনুযায়ী? ৩০ জনের একটা টিম প্রায় ১৫ দিন সময় লাগতে পারে।
আমি- আমার কাছে এতো সময় নাই, ঈদের আর ৫ দিন আছে, এই ৫ দিনেই কাজ শেষ করতে হবে।
চাচা- এতো তাড়াতাড়ি কীভাবে সম্ভব?
আমি- টাকা থাকলে সব সম্ভব।

।।
আম্মু- তুই এখানে এসে আবার কি কাজ শুরু করলি?
আমি- তেমন কিছু না, এই রাস্তা ঠিক করতে হবে।
।।
পরের দিন থেকে ৭০ জনের একটা বড় টিম নিয়ে ১২ ঘণ্টা করে কাজকরা শুরু করলো, পরের দিন-ই পাথর, পিচ,

বালি সহ সব কাঁচামাল আমদানি করা হলো, এমপি সাহেবের আদেশে ২ জন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার উপস্থিত।
সবার চেষ্টাতে ঈদের আগের দিন দুপুরের মধ্যেই রাস্তা কমপ্লিট।
।।
মারিয়াকে নিয়ে আমি বের হলাম, সে তো ভাঙ্গা রাস্তার ভয়ে বের ই হবে না।
মারিয়া- না! প্লিজ, কালকে ঈদ। আমার পেট ব্যাথা শুরু হয়ে যাবে।
আমি- আরে চলেন না।
।।
আমি মারিয়াকে নিয়ে গেলাম।
মারিয়া- ওখানে এতো মানুষ কিসের? আর এই রাস্তা কে ঠিক করলো? কতো দূর পর্যন্ত ঠিক করেছে? ঐ বাস-স্ট্যান্ড পর্যন্ত ঠিক করেছে তো?
আমি- চলো তো সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।
।।
চেয়ারম্যান চাচা- এই তো আমার বাবা চলে এসেছে, সাথে বউ-মা ও এসেছে, এই নাও মা, তুমি রাস্তার উদ্বোধন করো।
মারিয়া- আমি কেন?
আমি- করতে বলছে করো।
আমি- মারিয়া আসো, এই রিক্সা তে উঠো।
আমি মারিয়াকে নিয়ে রিক্সাতে সোজা স্ট্যান্ড পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে আসলাম, আর আমাদের পিছনে আরও ৩০ টা রিক্সা ছিল।
।।
আর এটায় ছিল আমাদের রাস্তা উদ্বোধন !
তারপর সবাইকে মিষ্টি বিতারণ করা হলো।
।।
চেয়ারম্যান চাচা- আপনারা হয়তো ভাবছেন, এমপি সাহেব বা আমি কেন উদ্বোধন না করে নীরবের বউ কেন করলো,

কারণ এই রাস্তার সম্পূর্ণ খরচ নীরব নিজে দিয়েছে, তাকে আমি জিজ্ঞেস করলাম সে কেন এতো টাকা খরচ করছে,

সে বলল, ওর যখন বউ-এর কিছু দিন পর বাচ্চা হবে, সে যখন এই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো ভাঙ্গা রাস্তার জন্য তার অনেক কষ্ট হয়,

বউয়ের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সে আমার কাছে যায়, কিন্তু আমার সেই ক্ষমতা নাই যে আমি এতো তাড়া তাড়ি রাস্তা বানিয়ে দিতে পারবো।

তখন সে নিজে বানিয়ে নেই। একটা মানুষ তার বউ কে কি পরিমাণ ভালবাসতে পারলে এতো টাকা খরচ করতে পারে, আমার জানা নাই,

আমারা সবাই জানি সম্রাট শাহজাহান তার বউ এর জন্য তাজমহল বানিয়ে গেছিলো, ভালোবাসার স্বীকৃতি স্বরূপ!
তাই এই রাস্তার নাম আজ থেকে তাজমহল রাস্তা!
এই রাস্তা তার বউয়ের জন্য হলেও আমরা প্রায় ১০,০০০ মানুষ এই সুযোগ সুবিধা লাভ করবো।
আসেন আমারা নীরবের বউ ও তার বাচ্চার জন্য অগ্রিম দুয়া করি, সে যেন ভালো আর সুস্থ ভাবে এই পৃথিবীতে আসতে পারে।
।।
আসার সময় মারিয়াকে দেখলাম কেমন জানি চুপ হয়ে আছে।। আমি মারিয়াকে একটা রিক্সাতে উঠিয়ে দিয়ে বললাম বাসায় চলে যাও।

আমি কাজ সেরে আসছি।

মারিয়াকে বাড়ী পাঠিয়ে দিয়ে, আমি রাস্তার হিসাবে বসলাম, কারণ অনেক পাথর আর ইট বেঁচে গিয়েছিলো।
এক চাচা বলল, বাবা, একটা অনুরধ ছিল।
আমি- জি বলেন।
চাচা- তোমার বাড়ী থেকে এই বাজার এর দিক দিয়ে সামনের মোড় পর্যন্ত রাস্তা টা করে দিলে আমাদের ও অনেক উপকার হতো,

আমাদের ও অনেক কষ্ট হয়, রিক্সা ও আসতে চাই না ভাঙ্গা রাস্তা দেখে।
চেয়ারম্যান চাচা- কি বলেন ভাই, এটা বাড়া বাড়ী হয়ে যাচ্ছে। নীরব কোন সরকারী ফান্ড পায় নি, যে আমাদের মাঝে এভাবে বিলিয়ে দিবে।

আমি ৬ মাসের মধ্যে বাজেট আনার চেষ্টা করবো।
।।
চাচা- সেটা তো আপনি ১ বছর আগে থেকে বলছেন।
আমি-আচ্ছা চেয়ারম্যান কাকা! আপনার বাজেটের সমস্যা কে করছে?
চেয়ারম্যান চাচা- এমপি সাহেব বলছে ১০ লক্ষের টাকা বেশি দিবে না অথচ এই রাস্তার জন্য ২৫ লক্ষ টাকার বাজেট।
আমি- বাকিটা কি ওর পকেটে?
চেয়ারম্যান চাচা- হ্যাঁ, আরও অনেক নেতা কর্মী আছে, সবাই ভাগ করে খাবে।
আমি- আপনি বলেন, ঐ ১০ লক্ষ টাকা দিতে। বাকী যা খরচ হবে আমি দিবো। আমার মনে হয় সব মিলিয়ে ২০ লক্ষের নীচেই হবে।
চেয়ারম্যান চাচা- তাহলে আমি রাতেই কথা বলছি, তাহলে মনে হয় ১ সপ্তাহের মধ্যেই পেয়ে যাবো।
আমি- আমার কোন সমস্যা নাই, তবে একটা কথা।
চেয়ারম্যান চাচা- হ্যাঁ বলো।
।।
আমি- কাজ আমি করবো। আমি আপনাদের টাকা দিবো না।
চেয়ারম্যান চাচা- বুঝেছি বাবা! তুই আমাদের বিশ্বাস করিস না।
আমি- এই রাস্তা করতেই তো সে প্রমাণ পেলেন, আপনারা বললেন যে ৩০ লক্ষ টাকা লাগবে সেখানে ২২লক্ষ ২০ হাজার টাকা লাগলো,

তাও সবাই কে ঈদ বোনাস দিয়েছি আর ১ লক্ষ টাকার তো পাথর বেঁচে গেছে।
চেয়ারম্যান চাচা- আচ্ছা তুই করিস, আমি ১০ লক্ষ টাকা তোকে দিয়ে দিবো।
আমি- ঠিক আছে।
।।
রাতে আমি বাড়ী গেলাম!
আম্মু-কিরে বাড়ী আসতে এতো দেরি কেন? কালকে ঈদ আর আজকে তোর কোন খোঁজ নাই।
আমি- রাস্তার সব কাজ শেষ করছিলাম।
আম্মু- খেয়ে নে।
আমি- তোমার বউ কই?
আম্মু- মন খারাপ করে বসে আছে।
আমি- কেন?
আম্মু- তোর জন্য বিরয়ানী বানাতে গিয়ে হাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, তাই আমি বকেছি যে সে না জেনে কেন রান্না করতে গেলো?
আমি- তো বকতে গেলা কেন? দাঁড়াও আমি আসছি। তুমি একটা প্লেটে খাবার দিয়ে দাও। আমি নিয়ে যাচ্ছি।
।।
আমি ঘুরে ঢুকলাম! দেখি মারিয়া চুপ করে শুয়ে আছে।
আমি- এই যা!
মারিয়া- কি হয়েছে?
আমি- তোমার জন্য চকলেট আনতে ভুলে গেছি।
মারিয়া- আমি কি পিচ্চি মেয়ে নাকি যে চকলেট আনতে হবে?
আমি- তো মায়ের বকাতে পিচ্চি মেয়ের মতো রাগ করে আছো কেন?
মারিয়া- কই রাগ করে আছি?
আমি-এই নাও খেয়ে নাও?
মারিয়া-না খাবো না, খুদা নাই।
আমি- পাগলী তোমাকে রান্না করতে কে বলেছে?
।।
মারিয়া- পাশের বাড়ী থেকে এক চাচী এসেছিলো, তখন আম্মু রান্না করছিলো!

তখন উনি বলছে কেমন বউ তোমার যে বউ থাকতে শাশুড়িকে রান্না করতে হচ্ছে। তাই আমি রান্না করতে গেছিলাম।

সব ঠিক ছিল, কিন্তু তেল বেশি গরম হবার ফলে আগুন ধরে যায়, আর আমি ভয়ে পালিয়ে যায়।

তখন আম্মু দৌড় দিয়ে এসে কড়াই ফেলে দেয় আর চুলা বন্ধ করে দেয়।
আমি- তখন আম্মু তোমাকে বকা দিলো?
মারিয়া- হ্যাঁ।
।।
আমি- আর এজন্য তুমি রাগ করে আছো? আমি তো বিয়ের আগে পর্যন্ত প্রতিদিন বকা খেতাম, বাবা-মা বকা দিতেই পারে।

তারা আমাদের ভালর জন্যই বকা দেয়।
মারিয়া- আমি রাগ করিনি, আমার খুব মন খারাপ হয়েছে, মানুষ কেন বলবে যে আমি খারাপ বউ। আমিও ভালো বউ হতে চাই।
।।
আমি- হা, হা হা… তুমি এমনি অনেক ভালো, এর থেকে ভালো হতে হবে না। এবার থেকে কেউ আসলে বলবা,

আমার স্বামী আমাকে কাজ করতে নিষেধ করেছে, আর সাথে এটাও বলবা, আমার কাজ শুধু আমার স্বামীকে ভালোবাসা,

যেটা আমি অনেক বাসি। আর কিছুর দরকার নাই।
।।
আমার কথা শুনে মারিয়া কাঁদতে শুরু করলো!
আমি- এই পাগলী কাঁদছো কেন?
মারিয়া- আপনি আমাকে এতো ভালোবাসেন কীভাবে? আজ পর্যন্ত বিয়ের পর থেকে কখন ও আমার কাছ থেকে স্বামী হিসাবে কোন কিছু পান নি,

কখন ও জোর করেন নি। না ছুঁয়ে, এমন কি না বেশি কথা বলেও কীভাবে আমাকে এতো ভালোবাসেন?
।।
আমার পেটে অন্য জনের সন্তান! তারপর ও কীভাবে আমাকে ভালবাসতে পারেন?
আমি- আসলে কি জানো? ছোট কাল থেকে আমার একটা ধারণা ছিল, বড়লোকের মেয়েরা মানে তারা খারাপ,

তারা অহংকারী, অর্থলোভী, চরিত্রহীন, আর তোমাকে বিয়ের সময় ও আমি সেটা জানতাম,

ভেবে ছিলাম এটা হয়তো তুমি কোন ক্লাবে গিয়ে কোন বন্ধুর সাথে ফুর্তি করেছো, আর সে জন্য তোমার পেটে এই বাচ্চা।
।।
তাই আমি ধারণা করেছিলাম তোমার কোন ভালোবাসার দরকার নাই, হয়তো বিয়ের পর ও বন্ধুর নামে তুমি ফুর্তি করে যাবা,

আর আমার তো টাকার দরকার ছিল, আমি সেটা পেয়ে যাচ্ছি, তাই তোমার সাথে তেমন কথা বলতাম না,

কিন্তু আমি যখন জানতে পারলাম এখানে তোমার কোন দোষ নাই, তুমিও আমার মতো ভালোবাসার ভিখারি।
বীজগণিতের সহজ একটা সূত্র আছে, মাইনাস(-)+ মাইনাস(-)=(প্লাস)+
তাই ভাবলাম, দুই ভালোবাসার ভিখারি যদি এক হয়ে যায় তাহলে তো আর ঝামেলা থাকার কথা না,
কিন্তু তোমাকে ভালোবাসি বললে তুমি হয়তো ভাবতা, যে তোমার মন রাখার জন্য মিথ্যা করে বলছি, বা আমি টাকার জন্য বলছি।
।।
তাই ভালোবাসি না বলে তোমাকে যে ভালোবাসি সেটা কাজে প্রমাণ করছি। ভালোবাসি কথাটা অনেকেই বলতে পারে,

কিন্তু সেটা কতো জন কাজে প্রমাণ করতে পারে।
সেই প্রমাণ আমি করে দেখাবো, তোমাকে কতটা ভালোবাসি সেটা তুমি প্রতিদিন একটু একটু বুঝতে পারবা।
।।
যখন আমারা বুড়ো হয়ে যাবো, তখন ও।
মারিয়া- একটা কথা বলি?
আমি- হ্যাঁ বলো।
মারিয়া- এই বাচ্চাটা নষ্ট করে দেয়? তাহলে সব ঝামেলা শেষ। আমরা আবার নতুন করে জীবন শুরু করবো।

বাবাকে বলে দিবো আমি পিছলে পড়ে গেছিলাম।
আমি- কি বলো? না তা হয় না, এই বাচ্চার বাবা আমি। আমার পরিচয়ে এই বাচ্চা বড় হবে।
মারিয়া- কিন্তু?
আমি- না কোন কিন্তু না, তুমিও কিছু বলো নি, আর আমিও কিছু শুনি নি। এই বাচ্চা আমার।

আর আমাদের বিয়ে ৪ মাস না ১ বছর ৪ মাস আগে হয়েছে। এখন চোখ মুছো। আর খেয়ে নাও।

নাকি আমাকে কোলে নিয়ে তোমাকে বিছানা থেকে উঠাতে হবে?
।।
মারিয়া- কি??? এই না! আমি উঠছি।
আমি- হ্যাঁ তুমি বসো। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
মারিয়া- না থাক! আমি খেয়ে নিচ্ছি
আমি- কথা বেশি বলো না তো। চুপ করে বসো।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

………………………………..সমাপ্ত…………………………….

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত